কলিযুগ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
কলিযুগ মানে সত্যনাশের বিকীর্ণ রূপ। কলিযুগ মানে আমার, আপনার নিজের সময়; এমনকী কৃষ্ণ, অর্জুন, যুধিষ্ঠিরেরও স্বচক্ষে দেখা কাল। কলিযুগ মানে সেই বিকীর্ণ চমৎকার–যা না থাকলে সমাজ জড় সত্যে পরিণত হয়। আমরা সেই সত্যভ্রংশের সমাজ-সত্যকে অপাদান থেকে উপাদানে পরিণত করেছি।
.
লেখক পরিচিত
লেখকের জন্ম পূর্ববঙ্গে পাবনা। তীর্থপতি ইনস্টিটিউশন, সংস্কৃত কলেজ এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ-এর মিশ্রক্রিয়ায় ছাত্র-জীবন তৈরি হয়েছে। অতীত কর্মস্থল প্রথমে নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজ, পরে গুরুদাস কলেজ। গবেষণা স্বনামধন্যা সুকুমারী ভট্টাচার্যের কাছে। শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরীর কঠিন দৃষ্টিপাতে লেখকের জীবন শুরু এবং তার পালনী দৃষ্টিতেই মহাকাব্যের জগতে তার গভীর বিচরণ ঘটেছে। নামী এবং অনামী বহু পত্র-পত্রিকায় তার লেখা বেরিয়েছে। অধুনা মহাভারত-কোষ গ্রন্থনা এবং মহাভারতের অনুবাদে ব্যাপৃত আছেন।
.
অয়মারম্ভঃ
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পূর্বে-লেখা অনেকগুলি প্রবন্ধ একত্র সংকলিত করে ‘কলিযুগ’ তৈরি হয়েছিল। সেটা বেশ কয়েক বছর আগেকার কথা। পূর্বের প্রকাশন-সংস্থা গাঙচিলের কাছে এই বই আর অবশেষ পড়ে নেই বলে জানান আমার ভ্রাতৃপ্রতিম অধীর বিশ্বাস। তিনি নিজে নব-নবতর প্রতিভার সন্ধানে থাকায় পুরাতন’কে আমার হাতেই তুলে দেন। আমি সেই পুরাতন প্রবন্ধগুলির সঙ্গে নতুন আরও কিছু প্রবন্ধ যোগ করে তুলে দিই দীপ প্রকাশনের হাতে। ওঁরা সাগ্রহে এই বই ছাপছেন, কেননা আমার মনে হয়েছে–এখনও এই বই অনেকের হাতে পৌঁছোয়নি এবং সহৃদয় পাঠককুলে এখনও অনেকে আছেন, যাঁরা এই বইটিই অনুসন্ধান করেন।
আমি এটা কখনোই মনে করি না যে, আমার লেখাগুলি মহামূল্যবান, তথা প্রতিটি লেখায় একেবারে মণিমুক্তো ছড়ানো আছে যেন। আমার সে জ্ঞানও নেই, আমার অতিশ্রদ্ধেয় গুরুদের বিদ্যা-পরম্পরাও আমি ধরে রাখতে পারিনি। তবে আমার মনে একটি অতিসরল ভাবনা আছে। আমি মনে করি–বিষয়-বস্তুকে জটিল-কঠিন করে ফেলাটা আমার পক্ষে কোনো কঠিন ছিল না। বিশেষত যে-সমস্ত জ্ঞানী-গুণী মানুষের আমি সঙ্গ করেছি, যাঁদের বিদ্যা-চমৎকার আমি আজও বিস্মৃত হই না, সেই পরম্পরায় প্রবন্ধ প্রকাশ করলে ক্কচিৎ এক গবেষক আমার প্রবন্ধ পড়ে বারো বছর পর একটি ‘রেফারেন্স’ দিয়ে বা না দিয়ে আমাকে বাধিত করতেন। আমি তার চেয়ে বেশি সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছি। ভেবেছি, আমাদের শাস্ত্রকাব্য এবং গুরুবাহিত জ্ঞান সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দেওয়া দরকার। আমি সেটাই করেছি। প্রবন্ধগুলিকে আমি গুরুভার করে তুলতে চাইনি বটে, তবে গবেষকের উপাদানগুলিকে আমি অবহেলা করিনি কোথাও। আমি সেগুলি আত্মস্থ করেছি বটে, কিন্তু সেগুলিকে পাণ্ডিত্যপ্রকাশের উপায় বলে মনে করিনি। আর পরিশেষে এটা গভীর সত্য যে, আমার পাণ্ডিত্য থাকলে তো সেটা প্রকাশ করব। অতএব গুরুস্থানীয়দের জ্ঞান আমি প্রকাশ করলাম যথাসাধ্য, যথামতি।
এই গ্রন্থরচনার পিছনে এক সদ্যোজাতকের জন্ম-মুখর প্রেরণা ছিল। সে আমার পৌত্র ঋষভ–সে এখন বড়ো হচ্ছে কলিযুগের সমস্ত ব্যাহৃতি নিয়ে। তার জন্ম-প্রেরণাতেই এই প্রবন্ধগুলি সংগ্রহ করেছিলাম, সে বড়ো হয়ে উঠছে বলেই আরও কতকগুলি প্রবন্ধ এখানে সংযোজিত করলাম। আমার প্রাণারাম কৃষ্ণ-ভগবান তার প্রতি কৃপা করুন, কৃপা করুন আমাকেও।
—নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
.
সূচি
১. কলিযুগ
২. বেদপাঠে মেয়েদের বেদদত্ত অধিকার
৩. পণ্ডিত-মুর্খ
৪. অথ দুর্নীতি-কথা
৫. নাগরিকতা, অসভ্যতা এবং কৌটিল্য
৬. রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস:প্রাচীন ভারতীয় ভাবনা
৭. দেবভাষায় কটুকাটব্য
৮. পুরাণের সমাজ
৯. সত্যান্বেষী
১০. সেকালের রাজা একালের মন্ত্রী
১১. রাজকর্মচারী বনাম সরকারি কর্মচারী
১২. প্রাচীন রাজসরকারে চুরিচামারি
১৩. ব্রাহ্মণ : মহাভারত এবং সাধারণের উদ্গার
১৪. জুয়াখেলার উৎস সন্ধানে
Leave a Reply