কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত ১ – বিনয় ঘোষ
কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত ১ (প্রথম খণ্ড) – বিনয় ঘোষ
প্রথম অখণ্ড সংস্করণের ভূমিকা
‘কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত’ মুখ্যত কলকাতার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস। বইখানি চারটি ভাগে বিভক্ত। সুতানুটি সমাচার, কলকাতা কালচার, টাউন কলকাতার কড়চা, কলকাতার ক্রমবিকাশ। প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় ভাগ পৃথক তিনটি গ্রন্থাকারে যথাক্রমে ১৯৬২, ১৯৫৩ (১৯৫৬ ও ১৯৬১ পরবর্তী সংস্করণ), ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয়। নতুন পাঠকরা অনেকে বইগুলি সহজপ্রাপ্য নয় বলে অভিযোগ করেছেন, আবার অনেকে অনুরোধ করেছেন, কলকাতা সম্পর্কে আমার বই ও রচনাগুলি একত্রে একখণ্ডে সংকলন করার জন্য। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাজটি করার অবকাশ হয়নি। অনেকদিন পরে সেই কাজটি করতে পেরে কিছুটা স্বস্তিবোধ করছি, যদিও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কারণ কলকাতা শহর সম্বন্ধে আরও অনেক বিষয়ের তথ্যাদি যা দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রহ করেছি, এই গ্রন্থের কলেবরের দিকে চেয়ে তার অনেকাংশই এর মধ্যে পরিবেশন করতে পারিনি। তিন বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ‘রক ফেলার রিসার্চ ফেলো’ হয়ে (১৯৫৮—৬০) কাজ করার সুযোগ পাই এবং তখন কলকাতার অর্থনৈতিক সামাজিক ইতিহাসের অনেক উপকরণ সংগ্রহ করি। কিন্তু সেগুলি বিশেষ কোনো কাজে লাগাতে পারিনি, স্তূপাকার ফাইলবন্দি হয়েই আছে। মনে হয়, অল্পদিনের মধ্যেই সেগুলি পোকামাকড়ে খেয়ে ফেলবে। এই গ্রন্থে তার সামান্য অংশ ব্যবহার করেছি মাত্র। মধ্যে মধ্যে বিদেশি প্রকাশকদের কাছ থেকে ইংরেজি ভাষায় কলকাতার ইতিহাস লেখার প্রস্তাব এসেছে, কিন্তু নিশ্চিন্তে কাজ করার সুযোগ না—থাকাতে এরকম প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারিনি। বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ এসেছে, সেখানে গিয়ে, ইচ্ছা হলে সপরিবারে, নিশ্চিন্তে যতদিন খুশি থেকে, এই ধরনের কাজ করার জন্য। কিন্তু নিজের দেশে থেকে কাজ করার কর্তব্য এড়িয়ে বিদেশে গিয়ে নিশ্চিন্তে কাজ করতে মন সায় দেয়নি। যদিও অবশ্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বিলক্ষণ জানি যে আমাদের দেশের বিদ্বৎসমাজ, বিদ্যাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নিয়ে যে বিদ্যাপরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত, সুদীর্ঘ ঔপনিবেশিক জীবনের দাসত্বের জন্যই হোক, অথবা আমাদের জাতীয় চরিত্রের কিংবা শ্রেণিগত চরিত্রের কোনো মারাত্মক গলদের জন্যই হোক, তার মতো বিষাক্ত ঘৃণ্য সংকীর্ণ পরিমণ্ডল পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে সম্ভবত নেই। সে যা—ই হোক, আপাতত কলকাতা শহর সম্বন্ধে এই বইখানি প্রকাশ করতে পেরে স্বস্তিবোধ করছি, যদিও সন্তুষ্ট হতে পারিনি। ইচ্ছা আছে যদি ভবিষ্যতে (জানি না ‘ভবিষ্যৎ’ বলে কিছু আছে কি না) সুযোগ পাই তাহলে আর—একটি পৃথক গ্রন্থে কলকাতা শহর সম্বন্ধে আরও অনেক নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আপাতত এই পর্যন্ত।
বিনয় ঘোষ
কলকাতা ৩২। অক্টোবর ১৯৭৫
Leave a Reply