কলকাতার রাত্রি রহস্য – হেমেন্দ্রকুমার রায়
মেঘনাদ গুপ্ত রচিত
রাতের কলকাতা-র সটীক সংস্করণ
সম্পাদনা ও টীকা – কৌশিক মজুমদার
অলংকরণ – শান্তনু মিত্র
সৌজন্যে : সলিল চট্টোপাধ্যায়
প্রথম বুক ফার্ম সংস্করণ : জানুয়ারি ২০২০
প্রচ্ছদ : কৌশিক মজুমদার, কামিল দাস
গ্রন্থ সহায়তা : বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়
হেমেন্দ্রকুমার গবেষক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়-কে
প্রকাশকের জবাবদিহি
মেঘনাদ গুপ্ত রচিত ‘রাতের কলকাতা’ বইটির সটীক সংস্করণ ‘হেমেন্দ্রকুমার রায়ের কলকাতার রাত্রি রহস্য’ নামে প্রকাশ করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ‘বুক ফার্ম’ প্রকাশনার। মূল বইয়ের নাম পরিবর্তন করে ইতিহাস বিকৃত করার কোনো অভিপ্রায় আমাদের নেই, তাই এই জবাবদিহি।
দুটি নির্দিষ্ট কারণে ‘বুক ফার্ম’ প্রকাশিত এই বইটি ও তার লেখকের নাম মূল বইটির থেকে আলাদা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, স্বর্গীয় প্রদীপ ভট্টাচার্যর ‘উর্বী প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত মেঘনাদ গুপ্ত-র ‘রাতের কলকাতা’ বইটি (প্রথম প্রকাশ ২০১৫) এখনও পাওয়া যায়। ‘বুক ফার্ম’ প্রকাশিত সটীক সংস্করণের বইটিতে ব্যবহৃত টীকা ও ছবি উর্বী প্রকাশনের বইতে অনুপস্থিত। তাই দুটি পৃথক প্রকাশনীর বইকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে নামের এই পরিবর্তন। দ্বিতীয়ত, গবেষকরা তথ্য ও যুক্তি সহ প্রমাণ করেছেন মেঘনাদ গুপ্ত স্বয়ং সাহিত্যিক হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ছদ্মনাম। সেকারণে ‘বুক ফার্ম’ সংস্করণের বইটির লেখক হিসেবে মেঘনাদ গুপ্ত-র বদলে সরাসরি হেমেন্দ্রকুমার রায়-এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে পাঠকরা তাঁদের প্রিয় লেখকের বইটিকে সহজেই চিনে নিতে পারেন।
পরিশেষে ডেল্টা ফার্মা, উর্বী প্রকাশন, কৌশিক মজুমদার, বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তনু মিত্র, কামিল দাস ও পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়কে কৃতজ্ঞতা জানাই।
.
ভূমিকা
আমরা কিছু বই পড়ি বিনোদনের আশায়। কিছু বই পড়া হয় নতুন কিছু জানতে আর বুঝতে। কিন্তু এমনও কিছু বই হয়, যারা বিনোদন জোগানোর ফাঁকেই পুরোনো সব কিছুকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করে তোলে। গতিময় গদ্যের সঙ্গে থাকা সরস ও তথ্যনিষ্ঠ টীকা সেই পাঠকে এক অন্য মাত্রা দেয়। ইনফোটেইনমেন্টের এই ঘরানাটি একদা বাংলায় খুবই সমৃদ্ধ ছিল। বহু ধ্রুপদি বইয়ের সটীক সংস্করণ সেই বইকে নতুন পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে এবং গবেষণার ক্ষেত্রটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। আজ থেকে প্রায় এক-শো বছরেরও বেশি আগের একটা শহর, যার চেহারা, ধরন, জনবিন্যাস, মায় অর্থনীতি আর রাজনীতি আমূল বদলে গেছে, তাকে নিয়ে লেখা একটা বই পড়তে কেমন লাগে? সেই সময় যৌবন আর কৈশোরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়ানো একজন মানুষ রাতের কলকাতা, বিশেষত তার ‘নিষিদ্ধ’ এলাকাগুলোতে ঘুরেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি একটি বই লিখেছিলেন। বইয়ের নাম ‘রাতের কলকাতা’ হলেও লেখক অবভিয়াস ছদ্মনাম নিয়েছিলেন, মেঘনাদ গুপ্ত। বইটি যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকে জানতে চেয়েছেন, কে ছিলেন এই মেঘনাদ গুপ্ত? এমন শক্তিশালী লেখনী যাঁর, তাঁকে কেন আত্মগোপন করতে হয়েছিল ছদ্মনামের আড়ালে? পরে প্রাবন্ধিক ও গবেষকেরা মেঘনাদকে সামনে এনেছেন।
এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৩ সালে। কিন্তু লেখক স্পষ্ট করেই দিয়েছেন, যখন তিনি ‘অভিজ্ঞতা’ অর্জনের আশায় কলকাতার পথেঘাটে নিশিযাপন করেছেন, তখন তা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শহর। অর্থাৎ এগুলো ১৯১২-র আগেকার অভিজ্ঞতা! কিন্তু লেখকের বর্ণনা এমনই তীক্ষ্ণধার, ক্ষেত্রবিশেষে সরস, এবং গতিময়, যে পড়তে গেলে মনে হয়, বুঝি-বা গতরাতের রিপোর্ট পড়ছি কোনো ওয়েবপেজে। কে এই লেখক মেঘনাদ গুপ্ত? জানুয়ারি ২০১৫ সালে উর্বী প্রকাশনের প্রথম সংস্করণে সম্পাদক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় যুক্তিজালের সাহায্যে প্রতিপন্ন করেছেন, এই বইটির লেখক মেঘনাদ গুপ্ত আসলে হেমেন্দ্রকুমার রায়-এর ছদ্মনাম। যাঁরা হেমেন রায়-কে স্রেফ একজন শিশু-সাহিত্যিক হিসেবে চেনেন তাঁরা এই বইটি পড়ে আকাশ, বা টেনিদা-র ভাষায় স্পুটনিক থেকে পড়বেন। কিন্তু ‘নাচঘর’ পত্রিকার রসজ্ঞ সম্পাদক হেমেন্দ্রকুমারকে যাঁরা চেনেন, এমনকী ‘বিশালগড়ের দুঃশাসন’ প্রভৃতি ক্লাসিক পাঠের অভিজ্ঞতা থাকলে শিশু সাহিত্যের রসবেত্তাও এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেবেন এককথায়। ঠিক কী লিখেছেন তিনি? বিষ্ণু বসু-র ‘ভূমিকা’ আর লেখকের প্রস্তাবনার পর শুরু হয়েছে এই নাতিদীর্ঘ বইয়ের মূল অংশটি। রাতের যেকোনো শহরই দিনের তুলনায় অন্যরকম, এবং কিছুটা বিপজ্জনক। কিন্তু রাতের কলকাতা কতটা অন্যরকম আর কতটা বিপজ্জনক, তা বোঝানোর জন্য লেখক কিছু এলাকা বেছে নিয়েছেন। সেখানে গিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর পর্যবেক্ষণ পেশ হয়েছে নিম্নলিখিত অধ্যায়গুলোতে— প্রথম দৃশ্য: শহরের সাধারণ ছবি। দ্বিতীয় দৃশ্য: কলকাতার পথ। তৃতীয় দৃশ্য: চীনে-পাড়া। চতুর্থ দৃশ্য: গণিকা পল্লি। পঞ্চম দৃশ্য: নিমতলার শ্মশান। ষষ্ঠ দৃশ্য: হোটেল। সপ্তম দৃশ্য: কলকাতার উৎসব রাত্রি। অষ্টম দৃশ্য: অন্ধকূপের বাসিন্দা। নবম দৃশ্য: রঙ্গালয়। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে শিক্ষিত বাঙালিকে যে মূল্যবোধ তথা নীতিবোধ লালনের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তার প্রভাবে অনেক জায়গাতেই লেখাগুলোয় অমৃতর তুলনায় গরলের আধিক্য ঘটেছে। আধুনিক মানসিকতায় এগুলো বদহজমের কারণ হতে পারে। তবে লেখনীর একটি বৈশিষ্ট্য এই বইয়ে ঘটনার ঘনঘটা আর চরিত্রচিত্রণের চকমকি ছাপিয়ে ফুটে উঠেছে। সেটি হল পতিতা ও নির্যাতিতা মহিলাদের জন্য লেখকের আন্তরিক সহানুভূতি। সত্যি বলতে কী, এই বিশেষ দৃষ্টিকোণ, এবং নানা জায়গায় হওয়া কথোপকথনের একেবারে ‘ভার্বাটিম’ উদ্ধার, এই দুটি কারণের জন্যই বইটি অবশ্যপাঠ্য হয়ে উঠেছে।
কিন্তু সেই বইটি পড়তে গিয়ে খুব সমস্যা হয়েছিল। সরস গদ্যে ধরা পড়া বাস্তব জীবনের রোমাঞ্চ চাপা পড়ে যাচ্ছিল স্থান, কাল ও পাত্রদের চিনতে না পারায়। অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান হতে চলেছে। ‘রাতের কলকাতা’ পাঠকের সামনে আসছে নতুন নামে, লেখকের সত্যিকারের নাম বহন করে এবং বিপুল পরিমাণে টীকায় সমৃদ্ধ হয়ে। সেই টীকাগুলো পড়েছি, তাই দায়িত্ব নিয়ে একটা কথা বলতে পারি। কলকাতার অলিগলিতে লুকিয়ে থাকা ইতিহাস, একটা হারিয়ে যাওয়া সময়, এডওয়ার্ডিয়ান মানসিকতা আর প্রত্যক্ষ বাস্তবের সংঘাতে দীর্ণ এক লেখকের টানাপোড়েন— এগুলো এর চেয়ে ভালোভাবে কম বইই তুলে ধরতে পেরেছে। এই বিশেষ সটীক সংস্করণটি পড়লে আমাদের মনের ভুবন বিস্তৃততর হতে বাধ্য। তাই ‘বুক ফার্ম’ থেকে প্রকাশিতব্য, ডক্টর কৌশিক মজুমদারের টীকায় সমৃদ্ধ এই বইকে ‘এই এক নূতন’ বলে স্বাগত জানানোর পরামর্শই দেব আমি।
ঋজু গাঙ্গুলী
.
সম্পাদকের কথা
হেমেন্দ্রকুমার রায় যে ‘কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য’ একখানা বই লিখেছিলেন, সেটা আমার জানা ছিল না। জানিয়েছিলেন হেমেন্দ্র গবেষক শ্রীদেবাশীষ গুপ্ত। কিন্তু বইটা হাতে নিয়ে পড়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। উঠল আরও বেশ কিছুদিন পরে, যখন বন্ধু তথা প্রকাশক শান্তনু ঘোষ এক বিশেষ কাজে বইটা আমায় পাঠায়। নাম ‘রাতের কলকাতা’। স্বনামে বইটি লেখেননি লেখক। লিখেছেন ছদ্মনামে। এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা টীকা অংশে আছে, তাই শুরুতে আর বললাম না।
পড়তে গিয়ে চমকে উঠলাম। কলকাতার অন্ত্যজ শ্রেণিদের নিয়ে সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বা অনিন্দিতা ঘোষের কাজ সুবিদিত। কিন্তু সে নিতান্ত গবেষকের চোখে। একেবারে চোখে দেখা বর্ণনা প্রায় নেই বললেই চলে। উনিশ শতকের শেষ বা বিশ শতকের শুরুর সময়ে কলকাতার গণিকা, অপরাধ বা পাপের বেসাতির খবর জানার মূল উৎস এখনও বটতলার চটুল বইগুলো, যাদের নাম শুনলেই রোমাঞ্চ হয়। কিন্তু সে-লেখা নিতান্ত ফিকশন। তাতে সত্য মিথ্যের মিশেল আছে। কিন্তু এই বইখানা একেবারে খাঁটি নন ফিকশন। আর সেখানেই এই বইয়ের গুরুত্ব। হুতোম যেমন উনিশ শতকের কলকাতার দারুণ এক ছবি ফুটিয়েছেন তাঁর নকশায়, এই বইও সেই মর্যাদা পাবার যোগ্য। খুব কাছে হয়তো-বা আসতে পারে ‘সচিত্র গুলজার নগর’, ‘কলিকাতা কমলালয়’ বা ‘পুরাতন পঞ্জিকা’-র মতো বই।
বইটি দেখে যতটা উত্তেজিত হলাম, নিরাশ হলাম প্রায় ততটাই। বইটি বেশ ক্ষীণতনু। শুরুতে দুইখানি ভূমিকা বাদে একটিও টীকা বা প্রয়োজনীয় ছবি নেই। এই বই ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল আর তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই টীকা এবং ব্যাখ্যা দাবি করে। হেমেন্দ্রকুমার যখন এই বইটি লিখছেন, তখনকার কলকাতা আর আজকের কলকাতা এক নয়। লপেটা, গ্যাসের আলো, ছ্যাকড়া গাড়ি, হেজেলিন, আবু হোসেন শব্দগুলো তখন বাঙালির রোজকার শব্দবন্ধে থাকলেও এখন তারা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে। প্রয়োজন মুগাহাটা, গ্যাঁড়াতলা, মালাপাড়া গলি বা চণ্ডুখোরের আস্তানার মতো স্থানের বিস্তারিত আলোচনাও। ঠিক এই কারণে উপযুক্ত টীকা এবং চিত্রসহ বইটিকে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে অগ্রজ অরুণ নাগের প্রায় মিথ হয়ে যাওয়া ‘সটীক হুতোম প্যাঁচার নকশা’-কে সামনে রেখে প্রায় একলব্যের মতো টীকাদান করে গেছি। যদিও সে এক অসম্ভব উচ্চতা, তবু বড়ো কিছু ভাবতে গেলে বড়োদেরই তো সামনে রাখতে হয়, তাই না? টীকাদানের ক্ষেত্রে যেসব বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে তাদের বিস্তারিত তালিকা এই বইয়ের শেষে দেওয়া হল। ছবির ক্ষেত্রে সুকুমার রচনাবলি থেকে লাইফ ম্যাগাজিন, অসিত পালের বই বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনলাইন আর্কাইভ, একাধিক সূত্রের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। একটি অতি দুষ্প্রাপ্য ছবি দিয়ে কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন শ্রীসুস্নাত চৌধুরী। বেশ কিছু টীকাতে উল্লেখযোগ্য তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন রণিতা চট্টোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত জানাই বইটির সমস্ত টীকার প্রুফ সংশোধনও তাঁরই করা। প্রচ্ছদ রূপায়ণে সহায়তা করেছেন তরুণ শিল্পী কামিল দাস। তাঁদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার অবধি নেই।
টীকা দানের ক্ষেত্রে প্রতিটি টীকা যথাসম্ভব বিস্তৃতভাবে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে তাদের আয়তনবৃদ্ধি ঘটে কয়েকটি অণু প্রবন্ধের আকারও নিয়েছে। একইসঙ্গে একেবারে পরিচিত শব্দের টীকা দিয়ে বইটিকে অযথা ভারাক্রান্ত না করার একটা সজ্ঞান প্রচেষ্টা আমার প্রথম থেকেই ছিল। ফলে হরেদরে হাঁটুজল হয়ে বইয়ের আকার খুব বেশি বাড়তে পারেনি। প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে সংগতি রেখে ছবি এঁকেছেন শিল্পী শান্তনু মিত্র। তাঁর আঁকা ছবি এই বইয়ের অন্যতম আকর্ষণ।
মেঘনাদ গুপ্ত বা হেমেন্দ্রকুমারের লেখা ‘রাতের কলকাতা’ এক বিরল শ্রেণির বই। প্রতিটি ভাষায় এমন বই একটি দুটিই লেখা হয়, বা হয়ও না। এ বই প্রায় ফটোগ্রাফের মতো এক-শো বছর আগের কলকাতার রাত্রি রহস্যকে ফুটিয়ে তুলেছে নিখুঁতভাবে। এই অসামান্য বইটির সটীক সংস্করণ পাঠকসমাজে কলকাতা চর্চায় উৎসাহ বাড়ালে এই কাজ সত্যিকার সাফল্য পাবে।
কৌশিক মজুমদার
জানুয়াির, ২০২০
.
আনুমানিক ১৯০০-১৯২৩ সালের কলকাতার প্রেক্ষাপটে শ্রীমেঘনাদ গুপ্ত রচিত করেন ‘রাতের কলকাতা’। এই গ্রন্থে বিশ শতকের প্রথম দু-দশকের কলকাতার বিভিন্ন চিত্র যেমন চীনে পাড়া, গুন্ডাজগৎ, ভিক্ষুক জগৎ, নৈশ শ্মশান চিত্র, কফিখানা ও গণিকা জীবনের লেখা লেখনীর মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়েছে। ওই সময়কালে এ ধরনের বিষয়বস্তুকে অবলম্বন করে রাতের কলকাতার ছবি লেখনীর মাধ্যমে পরিস্ফুটনের প্রচেষ্টা অবশ্যই লেখকের মানসিক দৃঢ়তা, বিষয়বস্তু নির্বাচনে অভিনবত্ব এবং লেখনীর ক্ষমতার প্রতিফলন। এই বিষয়বস্তুকে নিয়েই পরবর্তীকালে ড পঞ্চানন ঘোষাল ও নন্দগোপাল সেনগুপ্ত বিভিন্ন অপরাধবিজ্ঞান সম্পর্কিত গ্রন্থাদি লিখেছেন। সেদিক থেকে ‘রাতের কলকাতা’কে বাংলায় রচিত এ ধরনের গ্রন্থাদির পথিকৃৎ বলা চলে। প্রথমত, স্বর্গত সাহিত্যিক পরিমল গোস্বামীর মতে,
হেমেন্দ্রকুমার রায় মেঘনাদ গুপ্ত ছদ্মনামে রাতের কলকাতা নামে একটি বই লিখেছিলেন। কলকাতা শহরের নৈশ জীবনের বাস্তবচিত্র আঁকা হয়েছে। ছদ্মনাম নিয়েছিলেন কারণ অভিভাবকেরা যাতে জানতে না পারেন বইটি তাঁরই লেখা। মেঘনাদ গুপ্ত অবশ্য ছদ্মনামের ছদ্মনাম। হেমেন্দ্রকুমারও ছদ্মনাম, তাঁর আসল নাম হয়তো অনেকেই জানেন না, প্রসাদ রায়।
(সূত্র শতদল গোস্বামী, দেশ, ১৫ অক্টোবর, ১৯৮৮)
দ্বিতীয়ত, স্বর্গত লেখক শ্রীপ্রেমেন্দ্র মিত্র ও বিশু মুখোপাধ্যায় আমাকে জানিয়েছিলেন যে হেমেন্দ্রকুমার রায়, মেঘনাদ গুপ্ত ছদ্মনামে ‘রাতের কলকাতা’ রচনা করেন। হেমেন্দ্রকুমারের কনিষ্ঠ পুত্র প্রদ্যোৎকুমার রায় আমাকে বলেছিলেন যে তিনি তাঁর পিতার বন্ধুদের কাছে শুনেছিলেন যে হেমেন্দ্রকুমার লেখার খাতিরে Firsthand Information-এর খোঁজে বিশ শতকের প্রথম একটি যষ্টি হাতে বিপদের ঝুঁকি নিয়েও রাতের কলকাতার বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ করতেন। আমি নিজেও ওঁর বিভিন্ন গ্রন্থের ভাষাশৈলী ও ধরনের সঙ্গে রাতের কলকাতার ভাষাশৈলীর প্রচুর সাদৃশ্য পেয়েছি। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এই পুস্তকটিও হেমেন্দ্রকুমার রায়ের লেখা। আশা রাখি, এ গ্রন্থটি অনুসন্ধিৎসু পাঠকরা তৎকালীন রাতের কলকাতা-র বিচিত্র অন্ধকার জগতের প্রাঞ্জল ও রোমহর্ষক অজানা ছবির সন্ধান পাবেন।
পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়
জানুয়ারি, ২০১৫
সৌজন্যে : উর্বী প্রকাশন প্রকাশিত মেঘনাদ গুপ্তর ‘রাতের কলকাতা’ বইটির ভূমিকা থেকে সংগৃহীত।
.
রাতের কলকাতা বইখানি হাতে আসে হঠাৎই। এটির কথা আগে শোনা ছিল কিন্তু কখনো চোখে দেখিনি। গত জানুয়ারিতে ঢাকায় আলাপ হয় হায়াত মামুদের সঙ্গে। তাঁর বিশাল গ্রন্থাগারে পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে কেনা এই বইটি ছিল। স্বভাবতই খুব আগ্রহ দেখাই। সেদিন সন্ধ্যাতে আবার দেখা হবার কথা আমার ও হায়াত ভাইয়ের। দেখা হতেই তিনি একটি প্যাকেট তুলে দেন হাতে, খুলে দেখি পুরো বইটির জেরক্স কপি। ব্যাপারটায় স্তম্ভিত হয়ে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুলে যাই। সে-রাতেই পড়ে ফেলি বইখানা। এ শতাব্দীর গোড়ার দিকে রাতের কলকাতার কত ধরনের চেহারা ছিল তারই অতি নিপুণ ও বিশ্বস্ত কিছু ছবি লেখক মেঘনাদ গুপ্ত উপহার দিয়েছিলেন আমাদের পূর্বজদের। মনে হল এ বই বিস্মরণের যোগ্য নয়।
লেখকের ব্যক্তি পরিচয় আমার জানা নেই। আর কোনো বই তিনি লিখেছিলেন কিনা তাও জানি না। দরকারও নেই। কেননা এ বইটি নিজেই স্বপ্রকাশ। শুধু বিস্ময় লাগে কতটা বিপদ ও ঝুঁকি নিয়ে লেখক ঘুরে বেরিয়েছিলেন কলকাতার বিচিত্র মহলে শুধু শহরটির রাতকে নানাভাবে দেখবার জন্য। তাঁর বিচরণের পরিধি গুন্ডাদের আখড়া, গণিকালয় থেকে শুরু করে কলকাতার থিয়েটার পর্যন্ত। এমনকী চীনেপাড়া ও শ্মশানকেও বাদ দেননি তিনি। এবং যেসব চালচিত্র এঁকেছেন বিভিন্ন মহলের তার মধ্যে আছে বস্তুর অনুপুঙ্খতা, গভীর সহৃদয়তা, আবেগদীপ্ত অথচ নিরাসক্ত বর্ণনার পারিপাট্য।
কলকাতা পালটে যাচ্ছে। পুরোনো পাড়ার চেহারা আর নামগুলো ক্রমশ বর্জিত হচ্ছে। হয়তো বা অনিবার্য। তবু মেছোবাজার, রুপোগাছি, চীনেপাড়া প্রভৃতির নাম এখনও তো কলকাতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওতপ্রোত। চীনেপাড়াটাই তো আর আগের মতো নেই। ‘ক্যান্টন’ রেস্টুরেন্ট একসময় বাংলা নানা গল্প উপন্যাস বিশেষ করে গোয়েন্দাকাহিনিতে ঘুরে ফিরে দেখা দিত। এখনও আছে রেস্তরাঁটি কিন্তু হৃতগৌরব দুর্দশাগ্রস্ত দালানটি এখন আর একই সঙ্গে ভীতি ও সম্ভ্রমের সঞ্চার করে না।
বইখানিতে যেমন আছে কিছু রোমহর্ষক বাস্তব ঘটনার রুদ্ধশ্বাস বিচরণ— গণিকালয়ে একজন নিহত ব্যক্তির শবদেহ নিয়ে বিপদে পড়ার উপক্রম অথবা এক ধাপ্পাবাজ বুড়োর কবলে পড়ে ক্ষতবিক্ষত লাশ নিয়ে শ্মশানযাত্রার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা— তেমনি রয়েছে সমাজের যারা উপেক্ষিত অবহেলিত তাদের প্রতি সুগভীর সমবেদনা। সেকালের নাট্যশালার অভ্যন্তরীণ চেহারাটিকেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অবিচলিত নৈপুণ্যে।
তিনখানা গ্রাম থেকে একদিন গড়ে উঠেছিল যে মহানগরী তার প্রতি ঘরেতে আছে আলো অন্ধকারের বিচিত্র খেলা। এখনও আছে। তার আলোর দিকে তাকিয়ে দেখি রামমোহন বিদ্যাসাগরের সমাজ আন্দোলনের ইতিবাচক চেহারা, রবীন্দ্রনাথের সর্বব্যাপী আধিপত্য। আরও বহু মনীষীর নানা ধরনের সৃষ্টিকর্ম। আবার এরই ফাঁকে ফোঁকরে জমে আছে কত ধরনের ক্লেদ রিরংসা ও নিষ্ঠুরতা। দুটি ছবিই যেন এ মহানগরীর পরিপূরক। কলিকাতা কমলালয়, হুতোম প্যাঁচার নক্সা, কলিকাতার লুকোচুরি, কলকাতার হাটহন্দ প্রভৃতি বইতে কলকাতার সমাজচিত্রের যে বিশ্বস্ত প্রতিফলন ঘটেছে তারই ধারাবাহিকতায় রয়েছে রাতের কলকাতা। কলকাতা মহানগরীর সামাজিক ইতিহাস এখনও লেখা হয়নি। যদি এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে এগোতে চান কেউ তাহলে অবশ্যই তাঁকে উপকরণ জোগাবে অন্য অনেক বইয়ের সঙ্গে মেঘনাদ গুপ্তের লেখা এ বইটি।
১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে বইটি প্রকাশিত হলেও অভ্যন্তরীণ প্রমাণে অনুমান করা চলে লেখক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় এবং তা লিপিবদ্ধ করেছিলেন এ শতকের গোড়ার দশকে। কেননা লেখকের ভাষা অনুযায়ী তখনও কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। তারপর বহু বছর কেটে গেছে। আজ আমার উপনীত হয়েছি বিশ শতকের উপান্তে। কিন্তু কলকাতার আদত চেহারা খুব একটা পালটেছে কি? পালটালেও তা পরিমাণগত, গুণগত নয়। সম্প্রতি একজন লেখক রাতের কলকাতা-কে অশ্লীল ও বটতলার বই বলে চিহ্নিত করেছেন। বইটি তাঁর পড়া নেই, থাকলে জানতেন তাঁর ধারণা কত ভুল। বইখানি এ ধরনের বহু ভুল ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করবে।
কলকাতা বরাবরই খুব জ্যান্ত নগরী। একে নিন্দা করা যায়, গালাগাল দেওয়া যায়, কিন্তু অবহেলা করা যায় না। কলকাতার ত্রুটি খুঁজে থাকেন বহু দেশি-বিদেশি, আবার ভালোও বাসেন। অনুরাগে বিরাগে মেশানো কলকাতার যে চরিত্র নানাভাবে আমাদের উদবেলিত করে। তারই একটি অতি ক্ষুদ্র প্রকাশ ঘটেছে রাতের কলকাতা বইটিতে। তবে ক্ষুদ্র হলেও বইটি যে তুচ্ছ নয় একথা অবশ্যই স্বীকার করবেন সকল পাঠক।
বিষ্ণু বসু
এপ্রিল, ১৯৯১
সৌজন্যে : ডেল্টা ফার্মা প্রকাশিত রাতের কলকাতা বইটির ভূমিকা থেকে সংগৃহীত।
.
সহায়ক গ্রন্থতালিকা
বাংলা বই
অজিত বসু, কলকাতার রাজপথ, আনন্দ পাবলিশার্স
অঞ্জন মিত্র, কলকাতা ও দুর্গাপুজো, আনন্দ পাবলিশার্স
অতুল সুর, ক ল কা তা, সৃষ্টি প্রকাশন
অমৃতলাল বসু, রসরাজের রসকথন, সংবাদ
ইন্দ্রমিত্র, সাজঘর, ত্রিবেণী
উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, কালীঘাট ইতিবৃত্ত, পরশপাথর
কালীপ্রসন্ন সিংহ, হুতোম প্যাঁচার নকশা (অরুণ নাগ সম্পাদিত), সুবর্ণরেখা
ডঃ সুকুমার সেন, বটতলার ছাপা ও ছবি, আনন্দ পাবলিশার্স
তারাপদ সাঁতরা, কীর্তিবাস কলকাতা, আনন্দ পাবলিশার্স
তারাপদ সাঁতরা, কলকাতার মন্দির মসজিদ স্থাপত্য অলঙ্করণ রূপান্তর, আনন্দ পাবলিশার্স
দেবাশিস বসু (সম্পাদিত), কলকাতার পুরাকথা, পুস্তক বিপণি
নকুল চট্টোপাধ্যায়, তিন শতকের কলকাতা, মিত্র ও ঘোষ
নিখিল সুর, সায়েবমেম সমাচার, আনন্দ পাবলিশার্স
পূর্ণেন্দু পত্রী, পুরোনো কলকাতার কথাচিত্র, দে’জ পাবলিশিং
পূর্ণেন্দু পত্রী, এক যে ছিল কলকাতা, প্রতিক্ষণ
পূর্ণেন্দু পত্রী, কলকাতার গল্পসল্প, দে’জ পাবলিশিং,
পূর্ণেন্দু পত্রী, কলকাতার প্রথম, দে’জ পাবলিশিং,
পূর্ণেন্দু পত্রী, কলকাতার রাজকাহিনী, দে’জ পাবলিশিং,
পূর্ণেন্দু পত্রী, কী করে কলকাতা হলো, আনন্দ পাবলিশার্স
পূর্ণেন্দু পত্রী, ছড়ায় মোড়া কলকাতা, আনন্দ পাবলিশার্স
পূর্ণেন্দু পত্রী, জোব চার্ণক যে কলকাতায় এসেছিলেন, এ সি সরকার
পূর্ণেন্দু পত্রী, পুরনো কলকাতার পড়াশুনো, দে’জ পাবলিশিং
প্রাণতোষ ঘটক, কলকাতার পথঘাট, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড
বিকাশ ভট্টাচার্য, পুজোর কলকাতা, সূত্রধর
বিনয় ঘোষ, কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত, প্রকাশ ভবন
বিশ্বনাথ জোয়ারদার, অন্য কলকাতা, আনন্দ পাবলিশার্স
মহেন্দ্রনাথ দত্ত, কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা, মহেন্দ্র পাব্লিশিং কমিটি
মেঘনাদ গুপ্ত, রাতের কলকাতা, উর্বী প্রকাশন
রথীন মিত্র, কলকাতা : একাল ও সেকাল, আনন্দ পাবলিশার্স
রাধাপ্রসাদ গুপ্ত, কলকাতার ফেরিওয়ালার ডাক ও রাস্তার আওয়াজ, আনন্দ পাবলিশার্স
রাধারমণ মিত্র, কলিকাতা দর্পণ, ২ খণ্ড, সুবর্ণরেখা
শিবনাথ শাস্ত্রী, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ, নিউ এজ
শ্রীপান্থ, কলকাতা, আনন্দ পাবলিশার্স
শ্রীপান্থ, বটতলা, আনন্দ পাবলিশার্স
শ্রীপান্থ, মোহান্ত এলোকেশী সম্বাদ, আনন্দ পাবলিশার্স
সন্তোষ চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার রাস্তা হলো কেমন করে, দে’জ পাবলিশিং
সুকুমার সিকদার, হতভাগার কলিকাতা, অনুষ্টুপ
সুকুমার সেন, কলিকাতার কাহিনী (দুই খণ্ড), আনন্দ পাবলিশার্স
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতার কত রূপ, কারিগর
সুনীল দাস, উপহাসের কলকাতা, সৃষ্টি প্রকাশন
সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, উনিশ শতকের কলকাতা ও সরস্বতীর ইতর সন্তান, অনুষ্টুপ
সৌমিত্র শ্রীমানী সম্পাদিত, কলিকাতা কলকাতা, বঙ্গীয় ইতিহাস পরিষদ
হরিপদ ভৌমিক, নতুন তথ্যের আলোকে কলকাতা, পারুল প্রকাশনী
হরিসাধন মুখোপাধ্যায়, কলিকাতা সেকালের ও একালের, পি এম বাগচি
.
English Books
A. P. Benthall, The Trees of Calcutta and its neighbourhood, Thacker Spink & Co, London
Ashit Paul, Woodcut Prints of 19th Century Calcutta, Seagull
Fanny Parkes, Begums, Thugs and Englishmen; Penguin Publishers
Geoffrey Moorhouse, Calcutta, Faber and Faber
Joe Winter, Calcutta Song, Sahitya Sansad
Keith Humphrey, Calcutta Revisited, Grosvenor House Pub. Ltd
Keith Humphrey, Walking Calcutta, Grosvenor House Pub. Ltd
Krishna Dutta, Calcutta: A Cultural and Literary History, Interlink Books
Nisith Ranjan Ray, Calcutta : The Profile of a city, KPB
P. Thankappam Nair, British Beginnings in Bengal, Firma KLM Private Limited, Calcutta
P. Thankappam Nair, Streets of Calcutta, Firma KLM Private Limited, Calcutta
Pat Barr, The Memsahibs: The Women of the Victorian India, Allied Publishers
Prosenjit Dasgupta, 10 Walks in Calcutta, Harper-Collins
Ranabir Roychaudhury, A City in the Making, Niyogi Books
Sukanta Chaudhuri, Calcutta: The Living City (2 Volumes); OUP
Sumanta Banerjee, The Wicked City, Crime and Punishment in Collonial Calcutta, Orient Longman
W H Carey, The Good Old Days of Honorable John Company, Riddhi Publication
.
সম্পাদক পরিচিতি
কৌশিক মজুমদােরর জন্ম ১০ এপ্রিল, ১৯৮১, কলকাতায়। কৃতি ছাত্র। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান সংস্থা থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পি. এইচ. ডি. তে সেরা ছাত্রের স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। নতুন প্রজাতির এক ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কারক, যার নাম তাঁর নামে Bacillus sp. KM5 করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ধান্য গবেষণা কেন্দ্র, চুঁচুড়ায় বৈজ্ঞানিক পদে কর্মরত।
কেতাবি পড়াশুনোর বাইরে নানা বিষয়ে পড়াশুনো ও লেখালেখি তাঁর শখ। দেশে বিদেশে গবেষণাপত্রে নানা প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করেন নানা জনপ্রিয় দৈনিক ও সাময়িক পত্রিকায়। জার্মানী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা গবেষণাগ্রন্থ Discovering Friendly Bacteria: A Quest (২০১২)। ভারতীয় ভাষায় প্রথম কমিকসের বিস্তারিত ইতিহাস ‘কমিকস ইতিবৃত্ত’(২০১৫), শার্লক হোমসকে নিয়ে লেখা বাংলায় গবেষণা গ্রন্থ ‘হোমসনামা’ (২০১৮), জেনারেল নলেজ িবষয়ক ‘মগজাস্ত্র’ (২০১৮), জেমস বন্ডকে নিয়ে ‘জেমস বন্ড জমজমাট’ (২০১৯), ফেলুদােক িনয়ে গবেষণামূলক উপন্যাস ‘তোপসের নোটবুক’ (২০১৯) এবং মনোজ্ঞ প্রবন্ধ সংকলন ‘কুড়িয়ে বাড়িয়ে’ (২০১৯) সুধীজনের প্রশংসাধন্য। সম্পাদনা করেছেন ‘সিদ্ধার্থ ঘোষ প্রবন্ধ সংগ্রহ’ (১ম ২০১৭, ২য় ২০১৮) এবং ‘ফুড কাহিনি’ (২০১৯)।
Leave a Reply