এবং কালরাত্রি – মনোজ সেন
বড়োদের উপযোগী অপার্থিব কাহিনি সংকলন
প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০১৮
.
আমার অগ্রজা
শ্রীমতী ইন্দিরা সেন-কে
গোরা
.
কৃতজ্ঞতা
প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, অভ্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, সুশান্ত রায়চৌধুরী,
শুভ্র চক্রবর্তী, সোনাল দাস, সুমিত সেনগুপ্ত,
নিরুপম মজুমদার, সোহম ঘোষ, ‘ক্যামেরা জি’
সূচিপত্র
- ছুটি কাটাল অনুপম
- নীলাঞ্জনছায়া
- বিদেশে দৈবের বশে
- ভূত বলে কিছু নেই
- অখিলবাবুর মৃত্যুরহস্য
- বাসুদেবের নতুন বাসা
- মায়াকানন
- প্রভাময়ীর প্রত্যুপকার
- শিকার
- সংহারক সারমেয়
- স্বভাব
- নিমন্ত্রণ
- গঙ্গাধরের সাংবাদিকতা
- মেঘমালা
- পোকা
- পিন্টুচরণ ও নগেন্দ্রবালা
- ভূত ভবিষ্যৎ
- আতঙ্কের অবসান
- ইন্দ্রিয়ের ওপারে
- কালরাত্রি
- অঙ্ক পরীক্ষা
ভূমিকা
এই বইয়ের ভূমিকা লিখতে গেলে লেখকের, অর্থাৎ আমার, সাহিত্যজগতের যাত্রাপথ সম্পর্কে পাঠককে কিছু জানানো দরকার।
আজ থেকে প্রায় পাঁচ দশক আগে হঠাৎই আমি গোয়েন্দা গল্প লিখতে শুরু করেছিলুম। সেই সময়ে বাংলা সাহিত্যজগতের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না বললেই হয়। নেহাতই ঝোঁকের মাথায় লেখা গল্পটা ডাকে ‘রোমাঞ্চ’ পত্রিকায় পাঠিয়ে দিয়েছিলুম।
তখন আমাকে মাঝে মাঝেই দুর্গাপুরে যেতে হত। হাওড়া স্টেশনের বুকস্টল থেকে কেনা ‘রোমাঞ্চ’ পত্রিকা ট্রেনে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ ছিল। তার লেখকদের মধ্যে ছিল অনেক বড়ো বড়ো নাম— শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব রায়, হিমাংশু সরকার, ডা শ্রীধর সেনাপতি ইত্যাদি আরও অনেকে।
এহেন পত্রিকায় নামগোত্রহীন আমার লেখা ছাপা হবে কি না সে-বিষয়ে আমার প্রচুর সন্দেহ ছিল। আশ্চর্যের ব্যাপার, মাস-দুয়েকের মধ্যেই লেখাটা ছাপা হল। শুধু তাই নয়, কিছুদিনের মধ্যেই সম্পাদক রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় আমাকে টেলিফোন করে আরও লেখা দিতে অনুরোধের মোড়কে আদেশ দিলেন। তারপর থেকে দুই দশক ধরে আমি ‘রোমাঞ্চ’ পত্রিকায় লিখেছি বা রঞ্জিতবাবু আমার ঘাড়ে ধরে লেখা আদায় করেছেন। তাঁর অকালমৃত্যুর খবর পাওয়ার পর আমি লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলুম।
একজন আদর্শ সম্পাদক ছিলেন রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়। কত ভাবে যে আমাকে উৎসাহিত করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। আমার লেখার ভুলভ্রান্তিগুলো দেখিয়ে দিয়েছেন। আমি যে সাহিত্যজগতে একেবারে আনকোরা তা জেনেও নিঃস্বার্থভাবে আমাকে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। কোনোদিন আমাকে সরিয়ে রাখার বা চেপে দেওয়ার কোনোরকম চেষ্টা করেননি। বরং আমাকে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছেন। তাঁরই উপদেশ অনুসরণ করে ভূতের গল্প লিখতে শুরু করি। আমার মতো আরও কত অজ্ঞাতকুলশীল লেখক যে রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়ের প্রেরণায় সাহিত্যক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন তা আমার জানা নেই। আজ এই লেখার মাধ্যমে আমার জীবনের সেই সম্পাদকশ্রেষ্ঠকে আমার সশ্রদ্ধ ও সকৃতজ্ঞ নমস্কার জানাচ্ছি।
এর কিছুদিন পরে অধুনা স্বর্গীয় শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও ড অনীশ দেব আবার আমাকে লেখার জগতে নিয়ে আসেন। আমি তাঁদের প্রতিও চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব।
আজ থেকে দশ বছর আগে আমি কালরাত্রি নামক একটি অলৌকিক গল্পের বই প্রকাশ করেছিলুম। মাত্র পাঁচশো কপি ছাপা হয়েছিল। এরপর আর ছাপা হয়নি কারণ পরিবেশক আমাকে জানিয়েছিলেন যে সেই বইয়ের দু-একটা কপি মাত্র বিক্রি হয়েছিল। তারপরে আর কোনো বই প্রকাশ করবার উৎসাহ পাইনি।
কিছুদিন আগে হঠাৎই বুক ফার্ম-এর শ্রীশান্তনু ঘোষ আমার কাছে আসেন ও আমার যাবতীয় লেখা একাধিক বইয়ের আকারে প্রকাশ করার প্রস্তাব দেন। আমি প্রথমে রাজি হইনি, তবে তাঁর সাহিত্যে গবেষণায় গভীর আগ্রহ, কর্তব্যবোধ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার প্রবণতা আর উৎসাহ আমার অকৃত্রিম বলে মনে হয়েছিল। সেই কারণে আমি তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি দিই। যে সময়ের মধ্যে এবং যে উচ্চমানে আমার প্রথম বইটি (৫x৫=পঁচিশ, পাঁচমিশেলি গল্প সংকলন) প্রকাশিত হল, তাতে আমি নিঃসন্দেহ যে আমার অনুমানে কোনো ভুল হয়নি। প্রকাশক, আলংকারিক শিল্পী শুভ্র চক্রবর্তী ও যাঁরাই এই বই প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সকলের কাছে ঋণী রইলুম।
এখানে একথা বলে রাখা ভালো যে এই বইটি, তার পূর্বসুরি, কালরাত্রির পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ। কলেবরে প্রায় দ্বিগুণ। এই বইয়ের পাঠকদের প্রশংসা এবং নিন্দা সবই শ্রীশান্তনু ঘোষের জন্য তোলা রইল।
মনোজ সেন
Leave a Reply