ঋজুদা সমগ্ৰ ৫ – বুদ্ধদেব গুহ
ঋজুদা সমগ্ৰ ৫ – বুদ্ধদেব গুহ
প্রথম সংস্করণ – জানুয়ারি ২০০৪
নাগপুরের প্রদীপ গাঙ্গুলী, তাপস সাহা, সঞ্জীব গাঙ্গুলী
আর সুদীপ্ত ভট্টাচার্য
এবং রায়পুরের প্রদীপ মৈত্রকে
.
ভূমিকা
ঋজুদা কাহিনিগুলি শুধুমাত্র কিশোর পাঠ্য নয়, বাড়ির সকলেরই সমান ভাললাগার।
‘ঋজুদা সমগ্র’র পঞ্চম খণ্ডে পাঁচটি ঋজুদা কাহিনি সংকলিত হল। এর মধ্যে একটি, ‘ফাগুয়ারা ভিলা’ গোয়েন্দা কাহিনি। তোমরা এবং তোমাদের বাড়ির অন্যরা যাঁরা ‘ঋজুদা সমগ্র’র আগের চারটি খণ্ড পড়েছ তারা জানো যে ‘অ্যালবিনো’, ‘রুআহা’, ‘ঋজুদার সঙ্গে সেশ্যেলস আইল্যান্ডে’ এবং ‘কাঙ্গপোকপি’-র মধ্যে ‘রুআহা’ পূর্ব আফ্রিকার রুআহা ন্যাশনাল পার্ক ও রুআহা নদীর উপত্যকায় বিশ্বাসঘাতক ভুষুণ্ডাকে শিক্ষা দেওয়ার কাহিনি, ‘ঋজুদার সঙ্গে সেশ্যেলস আইল্যান্ডে’ জলদস্যুদের দুই পরিবারের মধ্যে লুকিয়ে রাখা গুপ্তধন নিয়ে বিবাদের প্রেক্ষিতে লেখা, ‘কাঙ্গপোকপি’ মণিপুর আর বার্মার (এখন যার নাম মিয়ানমার) পটভূমিতে একটি মস্ত বড় হিরে চুরির রহস্যভেদের গল্প।
এই অবসরে বলে ফেলি যে, কোনও ঋজুদা কাহিনির পটভূমিই কল্পিত নয়। পূর্ব আফ্রিকা থেকে ভারত মহাসাগরের সেশ্যেলস আইল্যান্ডস, বা মণিপুর মিয়ানমার বা আন্দামান আইল্যান্ডস, বা ভারতের নানা প্রান্তের সব বনভূমিতে আমি নিজে ঘুরে আসার পরই ঋজুদা কাহিনি লিখতে বসেছি তোমাদের জন্যে। তাই এগুলি শুধুমাত্র গোয়েন্দা বা শিকার কাহিনি নয়, এগুলি পড়লেও বাড়ি সুদ্ধ সকলের নতুন নতুন নানা জায়গাতে বেড়িয়ে আসার সুযোগ হবে এই সব লেখার মাধ্যমে। নিজে সশরীরে গেছি প্রতিটি জায়গাতেই। ওই সব জায়গা, মানুষজন এবং আরও নানা বিষয়ে ফিরে এসে অনেক পড়াশুনোও করতে হয়েছে যে তা বই পড়লেই তোমরা বুঝবে।
এই খণ্ডে ‘ফাগুয়ারা ভিলা’ ছাড়া অন্যান্য যে কাহিনিগুলি আছে তাদের একটি ‘ঋজুদার সঙ্গে আন্ধারী তাড়োবাতে’। আন্ধারী-তাড়োবা টাইগার রিসার্চ মহারাষ্ট্রের একটি অত্যন্ত পুরনো পার্ক। এখন অবশ্য ছত্তিশগড়ের অন্তর্ভুক্ত। এখানে একরকমের গাছ দেখতে পাওয়া যায় তাদের নাম ভূত-গাছ—Ghost Tree বা Karu Gum Tree। এমন রহস্যময়ী ভয় পাওয়ানো গাছ পৃথিবীর আর কোনও দেশে আছে কি না জানি না।
যেসব পত্র-পত্রিকার পুজোসংখ্যাতে ওই সব কাহিনিগুলি প্রকাশিত হয়েছিল তাঁদের সম্পাদকদের অনুরোধে অনেকসময়ে ভ্রমণ কাহিনির মধ্যে গাজোয়ারি করে শিকার কাহিনি ঢোকাতে হয়েছে নিজের অনিচ্ছাসত্ত্বেও। শিকার কাহিনি লেখার আর বেশি লেখক নাকি এখন তাঁরা পান না তাই আমার ওপরে এমন জোরজার করেন। ‘কেশকাল-এর বাঘিনী’ ছত্তিশগড়ের কেশকালঘাটির পটভূমিতে লেখা। ‘ছোটিডোঙ্গরির চিতা’ ছত্তিশগড়ের বস্তারের নারায়ণপুর ও অবুঝমার-এর মধ্যবর্তী একটি ছোট্ট গ্রাম ছোটিডোঙ্গরির পটভূমিতে লেখা। “লিলি সিম্পসন-এর বাঘ’, পালাম্যুর রুদ-এর পটভূমিতে লেখা। এই সব কাহিনির প্রত্যেকটিতেই ঋজুদা এবং তাঁর তিন সার্গিদ রুদ্র, তিতির এবং ভটকাই আছে।
মহারাষ্ট্রের আন্ধারী-তাড়োবা এবং ছত্তিশগড়ের নানা পাহাড় পর্বত দেখা সম্ভব হত না নাগপুরের প্রদীপ গাঙ্গুলী এবং তাঁর বন্ধুদের উৎসাহ ছাড়া। সব বন্দোবস্ত ওঁরাই করেছিলেন এবং শুধু বন্দোবস্ত নয়, রাজকীয় বন্দোবস্ত। তাই ঋজুদা কাহিনির এই খণ্ডটি আমি তাঁদের উৎসর্গ করে তৃপ্তি বোধ করেছি। তাঁদের ঋণ শোধনীয় নয়, তবে স্বীকার অবশ্যই করা যায়। সেই ঋণ শোধার চেষ্টা নয়, স্বীকার করারই উদ্দেশ্যে এই উৎসর্গীকরণ।
ঋজুদা কাহিনি লিখতে আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে। তোমরা যারা ঋজুদার কাহিনিগুলি পড়ো তাদের এসব কাহিনি পড়তে ভাল লাগলেই আমি ধন্য হব। তোমাদের প্রত্যেককে আগামী নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে
লেখক
ডিসেম্বর, ২০০৩
Leave a Reply