উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ – বামনদেব চক্রবর্তী
পরিবর্ধিত একবিংশ সংস্করণের পুনর্মুদ্রণ ও অগস্ট, ২০২২
পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাই মাদ্রাসা এবং ত্রিপুরা সেকেন্ডারি রোর্ডের নবম ও দশম শ্রেণীর জন্য রচিত।
নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্য : ১৯৮০ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত মাধ্যমিক, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত হাই মাদ্রাসা এবং ত্রিপুরা সেকেন্ডারি বোর্ডের ১৯৯৫, ১৯৯৬ সালের পরীক্ষার ব্যাকরণের প্রশ্নাবলীর বিজ্ঞানসম্মত উত্তর-সংবলিত এবং ১৯৯৮ থেকে ২০১৮ মাধ্যমিক ব্যাকরণের প্রশ্নাবলী সহ তৎসহ অলংকার অধ্যায়ের বিস্তারিত আলোচনা-সমৃদ্ধ [বি-এড, ডাবলিউ-বি-সি-এস, এস-এস-সি প্রভৃতি প্রভৃতি বিবিধ প্রতিযগিতামূলক পরীক্ষারও অপরিহার্য গ্রন্থ]
পরিবর্ধিত একবিংশ সংস্করণের পুনর্মুদ্রণ ও অগস্ট, ২০২২
প্রকাশক : শ্রীকুঙ্কুম চক্রবর্তী
অক্ষয় মালঞ্চ
ভারতীয় সংবিধান
প্রস্তাবনা “আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে এবং তার সকল নাগরিকই যাতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার, চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তির মর্যাদা এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যাতে ভ্রাতৃত্বের ভাব গড়ে ওঠে তার জন্য সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করে, আমাদের গণপরিষদের আজ, ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর, এতদ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ, বিধিবদ্ধ এবং নিজেদের অর্পণ করছি।”
CONSTITUTION OF INDIA
PREAMBLE
WE, THE PEOPLE OF INDIA, having solemnly resolved to constitute India into a SOVEREIGN SOCIALIST SECULAR DEMOCRATIC REPUBLIC AND TO SECURE TO ALL ITS CITIZENS :
JUSTICE, social, economic and political;
LIBERTY of thought, expression, belief, faith and worship; and to promote among them all-–
FRATERNITY assuring the dignity of the individual and the unity and integrity of the Nation;
IN OUR CONSTITUENT ASSEMBLY THIS TWENTY SIXTH day of November 1949, do HEREBY ADOPT, ENACT AND GIVE TO OURSELVES THIS CONSTITUTION.
অভিনব অষ্টম সংস্করণের ভূমিকা
করুণাঘন ঠাকুরের অহৈতুকী কৃপায় ‘উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ’-এর অভিনব অষ্টম সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে।
১৯৮৯ সালের এপ্রিল থেকে মাননীয় পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা-পর্ষৎ শিক্ষাবর্ষের ঋতুবদল ঘটিয়েছেন। ফলে পাঠদান ও পাঠগ্রহণের ক্ষেত্রেও রীতিবদল ঘটতে চলেছে–তার সরব মহড়াও প্রায় শেষ। পর্ষৎ-অনুমোদিত নবম-দশম শ্রেণীর ব্যাকরণ ও নির্মিতি গ্রন্থ দুখানিতে (প্রতিখানি গ্রন্থ অধিকপক্ষে মাত্র ২২০ পৃষ্ঠা-সমন্বিত) শিক্ষার্থীদের মনের ক্ষুধা মিটছে না; তাই নবসৃষ্ট শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকেই আমাদের উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থখানির চাহিদা অভাবিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে (সেই সঙ্গে আমাদের রচনাগ্রন্থ মাধ্যমিক বাণী-বিচিত্রারও)। অভাবিত এই চাহিদা-পূরণের জন্য মুত্রণকার্য খুবই দ্রুত সম্পন্ন করতে হয়েছে। কিছু কিছু নূতন জিনিস দেবার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেওয়া গেল না–কেবল মাধ্যমিক পরীক্ষার ব্যাকরণের উত্তরগুলি সংযোজন করলাম। ফলে গ্রন্থখানির কলেবর পূর্বাপেক্ষা ৩০/৩২ পৃষ্ঠা বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করি, ছাত্রছাত্রীগণ এতে অধিকতর উপকৃত হবেন।
এ বৎসর মুদ্রণযোগ্য কাগজের দাম হঠাৎ শতকরা একশো ভাগের কাছাকাছি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আমাদের বর্ধিত-কলেবর এই গ্রন্থখানির মূল্য বৃদ্ধি না করে উপায় ছিল না। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সহৃদয় শিক্ষকশিক্ষিকা ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকমণ্ডলী অনিচ্ছাকৃত এই মূল্যবৃদ্ধিটুকু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে গ্রহণ করলে নিজেকে কৃতার্থ মনে করব। নিবেদন ইতি–
বিনত
শ্রীবামনদেব চক্রবর্তী
রথযাত্রা
অক্ষয় মালঞ্চ, কলকাতা–৭০০ ০০৭
৫ই জুলাই, ১৯৮৯
অভিনব সপ্তম সংস্করণের ভূমিকা
পরম করুণাময় শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের অহৈতুকী কৃপাকণার স্পর্শে উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ অভিনব সপ্তম সংস্করণে প্রকাশিত হতে চলেছে। এই সংস্করণটিও অভূতপূর্ব দ্রুততার সঙ্গে প্রকাশিত হবার ফলে নুতন কিছু সংযোজন করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করা গেল না। পরবর্তী সংস্করণের সুযোগ পেলে সে আশাপূর্তির চেষ্টা করা যাবে।
একটি প্রতিবেদন-১৯৮৭-র জুন মাসে মাননীয় পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা-পর্ষৎনবম-দশম শ্রেণীর জন্য ব্যাকরণ ও রচনার নুতন পাঠ্যসূচী ঘোষণা করেছেন। তাতে নবম-দশমের ব্যাকরণ এবং রচনাগ্রন্থ পৃথগভাবে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এতদিন (প্রায় তিনটি দশক ধরে) ব্যাকরণ-রচনা বইকে একসঙ্গে সংগ্রথিত করে প্রকাশ করার যে নির্দেশ মাননীয় পর্ষৎ দিয়ে এসেছেন, এবং শ্রদ্ধেয় প্রকাশকগণও যে নির্দেশকে যথাযথ পালন করে এসেছেন, তা যে একান্তরূপে অযৌক্তিক সেটা একমাত্র আমরাই হৃদয়ঙ্গম করে ব্যাকরণ ও রচনাগ্রন্থকে সম্পূর্ণ পৃথক্ গ্রন্থরূপে প্রকাশ করে এসেছি। রচনা-বইয়ের মধ্যে ব্যাকরণকে কোনোরকমে ঠাঁই করে দেওয়ায় ব্যাকরণের মর্যাদা বহুলাংশে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বহুবিদ্যালয়ের শিক্ষকশিক্ষিকাগণ তাই মৌনী প্রতিবাদরূপে অক্ষয় মালঞ্চ–প্রকাশিত ‘উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ’ এবং ‘মাধ্যমিক বাণী-বিচিত্রা’ গ্রন্থদুটিকে সাদর অভিনন্দন জানিয়েছেন। সমগ্র প্রকাশনাজগতে অক্ষয়-মালঞ্চের পঁচিশ বৎসর-ব্যাপী এই একক সংগ্রাম, ন্যায়ের সংগ্রাম, মনস্তত্ত্বঘটিত মর্যাদাবোধের সংগ্রাম। অক্ষয় মালঞ্চের সেই নীতি (ব্যাকরণ-রচনাকে পৃথভাবে প্রকাশ করার নীতি) মাননীয় পর্ষৎ এতদিন পরে মেনে নিয়েছেন। এ জয় অক্ষয় মালঞ্চের জয় নয়, সুধী শিক্ষকসমাজ এবং অভিভাবকমণ্ডলীর জয়।
আর একটি কথা, সমাসের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ, তৃতীয়া তৎপুরুষ ইত্যাদি ক্রমবাচক তৎপুরুষ সমাসের পরিবর্তে আমাদেরই উদ্ভাবিত কর্ম-তৎপুরুষ, করণ-তৎপুরুষ, অ-কারক তৎপুরুষ ইত্যাদি নামকরণও মাননীয় মধ্যশিক্ষা-পর্ষৎ গ্রহণ করেছেন।
বাজার থেকে কেনা কাগজের দাম সুযোগ বুঝে প্রচণ্ড চড়ে গেছে। তথাপি গরিব দেশের ছাত্রছাত্রীদের মুখের দিকে চেয়ে আমরা ৪৪৮ পৃষ্ঠার এই বইখানির মূল্য পূর্ব-পূর্ব বৎসরের মতো কুড়ি টাকাই রাখলাম। আশা করব, এই দুর্মূল্যের দিনেও গ্রন্থখানি শিক্ষকশিক্ষিকার স্নেহদৃষ্টি-লাভে অধিকতর সার্থক হবে। নিবেদন ইতি–
শ্রীবামনদেব চক্রবর্তী
হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন,
৭৫ ও ৭৭, স্বামী বিবেকানন্দ রোড, হাওড়া-৪
শ্রীপঞ্চমী, ২৩শে জানুআরি, ১৯৮৮
অভিনব পঞ্চম সংস্করণের ভূমিকা
অহৈতুক করুণাসিন্ধু শ্রীশ্রীঠাকুরের কৃপায় উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ অভিনব পঞ্চম সংস্করণে প্রকাশিত হল। অভাবিতপূর্ব দ্রুততার সঙ্গে পূর্ববর্তী সংস্করণটি নিঃশেষ হওয়ায় ছাত্র ও শিক্ষকমহলে গ্রন্থখানি সমাদৃত হচ্ছে বুঝতে পারলাম। আমাদের পক্ষে এটি উৎসাহজনক লক্ষণ।
বর্তমান সংস্করণ-প্রকাশে এই দীন গ্রন্থকারকে যারা প্রেরণা দিয়ে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে দুর্গাপুর স্টীল প্লান্ট এ জোন হাই স্কুলের স্বনামধন্য শিক্ষক শ্রীবুধদেব চৌধুরী ও শিবাজী রোড হাই স্কুলের শ্রীশম্ভুনাথ কর, কলকাতার চিত্তরঞ্জন কলোনী হিন্দু বিদ্যাপীঠের শ্রীঅরুণ দাসগুপ্ত মহাশয়ের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
মাননীয় মধ্যশিক্ষা-পর্ষৎ কারক-বিভক্তির ক্ষেত্রে এতদিন-চলে-আসা সংস্কৃত ব্যাকরণের অন্ধ অনুকরণের পূর্ণচ্ছেদ ঘটিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয়া ইত্যাদি ক্রমবাচক বিশেষণপ্রয়োগের বদলে সরাসরি এ, তে, এতে, রে ইত্যাদি বিভক্তিচিহ্নের নাম উল্লেখ করবার নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ তৎপুরুষ সমাসের বেলায় চিরাচরিত সেই দ্বিতীয়া তৎপুরুষ, তৃতীয়া তৎপুরুষ ইত্যাদি নামের দাপট সমানেই চলেছে। এ ব্যাপারে মধ্যশিক্ষা-পর্ষদের কাছ থেকেই যথাযথ নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু মাননীয় পর্ষৎ-কর্তৃপক্ষ লক্ষণীয়ভাবেই মৌনী রয়েছেন। তাই কয়েকজন শিক্ষকবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে তৎপুরুষ সমাসের নবনামকরণে নিজেই উদ্যোগী হয়েছি। এ ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহ যুগিয়েছেন পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের শ্রীফণিভূষণ খাটুয়া, কলকাতা ব্রাহ্ম বয়েজ হাই স্কুলের শ্রীবন্দিরাম চক্রবর্তী এবং শ্যামবাজার এ ভি স্কুলের শ্রীকালিদাস ভট্টাচার্য।
যথেষ্ট সতর্কতা-সত্ত্বেও মুদ্রণে কিছু ত্রুটি রয়েই গেল। এ ত্রুটির দায় নিজের স্কন্ধেই তুলে নিচ্ছি। গ্রন্থখানির উৎকর্ষ যদি কিছু থেকে থাকে, তার ষোলআনা কৃতিত্ব ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অসংখ্য বিদ্যালয়ের ছাত্রহিতৈষী শিক্ষাব্রতীদের প্রাপ্য। পরবর্তী সংস্করণে শিক্ষকসমাজের কাছ থেকে গঠনমূলক যেকোনো নির্দেশ সমাদরের সঙ্গে গৃহীত হবে, এই আবেদন জানিয়ে বক্তব্য শেষ করছি। নিবেদন ইতি–
বিনত
শ্রীবামনদেব চক্রবর্তী
হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন,
৭৫ ও ৭৭, স্বামী বিবেকানন্দ রোড, হাওড়া-৪
৩রা জানুআরি, ১৯৮৬
অভিনব দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা
পরমকল্যাণময় শ্রীশ্রীঠাকুরের কৃপায় উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণের অভিনব দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হল। প্রথম সংস্করণ আশাতীত দ্রুততার সঙ্গে নিঃশেষ হওয়ায় দ্বিতীয় সংস্করণের প্রকাশ জরুরী হয়ে পড়ে। খুঁটিনাটি তথ্যপূর্ণ ব্যাকরণের প্রকাশ এমনিতেই বেশ সময়সাপেক্ষ। তার উপর কাগজের দুষ্প্রাপ্যতা ও অনিয়মিত সরবরাহ, অচিন্তিতপূর্ব বিদ্যুদবিভ্রাটের দাপট গ্রন্থখানির প্রকাশ অনিবার্যভাবে বিলম্বিত করেছে। অনুরাগী শিক্ষাব্রতিগণ গ্রন্থনির্বাচনের মরশুমে সৌজন্যসংখ্যা না পেয়েও যে অসীম ধৈর্যের সঙ্গে প্রতীক্ষা করেছেন, তার জন্য দীন গ্রন্থকার চিরকৃতজ্ঞ রইল।
মাননীয় পর্ষৎ-নির্ধারিত ব্যাকরণের ত্রুটিপূর্ণ, খণ্ডিত ও ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচী অনুসরণ করতে গিয়ে শিক্ষকশিক্ষিকাগণ যতই বাস্তব অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন, পর্ষৎ-অনুমোদিত বাজারচলতি রচনাপুস্তকের মধ্যে কোণঠাসা ব্যাকরণের টুকিটাকিতে যতই তাঁদের চাহিদা অপূর্ণ থাকছে, ততই তারা উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণকে বিশেষ নির্ভরযোগ্য বলে মনে করছেন। সাধারণভাবে মাধ্যমিক স্তরেই ব্যাকরণশিক্ষার যেখানে পরিসমাপ্তি, এই স্তরের অর্জিত বিদ্যা সম্বল করেই শিক্ষার্থীরা যেখানে প্রবেশ করবে উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে, সেখানে ব্যাকরণের ছিটেফোঁটায় ছাত্ৰহিতৈষী শিক্ষকের মন কখনই ভরতে পারে না। তার উপর মাননীয় উচ্চ-মাধ্যমিক সংসদ বাংলা (প্রথম ভাষা) ব্যাকরণের নম্বর সম্প্রতি (১৯৮১ সালের পরীক্ষা থেকেই) ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২৫ করেছেন। অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যাকরণশিক্ষার গুরুত্ব আরও বর্ধিত করা হল। ভাষামাতৃকার এই চিরন্তন দাবির দিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণের পথ-পরিক্রমা।
এবার কৃতজ্ঞতার কথা। বছরতিনেক আগে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের সুধী শিক্ষকদ্বয় শ্রীফণিভূষণ খাটুয়া ও শ্রীশান্তি সিংহের সঙ্গে একটানা কয়েকটা দিন ব্যাকরণের নানা দিক সম্পর্কে আলোচনা হয়। ওঁরা দুজনেই অযাচিতভাবে আমার ভাণ্ডার ভরে দিয়েছেন। অথচ বিগত সংস্করণের ভূমিকায় কৃতজ্ঞতাস্বীকারে ফণীবাবুর নামটি বাদ পড়ে গেল। এটি নিছক মুদ্রণপ্রমাদ বলে নিজেকে সান্ত্বনা দেব না। কিন্তু ফণীবাবু এ ক্রটিকে আশ্চর্যরকমের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে গ্রহণ করেছেন। শিবতুল্য লোক এমনই হন।
বর্তমান সংস্করণের প্রকাশনা-ব্যাপারে যারা আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন, তাদের মধ্যে চন্দননগর কানাইলাল বিদ্যামন্দিরের সহকারী প্রধানশিক্ষক শ্রীনন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়, শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক শ্রীপ্রফুল্লকুমার সমাজদার, বাগবাজার মালটি গার্লস স্কুলের শ্রীমতী সুতপা রায়চৌধুরী, ব্রাহ্ম বয়েজ হাই স্কুলের শ্রীবন্দিরাম চক্রবর্তী, আর্যকন্যা মহাবিদ্যালয়ের শ্রীমতী চিত্রা ঘোষ, মিত্র ইনস্টিটিউশন (ব্রাঞ্চ)-এর শ্ৰীযোগেশ চৌধুরী, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম স্কুলের শ্রীকালীপদ মণ্ডল, বর্ধমান টাউন স্কুলের শ্রীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়, হাওড়া থানামাকুয়া মডেল হাই স্কুলের শ্রীরামানুজ চক্রবর্তী, আমাদের সহকর্মী শ্রীশিশিরকুমার বসু ও শ্রীপরশুরাম চক্রবর্তী বিশেষ উল্লেখযোগ্য। নিবেদন ইতি–
বিনত
শ্রীবামনদেব চক্রবর্তী
হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন,
৭৫ ও ৭৭, স্বামী বিবেকানন্দ রোড, হাওড়া-৪;
৮ই জানুআরি, ১৯৮২
অভিনব প্রথম সংস্করণে গ্রন্থকারের নিবেদন
পরমকারুণিক শ্রীশ্রীঠাকুরের অনিঃশেষ কৃপায় উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ সম্পূর্ণ নবকলেবরে প্রকাশিত হইল। গ্রন্থখানি পুনঃপ্রকাশে নানা কারণে বিশেষ বিলম্ব ঘটায় অসংখ্য অনুরাগী শিক্ষকশিক্ষিকা ও শিক্ষার্থিবৃন্দকে যে অভূতপূর্ব অসুবিধার সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল, তজ্জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত। যে অপরিসীম ধৈর্যের সঙ্গে তাঁহারা গ্রন্থখানির পুনঃপ্রকাশের প্রতীক্ষা করিয়াছেন, সেজন্য আমরা তাঁহাদের নিকট চিরকৃতজ্ঞ রহিলাম।
পর্ষৎ-নির্ধারিত বাংলা ব্যাকরণের সর্বাধুনিক পাঠ্যসূচী (১৯৭৩) আপাতদৃষ্টিতে ছাত্রসমাজের ভার কিছুটা লাঘব করিয়াছে বলিয়া মনে হইতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহাদের কয়েকটি নূতন অসুবিধারও সৃষ্টি করিয়াছে। পর্ষৎ নির্দেশ দিয়াছেন–নবম শ্রেণীর প্রথমের দিকেই সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীতে অধীত বিষয়ের মৌখিক পুনরালোচনা প্রয়োজন। মৌখিক আলোচনার বিষয়বস্তু কিন্তু নবম-দশম শ্রেণীর ব্যাকরণ-গ্রন্থে থাকিবে না। অথচ আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এই কথাই বলে যে, মৌখিক পঠনপাঠনের সময় আলোচ্য বিষয়সমন্বিত একখানি ব্যাকরণ-পুস্তক হাতের কাছে থাকিলে কী শিক্ষক কী শিক্ষার্থী সকলেরই বিশেষ সুবিধা হয়। তাহা হইলে, মাধ্যমিক শ্রেণীতে উন্নীত ছাত্রছাত্রী কি পিছনে-ফেলিয়া-আসা প্রা-মাধ্যমিক শ্রেণীর একখানি ব্যাকরণ বইও সঙ্গে সঙ্গে বহিয়া বেড়াইবে? ইহা কি বাস্তবসম্মত? না, মনস্তত্ত্বের দিক্ দিয়া যুক্তিযুক্ত? আর, পুনরালোচনা কি নবম শ্রেণীর প্রথমের দিকেই গণ্ডিবদ্ধ থাকিবে? নবম-দশম শ্রেণীর প্রতিটি পরীক্ষা প্রস্তুতির সময় সে আলোচনা কি একান্ত অপরিহার্য নয়? আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীর মান কি নবম-দশম শ্রেণীতে উন্নততর হওয়াই কাঙ্ক্ষিত নয়? সন্ধি, লিঙ্গ, কারবিভক্তি, শব্দরূপ, বিশেষ্য-বিশেষণ সর্বনাম পদ, বাচ্য, পদ-পরিবর্তন, বিপরীতার্থক শব্দ-সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীতে অধীত মাধ্যমিক শ্রেণীর গ্রন্থাবহির্ভূত অথচ মাধ্যমিক পরীক্ষার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এইসমস্ত বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ ও উন্নততর আলোচনা কি গ্রন্থনিরপেক্ষ হওয়া আদৌ বাঞ্ছনীয়? ণত্ব বিধি ষত্ব-বিধির মতো জটিল অথচ বিশেষ প্রয়োজনীয় একটি বিষয়ের প্রাথমিক আলোচনাটুকু কেবল ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুত রাখিয়াই পর্ষৎ-কর্তৃপক্ষ দায় সারিয়াছেন, সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীতে রাখেন নাই, নবম-দশম শ্রেণীতে তো নয়ই। এমন পরিস্থিতিতে বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেরণায় আমরা উল্লিখিত বিষয়সমূহের পূর্ণাঙ্গ আলোচনাও বর্তমান গ্রন্থখানিতে সন্নিবিষ্ট করিয়াছি। ফলে শিক্ষক–শিক্ষার্থি-নির্বিশেষে সকলেরই ব্যাকরণ-বিষয়ক যাবতীয় কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর এই একখানি গ্রন্থের মধ্যে পাওয়া যাইবে। এই কারণে গ্রন্থখানির কলেবর। মধ্যশিক্ষা-পর্ষৎ-নির্ধারিত পৃষ্ঠাসংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সংগতভাবেই সম্ভব হয় নাই। আমাদের এই প্রচেষ্টা কতদুর সার্থক হইয়াছে, তাহার নিরপেক্ষ মূল্যায়নভার ছাত্রভৈষী শিক্ষাব্রতীদের উপর ন্যস্ত করিলাম।
গ্রন্থখানির বর্তমান সংস্করণ-প্রকাশে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছেন পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-কবি অনুজপ্রতিম শ্রীশান্তি সিংহ। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি সমাধানের সূত্রগুলিও আমার হাতে অযাচিতভাবে তুলিয়া দিয়াছেন। গ্রন্থখানির উৎকর্ষবিধানে যাঁহারা আমাকে নানাভাবে অনুপ্রেরণা দিয়াছেন তাহাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হইলেন কলিকাতা ব্রাহ্ম বয়েজ হাই স্কুলের শ্রীবন্দিরাম চক্রবর্তী, কলিকাতা টাউন স্কুলের সহকারী প্রধানশিক্ষক শীতারকনাথ ঘোষ, বাগবাজার মালটি গার্লস স্কুলের শ্রীমতী সুতপা রায়চৌধুরী, বাগবাজার হাই স্কুলের শ্রীনির্মলনারায়ণ গুপ্ত, দক্ষিণেশ্বর হাই স্কুলের শ্রীস্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামবাজার হাই স্কুলের শ্রীদীপক চৌধুরী, পাইকপাড়া রাজা মণীন্দ্র মেমোরিয়াল হাই স্কুলের শ্রীমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, হাওড়া অক্ষয় শিক্ষায়তনের শ্রীঅসিত ভট্টাচার্য ও আমাদের সহকর্মী শ্রীশিশিরকুমার বসু। মুদ্রণকার্যে নিষ্ঠ সহযোগিতা করিয়াছেন অক্ষয় প্রকাশনীর কর্মাধ্যক্ষ শ্রীঅনাথচন্দ্র মেদ্দা। ইহাদের সহিত আমার যে হৃদ্য সম্পর্ক তাহা কৃতজ্ঞতাপ্রকাশের অবকাশ রাখে না।
উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ সুকুমারমতি শিক্ষার্থিগণের মাতৃভাষার প্রতি যদি কিঞ্চিম্মাত্র অনুরাগ জাগ্রৎ করিতে পারে, তাহার সবটুকু কৃতিত্বই পশ্চিমবঙ্গের সহৃদয় শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দের, যাঁহারা বিগত দুইটি দশক ধরিয়া প্রশ্নের পর প্রশ্ন করিয়া ব্যাকরণষিয়ক নানান সমস্যা-সমাধানে আমাকে প্রেরণা দিয়া আসিতেছেন। গ্রন্থখানির ত্রুটি যাকিছু রহিয়া গেল, তাহার জন্য দীন গ্রন্থকারই দায়ী রহিল। নিবেদন ইতি–
বিনত
শ্রীবামনদেব চক্রবর্তী
হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন,
৭৫ ও ৭৭, স্বামী বিবেকানন্দ রোড, হাওড়া-৪
শুভ রথযাত্রা, ১৩৮৭ সাল
saraf ullah sayan
i want to read some books