ইহুদী জাতির ইতিহাস ২ (ইসরাইলের উত্থান-পতন) (শেষ খণ্ড) – আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ
নির্বাসিত ইহুদীদের উদ্বাস্তু জীবন থেকে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দুই হাজার বছরের ইতিহাস এবং ইহুদী জাতির ভবিষ্যৎকথন
সম্পাদনা – উচ্ছ্বাস তৌসিফ
প্রথম প্রকাশ – ফেব্রুয়ারি ২০২২, ফাল্গুন ১৪২৮
প্রকাশক – জাহাঙ্গীর আলম, ছায়াবীথি
প্রচ্ছদ – আদনান আহমেদ রিজন
কৃতজ্ঞতা – Roar বাংলা
.
উৎসর্গ
আব্বু-আম্মুকে
পড়ার বইয়ের বাইরে অনেক বাসাতেই নাকি গল্পবই পড়ায় বাধা থাকে। আমার বাধা ছিল না কোনো। তার চেয়েও বড় কথা, এই যে আমার আগ্রহে সাড়া দিয়ে অন্য ধর্মের বইটই ছোটবেলা থেকেই আব্বু কিনে দিয়েছিল, সেজন্য কৃতজ্ঞতা। নাহলে কোনোদিনই আমার এত কিছু পড়া হতো না, এগুলো নিয়ে আগ্রহও জন্মাতো না, আমার বইগুলোও লেখা হতো না। আমি এখনও ছোটবেলার সেই দাগানো রেফারেন্স বইগুলোই ব্যবহার করি, নতুন করে কিনিনি।
.
সম্পাদকের ভূমিকা
ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠী হিসেবে ইহুদী জাতি বেশ রহস্যময়। প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে প্রমাণিত না হলেও, ধর্মীয়ভাবে তাদের ইতিহাসের শেকড় অনেক প্রাচীন। বর্তমানে ‘ইহুদী জাতি’ ও ‘ইসরাইল’ মোটামুটি সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য মুসলিম সমাজে ইহুদীদের নিয়ে আছে ক্রোধ, ক্ষোভ এবং ক্ষেত্রবিশেষে ঘৃণা। কেন?
এই সবকিছুর জড় অনুসন্ধান করতে গেলে সময়ের হাত ধরে আমাদের ফিরে যেতে হবে সাড়ে তিন হাজার বছর আগের সেই প্রাচীন সময়ে। লেখক আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ সেটাই করেছেন। এ নিয়ে ২০২০ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার লেখা ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’।
লেখার শুরুটা হয়েছিল অবশ্য অন্যভাবে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ রোর বাংলার পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’ নামে একটি সিরিজ লিখছিলেন। শুরু করেছিলেন ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি। এই সিরিজের ১৭টি পর্ব রোরে প্রকাশিত হয়েছে। পরে পাঠকদের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে লেখক সম্পূর্ণ একটি বই লেখা শুরু করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই বইটিই প্রকাশিত হয়।
আমি নিজে বইটি পড়া শুরু করি রোর বাংলায়। গল্পের গভীরে ঢুকে আর থামার উপায় নেই। কাজেই, বইটা কিনে পড়তে হলো। কিন্তু সেখানেও গল্পের শেষ হলো না।
‘ইসরাইলের উত্থান-পতন’ সেই ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’-এর দ্বিতীয় ও শেষ খণ্ড। প্রথম বইটির একটি সারমর্ম তুলে ধরে এ খণ্ডটি শুরু করেছেন লেখক। তারপর ধারাবাহিকভাবে ইতিহাসের বাঁক ঘুরে, রোমান সাম্রাজ্য, পারস্য সাম্রাজ্য, মুসলিম সাম্রাজ্য, ইউরোপে ইহুদীদের জীবন, হলোকাস্ট হয়ে আজকের ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের পুরো ইতিহাসটি তুলে ধরেছেন। বইটি পড়লে ইহুদীদের গল্পটা যেমন জানা যাবে, তেমনই বোঝা যাবে বর্তমান ফিলিস্তিন কীভাবে আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছাল। জানা যাবে নির্মম, রক্তাক্ত এক ইতিহাস।
বইটিতে বিশেষ সংযোজন হিসেবে পরিশিষ্টাংশে আছে ইহুদীদের পুরো ইতিহাসের সময়কাল নিয়ে একটি অধ্যায়। পাশাপাশি হিব্রু ভাষার একদম বেসিকটা যেন পাঠক ধরতে পারেন, সেজন্যেও একটি অধ্যায় থাকছে। আর থাকছে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর। ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’ বইটি পড়ে পাঠকেরা নানা সময়ে লেখকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রশ্ন পাঠিয়েছেন। বাছাইকৃত প্রশ্নগুলোর জবাব থাকছে এ বইতে।
আমাকে যখন লেখক আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ বইটা সম্পাদনা করতে বললেন, রাজি হয়ে গেলাম দ্রুতই। এরকম দারুণ একটা বই প্রকাশের আগে পড়ে ফেলার সুযোগ পাওয়াটা বেশ লোভনীয় বটে। তবে সম্পাদনার ঝক্কিও কম নয়। কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের সহজ ভাষা এবং চমৎকার উপস্থাপনা এই ঝক্কি অনেকটাই সহজ করে দেয়। ক্লান্তি আসে না। তার ওপর বর্ণাঢ্য ইতিহাসের ঘটনার ঘনঘটা তো আছেই! একটানা পড়ে ফেলা যায়। তবে এ বইটা একটু সময় নিয়ে পড়তে হবে। এত তথ্যের সমাবেশ ঘটেছে বইটিতে, মনোযোগ দিয়ে না পড়লে মুশকিল। খানিকটা এগিয়ে তাল হারিয়ে ফেলতে হবে সেক্ষেত্রে।
বাংলা ভাষায় ইহুদী জাতি ও ইসরাইল-ফিলিস্তিনের ইতিহাস এত বিস্তৃত পরিসরে আগে কখনো লেখা হয়নি। সে অর্থে এই বইটিকে একটি মাইলফলক বলা যায়। পড়ে আমি যে তৃপ্তি পেয়েছি, ইহুদী জাতির রহস্যজনক ইতিহাস নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তারাও ঠিক ততটাই তৃপ্তি পাবেন বলে মনে করি।
উচ্ছ্বাস তৌসিফ
মিরপুর, ঢাকা
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২
.
লেখকের কথা
২০২০ সালের বইমেলাতে বেরিয়েছিল আমার ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’ বইটি। কথা ছিল, ২০২১ সালের মেলাতেই বের হবে ‘ইসরাইলের উত্থান-পতন’। কিন্তু কীসের কী, করোনা মহামারি এসে ভেস্তে দিল যাবতীয় পরিকল্পনা। আমি সেবার একদিনও বইমেলাতে যাইনি, বের করিনি একটি বইও। তবে ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলাম যে, বইখানা আসছে শিগগিরই। সেই আসছে আসছে করে আরেকটি বছর পেরিয়ে গেল। দু’বছর বাদে ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হলো ‘ইসরাইলের উত্থান-পতন’। এর মাঝে ২০২১ সালে ইসরাইলের গাজা আক্রমণ হয়ে যাওয়াতে নতুন করে লোকের আগ্রহ জেগে ওঠে পুরো বিষয়টি জানার। আমি আরও কিছু রসদ পেলাম, সেগুলো যোগ করলাম পাণ্ডুলিপিতে, আর সেই সাথে উত্তর দিলাম শত শত লোকের প্রশ্নের। আমার বিশ্বাস, বইটি এখন মোটামুটি পরিপূর্ণ বলা চলে।
প্রশ্ন হলো, ‘ইসরাইলের উত্থান-পতন’ বইটি কি আগের বইয়ের সিকুয়েল? উত্তর হলো, হ্যাঁ, আমি বইটি চিন্তা করে রেখেছিলাম ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’ লিখবার সময়ই, একসাথে মিলিয়ে লিখতে পারলেই ভালো লাগতো, কিন্তু ৭০০ পৃষ্ঠার বই কেউ পড়বে কিনা সেই সন্দেহ আঁকড়ে ধরেছিল। এখানে একটি ‘কিন্তু’ আছে। কিন্তুটি হলো, কেউ চাইলে এই ‘ইসরাইলের উত্থান-পতন’ বইটি এককভাবে পড়তে পারেন, আবার ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’ বইয়ের সাথে মিলিয়েও পড়তে পারেন। দুটোই চলে। ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’ যেখানে খ্রিস্টপূর্ব ‘ধর্মীয়’ ইতিহাস বর্ণনা করেছে, ‘ইসরাইলের উত্থান-পতন’ বইটি সেখানে খ্রিস্ট- পরবর্তী নিখাদ লিপিবদ্ধ ইতিহাস তুলে এনেছে। প্রথমটি পড়লে ধর্মীয় সমস্ত কিছু জানা হয়ে যাবে যা জানা দরকার এ বিষয়ে, আর দ্বিতীয়টি পড়লে ইতিহাস পুরোটা জানা হয়ে যাবে, যদি ধর্মীয় ব্যাকস্টোরি জানার আগ্রহ না থাকে কারও। আর দুটোই পরপর পড়লে পাঠক অর্জন করতে পারবেন পবিত্র ভূমির আগাগোড়া ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা।
যাক গে। অনেকে প্রশ্ন করেছেন আমাকে, পবিত্র ভূমির সমস্যার সমাধান কী? এ প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারলে তো ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’ এতদিনে আমার হাতেই চলে আসতো! পবিত্র ভূমিতে এখন মুসলিমদের দু’ভাগে ভাগ করা যায়- ইসরাইলি নাগরিক যারা, আর যারা তা নয়, অর্থাৎ ফিলিস্তিনি মুসলিম। এ ব্যাপারটি অনেকে নিতেই পারেন না যে, ইসরাইল দেশটিতে মুসলিম আছে। শুধু যে আছে, তা-ই নয়, মোট জনসংখ্যার প্রায় ২১% হলো মুসলিম; করোনা শুরুর আগের হিসেব বললাম। ১৯৪৮ সালের ঘটনার পর যারা ইসরাইলি বর্ডারের ভেতরে রয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই আরব মুসলিমদেরকে ডাকা হয় ‘৪৮-আরব’। এদের মাঝে আবার নেগেভ মরুর বেদুইনরাও আছে, যাদের গ্রামে এখনও অনেকের বিদ্যুৎ-পানি পৌঁছায়নি। ৪৮ আরবদের আত্মীয়-স্বজনরা ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, জর্ডান, সিরিয়া ও লেবাননে থাকে। এই ইসরাইলি আরবদের প্রায় ৬০% বর্তমানে ইসরাইলকে ভালো চোখেই দেখে, অবাক লাগতে পারে শুনে। আর বেদুইনরাও নিজেদের ইসরাইলি পরিচয় দিয়ে থাকে। পূর্ব জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি মুসলিমদের জন্য ইসরাইলের পক্ষ থেকে নাগরিকত্বের অফার রয়েছে, কিন্তু সবাই সেই অধিকার গ্রহণ করে না।
এই যে দেখুন, লেখকের দুটো কথা লিখতে বসে জ্ঞান দেয়া শুরু করে দিলাম, এগুলো নিয়ে বিস্তারিত বইয়ের ভেতরেই নাহয় পড়ে নেবেন। তবে এই বইটি মূলত এই পবিত্র ভূমির আজকের অবস্থা এমনতর কেন- এই প্রশ্নের কারণ অনুসন্ধানের একটি প্রয়াস।
আমি অধীর আগ্রহে থাকব পুরো ইতিহাস পরে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া শুনবার। বর্তমান পরিস্থিতি বোঝানোর ব্যাপারে আমি যদি এতটুকুও সাহায্য করতে পারি কোনো পাঠকের, তাহলেই এই বই লেখা সার্থক।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ
ঢাকা
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
বিঃদ্রঃ আমার বইগুলোতে হিব্রু লিপি কেন ব্যবহার করি? এ প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন। উত্তর হলো, মূল উচ্চারণগুলো করার বা বোঝার জন্য এই লিপির প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু পাঠকেরা তো পড়তে পারেন না! এই সমস্যার সমাধানের জন্য এ বইয়ের শেষে দ্রুত সময়ে হিব্রু পড়ার টেকনিক যোগ করে দিয়েছি। এবার আপনি আমার বইগুলোর হিব্রু উচ্চারণ করে ফেলতেই পারেন!
Leave a Reply