ইহুদী জাতির ইতিহাস – আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ
ঐতিহাসিক উত্থান-পতন থেকে যেভাবে আজকের ইসরাইল: ইসলাম ও ইহুদী ধর্মবিশ্বাসের আলোকে পবিত্র ভূমির তিন হাজার বছরের দ্বন্দ্বের গোড়া অনুসন্ধান
সম্পাদনা – মুহাইমিনুল ইসলাম অন্তিক
প্রথম প্রকাশ – ফেব্রুয়ারি ২০২০, ফাল্গুন ১৪২৬
প্রকাশক – জাহাঙ্গীর আলম, ছায়াবীথি
.
পার্থ দা ও রুহী আপুকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করা যাবে না, মাস্টার্স জীবনে তাদের থেকে প্রতিদিন এত অ্যাকাডেমিক সাহায্য না পেলে এই লেখালেখিতে সময় দেয়া হতো না আমার, আমি নিশ্চিত।
আমার হয়ে পড়ালেখাটা মনে হয় এ দু’জনই করে দিতেন, বিশেষ করে পার্থ দা; আর আমি কেবল পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে যেতাম। পড়াশোনার পর্ব চুকিয়ে পার্থ দা আছেন বিশ্বব্যাংকে, আর রুহী আপু আছেন ক্যানাডার ভ্যাংকুভারে, আরও ডিগ্রি তার নামের শেষে যোগ করতে। তবে মিস করি তাদের সাহায্য।
আমার দুটো বইয়ের প্রচ্ছদ করে দিয়েছে আমার আইবিএ জীবনের বন্ধুবর মারযুক। পছন্দমতো ভিজুয়ালাইজ করবার কাজটা ঠিকঠাক করে নিতে আমার প্রতিটি কথা শুনে গিয়েছে বিনাবাক্য ব্যয়ে। আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী- এই তত্ত্বে যদি মানুষের কাছে অন্তত প্রথম দেখাতেই প্রচ্ছদ ভালো লেগে থাকে, তবে সেই কৃতিত্ব মারযুকের আমার প্রায় সকল কাজ কর্মের ভিজুয়াল ফাইন টিউনিং করে দেন যিনি, তিনি জাকারিয়া ভাই, একজন মাস্টার ডিজাইনার।
এই বইগুলোর প্রচ্ছদেও তার হাত আছে ফন্টের কাজ-কারবারে; সর্বাত্মক সহযোগিতায় পাশে আছেন প্রমোশনের ব্যাপারেও। যখন তখন বিরক্ত করে তার কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেয়া আমার অভ্যেস।
.
ভূমিকা
আব্দুল্লাহর সাথে প্রথম দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলি গত বছরের কোনো এক সময়, সঠিক মনে পড়ছে না। তার অফিস শেষে একদিন চলে আসতে বলি আমার কারওয়ান বাজার অফিসে। তার অনলাইন লেখাগুলোর টপিকের সাথে আমার আগ্রহের বিষয়বস্তু বেশ মিলে যায়। দু’ তিন দিন এরকম কথা বলবার সময় কোনো এক ফাঁকে বলেছিলাম, “তোমার ইহুদী জাতির ইতিহাস সিরিজটা তো দেখি একদম তথ্যের খনি!”
তখনও জানতাম না, সে বই বের করে ফেলবে এ সিরিজটি নিয়ে। অনলাইনে বেশ কয়েকটা অধ্যায়ই আমি পড়েছিলাম, কিন্তু বাকি ঘটনাগুলো সব একত্রিত করে এ বইতে আব্দুল্লাহ একদম পুরো খ্রিস্টপূর্ব ইতিহাস তুলে এনেছে সহজ করে, সবার পাঠযোগ্য করে। বইটি পড়ে কেউ হতাশ হবেন না, এটুকু বিশ্বাস আছে আমার।
আব্দুল্লাহর বইগুলোর জন্য শুভকামনা রইলো।
মাহমুদুল হাসান সোহাগ
চেয়ারম্যান, অন্যরকম গ্রুপ
১১ জানুয়ারি, ২০২০
.
শুভেচ্ছা
রোর বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখাগুলোর তালিকা করলে আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের বেশ কয়েকটি লেখার নাম আসবে অবধারিতভাবে। রোরে প্রকাশিত তার জনপ্রিয় দুটো চলমান সিরিজ সম্পূর্ণ করে পূর্ণাঙ্গ বই আসছে- বিষয়টি আমাদের জন্য দারুণ আনন্দের, যার মাঝে একটি হলো এই ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’।
তথ্য ও সততার শক্তিকে পাথেয় করে এগিয়ে যাক জ্ঞানের প্রকাশ- এই আমাদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। লেখক ও প্রকাশকের জন্য রইলো অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
তাহসিন মাহমুদ
প্রধান সম্পাদক
রোর বাংলা
২৪ জানুয়ারি, ২০২০
.
লেখকের কথা
আমি যখন ইহুদী জাতির ইতিহাস নিয়ে লেখা শুরু করি, তখন সম্ভবত ২০১৫ সাল। লেখালেখির শুরুটা ফেসবুকে, এর পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় নিয়ে লিখছিলাম, সেটা নিয়েও বই করা হয়েছে সম্পূর্ণ করবার পর। লেখালেখি ইউনিভার্সিটি লাইফে শুরু করলেও আগ্রহটা জন্মে আরও আগে। সেই কলেজ থেকে।
গল্প আর কাহিনী জানতে আমার আগ্রহের শেষ নেই কখনও। ধর্মীয় প্রচলিত ঘটনাগুলো জানবার পর তৃষ্ণা মেটাবার জন্য, আরও বুঝবার জন্য আমি তাফসিরের কথাগুলোও শেষ করে ফেলি। এরপর বুঝতে পারলাম, এ কাহিনীগুলো পুরোপুরি বুঝতে হলে, আমাকে আরও পেছনে তাকাতে হবে। তাই ইহুদী, খ্রিস্টান ও ইসলাম- এ তিন সেমিটিক ধর্মের সমস্ত ঘটনা বুঝবার জন্য বাইবেলও পড়ে ফেলি, আর সাথে সেগুলোর ব্যাখ্যাও। সত্যি সত্যি, অনেক কিছুর অর্থই নতুন করে চোখে ধরা পড়লো। তবে পুরোনো লেখনি পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, আরবি পড়তে পারলেও অনেক কিছুই হিব্রু উচ্চারণে থাকায় আমি সেগুলো বুঝতে পারছিলাম না। তাই কষ্ট করে হলেও হিব্রু লিখতে-পড়তেও শিখে নিলাম, না হলে অনুভব হচ্ছিল যে আমি নিজেই যে জিনিস বুঝতে পারছি না, সেটা মানুষকে কী করে জানাবো?
লেখা শুরুর সময়ও জানতাম না যে, এটা একদিন বই আকারে বের করা যাবে। লিখতে শুরু করেছিলাম এ আশা নিয়ে যে, যতদিন পারি ধারাবাহিকভাবে লিখতে থাকি, দেখাই যাক না, কতদূর পর্যন্ত যেতে পারি। অবশেষে যীশু খ্রিস্ট পর্যন্ত এ বইটি লিখে ইতি টানতে পারলাম। প্রকাশও করে ফেললাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে বইটি খুবই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে, যার ফলে বইটির সিকুয়েল নিয়েও কাজ করার সৌভাগ্য হলো।
আমি রোর বাংলায় সিরিজটি নিয়ে আসি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভাইয়ের পরামর্শে, এবং প্রায় দু লাখের মতো পাঠকের খোঁজ পেয়ে গেলাম, যারা ধৈর্য ধরে আমার লেখাগুলো পড়ছিলেন। তারা হয়তো খুশি হবেন এই না-পড়া লেখাগুলোসহ পুরো সমগ্র একটি বইতে পেয়ে। তিনিই অবশ্য আমাকে বই প্রকাশের নিশানা দেখিয়ে দেন। অনলাইনে থাকাবস্থায় অনেক পাঠকের কিছু প্রশ্নের উত্তরও প্রশ্নোত্তর ফরম্যাটে বইটি খুললে পাওয়া যাবে।
সৌভাগ্যের বিষয়, অন্যরকম/রকমারির সোহাগ ভাইয়ের সাথে অফিস সেরে আড্ডা দেয়ার কোনো এক মুহূর্তে তিনি আমার এ সিরিজের প্রশংসা করে বসলেন, যেটা আরও উৎসাহ দেয় আমাকে বইটি বের করার। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার ভাইয়ের প্রতি, যিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বইয়ে উল্লেখিত তথ্যসমূহের নির্ভুলতা যাচাই করে দিয়েছেন।
ভালো লাগছে যে, বইটি অবশেষে আলোর মুখ দেখছে। পাঠকের জ্ঞানপিপাসা মিটলেই বইটি লেখা সার্থক হবে।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: এ বইটিকে ইসলামি বই হিসেবে ভাবার কোনো কারণ নেই। এখানে তিন ধর্মবিশ্বাসের দৃষ্টিকোণই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই কেবল একটি ধর্মের দিক থেকে বইটি মূল্যায়ন করাটা ঠিক হবে না, সেরকম কোনো অভিযোগ করাটাও সমীচীন হবে না। এক নিঃশ্বাসে পুরো বইটি পড়ে ফেলুন, অনেক কিছুই আপনার অজানা থাকতে পারে! বইটির সেকেন্ডারি টাইটেল প্রথমে রাখা হয়েছে সেমিটিক ধর্মবিশ্বাসে ইসরাইল জাতির খ্রিস্টপূর্ব ইতিহাস। সেমিটিক ধর্ম বলতে ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মকে বোঝানো হয়ে থাকে। চেষ্টা করা হয়েছিল বেশিরভাগ ঘটনাই প্রামাণ্য সূত্রগুলো থেকে নেয়ার, তবে লোককথাগুলোর ব্যাপারে তো আর সে কথা বলা চলে না। বিভিন্ন ইসলামি তাফসিরে যেভাবে অতীত গ্রন্থাবলি থেকেও ঘটনা নেয়া হয়েছে, সেভাবে এখানেও সাহায্য নেয়া হয়েছে সবগুলো বইয়েরই, যেন মাঝের অজানা ঘটনাগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এখানে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের চূড়ান্ত মানদণ্ড পাঠকের হাতেই।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ
৭ জানুয়ারি, ২০২০, ঢাকা
বি.দ্র. : এ বইটি লেখার সময় আমাকে মিসরের অনেক কিছু কল্পনা করে নিতে হচ্ছিল, কারণ আমি তো মিসর দেখিনি! লিখতে কষ্ট হচ্ছিলো, অস্বীকার করবো না। কিন্তু আমার সৌভাগ্য, বইটি প্রকাশ হবার পরের বছর, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আমি পুরো মিসর ভ্রমণ করি, এ বইয়ের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলো সশরীরে দেখে আসি। এমনকি রাতের আঁধারে উঁচু সিনাই পর্বত (যাকে লোকে ‘তূর পর্বত’ বলে থাকে) বেয়ে ফেলি আমার স্ত্রীকে নিয়ে, উপভোগ করি সূর্যোদয়। এবার শান্তি অনুভব হচ্ছে, বইটির নানা জায়গা তো আমার প্রত্যক্ষ করা হলো!
.
শুরুর কথা
‘ইহুদী’ শব্দটি দেখা বা শোনার সাথে সাথেই উপমহাদেশীয় মুসলমান সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তা হলো ক্রোধ আর ঘৃণা, আর মুসলিম জাতির যাবতীয় দুরবস্থার জন্য বরাদ্দ থাকে ইহুদীদের জন্য শাপ-শাপান্ত। কিন্তু এই ক্রোধানলের উৎপত্তি কবে থেকে? কেন? যেখানে ইসলামের গোড়া থেকে মদিনায় ইহুদী ও মুসলিম সম্প্রদায় একসাথেই বসবাস করতো, সেখানে এই তীব্র রেষারেষি এলো কবে থেকে? ইহুদীরাই বা কী ভাবে মুসলিম বা ইসলাম নিয়ে?
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করার জন্য পাঠকদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে ইহুদী ধর্মের প্রাচীন সময়ে, হাজার হাজার বছর আগের মধ্যপ্রাচ্য আর মিসরের মরুপ্রান্তরে। পাঠকদের জন্য একদম গোড়া থেকে ধীরে ধীরে এ ঐতিহাসিক সিরিজে তুলে ধরা হবে ইসলাম, ইহুদী ও খ্রিস্টধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে এই জাতির ইতিহাসকে, যে জাতি ‘বনী ইসরাইল’ নামেও পরিচিত। শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ নয়, ইহুদীদের দ্বারা পবিত্র ভূমি দখলের আড়ালের বিশ্বাসটুকু জানতেও সাহায্য করবে এ বইটি।
Leave a Reply