ইসলাম : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস – ক্যারেন আর্মস্ট্রং / অনুবাদ শওকত হোসেন
অনুবাদকের কথা
বিশ্বের নবীন এবং আধুনিকতম একেশ্বরবাদী ধর্ম ইসলামকে নিয়ে ক্যারেন আর্মস্ট্রং লিখেছেন ইসলাম: আ শর্ট হিস্ট্রি গ্রন্থটি। সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও ইসলাম সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা দেয়ার প্রয়াস পেয়েছেন লেখক এ গ্রন্থের মাধ্যমে। পয়গম্বর মুহাম্মদের (স:) মাধ্যমে প্রবর্তনের পর থেকে শুরু করে রাশিদুনদের আমল, একাধিক ফিৎনাহ্র বিবরণ, ইসলামে খেলাফতের নামে রাজতন্ত্রের আবির্ভাব, ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তার, বিভাজন, পতন এবং তার পেছনে ক্রিয়াশীল কারণ বিশ্লেষণের প্রয়াস পেয়েছেন ক্যারেন আর্মস্ট্রং। বিভিন্ন সময়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিলুপ্তির উপান্তে পৌঁছেও ইসলাম ধর্ম কোন বৈশিষ্ট্য বা সুপ্ত শক্তির কারণে পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠেছে বারবার তাও দেখিয়েছেন লেখক। দেখিয়েছেন কখনও ইসলামের নামে আবার কখনও আধুনিকতা আর সেক্যুলারিজমের দোহাই দিয়ে মুসলিম শাসকরা কীভাবে ইসলামের মৌল নীতি অর্থাৎ সমতার মূল্যবোধের লংঘন করেছেন, নির্যাতন চালানোর মাধ্যমে রুদ্ধ করেছেন ভিন্নমত। আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতায় ইসলামকে কেন আপাতদৃষ্টিতে পশ্চাদবর্তী বলে মনে হচ্ছে বোঝার প্রয়াসে লেখক ব্যাখ্যা খাড়া করেছেন, সেই সঙ্গে তুলে ধরেছেন আগামীর উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে, যা ভাবনার খোরাক জোগায়, আশাবাদী করে তোলে। ইসলামের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মীয় আন্দোলন ও অতীন্দ্রিয়বাদী মতবাদ তুলে ধরে দেখিয়েছেন ধর্মটির অন্তর্নিহিত শক্তিকে। এ-বইটি পাঠ করে একজন সাধারণ আগ্রহী পাঠক যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি এখানে সন্নিবেশিত তথ্য দর্শন ও ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষার্থীদেরও প্রয়োজন মেটাবে বলে বিশ্বাস করি।
এখানে একটা কথা উল্লেখ করা দরকার যে, ২০০০ সালে প্রথম প্রকাশিত হবার পর বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ২০০২ সালেই দ্বিতীয় সংস্করণ বাজারে আসে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বর ১১-এর সন্ত্রাসী হামলা বিশ্বে ইসলামকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সূচনা ঘটায়। দ্বিতীয় সংস্করণে ক্যারেন আর্মস্ট্রং একটি উপসংহার যোগ করে সেই হামলার প্রেক্ষিতে করণীয় সম্পর্কে মতামত রেখেছেন। পাঠকদের কথা চিন্তা করে ‘উপসংহার’টি এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
মূলগ্রন্থে লেখক কুরানের বেশ কিছু আয়াত ব্যবহার করেছেন, অনুবাদের সুবিধা ও নির্ভুলতার স্বার্থে আমি শ্রদ্ধেয় সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘কোরান শরীফ: সরল বঙ্গানুবাদ’-হতে উদ্ধৃতি দিয়েছি, সেজন্যে জনাব মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
পাঠকগণ পয়গম্বর ও অন্য নবী-রাসুলগণের নামের পর যথাস্থানে (স:) (আঃ) ইত্যাদি না থাকলেও পাঠ করবেন, এই অনুরোধ রইল।
পাঠকবৃন্দ যদি কোনও তথ্যগত ভুল খুঁজে পান, অনুগ্রহ করে জানালে পরবর্তী সংস্করণে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বইটি পাঠকের এতটুকু প্রয়োজন মেটাতে পারলে অনুবাদক হিসাবে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।
ধন্যবাদ।
শওকত হোসেন
মালিবাগ, ঢাকা
এপ্রিল ২০০৪
ভূমিকা
কোনও ধর্মীয় ঐতিহ্যের বাহ্যিক ইতিহাসকে যেন প্রায়শ:ই বিশ্বাসের মৌল উদ্দেশ্য হতে বিচ্ছিন্ন মনে হয়। আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান হচ্ছে অন্তরমূখী যাত্রা, এটা যত না রাজনৈতিক তারচেয়ে বেশী বরং মনস্তাত্ত্বিক নাটক। শাস্ত্র, মতবাদ, ধ্যানভিত্তিক অনুশীলন আর হৃদয় অনুসন্ধান এর বিচরণ ক্ষেত্র, চলমান ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে বিরোধ নয়। আত্মার বাইরেও অবশ্যই ধর্মসমূহের অস্তিত্ব রয়েছে। ধর্মীয় নেতাদের রাষ্ট্রিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয় এবং প্রায়শ এ কাজ তাঁরা উপভোগ করেন। তাঁরা পরম সত্যের একচেটিয়া অধিকারে চ্যালেঞ্জ তুলে ধরার কথা ভেবে অন্য ধর্মবিশ্বাসসমূহের সদস্যদের বিরুদ্ধে সংঘাতে লিপ্ত হন; তাঁরা আবার কোনও বিশেষ ঐতিহ্যের ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়ায় বা হেটারোডক্স বিশ্বাস পোষণ করার কারণে সধর্মীদের উপরও চালান নিপীড়ন। প্রায়শই প্রিস্ট, র্যাবাই, ইমাম এবং শামানদের সাধারণ রাজনীতিকদের মত পার্থিব উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে দেখা যায়। কিন্তু এসব কিছুকেই সাধারণভাবে পবিত্র কোনও আদর্শের অপব্যবহার হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ক্ষমতার এসব দ্বন্দ্ব সংঘাত প্রকৃতপক্ষে ধর্ম নয়, বরং আত্মার জীবন হতে অশ্লীল বিচ্যুতি, যে জীবন উন্মত্ত জনতার ভীড় থেকে বহুদূর হতে নীরবে অদৃশ্যভাবে হস্তক্ষেপহীন পরিচালিত হয়। প্রকৃতপক্ষেই বহু ধর্মবিশ্বাসের মঙ্ক আর অতীন্দ্রিয়বাদীগণ জগৎ হতে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নেয়, কারণ ইতিহাসের হট্টগোল আর সংঘাত প্রকৃত ধর্মীয় জীবনের সঙ্গে মানানসই নয় বলেই মনে করা হয়।
হিন্দু ঐতিহ্যে ইতিহাসকে অপসৃয়মান, গুরুত্বহীন ও অসার বলে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। প্রাচীন গ্রীসের দার্শনিকগণ বাহ্যিক ঘটনাপ্রবাহের অন্তর্গত চিরন্তন বিধি-বিধান নিয়ে ভাবিত ছিলেন, সক্রিয় চিন্তাশীল ব্যক্তির যার প্রতি আগ্রহ থাকার কথা নয়। গসপেলসমূহে জেসাস প্রায়ই রীতির বাইরে গিয়ে অনুসারীদের বোঝানোর প্রয়াস পেয়েছেন যে তাঁর রাজত্ব এ জগতের নয়, বরং কেবল বিশ্বাসীর অন্তরেই তার দেখা পাওয়া সম্ভব। এই রাজত্ব ব্যাপক রাজনৈতিক শোরগোল তুলে আবির্ভূত হবার নয়, বরং নীরবে অলক্ষ্যে সর্ষে বীজের অঙ্কুরোদগমের মত বিকশিত হবে। আধুনিক পাশ্চাত্যে আমরা ধর্মকে রাজনীতি হতে পৃথক করার ব্যবস্থা নিয়েছি, এই সেক্যুলারাইজেশনের আদি প্রবক্তা ছিলেন আলোকনযুগের (Enlightenment) ‘ফিলোসফেস’ (Philosophes) গণ। রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীর দুর্নীতি হতে ধর্মকে রক্ষা করার একটা কৌশল ছিল সেটা, ধর্মকে আরও নির্মল করে তোলারও প্রয়াস ছিল।
কিন্তু তাঁদের উদ্দেশ্য যত আধ্যাত্মিক হয়ে থাকুক না কেন, ধর্মীয় ব্যক্তিদের এই পার্থিব জগতেই ঈশ্বর বা পবিত্রের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হতে হয়। প্রায়ই তাঁরা মনে করেন আপন আদর্শকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার একটা দায়িত্ব রয়েছে তাঁদের। যদিও নিজেদের তাঁরা বিচ্ছিন্ন করে রাখেন, তবু ব্যতিক্রমহীনভাবে তাঁরা তাঁদের সময়েরই নারী এবং পুরুষ; এবং মনেস্টারির বাইরের ঘটনাপ্রবাহ তাঁদের প্রভাবিত করে, যদিও সেটা তাঁরা পরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেন না। যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্লেগ, দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক মন্দাভাব এবং তাঁদের জাতীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতি তাঁদের বিচ্ছিন্ন জীবনে হানা দেবে এবং ধর্মীয় দর্শনকে নিয়ন্ত্রণ করবে। প্রকৃতপক্ষেই ইতিহাসের করুণ ঘটনাবলী প্রায়শই মানুষকে আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানে বাধ্য করে থাকে; দৈব, খেয়ালি আর হতাশাব্যঞ্জক ঘটনাপ্রবাহের পুনরাবৃত্তি বলে প্রতিভাত বিষয়াবলীর একটা পরম অর্থ অনুসন্ধানই থাকে তাদের উদ্দেশ্য। সুতরাং ইতিহাস ও ধর্মের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বুদ্ধ যেমন মন্তব্য করেছেন, অস্তিত্বের প্রকৃতি জটিল বলে আমাদের বিশ্বাসই আমাদেরকে একটা বিকল্প সন্ধানে বাধ্য করে যা আমাদের হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
ধর্মীয় জীবনের মৌলিক প্যারাডক্স সম্ভবত এই যে, এটা আমাদের জাগতিক জীবনের অতীত অস্তিত্বের এক মহা দুর্জ্জেয়ের সন্ধান করে, কিন্তু মানব জীবন এই দুর্ভেয় সত্তাকে কেবল পার্থিব বাস্তব ঘটনার মাঝেই অনুভব করতে সক্ষম। মানুষ পাথর, পাহাড়, মন্দির-ভবন, বিধি-বিধান, লিখিত বিবরণ কিংবা ভিন্ন নারী আর পুরুষের মাঝে ঐশ্বরিক অনুভূতি লাভ করেছে। আমরা কখনওই প্রত্যক্ষভাবে দুর্ভেয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করিনিঃ আমাদের পরম আনন্দ সবসময়ই “জাগতিক,” মর্ত্যেরই কোনও ব্যক্তিতে বা কোনও বস্তুতে আসীন। ধর্মীয় ব্যক্তিগণের পবিত্রকে দেখার জন্য সম্ভাবনাহীন ক্ষেত্রে অনুসন্ধানে লিপ্ত হবার যোগ্যতা থাকে। তাঁদের নিজস্ব সৃজনশীল কল্পনাশক্তির প্রয়োগ ঘটানোর প্রয়োজন পড়ে। জাঁ পল সার্ত্রে কল্পনাশক্তিকে অস্তিত্ব নেই এমন কিছুর চিন্তা করার ক্ষমতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। মানবজাতি ধর্মীয় প্রাণী, কারণ তারা কল্পনানির্ভর; তাদের গঠন এমন যে তারা অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আর একধরনের আনন্দ অনুসন্ধানে বাধ্য হয় যা কিনা তাদের মাঝে পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার অনুভূতি জাগায়। প্রত্যেক ঐতিহ্য বিশ্বাসীদের পার্থিব এমন কোনও প্রতাঁকের প্রতি মনোযোগ স্থাপন করার উৎসাহ জোগায় যা কেবল বিশেষভাবে এর নিজস্ব, এবং যা তাদের ঐ প্রতাঁকের মাঝেই ঈশ্বরকে দেখার শিক্ষা দেয়।
ইসলাম ধর্মে মুসলিমরা ইতিহাসে ঈশ্বরের সন্ধান করেছে। তাদের পবিত্র ঐশীগ্রন্থ, কুরান, তাদের এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব দিয়েছে। তাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল একটা ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ সৃষ্টি করা যেখানে এর সকল সদস্য, এমনকি সবচেয়ে দুর্বল এবং নাজুকজনটিও, সর্বাধিক সম্মানের অধিকারী হবে। এমন এক সমাজ নির্মাণের অভিজ্ঞতা এবং সেই সমাজে বসবাস তাদের ঈশ্বরের অনুভূতি যোগাবে, কারণ সেক্ষেত্রে তারা ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী জীবনযাপন করবে। একজন মুসলিমকে ইতিহাসের দায় মুক্তি ঘটাতে হয় এর অর্থ রাষ্ট্রীয় কার্যাবলী আধ্যাত্মিকতা হতে বিচ্যুত তো নয়ই বরং খোদ ধর্মেরই বিষয়। মুসলিম সমাজের রাজনৈতিক কল্যাণের অপরীসীম গুরুত্ব ছিল। যেকোনও ধর্মীয় আদর্শের মত ইতিহাসের নানা বিচ্যুতি আর করুণ প্রেক্ষাপটে এর বাস্তবায়ন ছিল প্রায় দুরূহ, কিন্তু প্রতিটি ব্যর্থতার পরেই মুসলিমদের আবার উঠে দাঁড়িয়ে নতুন প্রয়াসে লিপ্ত হতে হয়েছে।
মুসলিমরা অন্যদের মত করেই তাদের নিজস্ব আচার, অতীন্দ্রিয়বাদ, দর্শন, মতবাদ (Doctrine), পবিত্র লিপি, আইন আর উপাসনালয় গড়ে তুলেছে। কিন্তু এসব ধর্মীয় প্রয়াসের সবগুলোরই উদ্ভব ঘটেছে ইসলামী সমাজের চলমান রাজনৈতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে প্রায়শ: যন্ত্রণাময় চিন্তাভাবনা হতে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ যদি কুরানের আদর্শ মোতাবেক পরিচালিত না হয়, যদি তাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিষ্ঠুর কিংবা শোষক হন, কিংবা যদি তাদের সমাজ আপাত: ধর্মহীন শত্রু দ্বারা অপদস্থ হয়, একজন মুসলিম ভাবতে পারে যে জীবনের পরম লক্ষ্য এবং মূল্যে তার বিশ্বাস বিপদাপন্ন হয়ে পড়েছে। ইসলামী ইতিহাসকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্যে সর্বাত্মক প্রয়াস নিতে হবে তাকে, তা নাহলে গোটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানই ব্যর্থ হয়ে যাবে, জীবন হারিয়ে ফেলবে তার অর্থ। সুতরাং রাজনীতি, ক্রিশ্চানরা যেমন বলে, সেক্রামেন্ট, এটা এমন এক ক্ষেত্র যেখানে মুসলিমরা ঈশ্বরকে উপলব্ধি করে যা পার্থিব জগতে ঈশ্বরকে কার্যকরভাবে ক্রিয়াশীল হতে সক্ষম করে তোলে। পরিণামে, মুসলিম সমাজের ঐতিহাসিক প্রয়াস আর দুঃখ-দুর্দশা- রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা, গৃহবিবাদ, আগ্রাসন এবং শাসক গোষ্ঠীর উত্থান ও পতন– অভ্যন্তরীণ ধর্মীয় অনুসন্ধান হতে বিচ্ছিন্ন কোনও বিষয় নয়, বরং ইসলামী দর্শনের মূল উপাদান (essence)। একজন মুসলিম তার আপন সময়কালের চলতি ঘটনাপ্রবাহ এবং অতীত ইতিহাস নিয়ে চিন্তা করবে, যেমন করে একজন ক্রিশ্চান কোনও আইকন নিয়ে ভাববে, স্বর্গীয় গোপন সত্তাকে আবিষ্কার করার জন্যে সৃজনশীল কল্পনা ব্যবহার করার মাধ্যমে। সুতরাং মুসলিম জনগণের বাহ্যিক ইতিহাসের বিবরণ স্রেফ গৌণ আগ্রহের বিষয় হতে পারে না, কেননা ইসলামের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইতিহাসের পবিত্রায়ন।
ঘটনাক্রমপঞ্জী
৬১০ মক্কায় পয়গম্বর মুহাম্মদ(স:) কুরানের প্রথম প্রত্যাদেশ লাভ করেন এবং এর দু’বছর পর ধর্ম প্রচার শুরু করেন।
৬১৬ মক্কার শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে মুহাম্মদের(স:) নবদীক্ষিতদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে; নিপীড়ন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে এবং মুহাম্মদের(স:) মক্কায় অবস্থান ক্রমবর্ধমান হারে অসম্ভব হয়ে ওঠে।
৬২০ ইয়াসরিবের (পরবর্তীকালে মদীনা নামে পরিচিত) বসতি হতে আগত আরবগণ মুহাম্মদের(স:) সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তাঁকে তাদের সমাজে নেতৃত্ব দানের আমন্ত্রণ জানায়।
৬২২ আনুমানিক সত্তরটি মুসলিম পরিবারসহ পয়গম্বর মক্কা হতে মদীনায় হিজরা বা অভিবাসন করেন এবং মক্কার শাসক গোষ্ঠী প্রতিশোধ নেয়ার শপথ গ্রহণ করে। হিজরার মাধ্যমে মুসলিম বছর গণনার সূচনা ঘটে।
৬২৪ বদরের যুদ্ধে মুসলিমরা মক্কার উপর এক নাটকীয় পরাজয় চাপিয়ে দেয়।
৬২৫ মদীনার বাইরে উঁহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা মক্কা-বাহিনীর কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে।
মক্কার সঙ্গে সহযোগিতা করায় ইহুদি গোত্র কায়নুকাহ্ এবং নাদিরকে মদীনা হতে বহিষ্কার করা হয়।
৬২৭ পরিখার যুদ্ধে মুসলিমরা অনায়াসে মক্কা-বাহিনীকে পরাস্ত করে। এর পরপরই সংঘটিত হয় ইহুদি গোত্র কুরাইযা বিনাশ, এ গোত্রটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে মক্কাবাসীদের সমর্থন দিয়েছিল।
৬২৮ মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী হুদাইবিয়াহ্ নামক স্থানে হুদাইবিয়া-সন্ধির মাধ্যমে মুহাম্মদের(স:) দুঃসাহসী শান্তি উদ্যোগ ফলপ্রসু হয়। এই সময় তাঁকে আরবের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হিসাবে দেখা হয় এবং বহু আরবীয় গোত্র তাঁর কনফেডারেসিতে যোগ দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
৬৩০ মক্কাবাসীরা হুদাইবিয়াহর-সন্ধি লঙ্ঘন করে। মুসলিম এবং মিত্রদের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন মুহাম্মদ(সঃ)। পরাজয় টের পেয়ে মক্কা স্বেচ্ছায় মুহাম্মদের(স:) জন্যে পথ খুলে দেয় এবং তিনি বিনা রক্তপাতে ও কাউকে ধর্মান্তরিতকরণে বাধ্য না করেই নগরী অধিকার করে নেন।
৬৩২ পয়গম্বর মুহাম্মদের(স:) পরলোকগমন।
আবু বকর তাঁর খলিফাহ্ (প্রতিনিধি) নির্বাচিত হন।
৬৩২-৩৪ আবু বকরের খেলাফত এবং কনফেডারেসি থেকে বেরিয়ে যাওয়া গোত্র সমূহের বিরুদ্ধে রিদ্দাহ (riddah)র যুদ্ধ। আবু বকর বিদ্রোহ দমনে সফল হন এবং আরবের সকল গোত্রকে ঐক্যবদ্ধ করেন।
৬৩৪-৪৪ উমর ইবন আল-খাত্তাবের খেলাফত।
মুসলিম বাহিনী ইরাক, সিরিয়া এবং মিশর আক্রমণ করে।
৬৩৮ মুসলিমরা জেরুজালেম অধিকার করে। এই নগরী মক্কা ও মদীনার পর ইসলামী-বিশ্বের তৃতীয় পবিত্র-নগরীতে পরিণত হয়।
৬৪১ মুসলিমরা সিরিয়া, প্যালেস্টাইন এবং মিশরের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, তারা পারসিয়ান সাম্রাজ্যকে পরাস্ত করে এবং লোকবল অর্জিত হওয়ার পর এর অঞ্চলসমূহ অধিকার করে।
মুসলিম-বাহিনীর অবস্থানের জন্য কুফাহ, বসরাহ্ এবং ফুস্ট্যাটে গ্যারিসন- শহর নির্মিত হয়; মুসলিম-বাহিনী প্রজা-সাধারণ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করত।
৬৪৪ জনৈক পারসিয়ান যুদ্ধবন্দীর হাতে খলিফাহ্ উমর নিহত হন।
উসমান ইবন-আফফান তৃতীয় খলিফাহ্ নির্বাচিত হন।
৬৪৪-৫০ মুসলিমরা সাইপ্রাস, ত্রিপোলি, উত্তর আফ্রিকা দখল করে এবং ইরান, আফগানিস্তান এবং সিন্ধ-এ মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
৬৫৬ জনৈক অসন্তুষ্ট মুসলিম সৈনিকের হাতে খলিফাহ্ উসমান প্রাণ হারান; এই সৈনিক আলী ইবন আবি তালিবকে খলিফাহ্ ঘোষণা করে, কিন্তু সকলে আলীর শাসন মেনে নেয়নি।
৬৫৬-৬০ প্রথম ফিৎনাহ্। গৃহযুদ্ধ আসন্ন।
৬৫৬ উটের যুদ্ধ। উসমানের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ না করায় পয়গম্বরের স্ত্রী আয়েশা, তালহা এবং যুবায়ের আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। আলীর বাহিনীর কাছে পরাস্ত হন তাঁরা।
সিরিয়ায় বিরোধীপক্ষের নেতৃত্ব দান করেন উসমানের আত্মীয় মুয়াবিয়াহ্ ইবন আবি সুফিয়ান।
৬৫৭ সিফফিনে দু’পক্ষের মাঝে এক আপোস রফার প্রয়াস নেয়া হয়; সালিশের রায় আলীর বিপক্ষে গেলে মুয়াবিয়াহ্ তাঁকে পদচ্যুত করে জেরুজালেমে খেলাফত দাবী করেন।
খারেজিরা আলীর পক্ষ ত্যাগ করে চলে যায়।
৬৬১ জনৈক খারেজি চরমপন্থীর হাতে নিহত হন আলী।
আলীর সমর্থকরা তাঁর পুত্র হাসানকে পরবর্তী খলিফাহ্ হিসাবে ঘোষণা করে, কিন্তু হাসান মুয়াবিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।
৬৬১-৮০ প্রথম মুয়াবিয়াহর খেলাফত। ইনি উমাঈয়াহ্ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন এবং মদীনা হতে দামাস্কাসে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
৬৬৯ মদীনায় হাসান ইবন আলীর পরলোকগমন।
৬৮০ পিতা মুয়াবিয়া মৃত্যুর পর প্রথম ইয়াযিদ দ্বিতীয় উমাঈয়াহ্ খলিফাহ্ হন। ৬৮০-৯২ দ্বিতীয় ফিৎনাহ্। আবার গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা।
৬৮০ নিজেদের শিয়াহ্-ই-আলী বলে আখ্যাদানকারী কুফাবাসী মুসলিমরা আলী ইবন আবি-তালিবের দ্বিতীয় পুত্র হুসেইনকে খলিফাহ্ ঘোষণা করে। ক্ষুদ্র এক বাহিনী নিয়ে কুফার উদ্দেশ্যে মদীনা ত্যাগ করেন হুসেইন এবং কারবালা- প্রান্তরে ইয়াযিদ বাহিনীর হাতে নিহত হন।
আরবে আবদাল্লাহ ইবন আল-যুবায়ের ইয়াযিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।
৬৮৩-প্রথম ইয়াযিদের মৃত্যু।
তাঁর শিশু-পুত্র দ্বিতীয় মুয়াবিয়া মৃত্যু।
খেলাফাতের উমাঈয়াহ্ দাবীদার প্রথম মারওয়ানের সিংহাসন আরোহণ, সিরিয়রা তাঁকে সমর্থন দেয়।
৬৮৪-উমাঈয়াদের বিরুদ্ধে খারেজি বিদ্রোহীরা মধ্য আরবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে।
ইরাক ও ইরানে খারেজি-বিদ্রোহ।
কুফায় শিয়া অভ্যুত্থান।
৬৮৫-৭০৫ আব্দ আল-মালিকের খেলাফত, যিনি উমাঈয়াহ্ শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন।
৬৯১ উমাঈয়াহ্-বাহিনী খারেজি ও শিয়া বিদ্রোহীদের পরাস্ত করে।
জেরুজালেমে ডোম অভ দ্য রক সমাপ্ত হয়।
৬৯২ উমাঈয়াহ্-বাহিনী ইবন আল-যুবায়েরকে পরাজিত ও হত্যা করে।
ফিৎনাহ্-যুদ্ধ সমূহের ফলে বসরাহ্, মদীনা এবং কুফায় এক ধর্মীয় আন্দোলন গড়ে ওঠে; বিভিন্ন মতবাদ-এর অনুসারীরা রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি জীবনে কুয়ারাহ’র অধিকতর কঠোর প্রয়োগের প্রচারণা চালায়।
৭০৫-১৭ আল-ওয়ালিদের খেলাফত।
মুসলিম বাহিনীর উত্তর আফ্রিকা অধিকার অব্যাহত থাকে।
স্পেনে রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭১৭-২০ দ্বিতীয় উমরের খেলাফত। ধর্মান্তরকরণে উৎসাহ প্রদানকারী প্রথম খলিফাহ্। ইনি ধর্মীয় আন্দোলনের কোনও কোনও আদর্শের বাস্তবায়নের প্রয়াস পান।
৭২০-২৪ অসচ্চরিত্র দ্বিতীয় ইয়াযিদের খেলাফত। উমাঈয়াহ্ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক শিয়া ও খারেজি বিক্ষোভ।
৭২৪-৪৩ প্রথম হিশামের খেলাফত। ধর্মপ্রাণ কিন্তু অধিকতর স্বৈরাচারী শাসক যিনি অধিকতর ধার্মিক মুসলিমদের সংক্ষুদ্ধ করে তোলেন।
৭২৮ হাদিস বিশেষজ্ঞ, ধর্মীয় সংস্কারক এবং সাধু হাসান আল-বাসরির পরলোকগমন।
৭৩২ পয়টিয়ার্সের যুদ্ধ। চার্লস মার্টেল স্প্যানিশ মুসলিমদের একটা ছোট আক্রমণকারী দলকে পরাজিত করেন।
আবু হানিফাহ্ ফিকহ্ গবেষণার সূত্রপাত করেন।
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক প্রথম পয়গম্বর মুহাম্মদের(স:) উল্লেখযোগ্য জীবনী রচনা করেন।
৭৪৩-৪৪ শিয়াহ্ পতাকার অধীনে যুদ্ধ করার মাধ্যমে আব্বাসীয় উপদল ইরানে উমাঈয়াদের বিরুদ্ধে সমর্থন আদায় শুরু করে।
৭৪৩ দ্বিতীয় ওয়ালিদের খেলাফত।
৭৪৪-৪৯ দ্বিতীয় মারওয়ান কর্তৃক খেলাফত অধিকার। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে উমাঈয়াহ্-প্রাধান্য পুনরুদ্ধারের প্রয়াস পান তিনি। তাঁর সিরিয় বাহিনী শিয়া বিদ্রোহীদের আংশিকভাবে দমন করে, কিন্তু :
৭৪৯-আব্বাসীয়রা কুফাহ্ দখল করে এবং উমাঈয়াদের উৎখাত করে।
৭৫০-৫৪ প্রথম আব্বাসীয় খলিফাহ্, খলিফাহ্ আবু আল-আব্বাস আল-সাফফাহ্ উমাঈয়াহ্ পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করেন।
চরম রাজতন্ত্রের লক্ষণ, ইসলামে যা অভিনব।
৭৫৫-৭৫ আবু জাফর আল-মনসুরের খেলাফত। প্রধান শিয়া ব্যক্তিত্বদের হত্যা করেন তিনি ৷
৭৫৬ আব্বাসীয় খেলাফত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্পেন জনৈক উমাঈয়াহ্ শরণার্থীর নেতৃত্বে স্বাধীন রাজত্বের পত্তন করে।
৭৬২ বাগদাদের পত্তন, যা নতুন আব্বাসীয় রাজধানীতে পরিণত হয়।
৭৬৫ শিয়াদের ষষ্ঠ ইমাম জাফর আস-সাদিক-এর পরলোকগমন, যিনি তাঁর অনুসারীদের নীতিগতভাবে রাজনীতি পরিত্যাগের আহবান জানিয়েছিলেন।
৭৬৯ ইসলামের আইনের প্রধান মতবাদসমূহের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবু হানিফার পরলোকগমন।
৭৭৫-৮৫ আল-মাহদীর খেলাফত। তিনি ফিকহ’র বিকাশকে উৎসাহিত করেন, ধর্মীয় আন্দোলনের পবিত্রতাকে স্বীকৃতি দেন, যা ক্রমান্বয়ে আব্বাসীয় বংশের একচ্ছত্র আধিপত্যের সঙ্গে সহাবস্থানে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
৭৮৬-৮০৯ হারূন আল-রশিদের খেলাফত। আব্বাসীয়দের ক্ষমতার স্বর্ণযুগ।
বাগদাদ ও সাম্রাজ্যের অন্যান্য শহরে এক ব্যাপক সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ। বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও পণ্ডিতজনদের পৃষ্ঠপোষকতাদানের পাশাপাশি খলিফাহ্ ফিক্হ গবেষণা এবং আল-হাদিসের সংকলনেরও উৎসাহ জোগান যা ইসলামী আইন (শরিয়াহ্)-এর সামজ্ঞস্যপূর্ণ কাঠামো গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। ৭৯৫ জুরিসপ্রুডেন্সের মালিকি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মালিক ইবন আনাসের পরলোকগমন।
৮০১ প্রথম মহান নারী অতীন্দ্রিয়বাদী রাবিয়ার পরলোকগমন।
৮০৯-১৩ হারুন আল-রশিদের দুই পুত্র আল-মামুন ও আল-আমিনের মধ্যে গৃহযুদ্ধ। আল-মামুন তাঁর ভাইকে পরাস্ত করেন।
৮১৩-৩৩ আল-মামুনের খেলাফত।
৮১৪-১৫ বসরায় শিয়া বিদ্ৰোহ।
খুরাসানে খারেজি বিদ্রোহ।
বুদ্ধিজীবী, শিল্পকলা ও শিক্ষার পৃষ্ঠপোষক খলিফাহ্ মুতাযিলাহ্ যুক্তি ভিত্তিক থিয়োলজির প্রতি ঝুঁকে পড়েন, এর আগে যা সহানুভূতি বঞ্চিত ছিল। কোনও কোনও বিরোধী ধর্মীয় গ্রুপকে শান্ত করার মাধ্যমে টানাপড়েন হ্রাসের প্রয়াস পান খলিফাহ্!
৮১৭ আল-মামুন অষ্টম শিয়া ইমাম আল-রিদাকে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন।
৮১৮ আল-রিদা নিহত হন, সম্ভবত খুন।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এক ইনকুইজিশন (মিহনাহ্) মুতাযিলাহ্ দর্শনকে অধিকতর জনপ্রিয় আহল আল-হাদিসের স্থলাভিসিক্ত করার প্রয়াস পায়। বিশ্বাসের জন্য এর অনুসারীদের কারারুদ্ধ করা হয়।
৮৩৩ আহল-আল-হাদিসের একজন বীর, জুরিসপ্রুডেসের হানবালি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা আহমাদ ইবন হানবালের পরলোকগমন।
৮৩৩-৪২ আল-মুতাসিমের খেলাফত। খলিফাহ্ টার্কিশ ক্রীতদাস সৈনিকদের দ্বারা ব্যক্তিগত বাহিনী গড়ে তোলেন এবং সামারায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
৭৪২-৪৭ আল-ওয়াসিকের খেলাফত।
৮৪৭-৬১ আল-মুতাওয়াক্কিলের খেলাফত।
৮৪৮ দশম শিয়া ইমাম আলী আল-হাদি সামারায় আসকারি দুর্গে বন্দী হন।
৮৬১-৬২ আল-মুনতাসিরের খেলাফত।
৮৬২-৬৬ আল-মুসতাইনের খেলাফত।
৮৬৬-৬৯ আল-মুতায-এর খেলাফত।
৮৬৮ দশম শিয়া ইমাম-এর পরলোকগমন। তাঁর পুত্র হাসান আল-আসকারির সামারায় বন্দী জীবন অব্যাহত।
৮৬৯-৭০ আল-মুতাদির খেলাফত।
৮৭০ অন্যতম প্রথম মুসলিম ফায়লাসুফ ইয়াকিব ইবন ইসহাক আল-কিন্দির পরলোকগমন।
৮৭০-৭২ আল-মুতামিদের খেলাফত।
৮৭৪ সামারায় বন্দী অবস্থায় একাদশ ইমাম হাসান আল-আসকারির মৃত্যু। তাঁর পুত্র আবু আল-কাসিম মুহাম্মদ আত্মরক্ষার্থে আত্মগোপন করেছেন বলে কথিত আছে। তিনি গুপ্ত ইমাম (Hidden Imam) হিসাবে পরিচিত।
অন্যতম প্রাক “মাতাল সুফি” (Drunken Sufi) অতীন্দ্রিয়বাদী আবু ইয়াযিদ আল-বিস্তামির পরলোকগমন।
৮৯২-৯০২ আল-মুতাদিদের খেলাফত।
৯০২-৮ আল-মুকতাফির খেলাফত।
৯০৮-৩২ আল-মুকতাদিরের খেলাফত।
৯০৯ টিউনিসিয়ার ইফরিকিয়ায় শিয়া ফাতিমীয়দের ক্ষমতা দখল।
৯১০ অন্যতম প্রথম “সোবার সুফি” (Sober Sufi ) বাগদাদের জনাঈদের পরলোকগমন।
৯২২ “মাতাল-সুফি” আল-হাল্লাজ বা উল-কারডার নামে পরিচিত হুসেইন আল-মনসুরকে ব্লাসফেমির দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
৯২৩ বাগদাদে ঐতিহাসিক আবু জাফর আল-তাবারির পরলোকগমন।
৯৩২-৩৪ আল-কাহিরের খেলাফত।
৯৩৪-৪০ আল-রাদির খেলাফত।
৯৩৪ এক অলৌকিক বলয়ে গুপ্ত ইমামের “ঊর্ধ্বারোহণের” (Occultation) ঘোষণা।
৯৩৫-দার্শনিক হাসান আল-আশারির পরলোকগমন।
এই পর্যায় থেকে খলিফাগণের হাতে আর কার্যকর ক্ষমতা থাকেনি, বরং তাঁরা স্রেফ প্রতীকী কর্তৃত্বের অধিকারী হন। প্রকৃত ক্ষমতা চলে যায় স্থানীয় শাসকদের হাতে যারা সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে। তাদের অধিকাংশই আব্বাসীয় খলিফাহ্রদের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেন। দশম শতকের এইসব শাসকের অধিকাংশই ছিলেন শিয়া-পন্থী।
সামানিয়
৮৭৪-৯৯৯ খুরাসান, রাঈ, কিরমান ও ট্রানসোক্সেনিয়ায় সুন্নী ইরানি রাজবংশ সামানিয় শাসন, এর রাজধানী ছিল বুখারায়। সমরকন্দও এক পারস্য সাহিত্যিক রেনেসাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ৯৯০তে সামানিয়রা ওক্সাসের পুবে খারাখানিয় টুর্কদের কাছে ক্ষমতা হারাতে শুরু করে আর পশ্চিমে :
আল-আন্দালুসের স্প্যানিশ রাজ্য
৯১২-৬১ একচ্ছত্র শাসক খলিফাহ্ তৃতীয় আব্দ আল-রামানের শাসন।
৯৬৯-১০২৭ জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান কর্ডোভা।
১০১০ কেন্দ্রীয় ক্ষমতা দুর্বল হয়ে আসে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এমিরেট স্থানীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে ৷
১০৬৪ কবি, উজির এবং থিয়োলজিয়ান ইবন হাযমের পরলোকগমন।
১০৮৫ রিকনকুইস্টার ক্রিশ্চান বাহিনীর কাছে টলেডোর পতন।
হামদানিয়
৯২৯-১০০৩ আরবীয় গোত্র হামদানিয়রা আলোপ্পো ও মোসুল শাসন করে। রাজ- দরবার পণ্ডিত, ঐতিহ্যাসিক, কবি এবং ফায়লাসুফদের পৃষ্ঠপোষকতা দান করে।
৯৮৩ আলেপ্পোয় ফায়লাসুফ এবং রাজকীয় বাদক আবু নাসর আল-ফারাবির পরলোকগমন।
বাঈয়ী
৯৩০-১০৩০ ৯৩০-এর দশকে দ্বাদ্বশবাদী (Twelver) শিয়া এবং ইরানের দেঈলামের পর্বতবাসী বাঈয়ীরা পশ্চিম ইরানে ক্ষমতা অধিকার করে নিতে শুরু করে।
৯৪৫ বাঈয়ীরা বাগদাদ, দক্ষিণ ইরাক এবং ওমানে ক্ষমতা দখল করে।
শিরাজের কাছে গুরুত্ব হারিয়ে ম্লান হতে বসে বাগদাদ। শিরাজ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়।
৯৮৩ বাঈয়ী একক বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তারা রাঈতে গাযনাহ্ মাহমুদের (১০৩০) এবং পশ্চিম ইরানের মালভূমি অঞ্চলের গাযনাভিয়দের কাছে পরাস্ত হয় ৷
ইকশিয়
৯৩৫-৬৯ টুর্ক মুহাম্মদ ইবন তুঘ প্রতিষ্ঠিত ইকশিয়রা মিশর, সিরিয়া ও হিজাজ শাসন করে।
শিয়া ফাতিমীয়
৯৬৯-১১৭১ (৯০৯-এ টিউনিসিয়ায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত) ফাতিমীয়রা উত্তর আফ্রিকা, মিশর এবং সিরিয়ার কিছু অংশ শাসন করে, তারা প্রতিদ্বন্দ্বী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে।
৯৮৩ ফাতিমীয়রা কায়রোয় তাদের রাজধানী স্থানান্তরিত করে, যা শিয়া বিদ্যা চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়। এখানে তারা আল-আযহার মাদ্রাসা নির্মাণ করে।
৯৭৬-১১১৮ গাযনাভিয়
৯৯৯-১০৩০ গাযনাহ্র মাহমুদ উত্তর ভারতে স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইরানে সামানিয়দের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন। অসাধারণ রাজদরবার।
১০৩৭ হামাদানে মহান ফায়লাসুফ ইবন সিনার (পাশ্চাত্যে আভিসেনা) পরলোকগমন।
৯৯০-১১১৮ সেলজুক সাম্রাজ্য
৯৯০ দশক মধ্য এশিয়া থেকে আগত সেলজুক টার্কিশ পরিবারের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ। একাদশ শতকের গোড়ার দিকে তারা তাদের মরুচারী বাহিনীর অশ্বদল নিয়ে ট্রানসোক্সেনিয়া ও খয়ারাযম-এ প্রবেশ করে।
১০৩০ খুরাসনে সেলজুক।
১০৪০ গাাভিয়দের কাছ থেকে তারা পশ্চিম ইরান দখল করে নেয় এবং আযারবাইজানে প্রবেশ করে।
১০৫৫ আব্বাসীয় খলিফাঁদের প্রতিনিধি (লেফটেন্যান্ট) হিসাবে সুলতান তোগরিল-বেগ বাগদাদ হতে সেলজুক সাম্রাজ্য শাসন করেন।
১০৬৩-৭৩ সুলতান আপ আরম্লানের শাসনকাল।
১০৬৫-৬৭ বাগদাদে নিয়ামিয়াহ্ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা।
১০৭৩-৯২ উজির নিযামুলমুলককে নিয়ে মালিক শাহ্-র সাম্রাজ্য শাসন।
সিরিয়া ও আনাতোলিয়ায় টার্কিশ বাহিনীর প্রবেশ।
১০৭১ মনযিকুর্টের যুদ্ধে সেলজুক বাহিনী বাইযানটাইনদের পরাজিত করে, আনাতোলিয়ায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে, পৌঁছে যায় এজিয়ান সাগর পর্যন্ত (১০৮০)।
সিরিয়ায় ফাতিমীয় ও স্থানীয় শাসকদের সঙ্গে সেলজুকদের লড়াই।
১০৯৪ নিজ রাজ্যে সেলজুক অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে পশ্চিমের ক্রিশ্চান রাজ্যসমূহের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন বাইযানটাইন সম্রাট প্রথম আলেক্সিয়াস কমনেনাস।
১০৯৫ পোপ দ্বিতীয় আরবান প্রথম ক্রুসেডের আহ্বান জানান।
১০৯৯ ক্রুসেডারদের জেরুজালেম অধিকার।
ক্রুসেডারগণ প্যালেস্টাইন, আনাতোলিয়া এবং সিরিয়ায় চারটি ক্রুসেডার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।
১০৯০ দশক ইসমায়েলীরা সেলজুক এবং সুন্নী শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে স্থানীয় টার্কিশ রাজবংশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে।
১১১১ বাগদাদে থিয়োলজিয়ান এবং আইনবিদ আল-গাযালির পরলোকগমন। ১১১৮ সেলজুক রাজ্যের স্বাধীন প্রদেশে (Priacipalities) বিভাজন। ১১১৮-১২৫৪ আব্বাসীয় খেলাফতের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে ছোট-ছোট রাজ বংশগুলো স্বাধীনভাবে পরিচালিত হলেও প্রকৃতপ্রস্তাবে ওগুলো প্রতিবেশী অধিকতর শক্তিশালী রাজবংশের কাছে নতি স্বীকার করছিল।
১১২৭-৭৩ জনৈক সেলজুক কমান্ডার প্রতিষ্ঠিত যাঙ্গীয় রাজবংশ ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাতের লক্ষ্যে সিরিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়। উল্লেখযোগ্য উদাহরণ সমূহ হল :
১১৩০-১২৬৯ এক সুন্নী রাজবংশ আল মোহাদীয়রা আল-গাযযালির নীতি অনুযায়ী উত্তর আফ্রিকা ও স্পেনে সংস্কারের প্রয়াস পায়।
১১৫০-১২২০ উত্তর পশ্চিম ট্রানসোক্সোনিয়ার খরাযমশাহরা ইরানের অবশিষ্ট ক্ষুদে সেলজুক রাজবংশগুলোকে পরাস্ত করে ৷
১১৭১-১২৫০ কুর্দিশ
কুর্দিশ জেনারেল সালাদিন প্রতিষ্ঠিত আইয়ুবীয় রাজবংশ ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যাঙ্গীয় অভিযান অব্যাহত রাখে। মিশরস্থ ফাতিমীয় খেলাফতকে পরাস্ত করে এবং একে সুন্নী ইসলামের অধীনে আনে।
১১৮০-১২২৫ বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফাহ আল-নাসির অধিকতর কার্যকর শাসনের ভিত্তি হিসাবে ইসলামী ফাতুয়াহ্ (Fatawah) গোষ্ঠীকে ব্যবহারের প্রয়াস পান।
১১৮৭ হাতিনের যুদ্ধে সালাদিন ক্রুসেডারদের পরাজিত করেন এবং জেরুজালেমে ইসলাম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
১১৯১ সুফি অতীন্দ্রিয়বাদী এবং দার্শনিক ইয়াহিয়া সুহরাওয়ার্দির পরলোকগমন, সম্ভবত: আলেপ্পোতে ধর্মদ্রোহের অপরাধে আইয়ুবীয়দের হাতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনি।
১১৯৩ ইরানি গুঈদ রাজবংশ দিল্লী অধিকার করে ভারতে শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ১১৯৮ কর্ডোভায় ফায়লাসুফ ইবন রূশদ (পাশ্চাত্যে আভেরোয়েস নামে পরিচিত)-এর পরলোকগমন।
১১৯৯-১২২০ খরাযমশাহ্ আলা আল-দিন মাহমুদ এক বিশাল ইরানি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন ৷
১২০৫-৮৭ এক টার্কিশ ক্রীতদাস পরিবার ভারতে গুঈদদের পরাস্ত করার মাধ্যমে দিল্লীতে সালতানাত প্রতিষ্ঠা করে এবং গোটা গাঙ্গেয় উপত্যকায় শাসন কায়েম করে। কিন্তু অচিরেই এইসব ক্ষুদে রাজবংশগুলোকে মঙ্গোলদের হুমকির মুখে পড়তে হয়।
১২২০-৩১ প্রথম মঙ্গোল হানা; নগর সমূহের ব্যাপক ধ্বংস।
১২২৪-১৩৯১ গোল্ডেন হোর্ড মোঙ্গলরা (Golden Horde Mongols) কাসপিয়ান ও কৃষ্ণ সাগরের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা শাসন করে এবং ইসলাম গ্রহণ করে। ১২২৫ আলমোহাদীয়রা স্পেন ত্যাগ করে, যেখানে মুসলিম ক্ষমতা পর্যায়ক্রমে গ্রানাডার ক্ষুদে রাজ্যের কাছে পরাভূত হয়েছিল।
১২২৭ মঙ্গোল নেতা জেঙ্গিস খানের মৃত্যু।
১২২৭-১৩৫৮ চ্যাগাতাঈ মঙ্গোল খান ট্রানসোক্সেনিয়া শাসন করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন।
১২২৮-১৫৫১ টিউনিসিয়ায় হাফসিয় রাজবংশ আলমোহাদীয়দের স্থান গ্রহণ করে।
১২৪০ সুফি দার্শনিক মুঈদ আদ-দিন ইবন আল-আরাবির পরলোকগমন।
১২৫০ দাস-বাহিনী মামলুকরা আইয়ুবীয়দের উৎখাত করে মিশর ও সিরিয়ায় একক শাসক পরিবার প্রতিষ্ঠা করে।
১২৫৬-১৩৩৫ মঙ্গোল ইল-খানস ইরাক ও ইরান শাসন করেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
১২৫৮ তাঁরা বাগদাদ ধ্বংস করেন।
১২৬০ মামলুক সুলতান বায়বারস আইন জালুতের যুদ্ধে মঙ্গল–ইল-খানদের পরাজিত করেন এবং সিরিয় উপকূলের অবশিষ্ট শত্রুঘাঁটিগুলোর পতন ঘটিয়ে চলেন।
১২৭৩ আনাতোলিয়ায় ঘুর্ণায়মান দরবেশ (Whirling Dervishes) দলের প্রতিষ্ঠাতা জালাল আল-দিন রুমির পরলোকগমন।
১২৮৮ বাইযানটাইন সীমান্তের একজন গাজী উসমান আনাতোলিয়ায় অটোমান রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
১৩২৬-৫৯ উসমানের পুত্র ওরখান একটি স্বাধীন অটোমান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, এর রাজধানী ছিল ব্রুসায়; তিনি পতনোন্মুখ বাইযানটাইন সাম্রাজ্যের ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করেন।
১৩২৮ দামাস্কাসে সংস্কারক আহ্মাদ ইবন তাঈমিয়া পরলোকগমন।
১৩৩৪-৫৩ গ্রানাডার রাজা ইউসুফ আলহাম্বরা নির্মাণ কাজ শুরু করেন, যা সমাপ্ত করেন তাঁর পুত্র।
১৩৬৯-১৪০৫ টিমুর লেঙ্ক (টাম্বুরলেইন) সমরকন্দে চ্যাগাতাঈ মঙ্গল ক্ষমতা পুর্নরুজ্জীবিত করেন আর মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ এলাকা অধিকার করে নেন এবং আনাতোলিয়া ও দিল্লি দখল করেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
১৩৮৯ কসোভোর রণক্ষেত্রে সারবিয়ানদের পরাস্ত করার মধ্য দিয়ে অটোমানরা বলকানদের দমন করে। তারা আনাতোলিয়ায় ক্ষমতা বিস্তারে অগ্রসর হয়, কিন্তু ১৪০২-এ টিমুর লেঙ্ক কর্তৃক উৎখাত হয়।
১৪০৩-২১ টিমুরের মৃত্যুর পর প্রথম মেহমেদ অটোমান রাষ্ট্রের পুন:প্রতিষ্ঠা করেন। ১৪০৬ ফায়লাসুফ ও ঐতিহাসিক ইবন খালদুনের পরলোকগমন।
১৪২১-৫১ প্রথম মুরাদ হাঙ্গেরি ও পশ্চিমের বিরুদ্ধে অটোমান ক্ষমতার প্রমাণ রাখেন।
১৪৫৩ দ্বিতীয় মেহমেদ “দ্য কনকুয়েরার” কনসট্যানটিনোপল জয় করেন, এরপর যার নাম হয় ইসতাম্বুল; তিনি একে অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী পরিণত করেন।
১৪৯২ ক্যাথলিক রাজ্যপতি ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা কর্তৃক মুসলিম রাজ্য গ্রানাডা অধিকৃত হয় ৷
১৫০২-২৪ সাফাভিয় সুফি গোষ্ঠীর প্রধান ইসমায়েল ইরান জয় করার পর এখানে সাফাভিয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বাদশবাদী শিয়া মতবাদ এখন ইরানের রাষ্ট্রীয় ধর্ম; নিজ রাজ্যে ইসমায়েল কর্তৃক নিষ্ঠুরভাবে সুন্নী ইসলামকে দমন প্রয়াসের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ অটোমান সাম্রাজ্যে শিয়াদের ওপর নির্যাতন সূচিত হয় ৷
১৫১০ সুন্নী উযবেকদের খুরাশান থেকে বিতাড়িত করে ইসমায়েল সেখানে শিয়া শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৫১৩ পর্তুগিজ বণিকরা চীন পৌঁছায়।
১৫১৪ চ্যালডিরানের যুদ্ধে শাহ্ ইসমায়েলের সাফাভিয় বাহিনীকে পরাস্ত করেন সুলতান প্রথম সেলিম, ফলে সাফাভিয় বাহিনীর অটোমান অঞ্চলে পশ্চিমমুখী অভিযাত্রা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
১৫১৭ মামলুকদের কাছ থেকে মিশর ও সিরিয়া ছিনিয়ে নেয় অটোমানরা। ১৫২০-৬৬ পাশ্চাত্যে “দ্য ম্যাগনিফিশেন্ট” হিসাবে পরিচিত সোলেইমান অটোমান
সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটান এবং এর নিজস্ব আলাদা প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তোলেন! ১৫২২ অটোমান কর্তৃক রোডস অধিকার।
১৫২৪-৭৬ ইরানের দ্বিতীয় সাফাভিয় শাহ্ প্রথম তামাসপ্ সেখানে শিয়া প্রাধান্য সংহত করেন। তাঁর দরবার শিল্পকলার কেন্দ্রে পরিণত হয়, চিত্রকর্মের জন্য যা বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে।
১৫২৬ বাবুর ভারতে মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।
১৫২৯ অটোমানরা ভিয়েনা অবরোধ করে।
১৫৪২ পর্তুগিজরা প্রথম ইউরোপীয় বাণিজ্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।
১৫৪৩ অটোমানরা হাঙেরি জয় করে।
১৫৫২-৫৬ রাশানরা ভলগা নদী তীরবর্তী প্রাচীন মঙ্গোল খানাট কাযান অস্ত্রাখান অধিকার করে নেয় ৷
১৫৬০-১৬০৫ আকবর মোঘুল ভারতের সম্রাট। সাম্রাজ্য চরম শিখরে পৌঁছে। আকবর হিন্দু-মুসলিম সহযোগিতা উৎসাহিত করেন এবং দক্ষিণ ভারতীয় অঞ্চল অধিকার করেন। এক সাংস্কৃতিক রেনেসাঁর নেতৃত্ব দেন তিনি। ভারত মহাসাগরে অটোমান ও পর্তুগিজরা নৌযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
১৫৭০ অটোমান কর্তৃক সাইপ্রাস অধিকার।
১৫৭৮ অটোমান রাজকীয় স্থপতি সিনান পাশার মৃত্যু।
১৫৮০ দশক ভারতে পর্তুগিজদের ক্ষমতা ক্ষয়।
১৫৮৮-১৬২৯ শাহ্ প্রথম আব্বাস ইরানে সাফাভিয় সাম্রাজ্যের শাসক, ইসফাহানে এক জাঁকাল দরবার নির্মাণ করেন তিনি। আযারবাইযান ও ইরাক থেকে অটোমানদের উৎখাত করেন।
১৫৯০ ভারতে ডাচদের বাণিজ্য শুরু।
১৬০১ ডাচরা পর্তুগিজ ঘাঁটিগুলো অধিকার শুরু করে।
১৬০২ সুফি ঐতিহাসিক আবদুলফযল আল্লামির পরলোকগমন।
১৬২৫ সংস্কারক আমাদ শিরহিন্দির পরলোকগমন।
১৬২৭-৫৮ শাহ্ জিহান মোঘুল সাম্রাজ্যের সম্রাট, সাম্রাজ্য এর পরিণতির শিখরে পৌঁছে। তাজমহল নির্মাণ করেন।
১৬৩১ ইসফাহানে শিয়া দার্শনিক মির দিমাদের পরলোকগমন।
১৬৪০ ইরানি দার্শনিক ও অতীন্দ্রিয়বাদী মোল্লা সদরার পরলোকগমন।
১৬৫৬ অটোমান উজিরগণ অটোমান সাম্রাজ্যের পতন রোধ করেন।
১৬৫৮-১৭০৭ শেষ প্রধান মোঘল সম্রাট আউরেঙ্গজেব ভারতে ইসলামীকরণের প্রয়াস পান, কিন্তু হিন্দু ও শিখদের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী বৈরিতা উৎসাহিত করেন।
১৬৬৯ অটোমান কর্তৃক ভেনিস হতে ক্রিট অধিকার।
১৬৮১ অটোমান কর্তৃক রাশিয়ার কাছে কিয়েভ পরিত্যাগ।
১৬৮৩ ভিয়েনায় দ্বিতীয় হামলায় ব্যর্থ হয় অটোমানরা, তবে সাফাভিয়দের কাছ থেকে ইরাক পুনরুদ্ধারে সফল হয় তারা।
১৬৯৯ কার্লোউইকস্ চুক্তির ফলে অটোমান হাঙেরি অস্ট্রিয়ার সঙ্গে মিলিত হয়, প্রথম বড় ধরনের অটোমান পশ্চাদাপসরণ।
১৭০০ ইরানের প্রভাবশালী শিয়া আলিম মুহাম্মদ বাকির মজলিসির পরলোকগমন। ১৭০৭-১২ মোঘল সাম্রাজ্য দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো হারায়। ১৭১৫ অস্ট্রিয়ান ও প্রুশিয়ান রাজ্যসমূহের উদ্ভব।
১৭১৮-৩০ সুলতান তৃতীয় আমাদ প্রথমবারের মত অটোমান সাম্রাজ্যে পাশ্চাত্যমুখী সংস্কার প্রয়াস পান, কিন্তু জানিসারিদের বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে সংস্কার প্রয়াস সমাপ্ত হয়।
১৭২২ আফগান বিদ্রোহীরা ইসফাহানে আক্রমণ চালিয়ে অভিজাত গোষ্ঠীকে হত্যা করে।
১৭২৬ নাদির শাহ্ সাময়িকভাবে ইরানি শিয়া সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
১৭৩৯ নাদির শাহ্ দিল্লী অধিকার করে ভারতে কার্যত মোঘল শাসনের অবসান ঘটান। হিন্দু, শিখ এবং আফগানদের মাঝে ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইরানকে সুন্নী ইসলামের পথে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন নাদির শাহ্। ফলে, নেতৃস্থানীয় ইরানি মুজতাহিদরা ইরান ত্যাগ করে অটোমান ইরাকে আশ্রয় নেন এবং সেখানে শাহ্দের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এক ক্ষমতা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।
১৭৪৮ আততায়ীর হাতে নাদির শাহ্-র মৃত্যু। অরাজকতার একটা পর্ব নেমে আসে, এই সময়ে উসুলি আদর্শের অনুসারী ইরানিরা প্রভাবশালী হয়ে ওঠে, এতে করে মানুষ আইন-শৃঙ্খলার একটা উৎসের সন্ধান লাভ করে।
১৭৬২ ভারতে সুফি সংস্কারক শাহ্ ওয়ালি উল্লাহ্-র পরলোকগমন।
১৭৬৩ বিচ্ছিন্ন ভারতীয় রাজ্যসমূহে ব্রিটিশরা নিয়ন্ত্রণ বিস্তার ঘটায়।
১৭৭৪ রাশানদের হাতে অটোমানদের চূড়ান্ত পরাজয়। ক্রিমিয়া হাতছাড়া হয়ে যায় এবং অটোমান এলাকার অর্থোডক্স ক্রিশ্চানদের “প্রটেক্টর” হয়ে ওঠেন জার।
১৭৭৯ ইরানে কাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন আকা মুহাম্মদ খান, যা শতাব্দীর শেষ নাগাদ শক্তিশালী সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়।
১৭৮৯ ফরাসি বিপ্লব।
১৭৮৯-১৮০৭ তৃতীয় সেলিম অটোমান সাম্রাজ্যে নতুন করে পাশ্চাত্যমুখী সংস্কারের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন এবং ইউরোপীয় রাজধানীসমূহে প্রথম অটোমান দূতাবাস স্থাপন করেন।
১৭৯২ জঙ্গী আরবীয় সংস্কারক মুহাম্মদ ইবন আব্দ আল-ওয়াহহাবের পরলোকগমন।
১৭৯৩ প্রথম প্রটেস্ট্যান্ট মিশনারি দলের ভারত আগমন।
১৭৯৭-১৮১৮ ফতহ্ আলি শাহ্ ইরানের শাসক। সেখানে ব্রিটিশ ও রাশান প্রভাবের সূচনা।
১৭৯৮-১৮০১ নেপোলিয়ন কর্তৃক মিশর অধিকার।
১৮০৩-১৩ ওয়াহ্বিরা আরবীয় হিজায অধিকার করে একে অটোমান নিয়ন্ত্রণ থেকে ছিনিয়ে নেয়।
১৮০৫-৪৮ মুহাম্মদ আলী মিশরকে আধুনিক রূপ দেয়ার প্রয়াস পান।
১৮০৮-৩৯ সুলতান দ্বিতীয় মাহ্মুদ অটোমান সাম্রাজ্যে আধুনিকীকরণের “টানযিমাত” সংস্কার সূচিত করেন।
১৮১৪ গুলিস্তান চুক্তি: ককেশান এলাকা রাশিয়ার অধীনে যায়। ১৮১৫ অটোমান নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে সারবিয়ান বিদ্রোহ।
১৮২১ অটোমানদের বিরুদ্ধে গ্রিক স্বাধীনতা যুদ্ধ।
১৮৩০ ফ্রান্স কর্তৃক আলজেরিয়া দখল।
১৮৩১ মুহাম্মদ আলী অটোমান সিরিয়া দখল করেন এবং আনাতোলিয়ার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েন, অটোমান সাম্রাজ্যের পরিধির ভেতরেই কার্যত স্বাধীন ইমপেরিয়াম ইন ইমপেরিয়ো প্রতিষ্ঠা করেন। অটোমান সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্যে ইউরোপীয় শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে এবং মুহাম্মদ আলীকে সিরিয়া থেকে প্রত্যাহারে (১৮৪১) বাধ্য করে।
১৮৩৬ নব্য-সুফি সংস্কারক আহমাদ ইবন ইদরিসের পরলোকগমন।
১৮৩৯ ব্রিটিশরা অ্যাডেন অধিকার করে।
১৮৩৯-৬১ অটোমান সাম্রাজ্যের পতন রোধকল্পে সুলতান আবদুলহামিদ অধিকতর আধুনিকতামুখী সংস্কারের সূচনা করেন।
১৮৪৩-৪৯ ব্রিটিশদের সিন্ধু উপত্যকা অধিকার।
১৮৫৪-৫৬ ক্রিমিয়ার যুদ্ধ. অটোমান সাম্রাজ্যে সংখ্যালঘু ক্রিশ্চানদের নিরাপত্তা নিয়ে ইউরোপীয়দের বিরোধের মাধ্যমে যার সূচনা।
মিশরের গভর্নর সাইদ পাশা ফ্রেঞ্চদের সুয়েয খাল মঞ্জুর করেন। মিশর কর্তৃক প্রথমবারের মত বিদেশী ঋণ গ্রহণের জন্যে চুক্তি সম্পাদন।
১৮৫৭-৫৮ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় বিদ্রোহ। ব্রিটিশদের হাতে শেষ মোঘল সম্রাটের পতন। স্যার সাইদ আহমাদ খান পাশ্চাত্য ধারায় ইসলামের সংস্কার ও ব্রিটিশ সংস্কৃতি গ্রহণের পক্ষে মত প্রচার করেন।
১৮৬০-৬১ লেবাননে দ্রুয় বিদ্রোহীদের পরিচালিত ম্যাসাকারের পর ফ্রেঞ্চরা দাবী করে যে এটা ফ্রেঞ্চ গভর্নরের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশে পরিণত হবে।
১৮৬১-৭৬ সুলতান আবদুলআযিয অটোমান সাম্রাজ্যের সংস্কার অব্যাহত রাখেন, ন্তু বিপুল বিদেশী ঋণ গ্রহণ করার ফলে সাম্রাজ্য দেউলিয়া হয়ে পড়ে এবং অটোমান অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ ইউরোপীয় সরকারগুলোর হাতে চলে যায়।
১৮৬৩-৭৯ মিশরের গভর্নর ইসমায়েল পাশা ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেন, কিন্তু বিদেশী ঋণের জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন যার ফলে দেউলিয়া পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, ব্রিটিশদের কাছে বিক্রি করতে হয় সুয়ে খাল। মিশরের অর্থনীতির ওপর ইউরোপীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৭১-৭৯ ইরানি সংস্কারক আল-আফঘানি মিশরে অবস্থান করে মুহাম্মদ আবদুসহ মিশরীয় সংস্কারবাদীদের একটি গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল ইসলামের পুনর্জাগরণ ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ইউরোপের সাংস্কৃতিক প্রাধান্য খর্ব করা।
১৮৭২-১৮৭৬ এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে ইরানে ব্রিটিশ ও রাশানদের বৈরিতা বৃদ্ধি। অটোমান সুলতান আবদুলআযিয উৎখাত হন। দ্বিতীয় আবদুলহামিদ প্রথম অটোমান সংবিধান ঘোষণা করতে বাধ্য হন, যা অবশ্য পরে সুলতান স্থগিত ঘোষণা করেন। শিক্ষা, পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অটোমান সংস্কার।
১৮৭৯ ইসমায়েল পাশার উৎখাত।
১৮৮১ ফ্রান্স কর্তৃক টিউনিসিয়া দখল।
১৮৮১-৮২ সংবিধানপন্থী ও সংস্কারবাদীদের সঙ্গে স্থানীয় মিশরীয় অফিসারদের এক বিদ্রোহের মাধ্যমে খেদিভ তাওফিকের ওপর তাদের নিজস্ব সরকারের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এক গণঅভ্যুথানের ফলে গভর্নর হিসেবে লর্ড ক্রোমারের নেতৃত্ব ব্রিটিশ দখলদারিত্বের সূচনা ঘটে।
গোপন সংস্থাসমূহ সিরিয়ার স্বাধীনতার প্রচারণা চালায়।
১৮৮৯ ব্রিটিশদের সুদান দখল।
১৮৯২ ইরানে তামাক-সঙ্কট। জনৈক নেতৃস্থানীয় মুজতাহিদের দেয়া ফতওয়াহ্’র কারণে শাহ্ ব্রিটিশদের দেয়া তামাক সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহারে বাধ্য হন। ১৮৯৪ অটোমানদের বিরুদ্ধাচরণকারী ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ আর্মেনিয়ান বিপ্লবীর নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড।
১৮৯৬ আল-আফঘানির জনৈক অনুসারীর হাতে ইরানের নাসিরুদ্দীন শাহ্ নিহত হন।
১৮৯৭ বেয়েলে প্রথমবারের মত যায়নিস্ট সম্মেলন অনুষ্ঠান। সম্মেলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অটোমান প্রদেশ প্যালেস্টাইনে একটি ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা।
আল-আফঘানির পরলোকগমন।
১৯০১ ইরানে তেল আবিষ্কার এবং ব্রিটিশদের বিশেষ সুবিধা দান।
১৯০৩-১১ ব্রিটিশ কর্তৃক বঙ্গভঙ্গের পর ভারতে হিন্দু ও মুসলিমদের বিভক্ত করতে চায় তারা, এই আশঙ্কায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে (১৯০৬)।
১৯০৫ মিশরীয় সংস্কারক মুহাম্মদ আবদুর পরলোকগমন।
১৯০৬ ইরানে সংবিধানপন্থীদের বিপ্লবে শাহ্ একটি সংবিধান ঘোষণা এবং একটি মজলিস প্রতিষ্ঠায় বাধ্য হন কিন্তু এক অ্যাংলো-রাশান চুক্তি এবং শাহ্ কর্তৃক রুশ-সমর্থিত একটা পাল্টা অভ্যুত্থানে সংবিধান বাতিল হয়ে যায়।
১৯০৮ তুর্কী তরুণদের অভ্যুত্থান সুলতানকে সংবিধান পুনর্বহালে বাধ্য করে। ১৯১৪-১৮ প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ।
ব্রিটেন মিশরকে প্রটেক্টরেট ঘোষণা করে; ব্রিটিশ ও রাশান বাহিনী মিশর দখল করে নেয়।
১৯১৬-২১ ব্রিটিশদের মদদে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহ। ১৯১৭ বেলফর ঘোষণায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্যালেস্টাইনে ইহুদি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় ব্রিটিশ সমর্থন প্রদান।
১৯১৯-২১ টার্কির স্বাধীনতা যুদ্ধ। আতাতুর্ক ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে ঠেকিয়ে স্বাধীন তুর্কী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। তিনি চরম সেক্যুলারকরণ ও আধুনিকীকরণের নীতিমালা গ্রহণ করেন (১৯২৪-২৮)।
১৯২০ সাইকস-পিকোট চুক্তি প্রকাশ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পরাজয়ের প্রেক্ষাপটে সাম্রাজ্যের প্রদেশগুলো ব্রিটিশ ও ফ্রেঞ্চদের মাঝে ভাগাভাগি হয়, যারা ম্যান্ডেট ও প্রটেক্টরেটসমূহ প্রতিষ্ঠা করে, যদিও যুদ্ধের পর আরবদের স্বাধীনতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।
১৯২০-২২ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণকে দুটি অসহযোগ আন্দোলনে সংগঠিত করেন গান্ধী।
১৯২১ ইরানে রেযা খান একটি সফল ক্যু দে’তায় নেতৃত্ব দেন এবং পালভী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। ইরানে এক নিষ্ঠুর আধুনিকীকরণ ও সেক্যুলারকরণের নীতি গ্রহণ করেন তিনি।
১৯২২ মিশর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা লাভ করে, কিন্তু প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি এবং সুদানের নিয়ন্ত্রণ ব্রিটিশদের হাতে রয়ে যায়। ১৯২৩ ও ১৯৩০ এর মাঝে জনপ্রিয় ওয়ফদ্ পার্টি তিনটি নির্বাচনে ব্যাপক জয়লাভ করে, কিন্তু প্রতিবারই তারা ব্রিটিশ কিংবা রাজা কর্তৃক পদত্যাগে বাধ্য হয়।
১৯৩২ সউদি আরবের রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৩৫ মিশরে সালাফিয়াহ্ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মুসলিম সংস্কারক ও সাংবাদিক রশিদ রিদার পরলোকগমন।
১৯৩৮ ভারতীয় কবি-দার্শনিক মুহাম্মদ ইকবালের পরলোকগমন।
১৯৩৯-৪৫ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটিশরা রেযা শাহকে উৎখাত করে। পুত্র মুহাম্মদ রেযা (১৯৪৪) তাঁর উত্তরাধিকারী হন।
১৯৪০ দশক মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।
১৯৪৫ টার্কির জাতিসংঘে যোগদান, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত (১৯৪৭)।
আরব লীগের প্রতিষ্ঠা।
১৯৪৬ পৃথক রাষ্ট্রের দাবীতে মুসলিম লীগের প্রচারণার প্রেক্ষাপটে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।
১৯৪৭ মুসলিম প্রধান এলাকা নিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি। ভারত বিভাগের ফলে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের প্রাণহানি।
১৯৪৮ প্যালেস্টাইনে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অবসান ও জাতিসংঘের এক ঘোষণাবলে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের সৃষ্টি। নয়া ইহুদি রাষ্ট্রে আক্রমণ পরিচালনাকারী পাঁচটি আরব সেনাবাহিনীকে ইসরায়েল পরাস্ত করে। এই বৈরিতার সময় প্রায় ৭,৫০,০০০ প্যালেস্টাইনি দেশত্যাগ করে, পরে আর তারা স্বদেশে ফেরার অনুমতি পায়নি। ১৯৫১-৫৩ মুহাম্মদ মুসাদ্দিক এবং ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টি ইরানি তেল জাতীয়করণ করে। রাজতন্ত্র বিরোধী এক বিক্ষোভের পর ইরান ছেড়ে পালিয়ে যান শাহ্, কিন্তু CIA ও ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত অভ্যুত্থানে আবার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। ইউরোপীয় তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নতুন করে চুক্তি সম্পাদিত হয়।
১৯৫২ মিশরে জামাল আবদ আল-নাসেরের নেতৃত্বে স্বাধীন অফিসারদের বিদ্রোহে রাজা ফারুক ক্ষমতাচ্যুত হন। আল-নাসের মুসলিম ব্রাদারহুডকে দমন করেন এবং হাজার হাজার ব্রাদারকে নির্যাতন শিবিরে পাঠান।
১৯৫৪ আলজেরিয়ায় ফ্রেঞ্চ উপনিবেশবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সেক্যুলারিস্ট ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের (FLN) নেতৃত্বে অভ্যুত্থান।
১৯৫৬ পাকিস্তানে প্রথম সংবিধান অনুমোদন।
জামাল আবদ আল-নাসের সুয়ে খাল জাতীয়করণ করেন।
১৯৫৭ আমেরিকান CIA এবং ইসরায়েলি MOSSAD-এর সহায়তায় ইরানের শাহ্ রেযা মুহাম্মদ পালভী গুপ্ত পুলিশ বাহিনী SAVAK প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৮-৬৯ পাকিস্তানে জেনারেল মুহাম্মদ আইয়ুব খানের সেক্যুলারিস্ট সরকার। ১৯৬১ ইরানের শাহ্ মুহাম্মদ রেযা পালভী আধুনিকীকরণের ‘শ্বেত বিপ্লবে’র ঘোষণা দেন, যা ধর্মকে আরও প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেয় এবং ইরানি সমাজে বিভেদকে আরও প্রবল করে তোলে।
১৯৬৩ আলজেরিয়ায় NLF সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে। আয়াতোল্লাহ রুহুল্লাহ্ খোমিনি পাহলভী শাসনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান। গোটা ইরানে বিক্ষোভে অনুপ্রেরণা যোগান। পরে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন তিনি এবং শেষে ইরাকে নির্বাসিত হন।
১৯৬৬ আল-নাসের মিশরের নেতৃস্থানীয় মৌলবাদী চিন্তাবিদ সাইয়ীদ কুতব-এর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
১৯৬৭ ইসরায়েল ও প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর মধ্যে ‘ছয়দিনের যুদ্ধ’। ইসরায়েলি বিজয় এবং আরবদের চরম পরাজয় গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এক ধর্মীয় পুনর্জাগরণ সৃষ্টি করে, কেননা পুরনো সেক্যুলারিস্ট নীতিমালা ভ্ৰান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
১৯৭০ আল-নাসেরের পরলোকগমন; আনোয়ার আল-সাদাত তাঁর স্থলাভিষিক্ত, যিনি মিশরীয় ইসলামপন্থীদের সমর্থন লাভের জন্য তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেন। ১৯৭১ শেখ আমাদ ইয়াসিন কল্যাণমূলক সংগঠন মুজামাহ (কংগ্রেস) প্রতিষ্ঠা করেন এবং PLO-র সেক্যুলার জাতীয়বাদের বিরোধিতা করে প্যালেস্টাইনের একটি ইসলামী পরিচয়ের অনুসন্ধান করেন; মুজামাহ ইসরায়েলের সমর্থন লাভ করে।
১৯৭১-৭৭ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আলী ভূট্টো বামপন্থী-সেক্যুলারিস্ট সরকারের নেতৃত্ব দেন, এই সরকার ইসলামপন্থীদের ছাড় দিলেও তা যথেষ্ট ছিল না। ১৯৭৩ ইয়োম কিপ্পুর দিবসে মিশর ও সিরিয়া ইসরায়েলে আক্রমণ চালায় এবং রণক্ষেত্রে এমন আকর্ষণীয় শক্তি প্রদর্শন করে যে আল-সাদাত ইসরায়েলের সঙ্গে দুঃসাহসী শান্তি উদ্যোগ গ্রহণের মত অবস্থানে পৌঁছেন এবং ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯৭৭-৮৮ ধর্মপ্রাণ মুসলিম জিয়া আল-হক পাকিস্তানে এক সফল অভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দেন এবং অধিকতর ইসলামী সরকার গঠন করেন, অবশ্য প্রকৃত রাজনীতি থেকে ধর্মকে পৃথক করেন।
১৯৭৮-৭৯ ইরানি বিপ্লব। আয়াতোল্লাহ্ খোমিনি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ ফাকিহ্ হন (১৯৭৯-৮৯)।
১৯৭৯ পাকিস্তানী মৌলবাদী চিন্তাবিদ আবু আলা মউদুদীর পরলোকগমন। কয়েক শত সুন্নী মৌলবাদী সৌদি আরবে মক্কার কাবাহ্ দখল করে এবং তাদের নেতাকে মাহ্দী ঘোষণা করে; রাষ্ট্র বিদ্রোহ দমন করে।
১৯৭৯-৮১ তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে আমেরিকান জিম্মিদের বন্দী করা হয়। ১৯৮১ মুসলিম চরমপন্থীদের হাতে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল-সাদাত নিহত। এরা মিশরীয় জনগণের প্রতি সাদাঁতের অন্যায় আচরণ ও ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সম্পাদনের নিন্দা করেছে।
১৯৮৭ ইনতিফাদাহ্, পশ্চিম তীর ও গাযা স্ট্রিপের ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনি গণঅভ্যূত্থান। HAMAS, মুজামাহর একটি উপদল এবার PLO-র পাশাপাশি ইসরায়েলের বিরোধিতা শুরু করে।
১৯৮৯ দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসে পয়গম্বর মুহাম্মদের (স:) ব্লাসফেমাস বিবরণ তুলে ধরার অভিযোগে আয়াতোল্লাহ্ খোমিনি ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদীর বিরুদ্ধে একটি ফাতওয়াহ্ জারি করেন। এক মাস পরে ইসলামী কনফারেন্সের উনপঞ্চাশটি সদস্য দেশের মধ্যে আটচল্লিশটি দেশ এই ফাতওয়াহকে অনৈসলামিক বলে নিন্দা জানায়।
আয়াতোল্লাহ খোমিনির পরলোকগমননের পর আয়াতোল্লাহ খামেনি ইরানের সর্বোচ্চ ফাকিহ হন এবং উদারপন্থী হোজ্জাত ওল-ইসলাম রাফসানজানি হন প্রেসিডেন্ট!
১৯৯০ আলজেরিয়ার স্থানীয় নির্বাচনে সেক্যুলারিস্ট FLN-এর বিরুদ্ধে ইসলামীক স্যালভেশন ফ্রন্ট (FIS) বিপুল বিজয় অর্জন করে ৷ ১৯৯২ সালের সাধারণ নির্বাচনেও ফ্রন্ট বিজয়ী হবে বলে মনে হয়।
একজন সেক্যুলারিস্ট নেতা প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেইন, কুয়েতে আক্রমণ চালান: প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যীয় মিত্রদেশগুলো ইরাকের বিরুদ্ধে অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম (Oparation Desert Storm) পরিচালনা করে (১৯৯১)।
১৯৯২ আলজেরিয়ায় FIS-এর ক্ষমতারোহণ ঠেকানোর জন্য সেনাবাহিনী এক অভ্যূত্থান ঘটায় এবং আন্দোলন দমন করে। ফলে অধিকতর চরমপন্থী সদস্যরা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ৷
অযোধ্যায় হিন্দু BJP-র সদস্যরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে।
১৯৯২-৯৯ সারবিয়ান ও ক্রোয়েশিয়ান জাতীয়তাবাদীরা কৌশলে বসনিয়া ও কসোভোর মুসলিম অধিবাসীদের হত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করে।
১৯৯৩ ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর।
১৯৯৪ জনৈক ইহুদি চরমপন্থী কর্তৃক হেবরন মসজিদে উনত্রিশজন মুসলিমের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে HAMAS-এর আত্মঘাতী বোমাবাজরা ইসরায়েলে ইহুদি নাগরিকদের ওপর আক্রমণ চালায়।
অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের কারণে জনৈক ইহুদি চরমপন্থীর হাতে প্রেসিডেন্ট ইটযহাক রাবিনের মৃত্যু।
আফগানিস্তানে তালিবান মৌলবাদীদের ক্ষমতারোহণ।
১৯৯৭ এক ভূমিধ্বস বিজয়ের ভেতর দিয়ে উদারপন্থী ধর্মনেতা হোজ্জাত ওল-ইসলাম সাইয়ীদ খাতামি ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
১৯৯৮ সালমান রুশদীর বিরুদ্ধে খোমিনির দেয়া ফতওয়াহর সঙ্গে তার সরকারের সম্পর্ক নেই বলে প্রেসিডেন্ট খাতামির ঘোষণা।
২০০১ সেপ্টেম্বর ১১। ওসামা বিন লাদেনের গ্রুপ আল-ক্কায়েদার সদস্য উনিশজন মুসলিম চরমপন্থী আমেরিকান যাত্রাবাহী বিমান হাইজ্যাক করে এবং ওঅর্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনের ওপর হামলে পড়ে।
অক্টোবর ৭। প্রতিশোধ স্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তালিবান ও আল-কায়েদার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সূচনা করে।
Leave a Reply