ইসলাম ও জিহাদ – লেখক : শহীদ হাসানুল বান্না
ভূমিকা
জিহাদ একটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য : জিহাদ প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে ওয়াজিব। আল্লাহর দৃষ্টিতে জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর দীনের যারা মুজাহিদ এবং যারা তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়ে শাহাদাত বরণ করেন তাঁদের জন্যে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্তু পুরস্কার। তিনি তাদেরকে এমন সম্মান-সম্ভ্রম ও মর্যাদা দান করেছেন, যা আর কাউকে দান করেননি। শহীদানের পূত-পবিত্র রক্ত আল্লাহর হুজুরে বিজয় ও সাহায্যের নিদর্শন বই আর কিছু নয় এবং আল্লাহর দরবারে তাঁদের উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের এটিই হচ্ছে মৌল মাপকাঠি। জিহাদ ফি সাবিলিল্লায় যারা পিছ পা হয় আল্লাহর কাছে রয়েছে তাদের জন্যে ভয়াবহ পরিণাম এবং তারা অপমানিত ও ঘৃণিত। আল্লাহ কঠোরভাবে নিন্দা করেছেন জিহাদের ভয়ে ভীত কাপুরুষ মুসলমানদেরকে। দুনিয়াতে তাদের জন্যে রয়েছে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান, আর আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। এমনকি সোনার পাহাড়ের বিনিময়েও তারা এ শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। জিহাদ না করা আল্লাহর দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। কোনো জাতি না করা আল্লাহর দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের জন্যে জিহাদ পরিত্যাগ করা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার শামিল।
সত্য ও ন্যায়ের জন্যে সংগ্রাম, প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ এবং পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের ওপর ইসলাম সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। দুনিয়ার অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদ এসব বিষয়ের ওপর এত বেশী জোর দেয়নি। এমনতর বিধি-ব্যবস্থা অতীতে বা বর্তমানে কোনো রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন বা ধর্মে অনুসন্ধান করলে পাওয়া যাবে না। আল্লাহর কুরআন ও রাসূল (সা) এর হাদীস জিহাদের শিক্ষায় ভরপুর। ইসলাম আমাদেরকে জিহাদের আহ্বান জানায়, মুজাহিদ জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করে এবং জিহাদের জন্যে প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণ ও অস্ত্র-শস্ত্র সংগ্রহের নির্দেশ দান করে।
বক্ষ্যমান প্রবন্ধে আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) জিহাদ সম্পর্কে যে সমস্ত মূল্যবান হেদায়াত দিয়েছেন তা সংক্ষেপে আলোচনা করবো। এ প্রসঙ্গে উল্লেখিত কুরআনুল কারীমের পবিত্র আয়াত ও হুজুর (সা) এর হাদীসমসূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যাদান আমাদের উদ্দেশ্যে নয়। কারণ এ সম্পর্কিত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী অত্যন্ত সুস্পষ্ট, যুক্তিযুক্ত ও আধ্যাত্মিকতায় পরিপূর্ণ এবং তাতে কোনো ব্যাখ্যার অবকাশ নেই।
আল্লাহর পথে জিহাদ :
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা’আলারই জন্যে, আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তাঁর প্রিয় নবী, সরদারে মুজাহিদীন, ইমামুল মুত্তাকীন হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সা) এবং তাঁর আহলে বায়েত ও সম্মানিত সাহাবীগণের ওপর।
অধ্যায় ০১ : আল কুরআন থেকে জিহাদ প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াত
এক: “যুদ্ধ তোমাদের জন্যে ফরয করা হলো, যদি তোমরা তা অপছন্দ কর। (বস্তুত) এমন অনেক বিষয়কে তোমরা পছন্দ কর না অথচ তা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর এবং এমন অনেক কিছু তোমরা শ্রেয় মনে কর অথচ আসলেই তা তোমাদের জন্যে ক্ষতিকর। (এর কারণ এই যে) আল্লাহই জানেন এবং তোমরা জান না”। (সূরা আল বাকারা : ২১৬)
দুই: “হে ঈমানদারগণ, কাফেরদের ন্যায় কথাবার্তা বলো না, যাদের নিকটাত্মীয়রা যদি কখনও বিদেশে যায় বা যুদ্ধে শরীক হয় (এবং সেখানে কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়) তখন তারা বলে যে, তারা আমাদের কাছে থাকলে মারা যেত না বা নিহত হতো না। আল্লাহ এ ধরণের কথাবার্তা তাদের মনে দু:খ ও চিন্তার কারণ বানিয়ে দেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পথে মারা যাও অথবা নিহত হও, তাহলে আল্লাহর যে রহমত ও মাগফেরাত তোমরা পাবে, তা এ ধরনের লোকেরা যা কিছুই সংগ্রহ-সঞ্চয় করেছ তার চেয়ে অনেক উত্তম। আর তোমরা মৃত্যুবরণ করো বা নিহত হও, সকল অবস্থায়ই তোমাদের সবাইকে আল্লাহর নিকট সমবেত হতে হবে”। (সূরা আলে ইমরান : ১৫৬-১৫৮)
এখন চিন্তা করা উচিত প্রথম আয়াতে আল্লাহর রাহে মৃত্যু বা হত্যার মোকাবেলায় তাঁর অপার করুণা ও ক্ষমার কথা বলা হয়েছে কিন্তু দ্বিতীয় আয়াতে তা বলা হয়নি এতে জিহাদের উল্লেখ নেই।
তিন: “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত মনে করো না, প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত। তারা তাদের প্রভুর নিকট রিযিক পাচ্ছে। আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে যা কিছু দান করেছেন তা নিয়ে তারা খুশী ও পরিতৃপ্ত। এবং যেসব ঈমানদার লোক তাদের পেছনে দুনিয়ায় রয়ে গেছে এবং এখনো তাদের সাথে এসে মিলিত হয়নি তাদের জন্যে কোনো ভয় ও চিন্তা নেই”। (সূরা আলে ইমরান : ১৬৮-১৭০)
এ সূরার ১৭১ থেকে ১৭৫ পর্যন্ত আয়াতসমূহে অনুরূপ কথা বলা হয়েছে, কুরআনে হাকীম খুললে তা দেখা যাবে।
চার : “যারা দুনিয়ার জীবনের বিনিময়ে আখেরাতকে খরিত করে, তাদের উচিত আল্লাহর রাহে লড়াই করা। যে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে, সে তাতে নিহত হোক বা বিজয়ী হোক, তাকে আমরা অবশ্যই বিরাট প্রতিদান দেব।” (সূরা আন নিসা : ৭৪)
এ সূরার ৭১-৭৮ পর্যন্ত আয়াতসমূহে একই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আল কুরআনের সূরা নিসা একবার পড়ে দেখুন। তাতে দেখবেন আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে কিভাবে সদা হুশিয়ার থাকার জন্যে বলেছেন এবং কখনো বা পূর্ণ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে জামায়াতবদ্ধভাবে বা একাকী জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে ডাক দিয়েছেন, আপনি বুঝতে পারবেন আল্লাহ তা’আলা কি ভাষায় জিহাদের কর্তব্য পালনে অবহেলাকারী মুসলমানদেরকে তাদের নিষ্ক্রিয়তা, কাপুরুষতা ও স্বার্থপরতা জন্যে ধমক দিয়েছেন। দুর্বলের সাহায্য ও মজলুমের প্রতিরক্ষার জন্যে আল্লাহ কি করতে চান তাও এসব আয়াত থেকে বুঝা যাবে। সূরা আন নিসার আয়াতসমূহে আল্লাহ নামায-রোযার সাথে জিহাদেও যোগ করেছেন এবং জিহাদ যে ইসলামী জীবন ব্যবস্থারূপী ইমারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ খুঁটি, তাও তিনি বুঝিয়ে বলেছেন। শুধু তাই নয়, দুর্বল মুসলমানদে মনের দোদুল্যমানতা, তাদের সন্দেহ-সংশয় দূর করে আল্লাহ তাদের মনে সাহস ও বীরত্বের সঞ্চার করেছেন। এ সূরার মহান আয়াতগুলো মুসলমানদের মন এমন মৃত্যুঞ্জয়ী মনোভাব সৃষ্টি করে যারা ভিত্তিতে তারা প্রভুর নিকট থেকে নিশ্চিত প্রতিদানের আশায় মৃত্যুর মোকাবেলায় দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যায়। তাদের মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, ত্যাগ-কুরবানী তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, মহান প্রতিপালক তার উপযুক্ত প্রতিদান থেকে কাউকে বঞ্চিত করবেন না।
পাঁচ: সূরা আনফাল পুরোটাই জিহাদের দাওয়াত ও যুদ্ধের আহ্বানে ভরপুর। এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুসলমানদেরকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং জিহাদের বিস্তারিত বিধি-বিধান সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এজন্যে রাসূলে কারীম (সা) এর সংগী-সাথীরা এ সূরাকে যুদ্ধ-সংগীত হিসেবে ব্যবহার করেছেন। মরণপণ জিহাদ যখন শুরু হয়ে যেত, অস্ত্রের ঝনঝনায় যখন দশদিন মুখরিত হতো তখন ইসলামের মুজাহিদরা এ সূরার মর্মস্পর্শী ভাষায় তেলাওয়াত করতেন আর আল্লাহর রাহে প্রাণ বিলিয়ে দোয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে যেতেন। উদাহরণ স্বরূপ পড়ুন, “আর তোমরা যতদূর সম্ভব হাতিয়ার প্রস্তুত কর এবং সদাসজ্জিত ঘোড়া তাদের মোকাবেলার জন্যে প্রস্তুত রেখো যেন এর সাহায্যে আল্লাহ বিরোধী ও তোমাদের জানা না-জানা দুশমনের ভীত-শঙ্কিত করতে পারে। আল্লাহ এদের জানেন।–(সূরা আল আনফাল)
আরো ইরশাদ হচ্ছে:
“হে নবী! মুমিনদেরকে শত্রু দমনের উদ্দেশ্যে সশস্ত্র অভিযানে উৎসাহিত করুন। তোমাদের মধ্যে যারা দৃঢ়-চিত্ত ও ধৈর্যশীল হবে, তারা বিশজন হলে দুশমনদের দু’শজনকে পরাজিত করবে এবং একশজন হলে এক হাজার কাফেরকে পরাভূত করবে। কারণ তারা অজ্ঞান”।
ছয়: সূরা আত তাওবাও একটি যুদ্ধের দাওয়াত। এ সূরা পড়লে মনে হয় যেন একটি রণভেরী। এতে যুদ্ধের নিয়ম-কানুনও রয়েছে। লক্ষ্য করুন আল্লাহ কিভাবে চুক্তি ভঙ্গকারী মুশরিকদের প্রতি লা’নত বর্ষণ করেছেন-
“তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাও। আল্লাহ তোমাদের হাতেই তাদের শাস্তি দেবেন এবং তাদেরকে লাঞ্চিত ও অপামানিত করবেন। তাদের মোকাবেলায় তোমাদের সাহায্য দান করবেন এবং মুমিনদের বুক ঠান্ডা করবেন।” (সূরা আত তাওবা)
এবার আহলে কিতাব (ইহুদী ও খ্রীষ্টান)-দের সম্পর্কে আল্লাহ কি বলেছেন তা লক্ষ্য করুন:
“আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী নয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূল যেসব বস্তুতে হারাম ঘোষণা করেছেন, সেগুলোকে হারাম মনে করে না আর মেনে নেয় না দীনে হককে, তোমরা সেসব কিতাবধারীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাক, যতক্ষণ না তারা অধীনতা ও বশ্যতা স্বীকার করে নিজেদের হাতে জিজিয়া দানে স্বীকৃত হবে”। -(সূরা আত তাওবা)
পরের কয়েকটি আয়াতে কারীমায় সামগ্রিক বিপ্লবের নির্দেশ দেখা যায় । এ নির্দেশ আপনার কাছে মনে হবে যেন মেঘমালার গর্জন আর বিজলীর চোখ ঝলসানো চমক। শেষের দিকে রয়েছে এ আয়াতটি-
“বের হয়ে যাও (জিহাদের উদ্দেশ্যে) অস্ত্র-শস্ত্র হালকা হোক বা ভারী হোক এবং আল্লাহর পথে তোমাদের জান-মাল লাগিয়ে দিয়ে জিহাদ কর”। -(সূরা আত তাওবা)
এরপরে দেখুন যারা জিহাদের সময়ে ঘরে বসে থাকে তাদের সম্পর্কে কালামে ইলাহীতে কি বলা হয়েছে-
“রাসূলের যুদ্ধে চলে যাওয়ার পর যারা জিহাদ থেকে বিরত থেকে ঘরে বসে থাকলো এবং আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে ও প্রাণ বিলিয়ে দিয়ে জিহাদ করা অপছন্দ করলো-বললো, তোমরা এ তীব্র গরমে বের হয়ো না, এর খুবই উৎফুল্ল হয়ে পড়েছে। হে নবী, তুমি বলে দাও যে, জাহান্নামের আগুন এর চেয়েও বেশী গরম-যদি তাদের বোধশক্তি কিছু থেকে থাকে”। -(সূরা আত তাওবা)
পরের প্রসঙ্গে রাসূলে (সা) ও তাঁর সাথী মুজাহিদীন-ই-ইসলাম, “কিন্তু রাসূল (সা) ও তাঁর সাথে যারা ছিলেন তাঁরা জান-মাল দিয়ে জিহাদ করেছেন। এবং তা-ই তাদের জন্যে কল্যাণকর এবং এরাই বিজয়ী। আল্লাহ তাদের জন্যে তৈরী করে রেখেছেন বেহশেত –যার নীচ দিয়ে প্রবহমান রয়েছে নহরাজি এবং সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে”।
আরও দেখুন-
“নিশ্চয়ই আল্লাহ খরিদ করে দিয়েছেন মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জান-প্রাণ এ ধন-মালকে, এর বিনিময়ে তাদের জান্নাত দেবেন বলে। মুমিনরা আল্লাহর পথে আল্লাহরই সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে। আর এ যুদ্ধে তারা যেমন আল্লাহরই দুশমনদের হত্যা করবে, তেমনি তারা নিজেরাও নিহত হবে শত্রুর হাতে। এটি হচ্ছে আল্লাহর চেয়ে বেশী ওয়াদা, তাওরাত, ইনজিল ও কুরআন। এবং আল্লাহর চেয়ে বেশী ওয়াদা রক্ষাকারী আর কে আছে? অতএব তুমি যা খরিদ করেছ তাতেই সন্তুষ্ট থাক এবং এটাই তোমরা জন্যে শ্রেষ্ঠ বিজয়”। -(সূরা আত তাওবা)
সাত: কুরআন মজীদের একটি সূরারই নামকরণ করা হয়েছে সূরা কিতাল, যার অপর নাম হচ্ছে সূরা মুহাম্মদ। সৈনিক জীবনের প্রাণ হলো দু’টি জিনিস-আনুগত্য ও শৃঙ্খলা। আল্লা তা’আলা পাক কুরআনের দু’টি আয়াতে এ দু’টি জিনিস সন্নিবেশিত করছেন। আনুগত্য প্রসঙ্গে এ সূরাতেই আল্লাহ বলেন:
“যারা ঈমানদার তারা বলে কোনো আয়াত কেন নাযিল হলো না? এরপরে যখন কোনো সুস্পষ্ট ও সুদৃঢ় আয়াত নাযিল হয় এবং তাতে জিহাদের উল্লেখ থাকে, তখন তুমি দেখাবে যাদের অন্তকরণ রোগগ্রস্ত। তারা মৃত্যুর ভয়ে বিবর্ণ হয়ে তোমরা দিকে তাকাচ্ছে। অতএব তাদের আনুগত্যের পরীক্ষা হয়ে গেল এবং কথাও জানা গেল”।
সূরা আস সফ-এ শৃঙ্খলা প্রসংগে দেখুন-
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন যারা সারিবদ্ধভাবে সীসা নির্মিত দেয়ালের ন্যায় মজবুতভাবে আল্লাহর পথে শত্রু দমনে সশস্ত্র অভিযান করে, যুদ্ধ করে”।
আট: সূরা ফাতাহ-এ একটি যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা একটি গাছের নীচে তোমার [মুহাম্মদ (সা)] হাতে বাইয়াত গ্রহণ করছিল। তারা জেনে নিয়েছিল যা তাদের অন্তরে ছিল। অতপর তিনি তাদের ওপর শাস্তি ও স্বস্তি নাযিল করেন। অচিরেই তারা বিজয়ী হয় এবং গণিমতের মাল তাদের হস্তগত হয় এবং আল্লাহ জবরদস্ত ও প্রজ্ঞার অধিকারী।
কুরআনে হাকীমের এ সমস্ত আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে আজকের যুগের মুসলমানদের চিন্তা করা উচিত তারা জিহাদের সওয়াব থেকে কত দূরে আছে।
এ প্রসঙ্গে হাদীসে রাসূল থেকে কিছু আলোচনা করা যায়।
অধ্যায় ০২ : জিহাদ প্রসঙ্গে হাদীসে রাসূল (সা)
এক: হযরত আবূ হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, জিহাদ সম্পর্কিত একটি দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে প্রিয় নবী করীম (সা) বলেন, “সেই আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন, আমর মন তো চায় আল্লাহর পথে আমি শহীদ হই, আবর জীবিত হই, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই এবং আবার শহীদ হই”।
-(বুখারী, মুসলিম)
দুই: হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন-যাঁর হাতে আমার জীবন সে সর্বশক্তিমানের শপথ। যে ব্যক্তিই আল্লাহর পথে জখম হয়, আল্লাহ তাকে ভালবাভাবেই জানেন। কিয়ামতের দিন সে রক্তের রং ও মিশকের সুগন্ধি নিয়ে আগমন করবে।
তিন: হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস বিন নযর বদরের যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। রাসূলুল্লাহ (সা) এর দরবারে তিনি আরজ করেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা) মুশরিকদের বিরুদ্ধে আপনার প্রথম যুদ্ধে আমি অনুপস্থিত ছিলাম। আল্লাহর শপথ, যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে আসন্ন জিহাদে শরীক হওয়ার সুযোগ দেন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন, আমি কি করি। সুতরাং যখন ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানেরা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, তখন তিনি হঠাৎ চিৎকার করে বললেন, হে আল্লাহ! আমার সাথীরা যাকিছু করেছেন, আমি সে জন্যে তোমার কাছে মাফ চাইছি এবং মুশরিকগণ যা কিছু করছে আমি তা থেকে পবিত্র। অতপর তিনি সামনে এগিয়ে যেতেই সাদ বিন মায়াজকে দেখলেন এবং চিৎকার করে ওঠলেন, হে সাদ বিন মায়াজ। জান্নাত। জান্নাত। আমার প্রভুর শপথ। আমি তার খোশবু পাচ্ছি। ওহুদের দিক থেকেই আসছে। হযরত সাদ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, তিনি না করলেন তা আমি পারালাম না। হযরত আনাস বলেন, পরে আমরা তাঁর শরীরে তলোয়ার, তীর ও বল্লমের আশিটি আঘাত দেখেছি। আমরা তাকে শহীদ অবস্থায় পেয়েছি। মুশরিকেরা তার অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে ফেলেছিল, এজন্যে কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি। তাঁর বোন আঙ্গুল দেখে তাকে চিনেছেন। হযরত আনাস বলেন- আমরা মনে করতাম এঁদের মত লোকদের জন্যেই “এরূপ কত মুমিন রয়েছেন যাঁরা আল্লাহর সাথে ওয়াদা পূরণ করেছেন” এ আয়াতটি নাযিল করেছেন।
চার: হযরত উষ্মে হারেসা বিনতে সারাকা থেকে বর্ণিত, “তিনি হুজুর (সা) এর দরবারে এসে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি কি হারেসা সম্পর্কে কিছু বলবেন না? জঙ্গে বদরের পূর্বে একটি অজ্ঞাত তীর এসে তাঁর শরীরে বিঁধে যায় এবং তিনি শহীদ হন। যদি তিন জান্নাতবাসী হয়ে থাকেন তাহলে আমি সবর করবো, অন্যথায় প্রাণ ভরে কাঁদব। হুজুর (সা) জবাব দিলেন, হারেসার মা! বেহেশতে তো অনেক বেহেশতবাসীই রয়েছেন তোমরা ছেলে তো সেরা ফেরদাউসে রয়েছেন।” (বুখারী)
চিন্তা করে দেখুন জান্নাতের চিন্তা কিভাবে তাঁদেরকে প্রাণ প্রিয় পুত্রের শোক পর্যন্ত ভুলিয়ে দেয়।
পাঁচ: হযরত আবদুল্লাহ বিন আবি আওফা (রা) থেকে বর্ণিত, “আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, জেনে রেখো বেহেশত তরবারির ছায়াতলে”। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ)
ছয়: হযরত জায়দ বিন কালিদ জুহানী থেকে বর্নিত, “রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি কাউকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্যে তৈরী করেছে, সে যেন নিজেই জিহাদ করলো এবং যে আল্লাহর পথে বের হয়েছে এমন কোনো গাজীর পরিবারের সাথে ভাল ব্যবহার করেছে সে যেন স্বয়ং জিহাদে শরীক হলো”।
-(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও তিরমিযী)
সাত: “হযরত আবু হুরাইয়া (রা) থেকে বর্ণিত, “হুজুরে পাক (সা) এরশাদ করেছেন,যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সহকারে জিহাদে কোনো ঘোড়া দান করে, কিয়ামতের দিন উক্ত ঘোড়ার খাদ্য, পানীয় এবং গোবরও তাঁর মিজানে থাকবে”-(বুখারী)
আট: হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, অপর একটি দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে রাসূলে কারীম (সা) বলেন, “আল্লাহর রাহে মুজাহিদের উদাহরণ সেই ব্যক্তির ন্যায়, যে রোযাও রাখে, রাতে নামাযও পড়ে এবং কালামে পাক তেলাওয়াত করে। কিন্তু রোযার সে কাতর হয় না, নামাযেও তার শৈথিল্য আসে না। ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথে জিহাদকারীর অবস্থাও অনুরূপ থাকে”।
_(বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনে মাজা ও তিরমিযী)
নয়: হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, “রাসূল (সা) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে ভাল লোক আর কে মন্দ লোক তা জানিয়ে দেব না? সে ব্যক্তি ভাল লোকদের মধ্যে অন্যতম, যে ব্যক্তি ঘোড়া বা উটে সওয়াব হয়ে বা পায়ে হেটে সকল অবস্থাতেই মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর রাহে কর্মতৎপর থাকে। অপরদিকে সে ব্যক্তি মন্দ লোকদের অন্যতম, যে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে অথচ তা থেকে কোনো নসিহত কবুল করে না”। -(নাসায়ী)
দশ: হযরত হযরত ইবেন আব্বাস (রা) বলেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছি, দু’প্রকারের চক্ষুকে আগুন স্পর্শ করে না, প্রথম সে চক্ষু যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, দ্বিতীয়টি হলো সে চক্ষু যা শত্রুর প্রতীক্ষায় আল্লাহর পথে পাহারাদারী করে রাত কাটিয়েছে।“-তিরমিযী)
এগার: হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, “নবী করীম (সা) বলেছেন, সারা দুনিয়ার মানুষ আমার হয়ে যাওয়ার চেয়ে আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করা আমার কাছে অধিক প্রিয়”। -(নাসায়ী)
বার: হযরত রাশেদ বিন সা’দ জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন, কোনো এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা) কবরে সকল মুমিনের পরীক্ষা হবে, কিন্তু শহীদের হবে না, এর কারণ কি? হুজুর (সা) জবাবে বলেন, তার মাথার ওপর তলোয়ার চমকানোই তার পরীক্ষার জন্যে যথেষ্ট”। -(নাসায়ী)
তের: হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, মওতের ছোঁয়া একজন শহীদের কাছে তেমন, যেমনটি তোমাদেরকে কেউ চিমটি কাটলে অনুভব কর”।
-(তিরমিযী, নাসায়ী, দারেমী)
চৌদ্দ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত আছে, “রাসূলে করীম (সা) বলেন, আমাদের মহান আল্লাহ যে ব্যক্তির ওপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট, যে আল্লাহর রাহে জিহাদ করে এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা পরাজয় বরণ করলেও জিন দায়িত্ব উপলদ্ধি করে ফিরে দাঁড়ায় এবং আমৃত্যু লড়াই করে। তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা আমার এ বান্দার দিকে লক্ষ্য কর, আমার পুরস্কারের আশায় এবং শাস্তির ভয়ে সে পুনরায় জিহাদে লিপ্ত হয়েছে শেষ পর্যন্ত নিজের জান দিয়েছে। তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে মাফ করে দিলাম”। -(আবু দাউদ)
পনর: আবু দাউদ শরীফে হযরত আবুল খায়ের বিন সাবেত বিন কয়েস বিন সাষ্মাস তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে দেখা যায় আহলে কিতাবের বিরুদ্ধে জিহাদে নিহত হলে, নিহত মুসলমান দু’জন শহীদের সাওয়াব পাবে।
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় আহলে কিতাবদের সাথে জিহাদ করা অবশ্য কর্তব্য। জিহাদ কেবল মুশরিকদের বিরুদ্ধে নয় বরং যারাই ইসলামের দুশমন তাদের সকলের বিরুদ্ধেই জিহাদ করতে হবে। আর আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে জিহাদ করলে আল্লাহর নিকট তাঁর জন্যে দ্বিগুণ পুরুস্কার থাকবে।
ঘোল: হযরত সহল বিন হানিফ থেকে বর্ণিত আছে। “রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি খালেস অন্তকরণে আল্লাহর কাছে শাহাদাতের বাসনা করে, সে ব্যক্তি বিছানায় মারা গেলেও আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দেবেন”। -(মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাযাহ)
সতর: হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, “একজন সাহাবী কোনো এক স্থান অতিক্রম করছিলেন, সেখানে একটি নহর ছিল। তিনি নহরটি পছন্দ করলেন এবং মনে মনে চিন্তা করলেন, এ জায়গায় একাকবী বসে ইবাদাত করলে কতই না ভাল হতো। তিনি তাঁর ইচ্ছা নবী করীম (সা) এর কাছে ব্যক্ত করলেন। হুজুর (সা) বললেন, তা করবে না। তোমাদের পক্ষে ঘরে বসে সত্তর বছর নামাযে কাটানোর চেয়ে আল্লাহর পথে বের হওয়া অধিক উত্তম। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দিন এবং বেহেশতে স্থান দান করুন। আল্লাহর পথে জিহাদ করা। যে ব্যক্তি কিছুক্ষণ সময়ের জন্যে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছে, তার জন্যে জান্নাত অবধারিত। -(তিরমিযী)
ঊনিশ: হযরত মিকদাদ বিন মাদকারব থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকট শহীদের ছয়টি বৈশিষ্ট্য। প্রথম আক্রমণেই তাকে মাগফেরাত করা হয়, দুনিয়ায় থাকাকালীন অবস্থাতেই তাকে বেহেশতের ঠিকানা জানিয়ে দেয় হয়, কবর আযাব থেকে তার নাজাত হয়,কিয়ামতের ভয়াবহ আতংক থেকে সে নিরাপদ থাকবে, তাকে ইয়াকুত খচিত একটি সম্মানিত টুপি পরিধান করানো হবে, যা সারা দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার চেয়েও মূল্যবান হবে, মৃগ-নয়না হুরেরা তার স্ত্রী হবে এবং সে সত্তর জন আত্মীয়ের জন্যে শাফায়াত করবে”। -(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
বিশ: হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত আছে। “রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি জিহাদের চিন্তা ব্যতিরেকে আল্লাহর সাথে দেখা করবে তার সে সাক্ষাত ত্রুটিপূর্ণ হবে”। -(তিরমিযী, ইবেন মাজাহ)
একুশ: হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, “রাসূলে কারীম (সা) বলেন, যে ব্যক্তি খুলুছিয়াতের সাথে শাহাদাত কামনা করে, শহীদ না হলেও তাকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হবে”। -(মুসলিম)
বাইশ: হযরত ওসমান বিন আফফান (রা) থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে একরাতও কোনো ঘাঁটি পাহারা দেয়, তার জন্যে তার হাজার রাতের নামাযেরে সমান (সওয়াব) হবে”। -(ইবনে মাজাহ)
তেইশ: হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত, “নবী করীম (সা) বলেছেন, একটি নৌযুদ্ধ দশটি স্থল যুদ্ধের সমান এবং যে নদীতে পড়ে গেল, সে যেন আল্লাহর রাহে খুনে সিক্ত হয়ে গোসল করে ওঠলো”। -(ইবনে মাজাহ)
চব্বিশ: হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা) বলেন, “জঙ্গে ওহুদের দিন আবদুল্লাহ বিন আমর বিন হিশাম শহীদ হলে পর তাঁর ছেলে জাবিরকে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন যে, আল্লাহ জাবিরের পিতার সাথে একেবারে মুখোমুখী কথা বলেছেন। এ হাদীসের শেষাংসে বলা হয়েছে আবদুল্লাহ বিন আমরের প্রার্থনা অনুযায়ী আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন, “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছেন তাদের তোমরা মৃত মনে করো না”।
পঁচিশ : হযরত আনাস (রা) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, “নবী করীম (সা) বলেছেন, আল্লাহর পথে কোনো জিহাদকারীকে বিদায় দেয়ার উদ্দেশ্যে সকাল বিকাল, কিছুদূর অগ্রসর হওয়া এবং তাকে সওয়ারীর পিঠে আরোহণে সাহায্য করা, আমার কাছে দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু রয়েছে, তার সবকিছু থেকে প্রিয়”। -(ইবনে মাজাহ)
ছাব্বিশ: হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, “আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন, আল্লাহর মেহমান তো কেবল তিনজন, গাজী, হাজী ও ওমরাহ সম্পাদনকারী”। -(মুসলিম)
সাতাশ: হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত, “রাসূলে কারীম (সা) বলেন, শহীদ তার বংশের সত্তর ব্যক্তির জন্যে শাফায়াত করবে”। -(আবু দাউদ)
আঠাশ: হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা যখন ধারে বেচা-কেনা করবে, গাভীর লেজ ধরে থাকবে, চাষাবাদে লেগে যাবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তখন তোমাদের ওপর অপমান চাপিয়ে দেবেন এবং তা তোমরা হাটতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা নিজের দ্বীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করো”। -(আহমাদ, আবু দাউদ এবং হাকেম)
ঊনত্রিশ: হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ (স) সাহাবীগণ সহ মুশরিকদের যখন পৌঁছে গেল তখন হুজুর (সা) ইরশাদ করলেন, অগ্রসর হও, সেই জান্নাতের দিকে যা সমস্ত আকাশ ও পৃথিবীর সমান প্রশস্ত। হযরত ওমায়ের বিন হাম্মামের মুখ থেকে নির্গত হলো, হ্যাঁ, হ্যাঁ। রাসূল (সা) জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ কেন, তিনি উত্তরে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, কসম খেয়ে বলছি আমি জান্নাতবাসী হতে চাই, এজন্যেই হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছি। তখন রাসূলূল্লাহ (সা) বলেন, সে সময়ে তিনি থলি থেকে কিছু খেজুর নিয়ে খেতে খেতে বললেন, আমি যদি এ খেজুর শেষ করা পর্যন্ত বেঁচে থাকি তাই হবে আমার জন্যে দীর্ঘ জীবন। সুতরাং তাঁর কাছে যত খেজুর ছিল মাটিতে ফেলে দিয়ে লড়াই শুরু করলেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি শাহাদাত বরণ করলেন”। -(মুসলিম)
ত্রিশ: হযরত আবু ইমরানের বর্ণনা অনুযায়ী মুসলমানেরা যখন রোম শহরে ছিলেন তখন বিরাট এক রোমান বাহিনী মুসলমানদের আক্রমণ করে। মুসলমান ও রোমকদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে যায়। এ যুদ্ধের বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর এক প্রেরণাদায়ক ঐতিহাসিক ভাষণের কথা উল্লেখ করেছেন, যুদ্ধরত হযরত আবু আইয়ুব আনসারী বলেন, তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না’ –কুরআনে করীমের এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে নিজের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে সমস্ত সময় ব্যয় করা, এ কাজে নিয়োজিত থাকা এবং জিহাদ পরিত্যাগ করা। আবু আইয়ুব আনসারী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে মৃত্যু পর্যন্ত দৃঢ় থাকেন এবং রোমেই তাঁর দাফন হয়”। _(তিরমিযী)
এখানে লক্ষ্য করার বিষয়, এ সময় হযরত আইয়ুব আনসারী বার্ধক্যের দ্বার অতিক্রম করছিলেন। অথচ তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে দ্বার অতিক্রম করছিলেন। অথচ তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও এ যুদ্ধের সময় দ্বীনের বিজয় ও ইসলামের গৌরবের জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন এবং যৌবনের আবেগ-উচ্ছাসে উদ্বেলিত হয়েছিলেন।
একত্রিশ: হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, “নবী করীম (সা) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মরে গেল, অথচ সে জিহাদ করেনি বা তার মনে জিহাদের জন্যে কোনো চিন্তা, সংকল্প বা ইচ্ছাও দেখা যায়নি তবে সে মুনাফিকের ন্যায় মারা গেল”।
-(মুসলিম ও আবু দাউদ)
এধরনের আরো অনেক হাদীস রয়েছে যাতে নৌযুদ্ধ, স্থল যুদ্ধ, কিতাবধারী জাতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ইত্যাদি সম্পর্কীয় বিস্তারিত হেদায়াত ও নিয়মাবলী রয়েছে। এসব হাদীসের সংখ্যা এতবেশী যে, একটি বিরাট গ্রন্থ এ সম্পর্কে আলোচনার জন্যে আমাদের যথেষ্ট নয়। অনুরূপভাবে “আল মাশারেউল আশওয়াক ইলা মাশারেউল উশশাক” এবং “মছিরুল কারাম ইলা দারিল ইসলাম” এবং সিদ্দিক হাসান খানের “আল ইবরাতু ফিমা আরাদা আনিল্লাহ হে রাসূলিহি ফিল গিজওয়া অল জিহাদে অল হিজরতে” প্রভৃতি গ্রন্থে উক্ত শ্রেণীর প্রচুর তথ্য পাওয়া যাবে। হাদীস গ্রন্থের জিহাদ অধ্যায়ে এ ধরনের বহু মূল্যবান হাদীস রয়েছে।
মুসলিম আইনবিদদের দৃষ্টিতে জিহাদা
পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফ থেকে জিহাদের ফযীলত সম্পর্কিত আয়াতে কারীমা ও হাদীসে নববী আপনাদের অবগতির জন্য পেশ করা হলো। এখন এ সম্পর্কে আমরা মুসলিম ফিকাহবিদদের কিছু বক্তব্য পেশ করছি। একই সাথে আধুনিক আলেমদের মতামতও আমরা উল্লেখ করছি, যাতে করে সংশ্লিষ্ট সকলেই জিহাদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন এবং এ ব্যাপারে বর্তমান মুসলিম সমাজের উদাসীনতা সম্পর্কেও সচেতন হতে পারেন।
এক: “মাজমাউল আনহার ফি সারহি মুলতাকিযুল আবহার”- এর গ্রন্থকার হানাফী দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, “জিহাদের আভিধানিক অর্থ হলো নিজেদের মুখের এবং কাজকর্মের সমগ্র শক্তিকে কাজে লাগানো। কিন্তু শরীয়াতের পরিভাষায় জিহাদ বলতে বুঝায় ধর্মের দুশমনদের দমন, তাদেরকে খতম করে দেয়া এংব দ্বীনের ভিত্তিকে মজবুত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এ জিহাদ করতে হবে বিরুদ্ধবাদীদের সাথে, মুশরিকদের এমনকি ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও। বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করা ফরযে কেফায়া। জিহাদের আহবান এসে গেলে তা প্রত্যেকের ওপর ফরয হয়ে যায়, যদিও তার জন্য অনেকে প্রস্তুত থাকেন না। সকলেই যদি জিহাদ ছেড়ে দেয় তাহলে প্রত্যেকে প্রস্তুত থাকেন না। সকলেই যদি জিহাদ ছেড়ে দেয় তাহলে প্রত্যেকেই গুনাহগার হবে। হুজুর (সা) বলেছেন, কোনো মুসলিম শহর অথবা মুসলিম জনবসতি যদি অমুসলমানেরা দখল করে নেয়, তাহলে প্রত্যেকের জন্য জিহাদ করা ফরযে আইন হবে। এক্ষেত্রে স্বামী, পিতা-মাত, প্রভু বা পাওনাদার অনুমতি না দিলেও যথাক্রমে তাদের স্ত্রী, সন্তান, গোলাম ও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের জিহাদে যোগদান করতে হবে। স্ত্রী, সন্তান, গোলাম ও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের জিহাদে যোগদান করতে হবে। এজন্যে কোনো প্রকার অনুমতি বা সম্মতির প্রয়োজন নেই।
দুই: “বাসালাতুস সালেক লি-আকরাবুল মাসালেক ফি মাজহাবিল ইমাম মালিক” এর গ্রন্থকার বলেন, ইসলামের বিজয়ের জন্যে প্রতি বছর জিহাদ করা ফরযে কেফায়া। কিছু রোক জিহাদে লিপ্ত থাকলে বাকীরা দায়িত্ব মুক্ত থাকেন। ইমাম যদি হুকুম দেন অথবা মুসলিম জনবসতি দুশমনের হামলার সম্মুখীন হয়, তাহলে সে এলাকার সকল মুসলমানের ওপর নামায-রোযার ন্যায় জিহাদও ফরযে আইন হবে। যদি সে এলাকার লোক দুশমনের মোকাবেলার জন্যে যথেষ্ট না হয়, তাহলে প্রতিবেশী মুসলমানদের জন্যে জিহাদ করা ফরয হবে। এ পরিস্থিতিতে স্ত্রীলোক ও গোলামদের ওপরেও জিহাদ ফরয, যদিও স্বামী ও প্রভুর অনুমতি না থাকে। দেনাদারেরর জন্যেও জিহাদ ফরয। মা-বাবা সন্তানকে ফরযে আইন পালন করা থেকে নিষেধ করতে পারেন না, তবে ফরযে কেফায়ার ব্যাপারে বারণ করতে পারেন, দুশমনের হাতে বন্দী মুসলমানকে মুক্ত করা ফরযে কেফায়া, যদি বন্দী নিজের মুক্তিগণ আদায় করার জন্যে প্রয়োজনীয় সম্পদের অধিকারী না হয় তবে প্রয়োজনে মুসলমানদের সকল সম্পদের বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিন: শাফী মাযহাবের সমর্থক ইমাম নববী বলেন, “নবী করীম (সা) এর যুগে জিহাদ ফরযে কেফায়া ছিল। কারো কারো মতে ফরযে আইন ছিল। তাঁর মতে কাফেরদের নিজস্ব এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরযে কেফায়া। কিন্তু তারা যদি মুসলিম এলাকায় হামলার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে, সে ক্ষেত্রে তাদেরকে যে কোনো উপায়ে হটিয়ে দিতে হবে। এজন্যে যে জিহাদ হবে, তা সবার জন্যেই বাধ্যতামূলক হবে”। -(মতনুল মিনহাজ)
চার: ইমাম কুদামা হাম্বলী “আল মুগনীতে” লিখেছেন যে, জিহাদ ফরযে কেফায়া, তবে কাফের ও মুসলিম সৈন্যরা মুখোমুখি হলে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া নাজায়েয। এ সময় অটল থাকা ফরযে আইন। এছাড়া কাফেরদেরকে অনুপ্রবেশের পর কোনো শহর থেকে বের করার জন্য যুদ্ধ করা এবং আমীরের নির্দেশ মোতাবেক বছরে একবার জিহাদের জন্যে বের হওয়া ফরযে আইন।
পাঁচ: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে ফরজের পরে জিহাদের চেয়ে উত্তম কাজআর কিছু হতে পারে না।
হযরত আনাস বিন মালেক (রা) বলেন, “একবার রাসূলে করীম (সা) সহাস্য মুখে ঘুম থেকে উঠেন। উম্মে হারাম বলেন-আমি জিজ্ঞেস করলাম,ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসার কারণ কি? তিনি জবাব দিলেন, আমার উম্মতের মধ্যে কিছু লোক আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়েছে-এটা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে, তারা এমনভাবে সমুদ্রের ওপর আরোহণ করছে যেমন একজন বাদশাহ তার শাহী মসনদে গিয়ে বসে”। -(বুখারী, মুসলিম)
এ হাদীসেই পরে দেখা যায় যে, উম্মে হারাম (রা) আরজ করেন- দোয়া করুন যেন আল্লাহর রাহে জিহাদকারীদের তালিকায় আমার নামও লেখা হয়। হুজুর (সা) তাঁর জন্যে দোয়া করেন। এরপর অনেক দিন পর্যন্ত তিনি বেঁচে থাকেন এবং যেসব মুসলমান সাগর পাড়ি দিয়ে সাইপ্রাস যান এবং জিহাদ করে সে দেশ জয় করেন, তিনিও তাঁদের সাথী হয়েছিলেন। সেখানেই তিনি মারা যান এবং সে স্থানে তার কবরও রয়েছে।
ছয়: আল্লামা ইবনে হাযম জাহেরী ‘আল মুহাল্লা’ গ্রন্থে বলেন, জিহাদ মুসলমানদের জন্যে ফরয। কিছু লোক যদি জিহাদে শরীক থাকে, দুশমনদেরকে নিজ এলাকায় ঢুকতে না দেয়, মুসলিম দেশের সীমান্ত রক্ষা করে এবং দুশমনদের এলাকায় ঢুকে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাহলে অন্যান্র মুসলমানেরা জিহাদের দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি পাবে, অন্যতা কারো দায়িত্ব মুক্তির প্রশ্নই ওঠে না। আল্লাহ বলেন, “বের হয়ে যাও (জিহাদের উদ্দেশ্যে) অস্ত্র-শস্ত্র হালকা হোক বা ভারী হোক এবং আল্লাহর পথে তোমার জান-মাল দিয়ে জিহাদ কর।” সাধারণত মা-বাবার অনুমতি ছাড়া সন্তানের পক্ষে জিহাদে যোগদান বৈধ নয়। কিন্তু কোনো মুসলিম জনবসতি আক্রান্ত হলে সক্ষম সকল মুসলমানের ওপর জিহাদ ফরয, পিতা-মাতার অনুমতি না থাকলেও। জিহাদে গেলে পিতা-মাতা উভয়ে বা তাদের কোনো একজনের মারা যাওয়ার আশাংকা থাকলে তাদেরকে বাড়ীতে রেখে জিহাদে শরীক হওয়া জায়েয নেই।
সাত: ইমাম শাওকানী তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ-‘আল সাইফুল জাব্বার’-এ বলেন যে, জিহাদ অবশ্যই ফরযে কেফায়া। কিছু লোক এ দায়িত্ব পালন করলে অন্যরা অব্যাহতি পাবেন। কিন্তু লোক এ দায়িত্ব পালন করলে অন্যরা অব্যাহতি পাবেন। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সে জনবসতির কিছু সংখ্যক লোক জিহাদে যোগদান না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত সকলের ওপরই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ওয়াজিব থাকে। একইভাবে আমীর যদি জিহাদের আদেশ দান করেন তাহলে সেটা ফরযে আইন হবে।
সকলেই বুঝতে পারেন, মুজতাহিদ, মুকাল্লিদ, প্রাচীন ও আধুনিক যুগের সকল ওলামাই এ ব্যাপারে একমত যে, দ্বীনের প্রচারের উদ্দেশ্যে জিহাদ ফরজে কেফায়া এবং হামলাকারী দুশমনদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরযে আইন। একথা সবাই জানেন,
মুসলমানেরা যদি কাফেরদের হাতে পরাজিত হয় তাহলে তাদের দেশ, মান-ইজ্জত, ধন-সম্পদ সব কিছুই বিপন্ন হয়, তখন তাদের পক্ষে দীনের প্রচার করা তো দূরের কথা, স্বয়ং তাদের ঘরেই দীনের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় প্রত্যেক মুসলমানেরা ওপর জিহাদ করা ফরয হিসেবে এসে পড়ে। কাজেই জিহাদের আশা নিয়েই সে পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে আর সেই জন্যে সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকবে।
বর্তমান যুগে মুসলমানরা যেভাবে জিহাদ ছেড়ে দিয়েছে, ইতিপূর্বে তা কখনো দেখা যায়নি, আগে তারা এ ব্যাপারে এতটুকুও গাফেল হয়নি। মনে হচ্ছে বর্তমান যুগই মুসলমানদের জন্যে অন্ধকার যুগ। কারণ তাদের পূর্বের সে সাহবস-বীরত্ব আজ আর দেখা যায় না। অথচ আগের জামানার আলেম, ওলামা, সুধী, মেহনতী মানুষ নির্বিশেষে সকলেই জিহাদী জজবায় মশগুল থাকতেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিখ্যাত ফকীহ ও অলিআল্লাহ হযরত আবদুল্লাহ বিন মুবারক অধিকাংশ সময়ই জিহাদে থাকতেন এবং শিষ্য-শাগরিদদের মধ্যে জিহাদী জোশ সৃষ্টি করতেন। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী এক বছর জিহাদ, এক বছর জিহাদ, এক বছর শিক্ষকতা ও এক বছর হজ্জ করে কাটাতেন। কাজী আসাদ ইবনুল ফোরাদ মালেকী তাঁর যুগের বিখ্যাত নৌ-প্রধান ছিলেন। ইমাম শাফেয়ী দু’শ তীর নিক্ষেপ করলে কোনোটিই ব্যর্থ হতো না।
এখন বলুন আমাদের পূর্বপুরুষদের অবস্থার সাথে আমাদের হাল-হাকিকতের কোনো মিল আছে কি?
অধ্যায় ০৩ : জিহাদ ও মুসলমান
জিহাদ সম্পর্কে ইসলামের বিধি-বিধান পূর্বে অনেকেই বুঝনেনি। বরং তাদের অভিযোগ ছিল এই যে, ইসলাম যুদ্ধ চায় এবং খুনা-খুনী পছন্দ করে। আসলে ইসলাম শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই সদাসর্বদা জিহাদের জন্যে তৈরী ও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। জুলুম, না-ইনসাফী, অন্যায়-অনাচার-ব্যভিচারের সয়লাব সৃষ্টি করার জন্যে বা প্রবৃত্তির হীন চাহিদা পূরণ অথবা স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা জিহাদ ফরয করেননি, একথা আমাদের মনে রাখা দরকার। আল্লাহ জিহাদ ফরয করেছেন ইসলামের প্রচার, প্রসার ও আন্দোলনের কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায়, শান্তি ও নিরাপত্তা কায়েম হয় এবং ন্যায় ও সততা প্রতিষ্ঠিত থাকে। কারণ একমাত্র এ পথেই মুসলমানগণ তাদের ওপর অর্পিত-মহান দায়িত্ব পালন করতে পারে। তাছাড়া এ-ও লক্ষ্য করার বিষয়, জিহাদ ও কিতালের সাথে সাথে ইসলাম সন্ধিও করতে আগ্রহী হয়, তাহলে তোমরাও তাতে সম্মত হওয় এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর কর।
মুসলমান যুদ্ধের ময়দানে যায় শুধু একটি বাসনা নিয়ে। আর তাহলে আল্লাহর কালেমা বুলন্দ হোক, তা ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। মান-ইজ্জত, ধন-দৌলত, ভোগ-ঐশ্বর্য, মালে-গণিমতের খেয়াল বা জুলুম-অবিচারের চেষ্টা এর কোনোটাই মুসলমানেরা কামনা থাকতে পারে না, যদি সত্যিকারের মুজাহিদ সে হয়। এ ক্ষেত্রে তার শুধুমাত্র একটি জিনিসই হালাল তা হচ্ছে, আল্লাহর রাস্তায় তার শির লুটিয়ে দেয়া এবং তাঁর সৃষ্টির হেদায়াতের জন্যে আকুল আগ্রহ পোষণ করা।
হযরত হারিস বিন মুসলিম বিন হারিস বর্ণনা করেন, “আমার পিতা আমাকে বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে একটি মুজাহিদ বাহিনীর সাথে জিহাদে পাঠান। দুশমনের আক্রমণ করার স্থানে পৌঁছেই আমি ঘোড়ার লাগাম টেনে সাথীদের পেছনে ফেলে সামনে গিয়ে উপস্থিত হলাম। গোত্রের লোকজন তখন আমার কাছে অনুনয় বিনয় শুরু করে । আমি তাদের উদ্দেশ্যে বললাম, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বল, শান্তি পেয়ে যাবে। তারা তাই করলো। এতে আমার সংগী-সাথীরা আমার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে মত প্রকাশ করেন যে, আমি তাদেরকে গনিমতের মাল থেকে বঞ্চিত করেছি। ফিরে আসার পর তারা এ ঘটনা হুজুর (সা) কে জানায়। ঘটনা শুনে হুজুর (সা) আমাকে ডেকে আমার কাজের খুবই প্রশংসা করলেন এবং বললেন, খুশী হও, আল্লাহ সেই গোত্রের প্রত্যেকটি লোকের বিনিময়ে তোমাদের জন্যে এত এত প্রতিদান বরাদ্দ করেছেন। তিনি আরো বললেন, আমি তোমাকে একটি অছিয়ত লিখে দিচ্ছি, আমার অবর্তমানে তোমার কাজে লাগবে। এরপরে তিনি অছিয়ত লিখে তাতে মোহর লাগিয়ে আমাকে দিয়ে দেন।” -(আবু দাউদ)
হযরত সাদ্দাদ বিন ইলহুদী (রা) থেকে বর্ণিত আছে। “এক বেদুইন এসে রাসুলুল্লাহ (সা) এর হাতে ইসলাম কবুল করে। তিনি হিজরত করে রাসূল (সা) এর খেদমতে আসার জন্যে তাঁর কাছে আরজ পেশ করেন। রাসূল (সা) তাকে সাহায্য করার জন্যে এক সাহাবীকে নির্দেশ দান করে। পরে এক যুদ্ধে কিছু মালে গণিমত পাওয়া গেলে রাসূলুল্লাহ (সা) অন্যান্যদর সাথে তাঁকেও অংশ দেন। এতে তিনি বলেন যে, তিনি মালে গণিমতের আশায় মুসলমান হননি। তিনি আরো বলেন, আমি এজন্যে সাথী হয়েছি যে, একটি তীর এসে আমার গলায় বিধবে এবং মৃত্যুর সাথে মোলাকাত করে আমি জান্নাত চলে যাবো। হুজুর (সা) বললেন, তুমি যদি সত্যবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমার আশা পূরণ করবেন। কিছুক্ষণ পরে যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল তখন রাসূল (সা) এর সামনে তাঁর লাশ পেশ করা হলো। দেখা গেল, তিনি যে স্থানে চেয়েছিলেন ঠিক সে স্থানেই একটি তীর বিদ্ধ হয়েছে। নবী করীম (সা) জিজ্ঞেস করলেন, এ কি সে-ই। লোকেরা বললো, জী হ্যাঁ। রাসূল (সা) বললেন, তার কামনা সত্য ছিল। আল্লাহ তার দুটি আশা পূরণ করেছেন। হুজুর (সা) এর পবিত্র জুব্বা দ্বারা তাঁর কাফন হয় এবং হযরত (সা) নিজে তাঁর জানাযার নামায পড়ান। নামাযের সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা) এর মুখে একথা শুনা যায়, আল্লাহ তোমার বান্দা তোমার পথে জিহাদ করেছে, অতপর শহীদ হয়েছে, আমি এর সাক্ষী”। -(নাসায়ী)
হযরত আবু হুরাইরা (রা) এর বর্ণিত একটি হাদীস, “এক ব্যক্তি রাসূল (সা) এর কাছে আরজ করে, ইয়া রাসূলুল্লাহ কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং তার মনে মালে গণিমতের আকাঙ্ক্ষাও থাকে, তাহলে কেমনে হবে? ইরশাদ হলো, তার জন্যে কোনো প্রতিদান নেই। সে তিনবার প্রশ্ন করে আর তিনবারই হুজুর উত্তর দেন, ‘তার জন্যে কোনো প্রতিদান নেই”। -(আবু দাউদ)
হযরত আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, “এক বেদুইন আল্লাহর রাসূলের নিকট হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করলো, এক ব্যক্তি বাহাদুরী দেখাবার জন্যে যুদ্ধ করে, এক ব্যক্তি ক্রোধের বশে যুদ্ধ করে, এক ব্যক্তি সুনাম-সুখ্যাতির জন্যে যুদ্ধ করে, কার যুদ্ধ আল্লাহর কালেমা সর্বোচ্চ ও সর্বোন্নত হোক কেবল তারই যুদ্ধ মহান আল্লাহর পথে সুম্পন্ন হবে” –(মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমীযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)
আল কুরআন ও হাদীসে রাসূলের এ সমস্ত বর্ণনা ছাড়াও প্রিয়নবী (সা) এর সম্মানিত সংগী-সাথীদের জীবনের ঘটনাবলী পর্যালোচনা ও মুসলমানদের বিজিত এলাকায় নিয়োজিত দায়িত্বশীলদের কার্যকলাপ আলোচনা করলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাঁরা লোভ-লালসা ও ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধে ছিলেন। আসলে জীবনের মূল লক্ষ্যের প্রতি তাঁরা ছিলেন পুরোপুরি বিশ্বস্ত এবং মানুষের হেদায়াত ও আল্লাহর কালেমার প্রসারের জন্যে তাঁদের জীবনের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড এটাই যে, সাক্ষ্য দেয়। তাঁদের বিরুদ্ধে নিছক ক্ষমতা দখল বা পররাজ্য আক্রমণ ও দখলের লালসার অভিযোগ বা ধন-সম্পদ লাভের উগ্র আকাঙ্ক্ষার অপবাদ একেবারেই ভিত্তিহীন।
অধ্যায় ০৪ : জিহাদ ও মানব প্রেম
ইসলামী জিহাদের লক্ষ্য যেমন মহান, তেমনি তার নিয়ম পদ্ধতি, পন্থা ও কর্মসূচী, উন্নত ও পবিত্র। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী প্রণিধান যোগ্য। আল্লাহ বলেন, এবং বাড়াবাড়ী করবে না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লংঘনকারীদের ভালবাসেন না।
অন্যদিকে সর্বাবস্থায় ন্যায়-ইনসাফ বজায় রাখার তাগিদ দিয়েছেন আমাদের মহান প্রভু। আল্লাহ বলেন, “সাবধান! কোনো জাতি সম্প্রদায়ের প্রতি দুশমনি যেন তোমাদেরকে তাদের প্রতি ইনসাফ করা থেকে বিরত না রাখে, আদল-ইনসাফ কর, এটাই তাকওয়ার নিকটবর্তী।”
অনুরূপভাবে তিনি মুসলমানদেরকে দয়ালু ও কোমল হওয়ার জন্যে হেদায়াত দিয়েছেন। তাদেরকে জিহাদ করার জন্যে তাগিদ করেছেন, কিন্তু শর্ত এই যে, তারা আল্লাহর দেয়া সীমারেখা লংঘন করবে না, অসদাচরণ করবে না, আহতদের অঙ্গচ্ছেদ ঘটাবে না, লুটতরাজ করবে না, মহিলাদের ইজ্জত-সম্ভ্রম নস্ট করবে না এবং কাউকে অহেতুক কোনো কষ্ট দেবে না। যুদ্ধের সময়ে হোক বা শান্তির সময়ে, তাদের উন্নত চরিত্রের পরিচয় দিতে হবে।
হযরত বুরাইদা (রা) থেকে বর্নিত আছে, “নবী করীম (সা) যাদেরকে জিহাদে সৈন্যদেরকে আমীর নিযুক্ত করতেন তাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন ও মুমিনদের প্রতি সদ্ব্যবহার তাগিদ করে নির্দেশ দিতেন, যাও আল্লাহর নামে আল্লাহর রাহে জিহাদ করো, যে আল্লাহকে অস্বীকার করে তাকে হত্যা কর। যাও যুদ্ধ করো, দেখ, খেয়ানত করবে না, ধোঁকা দেবে না, অঙ্গচ্ছেদন করবে না, শিশু হত্যা থেকে বিরত থাকবে।” –(মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, “রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা যখন লড়াই কর (দুশমনের চেহারায় আঘাত করবে না”। -(বুখারী, মুসলিম)
হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেন, মুমিন হত্যা করার সময়ও নিজের প্রবৃত্তির ঊর্ধে থাকে”। -(আবু দাউদ)
আবদুল্লাহ বিন এজিদ আনসারী থেকে বর্ণিত আছে যে, “আল্লাহর রাসূল (সা) লুটতরাজ এবং অঙ্গচ্ছেদন নিষেধ করেছেন”। -(বুখারী)
এছাড়াও নারী, শিশু, বৃদ্ধ, আহত ব্যক্তিদেরকে হত্যা, সন্যাসী, নির্জনবাসী ও সন্ধি-প্রিয়দের সাথে বিরোধ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এখন চিন্তা করে দেখুন আধুনিক সভ্য জগতের নিয়ম কানুন আর আল্লাহর দেয়া শরীয়াতের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু এবং কোনটি বেশী ন্যায়ানুগ? ইসলামী আইন ছাড়া আর কোনো আইনে এমন সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবতা দেখা যায় কি?
হে আল্লাহ! মুসলমানদেরকে দ্বীনি অন্তদৃষ্টি দান করুন এবং সারা দুনিয়াকে ইসলামের আলোকে সমুজ্জ্বল করে দিন।
অধ্যায় ০৫ : একটি ভুল ধারণার অপনোদন
আজকাল এক ধরনের ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। সেটা হলো, দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছোট জিহাদ, বড় জিহাদ হলো নফসের সাথে সংগ্রাম করা। এর দলীল হিসেবে এ হাদীসটি পেশ করা হয়, ‘আমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে ফিরে যাচ্ছি। লোকেরা জিজ্ঞেস করলে বড় জিহাদ কি? এরশাদ হলো, মন বা নফসের সাথে জিহাদ”। অথচ সত্যি কথা হলো এই যে, এটা কোনো হাদীসই নয়।
হাফেজ ইবনে হাজর এর মতে এটি একটি প্রবাদ বাক্য যা ইবরাহীম বিন আবলা বলেছেন। উল্লেখ্য যে, হাদীস ও সুন্নাতের ক্ষেত্রে ইবনে হাজর অপরিসীম মর্যদার অধিকারী।
‘তুখরীজু আহাদীসুল ইয়াহইয়া’ গ্রন্থে ইরাকী বলেন, ইমাম বায়হাকী দুর্বল সনদ সহ হযরত জাবির থেকে একটি বর্ণনা করেছেন। কাজেই যারা দুশমনের বিরুদ্ধে জিহাদ করাকে ছোট জিহাদ বলতে চায় তারা আসলে মুসলমানদের মন থেকে জিহাদের ধালণাকে মিটিয়ে দিতে চায় এবং মুসলিম জাতিকে জিহাদের প্রস্তুতি থেকে গাফেল রাখতে চায়।
তাছাড়া প্রবাদ বাক্যটিকে হাদীস বলে স্বীকার করে নিলেও একথা মোটেই প্রমাণিত হয় যে, আমাদের যাবতীয় কাজকর্মের মধ্যে আন্তরিকতা সৃষ্টি এবং কেবলমাত্র আল্লাহকেই রাজী করার উদ্দেশ্যে কাজ করার মনোভাব পয়দা করার জন্যে নিজের প্রবৃত্তির সাথে সংগ্রাম অপরিহার্য।
একথাও মনে রাখা দরকার যে, জিহাদ শুধু নফসের সাথে হয় না। সৎকাজের আদেশ-নির্দেশ দান ও অসৎকাজের প্রতিরোধের জন্যে সংগ্রাম করাও তো জিহাদ। হুজুর (সা) বলেন, “অত্যাচারী শাসকের আমলে সত্য কথা বলা উত্তম জিহাদ”।
কিন্তু কোনো জিহাদই শাহাদতে কোরবার সমান হতে পারে না। কোনো প্রতিদানই মুজাহিদীনের জন্যে নির্ধারিত মহান প্রতিদানের সমকক্ষ হতে পারে না। যারা মহান ও গৌরবান্বিত শাহাদাত কামনা করেন, তাদের জন্য একটি মাত্র পথই খোলা রয়েছে-তাহলে আল্লাহর রাহে জান লুটিয়ে দেয়া।
শেষ কথা
প্রিয় ভাইয়েরা, যে জাতির বেঁচে থাকা ও দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়া উভয়ই সুন্দর, যারা ইজ্জত-সম্মানের সাথে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে অভ্যস্ত, তারা দুনিয়াতে সম্মানিত হয় এবং আখেরাতে জান্নাতের অধিকারী হয়। কিন্তু আধুনিক যুগে আমরা পার্থিব জীবনকেই বেশী ভালবাসি, তাই আমরা পদে পদে লাঞ্চিত, অপমানিত ও পর্যুদস্ত হচ্ছি। আর মৃত্যুর ভয়ে শাঙ্কিত আছি সর্বক্ষণ। সুতরাং জিহাদের জন্যে প্রস্তুত হোন। মরণকে বরণ করার জন্যে তৈরী থাকুন। জীবন আপনাদেরকে খুঁজে নেবে।
একটু চিন্তা করুন। মৃত্যুর হাত থেকে কারো রেহাই নেই। মৃত্যু একবার সবারই জন্যে আসবে। কিন্তু এ মৃত্যু যদি আল্লাহর পথে হয় তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতের উভয় জগতেই সফলতা লাভ করতে পারবেন। আর আকথা সত্যি যে, আল্লাহ যা তকদিরে রেখেছেন, তাইতো ঘটবে। কাজেই চিন্তার কি কারণ থাকতে পারে? আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে চিন্তা করুন-
“অতএব এ চিন্তা ও দু:খের পর পুনরায় আল্লাহ তোমাদের মধ্যে কিছু লোকের ওপর পরম সান্ত্বনা নাযিল পরে দিলেন এমনভাবে যে, তারা তন্দ্রাবিশিষ্ট হতে লাগলো। কিন্তু অপর একটি দল-যাদের কাছে গুরুত্ব ছিল একমাত্র স্বার্থের তারা আল্লাহ সম্পর্কে এমন সব জাহেলী মনোভাব পোষণ করতে লাগলো, যা ছিল সত্যের সুস্পষ্ট খেলাপ। (তারা এখন বলে) ‘এ সমস্ত বিষয় পরিচালনার ব্যাপারে আমাদেরও কি কোনো অংশ আছে? তাদের বলে দিন, সমস্ত বিষয়ের ইখাতিয়ার আল্লাহর হাতে। প্রকৃতপক্ষে এরা যে সমস্ত কথা নিজেদের মনে গোপন রেখেছে, তা আপনার কাছে প্রকাশ করছে না। এদের আসল বক্তব্য হলো, যদি ইখতিয়ারে আমাদের কোনো অংশ থাকতো, তবে এখানে আমরা নিহত হতাম না। তাদের বলে দিন, “তোমরা যদি নিজেদের ঘরে অবস্থান করতে, তবুও যাদের মৃত্যু অবধারিত ছিল, তারা নিশ্চয়ই তাদের মৃত্যু-স্থানের দিকে বের হয়ে আসতে। আর এই যে ব্যাপার ঘটলো, এর কারণ ছিল এই যে, তোমাদের বুকের মধ্যে যা কিছু লুকানো রয়েছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করবেন এবং তোমাদের মনে যে কুটিলতা রয়েছে, আল্লাহ তা পরিস্কার করে ফেলবেন। আল্লাহ মনের অবস্থা খুব ভালভাবেই জানেন”। -(সূরা আলে ইমরান : ১৫৪)
আসুন, আমার সবাই এমন পথের সন্ধান করি, যে পথে সম্মানের সাথে মৃত্যুকে আলিঙ্গুন করতে পারি। শুধুমাত্র এ পথেই পুণ্যেই অধিকারী হওয়া যায় আর সাফল্যের আগমন পথও এটাই। আল্লাহ আপনাদেরকে শাহাদাতের পেয়ালা পান করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদেরকে শহীদের মর্যাদা দান করুন।
Leave a Reply