আ হিস্ট্রি অফ গড – ক্যারেন আর্মস্ট্রং / স্রষ্টার ইতিবৃত্ত – শওকত হোসেন
ইহুদি, ক্রিশ্চান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের স্রষ্টা সন্ধানের ৪,০০০ বছরের ইতিহাস
প্রথম প্রকাশ : একুশে বইমেলা ২০১০
.
অনুবাদকের কথা
ক্যারেন আর্মস্ট্র-এর আ হিস্ট্রি অভ গড বইটির বিষয়বস্তু যেমন গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল তেমনি এর আলোচনার শাখা প্রশাখাও ছড়িয়েছে নানা দিকে: ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, সংস্কার, মনস্তত্ত্ব, ইত্যাদি। লেখক সুগভীর গবেষণা লব্ধ জ্ঞান হতে তুলে এনেছেন দৃষ্টি উন্মোচক নানা তথ্য। আবিষ্কৃত তথ্য সাজিয়ে তিনি একেশ্বরবাদী ধর্মে স্রষ্টার স্বরূপ সন্ধান করেছেন। আমি আশা করি বইটি বৃহত্তর পাঠক সমাজ, যারা স্রষ্টা ও সৃষ্টি নিয়ে ভাবেন তাদের ব্যাপক উপকারে আসবে। লেখক তার বক্তব্য সুস্পষ্ট করার স্বার্থে কোরান ও বাইবেল হাতে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। কোরানের আয়াতসমূহের অনুবাদ ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত পবিত্র কুরআনুল করীম হতে নেওয়া; পবিত্র বাইবেলের সংশ্লিষ্ট পঙক্তির অনুবাদ বাংলাদেশ বাইবেল সোসায়েটি কর্তৃক প্রকাশিত পবিত্র বাইবেল, পুরাতন ও নতুন নিয়ম থেকে উদ্ধৃত। কোরান ও বাইবেলের অনুবাদের ক্ষেত্রে যেখানে আয়াত সংখ্যা মেলেনি সেখানে প্রথম বন্ধনীর মাঝে বাংলা অনুবাদের আয়াত সংখ্যা আলাদাভাবে তুলে দিয়েছি।
গ্রন্থটির কেন্দ্রীয় বিষয় যেহেতু স্রষ্টা, গোটা বইতে তাই সামঞ্জস্য রাখার স্বার্থে গড এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে ঈশ্বর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
মূলগ্রন্থে না থাকলেও মহানবী মুহাম্মদ-এর নামের পর (স) ব্যবহার করা হয়েছে; এরপরও পাঠকদের কাছে অনুরোধ, অন্যান্য পয়গম্বর ও তাঁদের সহচরদের নামের শেষে যথাযথভাবে তাঁরা যেন (আ), (রা), ইত্যাদি পাঠ করেন।
যে কোনও অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির জন্যে পরম করুণাময়ের ক্ষমা প্রার্থনা করি। আশা করি গ্রন্থটি বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবার উপকারে আসবে এবং সেটা হলেই আমি আমার পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
শওকত হোসেন
মালিবাগ, ঢাকা।
e-mail: [email protected]
.
সূচনা
ছোটবেলায় বেশ কিছু ধর্মীয় বিষয়ে জোরাল বিশ্বাস ছিল আমার, কিন্তু ঈশ্বরে তেমন একটা আস্থাশীল ছিলাম না। নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিশ্বাসের সঙ্গে সেগুলোর ওপর নির্ভর করার আস্থাশীলতার পার্থক্য আছে। আমি অন্তরে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতাম, এ ছাড়া ইউক্যারিস্টে ঈশ্বরের প্রকৃত উপস্থিতি, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের নিরাময় প্রদানের ক্ষমতা, শাস্তিভোগের আশঙ্কা ও প্রায়শ্চিত্তের (Purgatory) বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতায়ও বিশ্বাস ছিল। অবশ্য এ কথা বলতে পারব না যে পরম সত্তা সম্পর্কিত এইসব ধর্মীয় মতামতে বিশ্বাসের ফলে পৃথিবীতে জীবন চমৎকার বা সুবিধাজনক বলে আমার মনে আস্থা জন্মেছিল। আমার ছোটবেলার রোমান ক্যাথলিসিজম বরং ভীতিকর এক বিশ্বাস ছিল। পোর্ট্রেট অভ দ্য আর্টিস্ট অ্যাজ আ ইয়ং ম্যান-এ জেমস জয়েস অত্যন্ত সঠিকভাবে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। নরকের অগ্নিকুণ্ডের বিবরণ শুনেছি আমি। আসলে নরক যেন আমার কাছে ঈশ্বরের চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব মনে হয়েছে, কারণ তা ছিল এমন কিছু কল্পনায় আমি যাকে বুঝতে পারতাম। অন্যদিকে ঈশ্বর যেন অস্পষ্ট ধোঁয়াটে কোনও সত্তা ছিলেন, বর্ণনায় নয় বুদ্ধিবৃত্তিক বিমূর্ততায় তার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমার বয়স যখন আট বছর, ‘ঈশ্বর কি?’ প্রশ্নের নিচ্ছিদ্র জবাব মুখস্থ করতে হয়েছিল আমাকে: ‘ঈশ্বর হচ্ছেন পরম আত্মা, যার কোনও অংশীদার নেই এবং যিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ।’ এটা মোটেই বিস্ময়কর নয় যে, এ জবাব আমার কাছে খুব একটা অর্থপূর্ণ মনে হয়নি। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, এ জবাব এখনও আমাকে শীতল করে দেয়। একে সবসময়ই এককভাবে বিরস, অতিরঞ্জিত এবং উদ্ধত সংজ্ঞা মনে হয়েছে। অবশ্য এই বইটি লেখা শুরু করার পর থেকে জবাবটিকে সঠিক নয় বলেও বিশ্বাস করতে শুরু করেছি।
বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমি বুঝতে পারি যে, ধর্মে আতঙ্কের চেয়েও বেশি কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে। আমি সাধুসন্ত, ভাববাদী কবিদের জীবনী, টি.এস. এলিয়ট ও অতিন্দ্রীয়বাদীদের মোটামুটি সরল রচনা পাঠ করেছি। শাস্ত্রের সৌন্দর্যে আলোড়িত হতে শুরু করেছিলাম বটে, যদিও ঈশ্বর দূরেই রয়ে গেছেন। আমার মনে হয়েছিল তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব এবং তাঁর দর্শন সমগ্র সৃষ্ট বাস্তবতাকে হুঁপিয়ে যাবে। সে জন্যেই আমি ধর্মীয় সংগঠনে যোগ দিই, তরুণ শিক্ষানবীশ নান হিসাবে ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে ভ্রারও অনেক কিছু জানতে পারি। অ্যাপোলোজেটিক্স, ঐশী গ্রন্থ, ধর্ম তত্ত্ব ও গির্জার ইতিহাসে নিজেকে নিয়োজিত করি। মঠের জীবনাচারের ইতিহাস খুঁড়ে বেড়াই ও আমার নিজস্ব বৃত্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করি, যা আমাদের সম্পূর্ণ কণ্ঠস্থ করতে হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয়, এগুলোর কোনওটাতেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুভূত হয়নি। সব গুরুত্ব যেন গৌণ বিষয়ের ওপর আরোপ করা হয়েছে, ধর্মের বিভিন্ন প্রান্তিক বিষয়াদি মনোযোগ পেয়েছে বেশি। আমি প্রার্থনায় মনোনিবেশ করেছি, ঈশ্বরের মুখোমুখি হতে মনের ওপর জোর খাঁটিয়েছি, কিন্তু তিনি আমার নিয়মনীতি ভঙ্গের দর্শক হিসাবে কঠোর প্রভুই রয়ে গেছেন কিংবা বিস্ময়করভাবে অনুপস্থিত থেকেছেন। আমি যতই সাধু সন্ন্যাসীদের পরমানন্দ (rapture) সম্পর্কে জানতে পেরেছি ততই ব্যর্থতার অনুভূতি জেগেছে আমার মনে। বিষাদের সঙ্গে আবিষ্কার করেছি, আমায় সামান্য ধর্মীয় অভিজ্ঞতা কোনওভাবে আমার আপন অনুভূতি ও কল্পনার ওপর চাপ প্রয়োগের ফলে আমারই নিজস্ব মস্তিষ্কসঞ্জাত। কখনও কখনও ভক্তির অনুভূতিটুকু ছিল গ্রেগোরিয়ান চ্যান্ট বা শাস্ত্রের সৌন্দর্য্যের প্রতি সহজাত সাড়া, কিন্ত আমার সত্তার অতীত কোনও সূত্র থেকে আমার মাঝে কোনও কিছু আসলে ঘটেনি। পয়গম্বর বা অতিন্দ্রীয়বাদীদের বর্ণনার ঈশ্বরের দেখা কখনও পাইনি আমি। জেসাস ক্রাইস্টকে, যার কথা ঈশ্বরের চেয়ে বেশি আলোচনা করে থাকি আমরা, একেবারেই ঐতিহাসিক চরিত্র মনে হয়েছে, প্রাচীন ইতিহাসে যিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। আমার মনে চার্চের কোনও কোনও মতবাদের ব্যাপারেও গভীর সন্দেহ জাগতে শুরু করে। মানুষ জেসাস যে ঈশ্বরের অবতার এটা নিশ্চিত করে বলতে পারে কে, আর এমন একটা বিশ্বাসের অর্থই বা কী? নিউ টেস্টামেন্ট কি আসলেই ব্যাপক ও দারুণভাবে পরস্পরবিরোধী ট্রেনিটি মতবাদ শিক্ষা দিয়েছে, নাকি ধর্মের অপরাপর বিভিন্ন বিষয়ের মতো এটাও জেরুজালেমে ক্রাইটের মৃত্যুর শত শত বছর পর ধর্মতাত্ত্বিকদের কল্পনাপ্রসূত বিষয়।
এরপর দুঃখের সঙ্গে ধর্মীয় জীবন ত্যাগ করি আমি; ব্যর্থতা ও অপূর্ণতার ভার হতে মুক্ত হবার পর ঈশ্বরে আমার বিশ্বাসও নীরবে বিদায় নিয়েছে বলে মনে হয়েছে। আমার জীবনে কখনও জোরাল প্রভাব রাখতে পারেননি তিনি, যদিও তাকে দিয়ে সেটা করানোর যথাসাধ্য প্রয়াস ছিল আমার। এখন তাঁর ব্যাপারে আর নিজেকে অপরাধী বা উদ্বিগ্ন মনে না হওয়ায়, এতই দূরে সরে গেলেন যে অস্তিত্ব নেইই বলা চলে। অবশ্য ধর্মীয় ব্যাপারে আমার আগ্রহ বা কৌতূহল অব্যাহত রয়ে গেছে। ক্রিশ্চানিটির গোড়ার দিকের ইতিহাস ও ধর্মীয় অভিজ্ঞতার প্রকৃতির ওপর বেশ কয়েকটা টেলিভিশন অনুষ্ঠান করেছি আমি। ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে যতই জেনেছি ততই আমার পুরোনো কিছু সন্দেহ যৌক্তিক প্রতীয়মান হতে শুরু করেছে। ছোটবেলায় বিনা প্রশ্নে যেসব মতবাদ মেনে নিয়েছিলাম সেগুলো আসলেই দীর্ঘ সময় জুড়ে মানুষেরই গড়ে তোলা। বিজ্ঞান যেন স্রষ্টা ঈশ্বরকে বাতিল করে দিয়েছে; বাইবেলিয় পণ্ডিতগণ প্রমাণ করেছেন জেসাস কখনও নিজেকে স্বর্গীয় সত্তা দাবি করেননি। একজন এপিলেপটিক হিসাবে মামার কিছু কিছু দৃষ্টিবিভ্রমের অভিজ্ঞতা ছিল সেগুলো স্রেফ স্নায়ুবিক দুর্বলতার ফল বলে জানতাম আমি: তবে কি সাধু-সন্ন্যাসীদের দিব্যদৃষ্টি ও পরমানন্দের অনুভূতিও কেবল তাদের মানসিক আলোড়নের প্রকাশ? ঈশ্বর যেন ক্রমবর্ধমান হারে স্থানচ্যুত হয়ে গেছেন বলে মনে হয়েছে, মানবজাতি যাকে অতিক্রম করে এসেছে।
নান হিসাবে আমার দীর্ঘ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও ঈশ্বর সম্পর্কে নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে অস্বাভাবিক মনে করি না। ঈশ্বর সম্পর্কে আমার ধারণাগুলো গড়ে উঠেছিল ছোটবেলায়, অন্যান্য বিষয়ে আমার ক্রমবর্ধমান জ্ঞানের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। আমি ফাদার ক্রিসমাসের ছোটবেলার সহজ ধারণাকে পরিমার্জনা করেছি, মানুষের দ্বিধা সংশয় সম্পর্কে আরও পরিপূর্ণ উপলব্ধি অর্জন করতে পেরেছি। কিন্ডারগার্টেনে যেটা সম্ভব ছিল না। তা সত্ত্বেও ঈশ্বর সম্পর্কে আমার পুরোনো ভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তিত বা বিকশিত হতে পারেনি। আমার মতো বিচিত্র ধর্মীয় পটভূমি নেই যাদের তারাও হয়তো আবিষ্কার করবেন যে, ঈশ্বর সম্পর্কে তাদের ধারণা ছোটবেলায় গড়ে ওঠা। সেদিনগুলোর পরে আমরা ছোটবেলার সবকিছু ফেলে এসেছি ও আমাদের শিশু বয়সের স্রষ্টাকেও বাদ দিয়েছি।
কিন্তু তারপর ধর্মের ইতিহাস নিয়ে আমার গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, মানুষ আসলে আধ্যাত্মিক প্রাণী। প্রকৃতপক্ষেই হোমো সেপিয়েরা আসলে হোমো রিলিজিয়াস বলে তর্ক করার যথেষ্ট অবকাশও রয়েছে। নারী ও পুরুষ মোটামুটিভাবে মানুষ হয়ে ওঠার পর পরই দেব-দেবীর উপাসনা শুরু করেছিল; শিল্পকলার মতোই একই সময়ে তারা ধর্মকে সৃষ্টি করেছে। এটা যে কেবল ক্ষমতাশালী শক্তিকে প্রসন্ন করার জন্য ছিল তা নয়; এইসব আদি বিশ্বাস এই সুন্দর অথচ ভীতি জাগানো জগৎ নিয়ে মানুষের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। শরীর যে দুঃখ কষ্টের তা সত্ত্বেও জীবনের একটা অর্থ অনুসন্ধানে শিল্পের মতো ধর্মও একটি প্রয়াস। অন্য যে কোনও মানবীয় কর্মকাণ্ডের মতো ধর্মকেও অপব্যবহার করা যায়, আর আমরা যেন সেটাই সব সময় করে এসেছি। কুচক্রী রাজরাজরা ও পুরোহিতগণ আদিম সেকুলার স্বভাবের ওপর এটা চাপিয়ে দেননি, বরং এটা মানুষেরই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের বর্তমান সেকুলারিজম একেবারেই নতুন এক নিরীক্ষা, মানব ইতিহাসে যার নজীর নেই। এর পরিণতি দেখার জন্যে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। এ কথা সত্য যে, আমাদের পশ্চিমা উদার মানবতাবাদ শিল্পকলা বা কবিতার উপলব্ধির মতো আপনাআপনি আমাদের কাছে আসেনি, এর পরিচর্যা করতে হয়েছে। খোদ মানবতাবাদ ঈশ্বরবিহীন ধর্ম-সকল ধর্ম যে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখে তা অবশ্য নয়। আমাদের নৈতিক সেকুলার আদর্শের মনকে পরিচালিত করার নিজস্ব নিয়ম-কানুন রয়েছে যা মানুষকে মানব জীবনের পরম অর্থ সন্ধানে সাহায্য করে। এক সময় যা প্রথাগত ধর্মগুলোর কাজ ছিল।
তিনটি পরস্পর সম্পর্কিত একেশ্বরবাদী ধর্ম ইহুদিবাদ, খৃস্টধর্ম ও ইসলামে ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা এবং অভিজ্ঞতার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা শুরু করার সময় আমি ভেবেছিলাম ঈশ্বরকে কেবল মানুষের প্রয়োজন ও ইচ্ছার সাধারণ এক প্রকাশ হিসাবে আবিষ্কার করব। আমার ধারণা ছিল যে তিনি সমাজ বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে এর আতঙ্ক ও আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেছেন। আমার অনুমান একেবারে অমূলক প্রতীয়মান হয়নি, তবে আমার কিছু কিছু আবিষ্কারে দারুণ বিস্মিত হয়েছি। আমার মনে হয়েছে তিরিশ বছর আগে যখন ধর্মীয় জীবন শুরু করতে যাচ্ছিলাম তখন এসব জানতে পারলে তিনটি একেশ্বরবাদী বিশ্বাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মুখে মহাশূন্য থেকে ঈশ্বরের অবতরণের অপেক্ষায় না থেকে নিজের জন্যে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একটা ধারণা সৃষ্টি করে নেওয়া উচিত–একথা শোনার তীব্র উদ্বেগ থেকে রক্ষা পেতাম। অন্যান্য রাবাই, যাজক ও সুফীগণ আমাকে ঈশ্বরকে কোনও অর্থে ‘মহাশূন্যের বাস্তবতা’ মনে করার জন্যে তিরস্কার করতেন। আমাকে যৌক্তিক চিন্তার সাধারণ প্রক্রিয়ায় আবিষ্কৃত হওয়ার মতো বাস্তব বিষয় হিসাবে তার অভিজ্ঞতা লাভের প্রত্যাশা না করতে সতর্ক করে দিতেন তাঁরা। আমাকে বলতেন, এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থে ঈশ্বর সৃজনশীল কল্পনার সৃষ্টি, আমার কাছে অনুপ্রেরণাদায়ী মনে হওয়া কবিতা ও সঙ্গীতের মতো। অত্যন্ত সম্মানিত কিছু একেশ্বরবাদী হয়তো শান্ত ও দৃঢ় কণ্ঠে আমাকে বলতেন, প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই-এবং তারপরেও ‘তিনি’ এই বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা।
এই বইটি সময় ও পরিবর্তনের অতীত স্বয়ং ঈশ্বরের বর্ণনাতীত বাস্তবতার ইতিহাস হবে না, বরং আব্রাহামের কাল থেকে আজকের দিন পর্যন্ত নারী ও পুরুষ যেভাবে তাঁকে কল্পনা করেছে, এটা তারই ইতিহাস। ঈশ্বর সম্পর্কে মানুষের ধারণার একটি ইতিহাস আছে, কিন্তু কালের বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে একে ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীর কাছে তা বরাবরই পরিবর্তিত অর্থ বহন করেছে। কোনও এক প্রজন্মে এক দল মানুষের সৃষ্ট ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা অন্য এক দল মানুষের কাছে অর্থহীন হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, ‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি’ কথাটার বাস্তব কোনও অর্থ নেই, কিন্তু যখন কোনও নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মুখে বিশেষ প্রেক্ষাপটে উচ্চারিত হয় তখনই অন্য যে কোনও বাক্য বা কথার মতো ঐ প্রেক্ষাপটে তা অর্থ প্রকাশ করে থাকে। ফলে ‘ঈশ্বর’ শব্দের মাঝে কোনও একক অন্তর্নিহিত অপরিবর্তনীয় ধারণা নেই, বরং শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে যেগুলো আবার পরস্পর বিরোধী এবং এমনকি একটা অপরটিকে বাতিলও করে। ঈশ্বরের ধারণায় এই পরিবর্তনশীলতা না থাকলে অন্যতম মহান মানবীয় ধারণা হবার জন্যে তা টিকে থাকত না। যখনই ঈশ্বর সম্পর্কিত একটি ধারণা অর্থ হারিয়েছে বা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, নীরবে সেটাকে বর্জন করে এক নতুন ধারণাকে সেখানে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। একজন মৌলবাদী একথা প্রত্যাখ্যান করবে, কেননা মৌলবাদ ইতিহাস। বিরোধী: এটা বিশ্বাস করে যে আব্রাহাম, মোজেস ও পরবর্তীকালের পয়গম্বরগণ আজকের দিনের মানুষের মতোই তাদের ঈশ্বরের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের তিনটি ধর্মের দিকে তাকালে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে ঈশ্বরের কোনও বস্তুনিষ্ঠ ধারণা নেই, প্রত্যেক প্রজন্মকেই তার জন্যে কার্যকর ঈশ্বরের ইমেজ নির্মাণ করে নিতে হয়। নাস্তিক্যবাদের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য। ‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না’ কথাটা ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত অর্থ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন সময়ে ‘নাস্তিক’ হিসাবে আখ্যায়িত ব্যক্তিরা এলাকার বিশেষ একটি ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে। আজকের নাস্তিকদের প্রত্যাখ্যাত ঈশ্বরই কি প্যাট্রিয়ার্কদের ঈশ্বর, পয়গম্বরদের ঈশ্বর, দার্শনিকদের ঈশ্বর, অতিন্দ্রীয়বাদীদের ঈশ্বর কিংবা অষ্টাদশ শতকের ডেইস্টদের ঈশ্বর? এইসব উপাস্যই ইহুদি, ক্রিশ্চান ও মুসলিমগণ কর্তৃক তাদের ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বাইবেল এবং কোরানের ঈশ্বর হিসাবে উপাসিত হয়েছেন। আমরা দেখব, তারা একে অপরজন থেকে একেবারে আলাদা। নাস্তিক্যবাদ প্রায়শঃ পরিবর্তনশীল একটা অবস্থা ছিল: এভাবে ইহুদি, ক্রিস্টান ও মুসলিমরা তাদের সমসাময়িক পৌত্তলিক প্রতিপক্ষ কর্তৃক নাস্তিক আখ্যায়িত হয়েছে, কেননা তারা অলৌকিকত্ব ও পরম সত্তা সম্পর্ক এক বিপ্লবাত্মক ধারণা অবলম্বন করেছিল। আধুনিক নাস্তিক্যবাদ কি একইভাবে আমাদের সময়ের সমস্যাদির প্রেক্ষিতে অপর্যাপ্ত ঈশ্বরের প্রতি আনাস্থা?
অন্য জগতের কথা বললেও ধর্ম দারুণভাবে বাস্তবসম্মত। আমরা দেখব যে, ঈশ্বর সম্পর্কিত কোনও বিশেষ ধারণা যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে মাথাযথ হওয়ার চেয়ে বরং এর কার্যকারিতাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর কার্যকারিতা বাইত হলেই তা বদলে যাবে-কখনও কখনও যা তীব্রভাবে ভিন্নতর। আমাদের পূর্ববর্তী একেশ্বরবাদীরা এতে এতটুকু বিচলিত হয়নি, কেননা তারা স্পষ্ট করেই জানত যে, ঈশ্বর সম্পর্কে তাদের ধারণা স্থির বা অপরিবর্তনীয় নয়, বরং সাময়িক। এগুলো ছিল পুরোপুরি মানুষের সৃষ্টি-অন্য কিছু হতে পারে না-বরং এগুলো যে বর্ণনাতীত সত্তাকে প্রতীকায়িত করে। তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কেউ কেউ এই অত্যাবশ্যকীয় পার্থক্যের ওপর। গুরুত্ব আরোপ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদ্ধত পন্থার উদ্ভব ঘটিয়েছে। মধ্যযুগীয় জনৈক সাধু এতদূর পর্যন্ত বলেছেন যে, ভুলক্রমে এই পরম সত্তা ঈশ্বর বাইবেলে উল্লেখিতই হননি। সমগ্র ইতিহাস জুড়ে নারী-পুরুষ জাগতিক। বিশ্বের অতীত আত্মার একটা মাত্রা যেন প্রত্যক্ষ করেছে। প্রকৃতপক্ষে, এটা। মানব মনের এক অসাধারণ বৈশিষ্ট্য যে, তারা বোধের অতীত এই রকম একটা ধারণাকে ধারণ করতে পারে। আমরা একে যেভাবেই ব্যাখা করতে চাই না কেন মানুষের দুয়ের এই অভিজ্ঞতা জীবনেরই বাস্তবতা রয়ে গেছে। সবাই একে অলৌকিক বলে মেনে নেবে তা নয়। আমরা যেমন দেখব, বৌদ্ধরা তাদের দর্শন ও অন্তর্দৃষ্টি অতিপ্রাকৃত উৎস হতে গৃহীত বলে স্বীকার করে না; তারা একে মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক হিসাবে দেখে। অবশ্য প্রধান সকল ধর্ম স্বীকার করবে যে, এই দুর্জ্ঞেয়কে স্বাভাবিক ধারণাগত ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। একেশ্বরবাদীরা এই দুয়েকে ‘ঈশ্বর’ আখ্যা দিয়েছে, কিন্তু এর চারপাশে জরুরী কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, ইহুদিদের বেলায় ঈশ্বরের পবিত্র নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ, মুসলিমরা অলৌকিককে দর্শনীয় প্রতিমায় উপস্থাপিত করতে পারবে না। এই বিধান মনে করিয়ে দেয়, যে সত্তাকে আমরা ‘ঈশ্বর’ আখ্যায়িত করি তা সকল মানবীয় অভিব্যক্তির অতীত।
এটা প্রচলিত ধারার ইতিহাস হবে না, যেহেতু ঈশ্বরের ধারণা কোনও বিশেষ কালে সৃষ্টি হয়ে একরৈখিকভাবে চূড়ান্ত রূপ লাভ করেনি। বৈজ্ঞানিক ধারণা ওভাবে অগ্রসর হয়, কিন্তু শিল্পকলা বা ধর্মের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে না। প্রেমের কবিতায় যেমন অল্প সংখ্যক থিম রয়েছে ঠিক সেরকমই মানুষ ঈশ্বর সম্পর্কে বারবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা ঈশ্বর সম্পর্কে ইহুদি, ক্রিশ্চান ও মুসলিম বিশ্বাসে বিস্ময়কর মিল লক্ষ করব। যদিও ইহুদি ও মুসলিমরা ক্রিশ্চানদের ট্রিনিটি ও ইনকারনেশনের ধারণাকে প্রায় ব্লাসফেমাস বিবেচনা করে, কিন্তু এইসব বিতর্কিত ধর্মতত্ত্বের নিজস্ব ধরনও সৃষ্টি করেছে তারা। এইসব সর্বজনীন ধারণার প্রত্যেকটি একটি অপরটির চেয়ে সামান্য ভিন্নতার অধিকারী, যা ঈশ্বরের অভিব্যক্তি প্রকাশের ক্ষেত্রে মানুষের সৃজনশীলতা ও মেধার পরিচয় প্রকাশ করে।
বিষয়বস্তু যেহেতু ব্যাপক, আমি তাই ইচ্ছাকৃতভাবেই ইহুদি, ক্রিশ্চান ও মুসলিমদের উপাস্য একক ঈশ্বরে নিজেকে সীমিত রেখেছি, যদিও ক্ষেত্র বিশেষে পৌত্তলিক, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধারণাসমূহও আলোচনা করেছি যাতে পরম সত্তা সম্পর্কিত একেশ্বরবা যুক্তিসমূহ আরও স্পষ্ট করা যায়। বিভিন্ন ধর্মে একেবারে স্বাধীনভাবে গড়ে ওঠা ঈশ্বরের ধারণা আশ্চর্যরকমভাবে সমরূপ বলে মনে হয়। ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের উপসংহার যাই হোক না কেন, এই ধারণার ইতিবৃত্ত আমাদেরকে অবশাই মানুষের মনোজগত এবং আমাদের আকাক্সক্ষার প্রকৃতি সম্পর্কে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেবে। অধিকাংশ পাশ্চাত্য সমাজের সেকুলার ধারা সত্ত্বেও ঈশ্বরের ধারণা আজও লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে চলেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, শতকরা নিরানব্বই ভাগ আমেরিকান জানিয়েছে তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে: প্রশ্ন হচ্ছে অসংখ্য ঈশ্বরের মাঝে কোনজনের প্রভুত্ব স্বীকার করে তারা?
ধর্মতত্ত্ব প্রায়শঃই বিমূর্ত ও একঘেয়ে মনে হয়, কিন্তু ঈশ্বরের ইতিহাস আবেগময় এবং প্রবলভাবে টানে। পরম বা চরম সত্তার অন্যান্য ধারণার বিপরীতে মূলত যন্ত্রণাদায়ক সংগ্রাম ও চাপের মধ্য দিয়ে একে লালন করা হয়েছে। ইসরায়েলের পয়গম্বরগণ শরীরের অন্ধিসন্ধি মুচড়ে দেওয়া দৈহিক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে তাঁদের ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করেছেন যা তাঁদের ক্রোধ ও আনন্দে পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। যে সত্তাকে তারা ঈশ্বর হিসাবে আখ্যায়িত করে একেশ্বরবাদীরা এক চরম অবস্থায় তার অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকে। আমরা পর্বতচূড়া, অন্ধকার, নিঃসঙ্গতা, সিফিকশন ও ত্রাসের কথা পাঠ করব। ঈশ্বর সংক্রান্ত পাশ্চাত্য অভিজ্ঞতা যেন বিশেষভাবে পীড়াদায়ক। এই সহজাত যাতনার কারণ কী? অন্য একেশ্বরবাদীরা আলো ও আকৃতির পরিবর্তনের কথা বলেছে। যে সত্তার অভিজ্ঞতা তারা লাভ করে তার বিবরণ দিতে গিয়ে অর্থডক্স ধর্মতত্ত্বের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া সাহসিকতাপূর্ণ কল্পনার আশ্রয় নেয়। সাম্প্রতিককালে মিথলজি নিয়ে নতুন করে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। এক ধর্মীয় সত্যের অধিকতর অভিব্যক্তির এক ব্যাপক আকাক্ষার প্রকাশ হিসাবে দেখা যেতে পারে। প্রয়াত আমেরিকান পণ্ডিত জোসেফ ক্যাম্পবেলের রচনাবলী আজকাল দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষের চিরকালীন মিথলজি নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি, প্রথাগত সমাজে এখনও প্রচলিত কিংবদন্তীসমূহের সঙ্গে সেগুলোর যোগসূত্র আবিষ্কার করেছেন। প্রায়শঃ ধারণা করা হয় যে, তিনটি ঈশ্বর-ধর্ম বুঝি মিথলজি ও কাব্যিক প্রতীকধর্মীতা মুক্ত। কিন্তু একেশ্বরবাদীরা আদিতে তাদের পৌত্তলিক প্রতিবেশীদের মিথ প্রত্যাখ্যান করলেও পরবর্তীকালে সেগুলো আবার তাদের অজান্তেই তাদের মাঝে ফিরে এসেছে। যেমন, অতিন্দ্রীয়বাদীরা ঈশ্বরকে নারী রূপে প্রত্যক্ষ করেছে। অন্যরা শ্রদ্ধার সঙ্গে ঈশ্বরের লিঙ্গ সম্পর্কে আলোচনা করেছে এবং স্বর্গীয় সত্রায় নারীসুলভ উপাদান যোগ করেছে।
এটা আমাকে এক কঠিন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। কারণ এই ঈশ্বরের শুরু হয়েছিল পুরুষ দেবতা হিসাবে, একেশ্বরবাদীরা সাধারণত তাকে ‘পুরুষবাচক সে’ হিসাবে উল্লেখ করে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নারীবাদীরা বোধগম্যভাবেই এর প্রতি আপত্তি উত্থাপন করেছে। আমি যেহেতু ঈশ্বরকে ‘পুরুষবাচক সে’ হিসাবে বিবেচনাকারী মানুষের চিন্তা, ভাবনা ও দর্শন নিয়ে আলোচনা করব, তাই যদিও এটা বলাই যথোপযুক্ত শব্দ হতো, তবু আমি প্রথাগত পুরুষবাচক সর্বনামই ব্যবহার করব। এটা উল্লেখ করা বোধ হয় সমীচিন হবে যে, বিশেষ করে ইংরেজিতে ঈশ্বরের আলোচনায় পুরুষবাচক সম্বোধন ব্যবহার কষ্টকর। অবশ্য হি, আরবী ও ফরাসি ভাষায় ব্যাকরণগত লিঙ্গ ধর্মীয় আলোচনায় লিঙ্গিয় পাল্টা যুক্তি ও ডায়ালেকটিক এর সুযোগ সৃষ্টি করে যা এক ধরনের ভারসাম্য যোগায়, ইংরেজিতে যার অভাব রয়েছে। এভাবে আরবী আল্লাই (ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ট নাম) ব্যাকরণগতভাবে পুরুষবাচক, কিন্তু ঈশ্বরের অলৌকিক এবং দুৰ্জ্জেয় সত্তাবোধক শব্দটি—’আল-ধাত’–নারীবাচক।
ঈশ্বর সম্পর্কিত সকল আলোচনা অসম্ভব সমস্যায় আবর্তিত। কিন্তু একেশ্বরবাদীরা ভাষার ব্যাপারে অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করার পাশাপাশি একই সময়ে দুর্জ্ঞেয় সত্তার প্রকাশে ভাষার ক্ষমতাহীনতাও মেনে নেয়। ইহুদি, ক্রিশ্চান ও মুসলিমদের ঈশ্বর এমন একজন যিনি-এক অর্থে-কথা বলেন। তিনটি ধর্ম বিশ্বাসের ক্ষেত্রেই তাঁর বাণী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরের বাণী আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাস নির্মাণ করেছে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বর্তমানে ‘ঈশ্বর’ শব্দটি আমাদের জন্যে কোনও অর্থ বহন করে কিনা।
টীকা: আমি যেহেতু ইহুদি, মুসলিম ও ক্রিশ্চানদের দৃষ্টিকোণ থেকে ঈশ্বরের ইতিহাস পর্যালোচনা করছি, সেহেতু পশ্চিমে সাধারণভাবে ব্যবহৃত ‘খৃস্টপূর্ব’ এবং ‘খৃস্টাব্দ’ শব্দবন্ধ দুটি যথার্থ নয়। সেজন্যে আমি বিকল্প-বিসিই (Before the Common Era) এবং সিই (Common Era)-এর আশ্রয় নিয়েছি।
Rifat
আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদের বইগুলোর কালেকশন দিবেন।