[লেখক/প্রকাশকের আপত্তির কারণে পুরো বইটি দেয়া গেল না/বইটি সরিয়ে নেয়া হলো]
আর্সেন লুপাঁ সিরিজ – ১
আর্সেন লুপাঁ : জেন্টলম্যান বার্গলার – মরিস লেবলাঁ
সম্পাদনা: মহিউল ইসলাম মিঠু
প্রকাশকাল প্রথম প্রকাশ: আগস্ট, ২০২২
Arsen Lupin Gentleman Burgler
by Maurice Leblanc
Edited by Moheul Islam Mithu
উৎসর্গ
জারিফ বিন রাশেদ
দেখা হবে, মামা।
ভূমিকা
বাংলা ভাষাভাষী, যারা রহস্য সাহিত্য সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল কিংবা আগাথা ক্রিস্টি নামটা তাদের কাছে যতটা পরিচিত, মরিস লেবলাঁ নামটা বেশিরভাগের কাছে ঠিক ততটাই অপরিচিত মনে হবে। আর সেক্ষেত্রে লেবলাঁর অনবদ্য সৃষ্টি, আর্সেন লুপাঁর কথা তো বলাই বাহুল্য। যদিও সম্প্রতি নেটফ্লিক্স-এর কারণে কিছুটা হলেও পরিচিতি পেয়েছে আর্সেন লুপাঁ নামটা।
লুপাঁ মূলত এক ভদ্রবেশী চোর। তবে আর দশটা সাধারণ চোরের সাথে তাঁর পার্থক্য হচ্ছে, তাঁর নৈতিক অবস্থান। তাঁর রহস্যময় কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বদলে অনেকটা রবিনহুডের মতো সাহায্য সহাযোগীতা পেয়ে থাকে।
এটা ধরেই নেওয়া হয়, যেখানে লুপাঁর উপস্থিতি, সেখানেই অপ্রত্যাশিত কিছু একটা ঘটবে। খোদ ফরাসি কর্তৃপক্ষই জানে না, সে দেখতে কেমন কিংবা আর্সেন লুপাঁ তাঁর আসল নাম কিনা। হাজারো ছদ্মবেশ নিয়ে প্রতিবারই পুলিশকে এড়িয়ে যায় এই জেন্টলম্যান বার্গলার-ভদ্রলোক চোর।
অনেকেই মরিস লেবলাঁর এই কালজয়ী চরিত্রটার মাঝে শার্লক হোমসের ছায়া খোঁজার চেষ্টা করেন। তবে লেবলাঁ সম্ভবত তাঁর এই চরিত্রটিকে শার্লক হোমসের চেয়েও নিখুঁত মনে করতেন। যার সামান্য ছোঁয়া পাঠকরা ‘শার্লক হোমস অ্যারাইভড টু লেট’ গল্পটায় দেখতে পাবেন। এই বিষয়টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েলকে এতটাই ক্ষুব্ধ করেছিল যে, আইনি জটিলতা এড়াতে লেবলাঁ তার পরবর্তী বই, আর্সেন লুপাঁ ভার্সেস শার্লক হোমস বইটার নাম পালটে আর্সেন লুপাঁ ভার্সেস হার্লক শোমস করতে বাধ্য হন।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ছদ্মবেশ ধারণে লুপাঁর রয়েছে অবিশ্বাস্য দক্ষতা, সেই সাথে তাঁর বুদ্ধিমত্তা এবং উদ্ভাবনী প্রতিভার কারণে পুলিশের
কাছে এক জীবন্ত আতঙ্ক সে। তবে এসব ছাড়িয়ে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য তাঁকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে সাধারণের কাছে। যেমন: তার মহত্ত্ব, সূক্ষ্ম রসবোধ, অন্য অপরাধীদের শায়েস্তা করার দক্ষতা ইত্যাদি। কাহিনিগুলো পড়ার সময় পাঠকরা ভালোভাবে বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবেন।
বাংলা ভাষায় আর্সেন লুপাঁর মতো স্বল্প পরিচিত একটা ক্লাসিক চরিত্র নিয়ে কাজ করার জন্য বেনজিন প্রকাশনকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয়। আশা করি পাঠকরা কালজয়ী এই চরিত্রটিকে সাদরে বরণ করে নিয়ে বাংলা ভাষায় আর্সেন লুপাঁর যাত্রাপথটাকে সুগম করতে অবদান রাখবেন।
ধন্যবাদ।
খালেদ নকীব
লেখক ও অনুবাদক
ঢাকা, বাংলাদেশ
২২/০৭/২২
সম্পাদকের কথা
ফ্রেঞ্চ লেখক মরিস লেবলাঁ ১৯০৫ সালে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এক টক- মিষ্টি-ঝাল চরিত্রের সাথে। চরিত্রের নাম আর্সেন লুপাঁ। এই আর্সেন লুপাঁ একই সাথে মহাচোর, রহস্যভেদী, গোয়েন্দা, ছদ্মবেশি; আবার কখনো কখনো এর কোনোটাই নয়, শুধুই কাহিনির প্রধান চরিত্র। কখনও আর্সেনকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়, কখনও মনে হয় ‘নাহ, এই লোক ভালোবাসা বা সম্মানের যোগ্য না’, কখনও আর্সেন আবির্ভূত হয় কুশলী খলচরিত্র নিয়ে, আবার কখনও সিংহ- হৃদয় এক নায়ক হয়ে। কিন্তু যে রূপেই আর্বিভূত হোক না কেন, তাকে ঘিরে মুগ্ধতা কখনও কমে না। এখন মনে হচ্ছে ‘টক-মিষ্টি-ঝাল’ শব্দটা ব্যবহার করাটা সঠিক হয়নি, শব্দটা আর্সেন লুপাঁর গভীরতা কমিয়ে দিয়েছে। সঠিকভাবে বললে শব্দটা হতো ‘মন্দ না—খুব ভালো-অসাধারণ’! কিন্তু লিখে যখন ফেলেছি, আর বদলাচ্ছি না।
আর্সেন লুপাঁ আর তার স্রষ্টা মরিস লেবলাঁকে নিয়ে বললে অনেক বলা যাবে। শার্লক আর আর্সেনের প্রতিযোগিতা কীভাবে তাদের স্রষ্টা কোনান ডয়েল আর মরিস লেবলাঁর মধ্যেও প্রশমিত হয়েছিল সে গল্প ইচ্ছা করলেই পাঠক জেনে নিতে পারবেন গুগলের একটা টাচ বা ক্লিকে। আর্সেন লুপাঁ কীভাবে সারা বিশ্বের থ্রিলার প্রেমীদের দ্বারা উদ্যাপিত হয়েছে, গোয়েন্দা গল্পের লেখকদের লেখায় বারবার ফিরে এসেছে সে-সব খবরও সহজেই পাওয়া যাবে।
আর্সেন লুপাঁ নিজ গুণে যুগের পর যুগ ধরে বারবার নতুন নতুন স্টাইল নিয়ে ফিরে আসে লিভিংরুমের টেলিভিশনে বা প্রেক্ষাগৃহের রুপালি পর্দায় বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের কথা বাদ দিলেও, আর্সেনকে ভালোবাসে বলেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার লেখকরা তাকে বারবার ফিরিয়ে আনেন নিজের মতো করে। আজ প্রায় শত বছর পরেও আর্সেনকে নিয়ে নতুন নতুন কাহিনি লেখেন কাহিনিকাররা, কমিকস আঁকেন শিল্পীর দল, সিনেমা বানান পরিচালকরা।
কেন আর্সেন লুপাঁ এত নন্দিত, সমাদৃত, প্ৰীত; সেই আলোচনা অনেক বড়। তাই তোলা থাকল বিশেষ কোনো উপলক্ষ্যে লেখার জন্য। সম্পাদক হিসেবে এই বইয়ের গল্পগুলো আর সেই গল্পগুলোর অনুবাদকদের নিয়ে কিছু কথা বলা জরুরি।
বেনজিন প্রকাশন যখন বাংলায় আর্সেন লুপাঁকে আনার ইচ্ছার কথা জানালো তখন আমার ভালো লেগেছিল। তারপর যখন প্রথম বইয়ের নয়টা গল্পের নয় জন অনুবাদকের নাম জানালো, তখনও ভালো লেগেছিল। কিন্তু যখন জানালো বইটার সম্পাদনার দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে তখন আর ভালো লাগেনি। নামি এবং অসাধারণ সব অনুবাদকদের সম্পাদক হওয়া একটু চাপেরই বটে।
আর্সেন লুপাঁর প্রথম বইয়ের জন্য যেসব অনুবাদককে বেছে নেওয়া হয়েছে, তাদের সবাই নিজেদের পাঠকদের আস্থার জায়গা। তাদের লেখা এমনিতেই নিজস্বতায় সুন্দর। আমি শুধু সবার মধ্যে একটা সামঞ্জস্যতা তৈরির চেষ্টা করেছি। পাঠকের যেন পড়ার সময় খুব বেশি অসঙ্গতি লাগছে বলে মনে না হয়।
আবার এই সঙ্গতি রাখতে গিয়ে যাতে এই স্বনামধন্য অনুবাদকদের ‘সিগনেচার টোন’ নষ্ট না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকেছি।
ইংরেজি ‘ইউ’ (YOU) শব্দটার বাংলা প্রতিশব্দ ‘আপনি’ বা ‘তুমি’। ইংরেজি ‘ইউ’-এর (YOU) কোনো সমস্যা না থাকলেও, বাংলায় আর বাংলা সাহিত্যে দুই জায়গাতেই ‘আপনি’ আর ‘তুমি’ এই শব্দ দুটোর মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান।
অনুবাদকদের কেউ ব্যবহার করেছেন ‘তুমি’, কেউ ব্যবহার করেছেন ‘আপনি’, কেউ দুটোই। তবে যে যেমন সম্বোধন ব্যবহার করুন না কেন, নিজস্ব লেখনপদ্ধতিতে তা ফুটিয়ে তুলেছেন চমৎকারভাবে। আমি তাদের এই চমৎকারিত্ব কমিয়ে দিতে চাইনি। অনুবাদকগণ যেভাবে সম্বোধন করেছেন, ন্যারেটিভ বা কাহিনি বর্ণনায় তৃতীয় পুরুষের যে রূপই ব্যবহার করেছেন, আমিও সেরকমই রেখেছি (যদিও ইচ্ছামত পরিবর্তনের অনুমতি সবাই দিয়ে রেখেছিলেন)।
ফলাফলে যেটা হয়েছে সেটা হলো, বইয়ের প্রতিটা গল্প একই ঘরনার হলেও পড়ার স্বাদটা আলাদা হয়েছে। এই স্বাদ যদি কারও খারাপ লাগে তবে সেই দায় একান্তই আমার।
বইটির প্রকাশক, অনুবাদক, প্রচ্ছদশিল্পী, প্রুফরিডার-সহ সংশ্লিষ্ট সবাই বইটাকে সুন্দর করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আপনারা সবাই তাদের জন্য দোয়া করবেন, তারা যেন প্রতিনিয়ত নিজেদের ছাড়িয়ে যান, আমাদের বই পড়ার ক্ষুধার উপাদেয় যোগান তৈরি করতে থাকেন ঠিক এইভাবে। আমি যখন এই ভূমিকা লিখছি তখন আমার বড় বোন অপারেটিং টেবিলে। আজকে তার যে শিশুটির জন্ম হবে সে যেন পৃথিবীকে আরেকটু সুন্দর করে, সেই দোয়াও রাখবেন।
বিশ্বসেরা এই কাহিনিগুলো বাংলার পাঠকদের মনে জায়গা করে নিক। গোয়েন্দা গল্পের পোকা, রহস্য-প্রিয় পাঠক আর থ্রিলারপ্রেমী চিরতরুণরা যদি তাদের আড্ডায় নতুন টপিক হিসেবে আর্সেন লুপাঁকে পায়; আর্সেন লুপাঁ যদি বাংলার লেখকদের আরও নতুন নতুন আর্সেন লুপাঁ সৃষ্টি করার অনুপ্রেরণা দেয়; তাহলে আমাদের সবার এই চেষ্টা সার্থক হবে। আমাদের সম্মিলিত প্ৰয়াস বাংলা সাহিত্যের জয়যাত্রায় ‘বিশাল সাগরে এক বিন্দু জল’-এর মতো মূল্যবান হয়ে থাকবে।
মহিউল ইসলাম মিঠু
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।
আগস্ট ১৬, ২০২২
সূচীপত্র
- দ্য অ্যারেস্ট অভ আর্সেন লুপাঁ – কুদরতে জাহান
- আর্সেন লুপাঁ ইন প্রিজন – নিঝুম
- দ্য এস্কেপ অভ আর্সেন লুপাঁ – মহিউল ইসলাম মিঠু
- দ্য মিস্টিরিয়াস ট্রাভেলার – অসীম পিয়াস
- দ্য কুইন’স নেকলেস – লুৎফুল কায়সার
- দ্য সেভেন অভ হার্টস – নজরুল ইসলাম
- মাদাম ইমবার্ট’স সেফ – ডিউক জন
- ব্ল্যাক পার্ল – জাবেদ রাসিন
- শার্লক হোমস অ্যারাইভস টু লেট – খালেদ নকীব
Beauty
Good