আরব জাতির ইতিহাস (HISTORY OF THE ARABS)
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসান
এমএ (ঢাকা) পিএইচডি (লন্ডন), বিসিএস (শিক্ষা) অব অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, দি পিপল্স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাবেক প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
নভেল পাবলিশিং হাউস ২/৩ প্যারীদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০
প্রথম প্রকাশ : বইমেলা ২০০৬
Arab Jatir Itihats (History of the Arabs) by Dr. Syed Mahmudul Hasan, Published by Tarikullha Tarun, Novel Publishing House, 2/3 Paridus Road, Banglabazar, Dhaka-1100
উৎসর্গ
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির
চর্চায় নিয়োজিত নব প্রজন্মের
গবেষকদের
প্ৰতি
উৎসর্গিকৃত
ভূমিকা
মেঘে মেঘে বেলা কখন গড়িয়ে যায় তা বোঝা যায় না। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থকারের শিক্ষকতায় হাতে খড়ি। এরপর দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শতাব্দী পার হতে চলছে। এই দীর্ঘ সময়ে ইসলামের ইতিহাসে পাঠদান ছাড়াও তিনি পাশাপাশি গবেষণা ও প্রকাশনার কাজ চালিয়ে গেছেন সাধ্যমত। ফলে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যাও দাড়িয়েছে প্রায় ৫০-এ। এ বিপুল সংখ্যক বই-এর টাইটেল দেখলে প্রতীয়মান হবে যে ইসলামের ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, সমাজ, সংস্কৃতি সভ্যতা, প্রশাসন ব্যবস্থা, ছাড়াও বহু সৃজনশীল গ্রন্থ বাংলাবাজারের সম্মানিত প্রকাশকেরা ছাপিয়েছেন-এ প্রসঙ্গে অবশ্যই শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা গ্লোব, মল্লিক, মাওলা, সময়, অনন্যা, শোভা, ঝিঙ্গেফুল, মজিদ পাবলিকেশনের নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু ইদানিং নভেল পাবলিশিং হাউস আরব জাতীর ইতিহাস শীর্ষক যে বৃহৎ কলেবরে তথ্য-প্রমাণ সম্বলিত বস্তু নিরপেক্ষভাবে রচিত যে গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন তা শুধু চমকপ্রদই নয় বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। পূর্বে প্রকাশিত ইসলামের ইতিহাসের উপর রচিত গ্রন্থাবলি সাদামাটা টেকস্ট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানের গ্রন্থটি গবেষণা ধর্মী ও উচ্চমানসম্পন্ন। এর কারণ ইসলামের ইতিহাস রচনায় তিন দিকপালের মূল্যবান গ্রন্থের ভিত্তিতে “আরব জাতীয় ইতিহাস” রচিত হয়েছে। এই তিন দিকপাল হচ্ছেন স্যার সৈয়দ আমীর আলী, ডাবলু মন্টোগোমারী ওয়ার্ট এবং পি. কে. হিট্টি। স্যার সৈয়দ আমীর আলীর ‘এ সর্ট হিস্ট্রি অব দি স্যারাসিনস’ ও ‘স্পিরিট অব ইসলাম’ ইসলামের ইতিহাসের যেমন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ তেমনি মন্টোগোমারি ওয়ার্টের ‘মুহাম্মদ এ্যাট মক্কা’ এবং ‘মুহাম্মদ এ্যাট মদিনা’ অত্যন্ত সঠিকভাবে রচিত প্রমাণ্য গ্রন্থ। এছাড়া পি. কে. হিট্টির ‘আরব জাতীর ইতিহাস’ ইসলামের ইতিহাসের পাঠকদের কাছে তথ্যবহুলও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত। গ্রন্থকার এই তিনটি গ্রন্থের ভিত্তিতে আরব তথা ইসলামের ইতিহাসকে ছয়টি পূর্বে বিন্যাশ করেছে। প্রথম পর্ব : ইসলামের আবির্ভাবের পটভূমি, দ্বিতীয় পর্ব : হযরত মুহাম্মদের (স) মক্কা জীবন, তৃতীয় পর্ব : হযরত মুহাম্মদের (স) মদিনা জীবন, চতুর্থ পর্ব : খোলাফায়ে রাশেদূন, পঞ্চম পর্ব : উমাইয়া রাজবংশ, ষষ্ঠ পর্ব : আব্বাসীয় সাম্রাজ্য। গ্রন্থের প্রথম পরিশিষ্টে হুয়ার্ট রচিত “The Hundred” এ হযরত মুহাম্মদের (স) জীবনী সম্পর্কে লিখিত প্রবন্ধটির মূল ইংরেজীসহ বাংলা তর্জমা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পরিশিষ্টে হযরত মুহাম্মদের (স) সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীদের উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রন্থকার তাঁর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের শিক্ষকতা, গবেষণা ও প্রকাশনার অভিজ্ঞাতার ভিত্তিতে আরব জাতীর ইতিহাস একটি তত্ত্ব ও তথ্যবহুল, সর্বাধুনিক, প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে রচনার প্রয়াস পান। এটি তার প্রকাশনার ক্ষেত্রে একটি break through’ এবং মাইল ফলক বলা যেতে পারে। আশা করা যায় ছাত্র-ছাত্রী মহল ব্যতীত সুশীল সমাজের সুধী মন্ডলীর সজাগ দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে গ্রন্থকার আশা করেন। রেফারেন্স গ্রন্থ হিসেবে এই রচনাটি স্বীকৃতি পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
‘আরব জাতীর ইতিহাস’ একটি mega publication। এ কারণ বহু চিত্র সম্বলিত ৪৪ ফর্মার গ্রন্থ প্রকাশনা যে কোন প্রকাশকের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। তবে নভেল পাবলিশিং হাউস এই দুঃসাহসিক কাজে হাত দিয়েছেন। আমি কর্তৃপক্ষকে মোবারকবাদ জানাই এবং তাদের প্রচেষ্টা সর্বাঙ্গীনভাবে সফল ও সার্থক হোক এবং গ্রন্থটি সকল মহলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাদৃত হোক এ কামনা করি
সৈয়দ মাহমুদুল হাসান
ঢাকা ফেব্রুয়ারি ২০০৬ (একুশে গ্রন্থমেলা)
প্রকাশকের অভিমত
পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হবে যে গ্রীক ও রোমান সাম্রাজ্য ব্যতীত আরব জাতীর উত্থান ক্রমবিকাশ ও ব্যাপক সমৃদ্ধি অপর কোন জাতীর মধ্যে লক্ষ্য করা যায় নি। সপ্তম শতাব্দীতে মদিনায় প্রতিষ্ঠিত মদিনা রাষ্ট্র এক শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিশাল অঞ্চলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রসারতা লাভ করে। ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হচ্ছে আব্বাসীয় খিলাফত, যা ৭৫০ থেকে ১২৫৮ সাল অর্থাৎ ৫০৮ বছর পর্যন্ত আরব আধ্যুসিত অঞ্চলে শাসন করে মুসলিম সমাজ অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও সভ্যতার এক উজ্জ্বল মাইল ফলকের সৃষ্টি করেছে যার প্রভাব ইউরোপেও অনুভূত হয়। বাগদাদের বাইতুল হিকমা, নিয়ামিয়া ও মুসতিনেসা রিয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান চর্চার শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। স্থাপত্যকলা, লিপিকলা, চিত্রকলা, কারুশিল্প, সঙ্গীত, ইতিহাস, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানগণ অবদান রাখে।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠিত ও প্রবীণ লেখক। ইসলামী বিষয়ক তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাশের কাছাকাছি। জীবনের সায়হ্নে এসে তিনি তিনজন প্রখ্যাত ঐতিহাসিকের প্রখ্যাত গ্রন্থাবলির উপর ভিত্তি করে পূর্ণাঙ্গ সর্বাধুনিক প্রমাণ্য রেফারেন্স গ্রন্থ প্রণয়নের পরিকল্পনা করেন ভবিষ্যতের গবেষকদের সাহায্যার্থে। এই তিনজন প্রথিতযশা লেখক হচ্ছেন : স্যার সৈয়দ আমীর আলী। পি. কে. হিট্টি এবং ডব্লিউ মন্টোগোমারী ওয়াট। আমীর আলীর এ শর্ট হিস্ট্রি অব দি স্যারাসিনস্ গ্রন্থটি ‘খুবই দরদ দিয়ে লিখে প্রাচীন মুসলিম ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করেন। ড. ওসমান গণী এই গ্রন্থের বাংলা অনুবাদের ভূমিকায় বলেন, বস্তুত আত্মবিস্তৃত মুসলিম সম্প্রদায়ের সামনে ইসলামের গৌরবময় ঐতিহ্য উপস্থাপন করে স্যার সৈয়দ আমীর আলী তাদের ম্রিয়মান মানসিকতায় এক গননচুম্বী প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞা জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। পি. কে. হিট্টি একজন প্রখ্যাত আমেরিকান ইসলাম বিশেষজ্ঞ ঐতিহাসিক ছিলেন যার সার্বজনীনতার স্বীকৃতি এসেছে ‘হিস্ট্রি অব দি আরব’ শীর্ষক গ্রন্থ রচনায়। তৃতীয় প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ লেখক ড. এম. ওয়ার্ট “ইবন ইসহাক, ইবন হিশাম ইবন সা’দ তাবারী ওয়াকীদীর উপর ভিত্তি করে নবী করীমের (স) জীবনচরিত দুইখণ্ডে রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। লেখক ড. হাসান তাঁর ‘মুহাম্মদ এ্যাট মক্কা’ গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেন (মল্লিক ব্রাদার্স)।
মুখবন্ধে লেখক বলেন, “ইউরোপীয় খ্রিস্টান ঐতিহাসিক ও প্রাচ্যতত্ত্ববিদদের মধ্যে একমাত্র ওয়াট ‘ইবন ইসহাক’ মুহাম্মদ (স)-এর জীবন চরিত (মক্কা পর্ব) বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও তত্ত্ববহুল পদ্ধতিতে …….. ঘটনাবলি যে মৌলিক উপাদানের ভিত্তিতে বর্ণনা করেছেন তার বিবরণ বিশ্বাসযোগ্য (authentre) ও প্রামাণ্য লেখক বর্তমান গ্রন্থে মন্টোগোমারী ওয়াটের মুহাম্মদ এ্যাট মদিনা’ বাংলা তরজমা করে সন্নিবেষিত করেন।
ড. হাসানের আরব জাতীর ইতিহাস ইসলামী মূল্যবোধ জাগরণে বাংলাদেশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি। ‘রেডি রেফারেন্স’ হিসেবে ছাত্ৰ-ছাত্ৰীগণ এর উপকারিতা পাবেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। সুশীল সমাজের সচেতন ও প্রগতিবাদী ইসলাম পন্থীরা গ্রন্থটিকে মর্যাদা দিবেন এবং বাংলাদেশের ইসলামী মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সাময়িক ক্রান্তিলগ্নে গ্রন্থটি প্রকৃত ইসলামী স্পিরিট জাগরিত করবে বলে আমরা মনে করি। গ্রন্থটি প্রণয়নের জন্য গ্রন্থকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
প্রকাশক
Leave a Reply