আরব কন্যার আর্তনাদ – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
আরব কন্যার আর্তনাদ – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ। রূপান্তর – শহীদুল ইসলাম
উৎসর্গ
মুহাম্মদ বিন কাসিমের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজও যারা পৌত্তলিক শাসকদের শোষণ নিপীড়নের নাগপাশ থেকে মুসলমানদের মুক্তি দিতে অবিরাম জিহাদ করে যাচ্ছেন এবং দেশে দেশে আগ্রাসী বেঈমানদের উৎখাত করতে জীবনপণ লড়াই করছেন তাদের সাফল্য কামনায়।
অনুবাদকের কথা
সিন্ধু বিজয়ী মুহাম্মদ বিন কাসিম-এর নাম জানেন না এমন শিক্ষিত লোক কমই রয়েছেন। ইতিহাসের পাঠক মাত্রই এই মহানায়কের সাথে কমবেশি পরিচিত। পরিতাপের বিষয় হলো, সতের বছর বয়সী অনন্য এই মহানায়কের কীর্তি-কর্ম, বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী এবং তার ভারত অভিযানের প্রেক্ষিত-প্রেক্ষাপটের প্রকৃত চিত্র।
না আছে একক কোনো ইতিহাস গ্রন্থে, না আছে উপন্যাসে। উপন্যাস ও গল্প লেখকগণ প্রধান কয়েকটি চরিত্র, বিশেষ স্থান, ক্ষেত্র ও ঘটনার উল্লেখ করে গল্পকে হৃদয়গ্রাহী করার জন্য যতটুকু নাট্যরূপ দেয়ার দরকার তাই করেছেন। ইতিহাস ও চরিত্রের বস্তুনিষ্ঠতা অক্ষুন্ন রাখার প্রতি মোটেও মনোযোগী হননি। যার ফলে বাংলা ভাষায় মুহাম্মদ বিন কাসিম ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রথম বিজয়ী মুসলিম সেনাপতি পরিচয়ে পরিচিত হয়েছেন। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ তৎকালীন সিন্ধু রাজা দাহির ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদির প্রকৃত চিত্র এসব রচনায় ফুটে ওঠেনি।
ইতিহাস গবেষক, শিকড় সন্ধানী ঔপন্যাসিক এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ পূর্বাপর সকল ঐতিহাসিকের বিশুদ্ধ রচনাবলী মন্থন করে মুহাম্মদ বিন কাসিম-এর ওপর। রচিত উপন্যাসগুলোর বিকৃতি দূর করার জন্য উর্দু ভাষায় মুহাম্মদ বিন কাসিম-এর জীবনকে কেন্দ্র করে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসভিত্তিক যে রচনাটি উপস্থাপন করেন এর নাম “সিতাঁরা জো টোট গায়া”।
বাংলা ভাষাভাষী পাঠককুল বিশেষ করে উপন্যাস ও গল্পপ্রেমী নবীনদেরকে ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বস্তুনিষ্ঠতার বিচারে মানোত্তীর্ণ এ গ্রন্থটি পেয়েই অনুবাদের কাজ শুরু করি। বন্ধুবর আরিফ ভাই-এর আগ্রহ ও অনুরোধে শত ব্যস্ততার মাঝেও আগাগোড়া সবটুকু পাণ্ডুলিপি নতুন করে দেখে দিতে হয়েছে। এ উপন্যাস আপনাকে নিয়ে যাবে প্রায় তেরশো বছর আগের ঝা-বিক্ষুব্ধ আরব সাগরের তীরবর্তী সিন্ধু অববাহিকায়, বসরা, বাগদাদ ও ইরাকে।
আপনার চোখে ভেসে উঠবে সে সময়কার ইরাক, ভারতের হিন্দু রাজাদের শঠতা, পুরোহিতদের মুসলিম বিদ্বেষ আর মুসলিম মুজাহিদদের আত্মত্যাগের মূর্তিমান চিত্র। পৌত্তলিকতার নর্দমায় নিমজ্জমান বাঙালি মুসলিমদের ঘুণে চেতনায় ক্ষণিকের জন্য হলেও ঝিলিক দেবে ঈমানের জ্যোতি। কুফরীর সাথে বাঙালি মুসলিমদের অনাহুত মিতালীর প্রশ্নে একটু হলেও সম্বিত ফেরাবে। গ্রন্থটি উপভোগ্য ও পাঠ উপযোগী করার চেষ্টা করেছি। এরপরও হয়তো অনেক ভুল-ত্রুটি রয়ে গেছে। আশা করি পাঠকবৃন্দ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আমাদের অবহিত করবেন।
প্রকাশকের কথা
সকল প্রশংসা মহান রাব্বল আলামীনের। ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিশ্বত নবীন প্রজন্মকে শিকড়ের সাথে পরিচয় ও ইতিহাস অনুসন্ধানে আগ্রহ তৈরির লক্ষ্যে আমরা উপমহাদেশের খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ রচিত মুহাম্মদ বিন কাসিম-এর ভারত অভিযান সম্পর্কিত উপন্যাস-এর বাংলা অনুবাদ “আরব কন্যার আর্তনাদ” নামে পাঠকমহলের হাতে তুলে দিতে পেরে মহান রাব্বল আলামীনের শোকর আদায় করছি।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য সচেতন ঔপন্যাসিক এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ বর্তমান যুগের পাঠকদের মানসিকতা অনুধাবন করে গল্পকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যা থেকে পাঠকগণ উপন্যাসের স্বাদ যেমন অনুভব করবেন তেমনিভাবে মুহাম্মদ বিন কাসিমের ভারত অভিযানের প্রেক্ষাপট, গুরুত্ব ও তৎকালীন পৌত্তলিক ভারতের চিত্র এবং শাসকদের হাতে অগণিত বনি আদমের অমানবিক জীবনযাপনের ইতিবৃত্ত জানতে পারবেন। ঐতিহ্যের পথে ‘আকিক পাবলিকেশন্স’-এর প্রকাশনায় এটি আরেকটি নান্দনিক সংযোজন বলে আমরা মনে করি।
“আরব কন্যার আর্তনাদ” পাঠকমহলের কাছে সমাদৃত হলে আমাদের শ্রম ও সাধনা সার্থক হবে। অনূদিত গ্রন্থটি সর্বাঙ্গীণ সুন্দর, নির্ভুল ও সাবলীল করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। তবুও যদি কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় আমাদের অবহিত করলে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের প্রতিশ্রুতি রইল। মেহেরবান মালিক এদেশের সকল মুসলমান এবং এই গ্রন্থের লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুনরাঙ্গা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ে বলীয়ান হয়ে জমিনের বুকে আল্লাহর সত্যিকার প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের গঠন করার সক্ষমতা দান করুন, আরব কন্যার আর্তনাদ’-এর প্রকাশনা লগ্নে মহান রাব্বল আলামীনের কাছে আমাদের এই প্রার্থনা। আমীন।
প্রকাশক
সার সংক্ষেপ
সিন্ধু উপকূলের নৌডাকাতরা আরবদের সর্বস্ব লুটে নিল। নারী শিশুসহ বন্দি করল সবাইকে।
নির্যাতিতা এক আরব কন্যার আর্তনাদ ও উদ্ধারের আবেদন নিয়ে হাজ্জাজের কাছে রওয়ানা হলো এক অভিযাত্রী। লুটেরাদের ধুষ্টতায় আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলে উঠলেন জাতাভিমাণী হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। শপথ নিলেন তিনি। যে করেই হোক নিরপরাধ মুসলিম নারী, শিশু ও অমুসলিম পর্যটকদে উপর পৈশাচিক অত্যাচাড়ের জন্য রাজা দাহিরকে উচিত শিক্ষা দেবেন।
এক স্বজাতি কন্যার সম্ভ্রম রক্ষা আর নির্যাতিতদের উদ্ধারে হাজ্জাজের সহযোগি হলো বসরা। বাগদাদ তথা ইরাকের হাজার হাজার যুবক, কিন্তু বাধ সাধলেন আয়েশী খলিফা। অথৈ সাগর, বিস্তর দুরত্ব, দুর্গম অচেনা, অজানা পথ আর খলিফা ওয়ালিদ বিন মালিকের বিরোধিতা সত্ত্বেও অত্যাচারী সিন্ধুরাজের বিরুদ্ধে শুরু হলো লোমহর্ষক অভিযান…।
কিন্তু অপরিচিত সিন্ধু উপকুল ও ভারতের বিশাল শক্তি কাছে পরপর ব্যর্থ হলো দুটি অভিযান। শাহাদাত বরণ করলেন সেনাপতিসহ শতশত মুজাহিদ।
অবশেষে মাত্র সতের বছর বয়সী মুহাম্মদ বিন কাসিমকে অপরাজেয় সিন্ধুরাজের বিরুদ্ধে পাঠালেন হাজ্জাজ। বিপুল শক্তির অধিকারী সিন্ধুরাজের বিরুদ্ধে এক কিশোর সেনাপতি…।
নির্বাক চিত্রে ও দৃঢ়পদে, বিজয়ের কঠিন সংকল্প নিয়ে শুরু হলো বিন কাসিমের ভারত অভিযান….কিন্তু কিভাবে? আসুন! এই শ্বাসরুদ্ধকর উপাখ্যানের ভিতরে প্রবেশ করি…।
Leave a Reply