আমি সরদার বলছি – সরদার ফজলুল করিম
.
উৎসর্গ
আফসানা করিম স্বাতী
.
প্রকাশকের নিবেদন
বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ সরদার ফজলুল করিম। এ দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের অন্যতম পৃথিকৃত। জ্ঞান-পিপাসু বিপবী এই শিক্ষাবিদ নানা অর্থেই এক অসামান্য চরিত্র। তাঁর জীবনের প্রতিটা অধ্যায়ই বৈচিত্রে ভরপুর। যখন যা মনে হয়েছে তখন তিনি সেভাবেই চলেছেন। মনে লালিত আদর্শকে কখনো বিসর্জন দেননি বরং প্রতিনিয়ত তাকে আরো দৃঢ় করেছেন। বৈপবিক আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে চাকরি ছেড়েছেন, জীবনের সকল চাওয়া পাওয়াকে তুচ্ছ করে আজীবন জড়িয়ে থেকেছেন আন্দোলন-সংগ্রামে। মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে, সমাজ থেকে উঁচু-নিচু বৈষম্য দূর করতে এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন করতে রাজপথে লড়েছেন। চারবার কারাবন্দী হয়ে ১১টি বছর বন্দী অবস্থায় ছিলেন। এ দেশের সকল প্রতিকূল অবস্থায় দেশের হাল ধরেছেন।
সরদার ফজলুল করিম একধারে বাংলা একডেমীতে চাকরি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন। এরপর কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরি ছেড়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে কাজ শুরু করেন। সে এক বিপুল বৈচিত্রে ভরা জীবন। তাঁর চিন্তা আর জীবনযাপন ছিল একই সুতোয় গাঁথা। বিলাসবিবর্জিত একটি সুন্দর জীবন, নানা সমস্যাসংকুল অবস্থায় কাটিয়েছেন তিনি। তবুও জীবন নিয়ে তাঁর কোনো আক্ষেপ বা অপ্রাপ্তি নেই। বরং মনে করেন, তাঁর জীবনের পুরোটাই লাভ। সরদারের জীবনের খতিয়ান থেকেই বুঝে নিতে পারা যায় তিনি কোন পক্ষের মানুষ। নিজের বিদ্যা ও বুদ্ধিকে পণ্যময় করে তোলার প্রচেষ্টা থেকে সবসময়ই বিরত থেকেছেন। কারণ তিনি যে-দর্শনে বিশ্বাসী তা শুধু ‘উন্মাদের ভবিষ্যদ্বাণী বা দুর্বলচিত্তের আত্মসান্ত্বনা’ নয়। তিনি সত্যি-সত্যিই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, জীবন মাত্র একটা : লড়াইয়ের হোক সে জীবন’! দীর্ঘদিন লড়াকু জীবন কাটিয়ে শরীরে যখন ভাটা পড়ল তখন লেখালেখিকে নিলেন লড়াই-সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে। এ দেশের সংবাদিকতা এবং লেখালেখিতে একটি বিশাল জায়গা দখল করে আছেন তিনি। দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন প্রচুর। এই বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের মানুষকে আপন করে নেয়ার অমৃতকথা আমরা তাঁর রচনায় বারবার দেখতে পাই। তাঁর রচনায় শুধু নয়, ব্যক্তিগত জীবন-যাপনের মধ্যেও এ-ব্যাপারটি কত বিচিত্রভাবেই না সত্যি হয়ে উঠেছে। আমি সরদার বলছি সরদার ফজলুল করিমের আত্মজীবনীমূলক একটি গ্রন্থ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। তার অনুমতি নিয়ে গত দুই বছর ধরে অন্বেষা প্রকাশন বইটি প্রকাশের ব্যাপারে কাজ করছে। আমাদের ইচ্ছে ছিল গত বছর বইটি প্রকাশ করার, কিন্তু তার ‘প্রবন্ধ সমগ্র প্রকাশ করতে গিয়ে এবং আরো কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে হয়ে ওঠেনি।
উক্ত গ্রন্থ সরদার ফজলুল করিমের স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনমূলক তিনটি গ্রন্থের সংকলন। সেই সে কাল কিছু স্মৃতি কিছু কথা, বরিশালের পোলার ঢাকা আগমন, জীবন জয়ী হবে–এই তিনটি গ্রন্থ নিয়ে আমি সরদার বলছি’। এতে উঠে এসেছে তার শৈশব-কৈশোর, যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠা, বরিশাল থেকে রাজধানী ঢাকায় আগমণ, দেশবরেণ্য ব্যাক্তিবর্গের সঙ্গে তাঁর নানা স্মৃতি, আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির কথা, আন্দোলন-সংগ্রাম, বন্দীজীবনসহ বৈচিত্র-বৈভবে পরিপূর্ণ একটি জীবনের নানা কথা। বলা যেতে পারে, এটি তার বর্ণাঢ্য জীবনের আখ্যান। গ্রন্থের প্রতিটি অধ্যায় এতই বৈচিত্রে ভরা, পাঠকের মনে হবে, যেন কোনো মহাজীবন-ভিত্তিক কাহিনী পাঠ করছেন। সেই কাহিনী থেকে পাঠক সমৃদ্ধ হবেন, আহরণ করতে পারবেন জীবন, জীবন-উপভোগের, জীবনের আদর্শের নানা সূত্র। পাঠক বুঝতে পারবেন, সরদার ফজলুল করিম জীবনকে কীভাবে দেখেছেন। পাবেন মানুষের জন্য উপভোগ্য একটি জীবনের সন্ধান।
এ অসামান্য গ্রন্থটি অন্বেষা প্রকাশন থেকে প্রকাশের অনুমতি দেয়ায় আমরা সরদার ফজলুল করিমের কাছে কৃতজ্ঞ। পাঠকের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। মনীষী সরদার ফজলুল করিম তাঁর এই গ্রন্থের মধ্য দিয়ে দিয়ে যে আদর্শিক মহাজীবনের কথা বলেছেন, আমাদের প্রত্যেকের জীবন ধাবিত হোক সেদিকে।
–শাহাদাত হোসেন
প্রকাশক
.
লেখক পরিচিতি : সরদার ফজলুল করিম জন্ম ১৯২৫ সালের পহেলা মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে। বাবা খবিরউদ্দিন সরদার। মা সা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম,এ, ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। সরদার ফজলুল করিম ছাত্রজীবন থেকেই শোষণমুক্ত মানবতাবাদী একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন জীবনের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে একের পর এক লড়াই করেছেন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বছর তিনি কারাভোগ করেন। ১৯৫৪ সালে জেলে থাকাকালে সরদার সাহেব পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৩-১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষের পদে কাজ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সরদার ফজলুল করিম ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে প্লেটোর সংলাপ, প্লেটোর রিপাবলিক, অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স, এঙ্গেলসের অ্যান্টি ডুরিং, রুশের সোস্যাল কন্ট্রাক্ট, নানা কথার পরের কথা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, চল্লিশের দশকের ঢাকা, নূহের কিশতি, রুমীর আম্মা, দর্শনকোষ, শহীদ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা স্মারকগ্রন্থ ও সেই সে কাল। সৃজনশীল লেখক হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার পদকে ভূষিত হন। শিক্ষা ক্ষেত্রে তার গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সরদার ফজলুল করিমকে “স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ২০০০’ প্রদান করা হয়। Now he is a national proffesore in our country.
বিশিষ্ট চিন্তাবিদ সরদার ফজলল করিম বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক। আন্দোলনের অন্যতম পূথিকৃত। অজ্ঞান-পিপাসু এই বিপুবী মানুষটি নানা অর্থেই এক অসামান্য চরিত্র। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই বৈচিত্রে ভরপুর। বৈপ্লবিক আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে চাকরি ছেড়েছেন, জীবনের সকল চাওয়া পাওয়াকে তুচ্ছ করে আজীবন জড়িয়ে থেকেছেন আন্দোলন-সংগ্রামে। চারবার কারাবন্দী হয়ে ১১টি বছর বন্দী অবস্থায় ছিলেন। দীর্ঘদিন লড়াকুজীবন কাটিয়ে লেখালেখিকে নিলেন লড়াই-সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে। দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন প্রচুর। এই দেশকে আপন করে নেয়ার অমৃতকথা আমরা তার রচনায় পাই। আমি সরদার বলছি সরদার ফজলুল করিমের আত্মজীবনীমূলক একটি গ্রন্থ। এতে ওঠে এসেছে তার শৈশব কৈশোর, যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠা, বরিশাল থেকে রাজধানী ঢাকায় আগমণ, দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তার নানা স্মৃতি, আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির কথা, আন্দোলন-সংগ্রাম, বন্দী জীবনসহ বৈচিত্র-বৈভবে পরিপূর্ণ একটি জীবনের নানা কথা।
গ্রন্থের প্রতিটি অধ্যায় এতই বৈচিত্রে ভরা, পাঠকের মনে হবে, যেন কোনো মহাজীবন-ভিত্তিক কাহিনী পাঠ করছেন। সেই কাহিনী থেকে পাঠক সমৃদ্ধ হবেন, আহরণ করতে পারবেন জীবন, জীবন উপভোগের, জীবনের আদর্শের নানা সূত্র। পাঠক বুঝতে পারবেন, সরদার ফজলুল করিম জীবনকে কীভাবে দেখেছেন। পাবেন মানুষের জুমা উপভোগ্য একটি জীবনের সন্ধান।
.
Leave a Reply