আমার বোকা শৈশব – আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি বইমেলা ২০১০
প্রকাশক – ফরিদ আহমেদ, সময় প্রকাশন
প্রচ্ছদ – ধ্রুব এষ
.
উৎসর্গ
ছেলেবেলায় হারানো
মা
বেগম করিমউন্নিসা
আমার সারা জীবনের কষ্ট
.
ভূমিকা
ছেলেবেলার গল্প নিয়ে আমার একটা বই আছে—নাম ‘বহে জলবতী ধারা’। বইটা আমি যখন লিখি তখন আমার বয়স তেষট্টি বছর। তখন মোটামুটি বৃদ্ধই আমি। কাজেই ছেলেবেলার গল্প নিয়ে লিখলেও বইটা শুধু একটি শিশুর রচনা হয়নি, হয়েছে একজন বুড়ো ও একজন শিশু—দুজনের মিলিত লেখা। শিশুর জীবনের অসহায়তা, বোকামি, লোভ, উৎসাহ, স্বপ্ন বা দস্যিপনার সঙ্গে সেখানে জড়িয়ে রয়েছে প্রবীণ মানুষটির পরিণত চাউনি, যে কেবল গল্পটা বলেই শেষ করতে চায় না, সেই সঙ্গে জীবনের পটভূমিতে তার একটা মনমতো ব্যাখ্যাও দিতে চায়।
বড়দের কাছে এই ব্যাখ্যাগুলো খারাপ লাগে না। এগুলোর মধ্যে দূর অতীতে ফেলে আসা নিজেদের অর্থহীন আর আনন্দময় শৈশবের একটা সন্তোষজনক অর্থ ও তারা হয়ত খুঁজে পায়। কিন্তু শিশুরা যখন বইটা পড়ে তখন তারা কিন্তু এই ব্যাখ্যার জায়গাগুলো ঠিকমতো বুঝতে পারে না। এগুলো তাদের কাছে ভারী, অযথা এবং অনেক সময় দুরূহ ঠেকে। এর কারণ আছে। শৈশব নিয়ে লেখা বইয়ে শিশুরা শৈশবের নির্জলা গল্পটুকুই শুধু শুনতে চায়, এর স্বপ্ন, আনন্দ, কল্পনা আর মজাটুকুই কেবল পেতে চায়। এর উটকো দার্শনিক ভার ওদের অপছন্দ। শিশুরা পৃথিবীতে নতুন এসেছে। মানুষের মধ্যে কেবল তারাই অতীতবিহীন। জরা, ক্ষয় বা কষ্টের প্রহার এখনও তাদের হাড় গুঁড়িয়ে দেয়নি। কাজেই জীবনের ভারী ভারী অভিজ্ঞতা বা তত্ত্বব্যাখ্যা তারা শুনতে নারাজ। তারা চায় তরতাজা জীবনের সোজাসাপটা গল্প। চেতনা জগতের উপলব্ধি নয়, ইন্দ্রিয়ের পঞ্চপ্রদীপ-জ্বলা জীবনের রূপগন্ধময় আস্বাদ। এইসব সাতপাঁচ ভেবে বইটি প্রকাশের পরপরই এর একটি কিশোর সংস্করণ বের করার কথা মনে হয়েছিল। এবার সেটা বের করার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে মূল বইয়ের সেটুকুই শুধু রাখা হল যেটুকু কিশোর-কিশোরীদের আনন্দ দেবে—যার মধ্যে তারা নিজেদের জীবনের বাস্তব সুখদুঃখের গল্প খুঁজে পাবে।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
১.২.০৯
Leave a Reply