আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর – আবুল মনসুর আহমদ
লেখক সম্পর্কে দুটি কথা
মরহুম আবুল মনসুর আহমদ-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠকীর্তি ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইয়ের সপ্তম সংস্করণ প্রকাশনা উপলক্ষ্যে কয়েকটি কথা বলতে হয়।
আবুল মনসুর আহমদ-এর দীর্ঘ আশি বছরের জীবনে তিনি ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। সাহিত্যের সেই দিকটা তিনি বেছে নিয়েছিলেন যেটা ছিল সবচেয়ে কঠিন–ব্যঙ্গ-সাহিত্য। সাহিত্যের অন্যান্য আঙ্গিনায়ও স্বচ্ছন্দ্যে পদচারণা করেছেন তিনি। যে অঙ্গনেই তিনি কাজ করেছেন সেখানেই শীর্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ব্যঙ্গ-সাহিত্য বলতে গেলে উভয় বাংলায় তিনিই ছিলেন অদ্বিতীয়। তাঁর প্রতিটি স্যাটায়ারই কালোত্তীর্ণ। সমাজপতি, ধর্মগুরু, রাষ্ট্রপতি, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী যেখানেই তিনি কোন দুর্নীতির সন্ধান পেয়েছেন সেখানেই করেছেন কশাঘাত। তাঁর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের রসাঘাত কশাঘাতে রূপ নিয়ে সমাজকে পরিশোধিত করত। এ আঘাত ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ আচার অনুষ্ঠানকেই আক্রমণ করেনি–যারা এসব প্রসঙ্গ নিয়ে মিথ্যার জাল বুনন করতেন তাদেরকেও তিনি নাস্তানাবুদ করেছেন। এসব রচনার পাঠকদের মনে হবে চরিত্রগুলো সবই চেনা। এদের কার্যকলাপও জানা।
‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ তার দীর্ঘজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার ফসল। যারা এদেশে রাজনীতি করতে আগ্রহী তাদের সকলের জন্যে এই বইটি অবশ্য পাঠ্য। এতে রয়েছে এদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস। দেশীয় রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্র অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে হলে এর সঙ্গে আরও পড়তে হবে তার লেখা ‘বাংলাদেশের কালচার’, ‘শেরে বাংলা থেকে বঙ্গবন্ধু’, ‘বেশি দামে কেনা কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা’ ইত্যাদি বইগুলো।
‘রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ একজাতীয় স্মৃতিকথা আত্মজীবনী। রাজনীতির স্মৃতি এতে স্থান পেয়েছে। সাহিত্য, সাংবাদিকতা, ওকালতি ইত্যাদি কর্মজীবনের বহুমুখী স্মৃতি নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘আত্মকথা। এসবের একত্রে মিশ্রণ ঘটেছে বিশালাকারের ইংরাজি গ্রন্থ ‘End of a Betrayal’। ইংরেজি উপন্যাস সাহিত্যে তাঁর দুটি অমর কীর্তি ‘জীবন ক্ষুধা’ ও ‘আবেহায়াত’।
রাজনীতিতে বিভিন্ন সময়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য দফতরসমূহের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং পাকিস্তানের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরসমূহের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। সাহিত্য সম্পর্কে এটুকু বলাই যথেষ্ট হবে যে, রসসাহিত্যে আজ পর্যন্ত উভয় বাংলার কেউ তার প্রতিভার সমকক্ষ এমনকি কাছাকাছিও আসতে পারেননি। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি বিস্ময়কর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। কলকাতার খাদেম, সুলতান, দি মুসলমান, মোহাম্মদী প্রভৃতি সাপ্তাহিক ও দৈনিক কৃষক, নবযুগ ও ইত্তেহাদের সম্পাদনাকালে তিনি অনেক ক্ষণজন্মা সাংবাদিক ও সম্পাদকের গুরু, প্রশিক্ষণদাতা ছিলেন। কাজী মোহাম্মদ ইদরিস, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, রশীদ করিম, আহসান হাবিব, ফররুখ আহমদ, খোন্দকার আবদুল হামিদ, রোকনুজ্জামান খান, কে. জি. মুস্তাফা প্রমুখ ব্যক্তিগণ কোন না কোন সময়ে তার সহকর্মী ছিলেন।
এসব অভিজ্ঞতার মধ্যে খ্যাতি, যশ, সম্মান যেমন ছিল তেমনি ছিল সামরিক শাসনকালের কারাযন্ত্রণা। সে কারণেই তিনি আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর লিখেছেন। ‘শোনা’ বা ‘পড়া নয়’। বিশাল ও বিস্তৃত কর্মজীবনে তিনি মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, সৈয়দ নওশের আলী, খাজা নাজিমুদ্দিন, মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মিঞা ইফতেখারউদ্দিন, মিঞা মাহমুদ আলী কাসুরী, জি. এম. সৈয়দ, মিঞা মমতাজ দৌলতানা, আবুল হাশিম প্রমুখের সংস্পর্শে আসেন এবং ব্রিটিশ ভারত ও পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাঁর ছিল ব্যক্তিগত পরিচয় ও গভীর হৃদ্যতার সম্পর্ক। নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল ‘তুমি তুমি’ পর্যায়ের। জাতীয় কবি নজরুলের সঙ্গে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সগৌরবে লেখককে লীডার বলতেন এবং নিজেকে তাঁর শিষ্য বলতেন সেই কলকাতার কলেজ জীবন থেকেই।
তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।
এদেশে রাজনীতি করেছেন অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্য চর্চা করেছেন অনেক মহীরূহ। সাংবাদিকতা করেছেন অনেক তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি। কিন্তু এসবের সমারোহ ঘটাতে পেরেছেন কয়জন?
সে হিসেবে আবুল মনসুর আহমদ এক ও অদ্বিতীয়।
— মহবুব আনাম
.
বিনীত আরয
পাক-ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ মরহুম আবুল মনসুর আহমদ-এর ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইখানির ষষ্ঠ সংস্করণ প্রকাশিত হইল।
লেখক আজ জীবিত নাই। কিন্তু তাহার দুর্লভ সাহিত্যকর্ম জাতির সামনে চিরদিন তাহাকে স্মরণীয় করিয়া রাখিবে।
এখন যাহারা রাজনীতি করিতেছেন এবং ভবিষ্যতে যাহারা রাজনীতির মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় নিজদিগকে উৎসর্গ করিবার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োজিত রহিয়াছেন তাহাদের সকলের জন্য আবুল মনসুর আহমদ-এর ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইখানি দিগ-দর্শন হিসাবে কাজ করিবে বলিয়া আমার বিশ্বাস।
আবুল মনসুর আহমদ-এর ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর উদীয়মান প্রজন্মের সামনে একটি জীবন্ত ইতিহাস। মূলত ইহা শুধু একখানি গ্রন্থ নয়–ইহা একটি জাতির জীবন্ত ইতিহাস বা রাজনৈতিক দলিল (পলিটিক্যাল ডকুমেন্ট)। এই ডকুমেন্ট দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং মাস্টার্স শ্রেণীতে অবশ্য পাঠ্য থাকা উচিত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য জাতির, যাঁহারা কর্ণধার তাঁহারা এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ আজ পর্যন্ত গ্রহণ করেন নাই।
সাধারণভাবে প্রকাশক হিসাবে নয়– দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে মরহুম আবুল মনসুর আহমদ-এর ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ অর্থাৎ এই মূল্যবান পলিটিক্যাল ডকুমেন্ট আহরণের জন্য আমি আজ দেশের ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের রাজনীতিবিদগণের নিকট জানাইতেছি বিনীত আর।
— মহীউদ্দীন আহমদ
ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫
.
পঞ্চম সংস্করণের ভূমিকা
ছাত্রাবস্থা হইতেই সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী এবং স্যার সৈয়দ আহমদ-এর একজন অনুসারী হিসাবে একটি বিশেষ রাজনৈতিক চিন্তা এবং আদর্শে বিশ্বাসী হইয়া আমার জীবন গড়িয়া উঠিয়াছে।
মরহুম আবুল মনসুর আহমদ-এর ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইখানিতে আমার আজীবনের লালিত স্বপ্ন এবং সেই চিন্তা ও আদর্শের প্রতিচ্ছবি রহিয়াছে।
এই ঐতিহাসিক বইখানি ছাপাইবার জন্য অনেক প্রকাশক লালায়িত আছেন। আমি জানি তাহাদের সেই লালসা শুধু আর্থিক কারণে রাজনৈতিক বা জাতীয় কোন উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে নহে। কিন্তু এই বইখানি ছাপাইবার পিছনে আমার লালসা–আদর্শের, অর্থের নহে।
বইখানির লেখক মরহুম আবুল মনসুর আহমদ আমার মনের গভীরের সেই চিন্তা ও আদর্শের সন্ধান পাইয়াছিলেন এবং সেই কারণেই জীবদ্দশায় তিনি কখনই তাহার এই অমূল্য বইখানি প্রকাশনার সুযোগ হইতে আমাকে বঞ্চিত করেন নাই।
তাহার ইনতেকালের পর সময়ের বিবর্তনে সাময়িক পরিবর্তন হইলেও তাহার সুযোগ্য পুত্র এককালের সংগ্রামী ছাত্রনেতা, প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক, দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক এবং দেশের সর্বাধিক প্রচারিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার কলামিস্ট ভ্রাতৃপ্রতিম জনাব মহবুব আনাম তাহার সুযোগ্য পিতার মনের খবর জানিতেন বলিয়াই এই ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ প্রকাশনার দায়িত্ব এখনও পর্যন্ত আমার উপরেই রাখিয়াছেন।
জনাব মহবুব আনাম ইচ্ছা করিলে বইখানি প্রকাশনার দায়িত্ব অন্যকে দিয়া প্রচুর অর্থ পাইতে পারেন কিন্তু তিনি তাহা করেন নাই– তাহার এই উদারতা ও মহানুভবতার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ।
–
প্রকাশক
১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯
Swadesh Chandra Nath
আমি এই ওয়েবসাইটে প্রায় নয় দশটি বৈ পড়েছি। ওয়েবসাইট ভালো অনেক। কিন্তু আমার মনে হয় আপনাদের ওয়েবসাইট টা আর ও করা প্রয়োজন। এখানে হয়তোবা একজন লেখক কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মাত্র একটি গল্প বা কবিতা দিয়ে। আমার মনে হয় তাদের লেখা আরও বেশি পরিমাণে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আর লেখকের সঙখ্যাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন আর কিছু ভালো লেখকের ভালো ভালো লেখা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আমি কিছু বৈ প্রস্তাব দিতে পারি। মুজতবা আলীর -জলেডাঙায়।সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর-অলীক মানুষ।সন্মাত্রানন্দের বৈ _তুমি সন্ধ্যার মেঘ, তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নি,ছায়াচরাচর, আরক্তসুন্দর মুখশ্রী। পরিতোষ সেন এর -জিন্দাবাহার।প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর -মহাস্থবির জাতক, মহাপ্রস্থানের পথে। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী-বারো ঘর এক উঠোন। শঙ্করের-কত অজানারে, আশা আকাঙ্ক্ষা।গজেন্দ্র কুমার মিত্রর-পৌষ ফাল্গুনের মেলা, কলকাতা আছে কলকাতাতেই।অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এর-নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে। নবারুণ ভট্টাচার্যের-হার্বাট। সন্তোষ কুমার ঘোষের- শেষ নমস্কার। বুদ্ধদেব গুহ এর-কোজাগর, লবঙ্গের জঙ্গলে, বনবিবির বন। সেলিনা হোসেন এর-নীল ময়ূরের যৌবন, যমুনা নদীর মুশায়েরা। সমরেশ বসুর-শাম্ব,অমৃতকলসের সন্ধানে,প্রবোধকুমার সান্যাল এর-মরুতীর্থ হিঙলাজ,শওকত আলীর-দক্ষিণায়নের দিন, পিঙ্গল আকাশ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের যাওপাখি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের -দিকশূন্যপুর।অমর মিত্রের-অশ্বচরিত।দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের -নারাচ। বাণী বসুর মৈত্রেয়ী জাতক। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পগ্রন্হ-খোয়ারি, দোজখের ওম, অন্য ঘরে অন্য স্বর, জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল। আহমেদ ছফার পুষ।প, বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ।আমি এই ওয়েবসাইটে আরও বৈ পড়তে চাই ।আমি চাই উপরোক্ত বৈ গুলোর কয়েকটি হলেও আপনারা এখানে সঙযোজন করুন। আমি আপনাদের নিকট বাধিত থাকব। আর প্লিজ আমার রিকোয়েস্ট অদেখা করবেন না। আমার রিকোয়েস্ট রাখবেন। আমি আমার অনেক ফ্রেন্ডকেও বলছি এখানে পড়তে। আপনারা যদি আরও ভালো বৈ সঙযোজন করেন তবে আরও অনেকে ই এখানে বৈ পড়বে
Bangla Library
ধন্যবাদ। আমরা চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত বই যোগ করতে। এরকম প্রচুর বই আমাদের লিস্টে আছে, কিন্তু সংগ্রহ করে উঠতে পারছি না বলে আমাদেরও একটা অতৃপ্তি আছে।