আমার দেখা নয়াচীন – শেখ মুজিবুর রহমান
খাতা পরিচিতি
তরুণ জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে পিস কনফারেন্স অব দি এশিয়ান এন্ড প্যাসিফিক রিজিওন্স-এ পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে নয়াচীন সফর করেন। সেই সময়ের স্মৃতিনির্ভর এ ভ্রমণকাহিনি ১৯৫৪ সালে কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে তিনি রচনা করেন। ১৯৫৭ সালে পূর্ব-বাংলার শ্রমমন্ত্রী থাকাকালে পাকিস্তান সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে তিনি আরো একবার চীন সফর করেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর গভীর ধারণার পরিচয় পাওয়া যায় এ লেখায়। সদ্য বিপ্লবের পর গণচীনের শাসনব্যবস্থা ও মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে গভীর আগ্রহ ও ঔৎসুক্যের পরিচয় আছে এ লেখায়। মুক্ত মন ও তীক্ষ্ণ অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে দেখা ঘটনার প্রাঞ্জল বর্ণনায় এ রচনা খুবই আকর্ষণীয়। চীন, রাশিয়া বা আমেরিকার মূল্যায়নে তাঁর বোধের স্বচ্ছতা ও সত্যনিষ্ঠা আমাদের মুগ্ধ করে। তরুণ বয়সেই যে তিনি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এক অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতায় রূপান্তরিত হচ্ছিলেন এ বই তাঁর এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এ লেখার সঙ্গে প্রসঙ্গক্রমে নিজের দেশ ও মানুষের অবস্থার কথাও তিনি তীক্ষ্ণভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ শক্তি ও গভীর উপলব্ধি তাঁর রচনাকে সমৃদ্ধ করেছে।
ভূমিকা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালে চীন ভ্রমণ করেন। পিস কনফারেন্স অব দি এশিয়ান এন্ড প্যাসিফিক রিজিওন্স-এ তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে পূর্ব বাংলা থেকে তাঁর নাম দেওয়া হয়। এই সম্মেলনটা অনুষ্ঠিত হয় অক্টোবর মাসে। ঐ বছরই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ থেকে বাংলাকে মাতৃভাষার মর্যাদার দাবিতে যে আন্দোলন তিনি করেছিলেন সেই আন্দোলনের দিন থেকে বারবার কারাগারে বন্দি হতে থাকেন। যখনি মুক্তি পেয়েছেন আবার বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষার মর্যাদা দান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি, ক্ষুধার্ত মানুষের অন্নের দাবিতে আন্দোলন ও ভুখা মিছিল করেন। কৃষক, শ্রমিকদের দাবিসহ বিভিন্ন আন্দোলন যা সাধারণ জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবি ছিল, সেই সকল দাবি নিয়ে তিনি আন্দোলন করেছেন। যেখানেই গরিব কৃষক, দাওয়ালরা বঞ্চিত হয়েছে তিনি ছুটে গেছেন তাদের কাছে।
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে সমগ্র পূর্ববঙ্গে যখন সফর করতে যান তখন ফরিদপুর গোপালগঞ্জ-সহ বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতার হন। মুক্তি পেয়ে আবারো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে গ্রেফতার হন এবং ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে মুক্তি পান। দীর্ঘদিন অনশন করেছিলেন রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার দাবি আদায়ের জন্য। তাঁর শরীর ভেঙে পড়ে। এরপর সুস্থ হয়ে ঢাকায় এসে আবার কাজ শুরু করেন।
সেই সময় চীন দেশে শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নয়াচীন হিসেবে চীন দেশকে অভিহিত করা হতো। সেই চীন দেশে শান্তি সম্মেলনে যাবার দাওয়াত আসে এবং তিনি যোগদান করেন। চীন ভ্রমণের সময় তাঁর যে অভিজ্ঞতা তা তিনি বর্ণনা করেন। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, এই লেখার মধ্য দিয়ে আমরা দেখি পাকিস্তানি শাসকবর্গ পূর্ববঙ্গের মানুষ যারা সংখ্যায় বেশি অর্থাৎ ৫৬ ভাগ, তাদেরকে কীভাবে বঞ্চনা করেছে সে ধারণাও পাওয়া যায়। ভ্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে পাসপোর্ট বানাতে করাচিতে আবেদন পাঠাতে হতো। তখন পাকিস্তানের রাজধানী করাচিতে ছিল। সেখান থেকে হুকুম এলেই পাসপোর্ট তৈরি হয়ে আসত। বিদেশ যাবার ভিসাও পেতে হতো পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। প্রতি পদে বিড়ম্বনা হতো। তা অনুধাবন করা যায়।
এই ভ্রমণকাহিনির মধ্যে তখনকার বার্মায় (মিয়ানমার) যাত্রা বিরতির কিছু ঘটনাও তিনি উল্লেখ করেছেন। সেখানে যে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন তার মধ্য থেকে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিষয়টা তুলে ধরেছেন। বার্মার আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যায়। যে সমস্যা এখনও বিদ্যমান তা হলো জাতিগত সংঘাত। আমরা বর্তমান সময়ও সেই একই সংঘাতপূর্ণ অবস্থা দেখতে পাচ্ছি।
প্লেনে চড়ে আকাশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এমনকি ছোটখাটো বিষয়ে যেমন মেঘের ভিতরে বাতাস থাকে না বলে যে প্লেনে বাম্পিং হয় আর সেটা যে কারো ভীতির কারণ তা সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। সুদূর চীন ভ্রমণের সময় বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় যা হয়তো আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চোখেও পড়ত না। কিন্তু সে বিষয়গুলো চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। বিশ্বনেতাদের সাক্ষাৎ, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সমাজসেবক ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের নেতাদের সাথে মেলামেশার সুযোগ পেয়েছেন। চীনের মহান নেতা মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে নয়াচীনের জনগণ দীর্ঘ সংগ্রাম ও যুদ্ধ বিজয়ের মধ্য দিয়ে মুক্তি পেয়েছে। স্বাধীন দেশের নাগরিকদের জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে উন্নয়নের যাত্রা শুরুসহ নানান বর্ণনা এই লেখায় উল্লেখ রয়েছে।
বিপ্লবের পর সামাজিক ক্ষেত্রে যে একটা পরিবর্তন আসে তা নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশ কীভাবে পরিচালিত করা যায় তা তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। একটা ধর্মান্ধ জাতিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে দেশকে সকল শ্রেণি-পেশার উন্নয়নে অংশগ্রহণ, দেশপ্রেম, কর্তব্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করা এবং মৌলিক চাহিদা পূরণ করে নিজেদের মাতৃভূমিকে গড়ে তোলার দৃষ্টান্ত এ লেখায় পাওয়া যাবে।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, তাদের জীবনযাত্রা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদাগুলো মিটাবার জন্য চীন সরকার বিপ্লবের পর কীভাবে উন্নতি করেছে এবং পরিবর্তন এনেছে মানুষের আচরণে তাও জানা যায়। তিনি শুধু সম্মেলনেই অংশগ্রহণ করেন নাই তিনি এই দেশকে খুব গভীরভাবে দেখেছেন। কৃষকের বাড়ি, শ্রমিকের বাড়ি, তাদের কর্মসংস্থান, জীবনমান সবই তিনি দেখেছেন। ছোট ছোট শিশু ও ছাত্রছাত্রীদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। শিশু বয়স থেকেই দেশপ্রেম ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত করার যে প্রচেষ্টা ও কর্মপন্থা তাও অবলোকন করেছেন। তিনি মুক্তমন নিয়ে যেমন ভ্রমণ করেছেন আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রতিটি বিষয় গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন। আমরা যেমন চীন দেশকে জানতে পারি আবার চমৎকার একটা ভ্রমণকাহিনি যা সে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদীতে নৌকা ভ্রমণ, রিকশায় ভ্রমণ, ট্রেনে ভ্রমণ আর আকাশপথ তো আছেই। সকল ভ্রমণে তাঁর হাস্যরসিকতা, প্রবীণ নেতাদের প্রতি দায়িত্ববোধ সবই জানা যায়।
এই ভ্রমণকাহিনি যতবার পড়েছি আমার ততবারই মনে হয়েছে যে তিনি গভীর পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে। তার কারণ হলো তাঁর ভিতরে যে সুপ্ত বাসনা ছিল বাংলার মানুষের মুক্তির আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জন সেটাই বারবার ফুটে উঠেছে আমার মনে, এ-কথাটাও অনুভব করেছি।
এই ভ্রমণকাহিনি অতি প্রাঞ্জল বর্ণনা দিয়ে তিনি পাঠকের জন্য উপভোগ্য করেছেন। প্রতিটি শব্দ, বাক্য, রচনার যে পারদর্শিতা আমরা দেখি তাতে মুগ্ধ হয়ে যাই। বাঙালি জাতিকে তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বাংলাদেশ ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল। সমগ্র বাংলাদেশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে গণহত্যা ও নারী ধর্ষণের মধ্য দিয়ে এক বীভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। স্বাধীনতা অর্জনের নেতৃত্ব ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষা-আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৭১ সালে বিজয় অর্জন করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। তাঁরই লেখা এ ভ্রমণকাহিনি।
১৯৫২ সালের চীন ভ্রমণের এ কাহিনি তিনি রচনা করেছিলেন ১৯৫৪ সালে যখন কারাগারে ছিলেন। তাঁর লেখা খাতাখানার ওপর গোয়েন্দা সংস্থার সেন্সর ও কারাগার কর্তৃপক্ষের যে সিল দেওয়া আছে তা থেকেই সময়কালটা জানা যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের খাতাগুলি কীভাবে রক্ষা পেয়েছে এবং আমি খুঁজে পেয়েছি সে কথা তাঁর লেখা ডায়েরি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’র ভূমিকাতে বিস্তারিত লিখেছি; তাই এখানে আর পুনরাবৃত্তি করলাম না।
১৯৫৭ সালে তিনি আরো একবার চীন ভ্রমণ করেছিলেন যখন শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ-এইড দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। সে সময় চীন সরকারের আমন্ত্রণে পাকিস্তান সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে চীন ভ্রমণে যান। তবে সে ভ্রমণের কোনো লেখা পাই নাই। সে সময়ের ছবি আমাকে উপহার দিয়েছেন চীনের বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি শী জিনপিং। তিনি যখন বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন তখন একটা অ্যালবাম আমাকে উপহার দেন সেই ছবিগুলি এখানে তুলে দিয়েছি। রাষ্ট্রপতি শী জিনপিংকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
১৯৫২ সালের ভ্রমণের ছবিগুলি আমাদের গ্রামের বাড়িতে রাখা ছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। আর ঢাকায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনেও কিছু ছিল, সে বাড়িও ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালে দুইবার লুট করা হয়। ছবির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৫২ সালের শান্তি সম্মেলনের অনেক ছবি সংগ্রহ করে দিয়েছেন জনাব তারিক সুজাত। তাঁকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ এই অমূল্য ছবিগুলো সংগ্রহ করে দেওয়ার জন্য। আমি যখন একেবারেই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম যে এ ছবি বোধ হয় আর কখনোই আমি পাবো না ঠিক তখন তিনি আমাকে ছবিসহ শান্তি সম্মেলনের অনেক মূল্যবান তথ্য এনে দেন। ছবি, স্ট্যাম্প, পোস্টার ইত্যাদি।
আমি আশা করি পাঠকসমাজের কাছে এই বইটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনের অনেক ঘটনা জানার সুযোগ করে দিবে। অনেক অজানা কাহিনি জানারও সুযোগ হবে। তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনি পড়লে আজকে চীন যে উন্নতি করেছে তারই যেন ভবিষ্যৎ ধারণা তিনি দিয়েছেন। তাঁর দূরদৃষ্টি এবং পর্যবেক্ষণের গভীরতা আমাকে বিস্মিত করেছে। যখনই চীন ভ্রমণ করেছি বারবার এই লেখার কথা আমার মনে পড়েছে কীভাবে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে।
চীন বর্তমান বিশ্বে অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ১৯৫২ সালে চীন ভ্রমণের সময় গভীর দৃষ্টি নিয়ে নয়াচীন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সে-কথাই বাস্তবে রূপ পেয়েছে। ভ্রমণের সময় আলাদা একটা খাতায় তিনি নোট নিয়েছিলেন সে খাতাটাও পেয়েছি এবং সেগুলি বইয়ের শেষাংশে দেওয়া আছে।
এই লেখা জনগণের হাতে তুলে দিতে পেরে আমি আনন্দিত। দীর্ঘদিন ধরে বেবী মওদুদ ও আমি কাজ করেছি। বেবী আর ইহজগতে বেঁচে নাই। থাকলে খুবই খুশি হতো। ইংরেজি অনুবাদ ড. ফকরুল করে দিয়েছেন, তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শামসুজ্জামান খান পরামর্শ দিয়েছেন, পড়ে দেখেছেন, সে জন্য তাঁকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বইটি প্রকাশনার জন্য যারা প্রস্তুত করেছেন এবং দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদেরকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
চীনের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছবিগুলো দিয়েছেন যা এই বইকে সমৃদ্ধশালী করেছে, তাঁর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সবসময়ে আমার মায়ের কথাই মনে পড়ে। আমার মা যে কত রাজনীতি-সচেতন ছিলেন, কত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন, আমার আব্বাকে তিনি লেখার প্রেরণা দিতেন। খাতাগুলি কিনে দিতেন আবার আব্বা যখন জেল থেকে মুক্তি পেতেন তখন খাতাগুলি সংগ্রহ করে সযত্নে রেখে দিতেন। তিনি নিশ্চয়ই আশা করেছিলেন যে এই লেখাগুলি একসময় বই আকারে ছাপা হবে। কিন্তু তিনি তা দেখে যেতে পারলেন না। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালরাতে বাবার সাথেই শাহাদত বরণ করেছেন। ঘাতকের বুলেটের নির্মম আঘাতে চিরদিনের মতো না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আমার ভাই কামাল ও জামাল এবং তাদের নব পরিণীতা স্ত্রী সুলতানা ও রোজী, আমার দশ বছরের ছোট ভাই শেখ রাসেল, একমাত্র চাচা শেখ নাসের-সহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।
আমার মা দেখে যেতে পারলেন না তাঁরই সযত্নে রাখা অমূল্য সম্পদ জনতার কাছে পৌঁছে গেছে। মায়ের কথাই সবসময় আমার মনে পড়ে। মাকে যদি একবার বলতে পারতাম, দেখাতে পারতাম আব্বার লেখাগুলি পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়েছে তাহলে কত খুশি হতেন। মা, তোমার কথাই বারবার মনে পড়ে মা।
শেখ হাসিনা
৭ই ডিসেম্বর ২০১৯
Leave a Reply