আমার অনন্ত ক্রন্দনধ্বনি (কাব্যগ্রন্থ)
উৎসর্গ –
ইউনিভার্সিটির হল জীবনের
‘আমরা ত্রিরত্নে’র
ইকবাল মাহমুদ বাদল
ও
সহিদউল্যাহ্ শহীদ,
আমার উন্মূল ও বাঁধনহারা সময়ের
দুই অনুজ বন্ধুকে।
১. আমার অনন্ত ক্রন্দনধ্বনি
কোনও একদিন সব কোলাহল থেমে যাবে
স্তব্ধ হয়ে যাবে বাতাসের বেগ দিগন্তে
মুখর পাখিরা এসে গাইবে না গান অলিন্দে বসে
মৃতেরা যেয়ে ঠাঁই নেবে মাটির গহ্বরে
সেদিন পাশে থাকবে না কেউ আর।
আমার সমস্ত জীবন ভার
বেদনার সব ভার
পৃথিবীর ধূলো পথে বয়ে বেড়াবে না আর
হারাবে সমস্ত পথ তার অন্ধকারে
আমার প্রাণের প্রান্তে নৈঃশব্দরা উন্মাতাল হবে।
কার হাতে দেবো তখন জীবনের ক্লান্তির ভার
সাদা কফিনের পাশে তোমরা কেউ উৎসব করো না
লোবানের গন্ধ উড়িও না বাতাসে
পৃথিবীর সমস্ত রোদ্র যখন ছায়ায় ভাসতে থাকবে
প্রিয়জনেরাও শান্ত হবে তখন।
সব পাপ প্রায়শ্চিত্ত হবে একদিন
স্তব্ধ হয়ে যাবে সব জনকলরোল,
আত্মারা তখন পুনর্জন্মের জন্য উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে থাকবে পৃথিবীর ধুলি পথে আমারই অনন্ত ক্রন্দনধবনির মতো।
২. চাই অমৃত, শরাবে ও সাকীতে
রাতের নির্জনতায় অন্তরমহলের দরজাটা খুলে দাও,
এই তো তুমি আছ তোমার মতো করে —
হৃদয় ভরে নিয়ে শিউলি আর চন্দনের গন্ধে !
সব দুঃখকে ভুলে দিতে পারো তুমি।
আমি চাই বাগদাদের একটি রাত আর রাজস্থানের একটি সকাল,
যেখানে রাতের ভালবাসা শরাব আর
সাকীতে বিভোর থাকে।
সকালবেলা ধ্বনিত হয় মীরা বাঈয়ের কণ্ঠে
প্রভুর জন্যে গাওয়া গীত ও সংগীত ।
৩. যুগল প্রেমের কবিতা
পূর্ব মেঘ :
মাটির গন্ধ পাই তোর শরীর থেকে
করমচা রঙ্গের ঠোঁট নুয়ে পড়েছে লজ্জাবতীর মতো,
দ্রোপদীর মুখ যখন রঙ্গীন হয়
পৃথিবী শোভিত হয় তখন হীরণ্য দ্যূতিতে।
তুই বল, আমি কি তোর পৃথিবী?
উত্তর মেঘ :
মাঝে মাঝে দূরত্ব তৈরি করো আকাশ সমান।
কিন্তু আকাশের কাছে যেয়ে কখনও বলোনি-
এই মেঘ তোমার, এই জল তোমার জন্য।
আমি করতল ধরে বসে আছি
এই রকম জলের জন্য —
কিন্তুু কেউই এসে জলে ভরায়নি,
আমি কি আসলে জলের কাঙ্গাল, না তোমার?
৪. অমান্য
রোদ্রতাপে উষ্ণ হয়ে তুমি হেঁটে আসো
আমার দিকে
ঘোমটা নেই মাথায়, বুকের আ্ঁচল এলমেল
তুমি তখন দুপুর মানো না,
তুমি নির্জনতা মানো না ।
তোমার শরীর ভেজে শ্রাবণ সন্ধ্যার
বৃষ্টির জলে
রাতের অন্ধকার ঢাকে তারার আকাশ
তুমি তখন জ্যোৎস্না মানো না,
শুকতারা মানো না।
ভালোবাসা রোদ্রে জ্বলে,
শরীর ভেজে বৃষ্টিতে
শিহরিত হয় তোমার গ্রীবা, শিরা উপশিরা
তুমি তখন রাত্রি মানো না,
দিনও মানো না ।
৫. নিমগ্নিকা
কতটুকু তোমাকে ভালোবাসলে আকাশে মেঘ হবে,
মেঘগুলো জল হবে, পূর্ণতা পাবে নদী —
কতটুকু ভালোবাসলে বসন্তে ফুটবে ফুল
মৌবন হবে শোভিত, মৌমাছিরা গুনগুন করবে চারদিক ,
কতটুকু ভালোবাসলে তোমার কস্তরী ঠোঁট
সপ্রতিভ হবে, কাজল চোখে তারা জ্বলবে,
কুচবরণ কেশে গন্ধ ছুটবে !
কতটুকু ভালোবাসলে তুমি নির্জনে হয়ে উঠবে একজন নিমগ্নিকা।
৬. জ্বলুক দীপ্তি ঢালা সুধা
তুমি আমার জীবন চরিতার্থ করে দিয়েছিলে,
সব ফুলের আগুন নীল দিগন্তে মিলিয়ে গিয়েছিল।
সেই তীব্র ভালোবাসার মুহূর্তগুলো নত হয়েছিল জমিনের উপর।
সেইখানেই একই বিন্দুতে তুমি আমি একীভূত হয়েছিলাম।
ঠিক সেইখানে শূন্যতা কি রাখা যায়? এতটুকুও কি ম্লান হয়েছে সেই স্বেদবিন্দু? সেই অনাবৃত শিহরণ? অনিঃশেষ প্রেম চিহ্নগুলি কি কখনও মুছে যায়?
জ্বলুক তোমার দীপ্তিঢালা সুধা, ঐ সুধায় ধন্য হোক এই নশ্বরতার সমস্ত আর্তি বেদনা দু:খ ও সুখ। এস, সর্বাঙ্গ লেহন করো, চির চরিতার্থ হোক এই দুই হৃদয়খানি।
৭. দুপুরের পংক্তিমালা
তুমি যদি দাঁড়িয়ে থাকতে বারান্দায়, বসন্তের এই আগমনী বাতাসে উড়ত তোমার মাথার চুল,
লুকোচুরি আলো ছায়ায় নেমে আসত সন্ধ্যা,
ধূসর রঙের একটি টি-সার্ট গায়ে দিয়ে হেঁটে যেতাম তোমার আঙিনা দিয়ে।
দেখতাম পথে থেকেই তোমার চোখ, চোখের কাজল,
বুঝতে পারতাম মনিরত্নমের নীচে কোনও অশ্রুত জলধারা,
কোনও বিনম্র হাসি, কিংবা মনখারাপের আরক্ত সেই মুখ।
এই শহরে দ্রুতই দীর্ঘশ্বাসের মতো ধেয়ে আসে হাওয়া –
ধুলিতে আঁধার হয় এর পথ,
কত প্রবল ইচ্ছার মৃত্যু হয়, কত আকুতি অন্ধকারে মিশে।
কী ভাবে হেঁটে যাব তোমার বাড়ির আঙিনা দিয়ে,
কী ভাবে দেখব পরনে তোমার পরিপাটি নীল শাড়ি।
আমার যে ঠিকানা জানা নেই।
৮. কে সে জন
মর্ত্যে অমর্ত্যের কোন্ অন্তঃপুর বাসিনী সে?
কী সব স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়। ক্ষরণে অন্তঃসলিল প্রবাহমান হয়। রাতের বিছানা সব এলমেল থাকে। শুকিয়ে যাওয়া রজনীগন্ধার মতো চোখ মুদে আসে। এত সংবেদনা,
তবুও এক ফোঁটা অশ্রু ঝরে না।
কবে কে বলেছিল — অশ্রুহীন রেখ চোখ।
মায়াবতী বা কোথায়?
কত গল্পের কত রমণীকূল, বালিকা, নর্তকী, রাজকুমারী, ঘুঁটেকুড়ানী, যোগিনী, সন্ন্যাসিনী, প্রেতেনী, কঙ্কাবতী, বনলতা …..
তারা কেউ নেই।
মিত্রা, কমলিকা, সাহানা, মেহেরজান, ঊষা, হৈমন্তী, দীপান্বিতা, মালিনী, মাধবী, যামিনী, টিনটিন, মহুয়া, পিয়ালি…..
সবাই ছিল লাবণ্যময়। ঘোরে অঘোরে কত নাম লিখি। কত নাম যপি। শব্দ সাজাই। কবিতার চরণ লিখি। কত সব নামের উপরে সমুজ্জল মুক্তো জ্বলে, একটি দুটি নাম উপনাম হয়ে যায় ….
অমরাবতী আর মায়াবতী।
৯. শূন্যতা
তোমাকে যেখানে নিয়ে যাবে
সেখানে কেবলই শূন্যতা, কেউ নেই।
যেখানে থাকবে তুুমি
সেখানে কেবলই নিস্তব্ধতা, কান্নাও নেই।
যেখানে রবে তুমি, সেখানে আলো নেই
কেবলই অন্ধকার…
এত শূন্যতার ভিতর , এত শব্দহীন কান্নার ভিতর
চারপাশে অনিঃশেষ এত অন্ধকারের ভিতর —
আমাকে তুমি খুঁজে পাবে কী করে!
১০. পথ সঙ্গীত
আমরা আজ এখানে এই পথের উপর এসেছি
আমরা তোমাদের ভালোবাসা দিতে এসেছি
আকাশের গায়ে থেকে মুঠো ভরে নীল এনেছি
তোমাদের আজ নীলাদ্রী করে রাঙাতে এসেছি।
আমরা তোমাদের গান শোনাতে এসেছি।
দুরের ঐ পাহাড় থেকে লতাগুল্ম বনফুল এনেছি
মহুয়া বন থেকে ঝাঁপি ভরে ফুল তুলে এনেছি
তোমাদের আজ মালা পরিয়ে দিতে এসেছি
ফুলের সুবাসে আকুল করে দিতে এখানে এসেছি।
আমরা তোমাদের গান শোনাতে এসেছি।
সাগর বালুকাবেলা থেকে ঝিনুক কুড়িয়ে এনেছি
তোমাদের ঘরে মণিমুক্তা ভরিয়ে দিতে এসেছি
রূপালি ঢেউয়ের সমুদ্র পাড়ে নিয়ে যেতে এসেছি
সূর্যস্নানে পুণ্য হবে এই আনন্দ বার্তা দিতে এসেছি।
আমরা তোমাদের গান শোনাতে এসেছি।
পথের উপরে তোমাদের গান শোনাতে এসেছি
তোমাদের জন্য আজ এই আনন্দ গান বেঁধেছি
পথের দিশা দিতে তোমাদের কাছে এসেছি
পথের মাঝে যেন হারিয়ে না যাও সেকথা ভেবেছি।
আমরা তোমাদের গান শোনাতে এসেছি।
আমরা অনেক দুঃখ যাতনার কথা ভুলেছি
ভালোবাসা হৃদয় কোণে কানায় কানায় ভরেছি
আমরা তোমাদের সেই ভালোবাসা দিতে এসেছি
ভালোবেসে শুন্য করে দিতে এখানে এসেছি।
আমরা তোমাদের গান শোনাতে এসেছি।
১১. তার হৃদয়খানি
তার কটিতে এতটা আবেদন ছিল না, যেখানে জ্যোৎস্না এসে বাঁক খেতে পারে।
তার মুখে এমন কোনো মায়া ছিল না, যেখানে
মধুরিমার আবেশ না দিতে হয়
তার চিবুকে একটি তিলও নেই, যেথায় কাজলের আঁচড় না লাগাতে হয়।
চুলকে কখনোই অবন্তীর আঁধার মনে হয়নি
না ছিল তার পায়ে ঘুঙুরের আওয়াজ
না ছিল ওষ্ঠের আশ্লেশ —
না ছিল ভ্রু-তে কোনো আমন্ত্রণের ঝিলিক, যা দেখে কোনো স্বর্গলোকের পথে হাঁটা যায় !
না ছিল তার স্পর্শে এমন চুম্বকীয় টান, যা কোনো নদী নিমিষেই সাগরে বিলীন হতে পারে —
তবুও ভালবেসেছি তাকে, শুধু তাকেই। দুর্বার গতিতে…
জানি, তার হৃদয়খানি পৃথিবীর মতো অসীম !
১২. একটি সুইসাইডাল স্টাটাস
স্পর্শ দিয়ে তোমার সাথে আমার সম্পর্কের শুরু
সিনে কমপ্লেক্সের সবগুলো আলো তখন নীভে গিয়েছিল
একটি কোমল কঠিন হাত আমার স্নিগ্ধ নরম হাত স্পর্শ করেছিল।
প্রথম কম্পন সেখান থেকেই , প্রথম ভালোলাগাও সেখান থেকে শুরু —
‘চিত্রা নদীর পারে’র শেষ দৃশ্য সেদিন আর দেখা হলো না।
তারপর, রিক্সার হুড ফেলে সাহসী যাত্রীর মতো চষে বেড়িয়েছি ঢাকার অনেক রাজপথ অলিগলি
কত রোদ্দূর, কত বৃ্ষ্টির মেঘ, কত ছায়াতল দিয়ে আমরা হেঁটে গিয়েছি।
আমাদের স্পর্শগুলো সভ্যের সিমানা ছাড়িয়ে যেতে থাকে
দিয়াবাড়ির কাশবন, বেড়ীবা্ঁধের পাশে নির্জন একাকী রেস্তোরায় হয়েছে যত স্পর্শের মহোৎসব।
যে তুমি একদিন ভালোবাসার জন্য মাহিনের ঘোড়ায় চড়ে আমাকে নিয়ে সোয়ার হতে চেয়েছিলে
সেই তুমি আমাকে গণিকার মতো করে রেখে দিলে।
আমাকে ভালোবাসবার তোমার সময় হয় না
নীল আলোর নীচে নগ্নিকা করে সৌন্দর্য ভোগ করতে তোমার সময় হয়
বিয়ের কথা শোনার জন্য তোমার সময় হয় না
আমার উত্তপ্ত শরীর খুবলে খামছে খেতে তোমার সময় হয়।
বার্থ কন্ট্রোল পিল কিনিনি , আজ ফার্মেসীগুলো ঘূরে ঘুরে স্লিপিং পিল কিনেছি
আজ রাত্রে একজন বেশ্যা ঘুমিয়ে যাবে চিরঘুমে–
I love you more than life itself, but you didn’t see it.
You didn’t realize what you had. Maybe once I’m gone.
( একটি জাতীয় দৈনিকে একটি মেয়ের আত্মহত্যার খবর পড়ে এই কবিতা।)
১৩. না আমি না তুমি
যদি কখনও প্রেমময়ী হও,
যদি তুমি জেগে উঠতে চাও তোমার প্রাসাদে,
শোকাচ্ছন্ন একাকীত্বে
যদি প্রশ্ন করো বাতাসে ‘আমি কেমন আছি ‘?
ইথারের সমস্ত তরঙ্গ, নক্ষত্র, পাখি, পুঞ্জীভূত মেঘ
সবাই সমস্বরে উত্তর দেবে ‘ভালো নেই। ‘
কোথাও প্রেম নেই, আছে শুধু আন্দোলিত প্রাণ
আছে ভালোবাসার কুঞ্জবনে বিস্মৃতির নির্ঝর।
যদি কখনও তুমি মায়াবি কেউ হও
যদি মাতাল হয় মধ্যরাতের গান
যদি লুপ্ত হয়ে যায় এ্য়োদশীর কোনও চাঁদ
যদি নিভে যায় এক এক করে সকল তারা
তখন ভালো থাকবো না আমরা কেউই –
না আমি না তুমি, না আমাদের মধুময় প্রেম।
১৪. গোলাপ ফোটান দিন
আজ তোমার গোলাপ ফোটানোর দিন
জুঁই চামেলীর তোড়া নিয়ে আজ তোমার
অপেক্ষা করার দিন —
আমি জানি তুমি এখন আছো বিবর্তনে
জানি আজ তুমি অসময়ে রক্ত জবা ফুটিয়ে রেখেছ।
ভ্রু কুঁচকে যখন তুমি পাশে এসে দাঁড়াও
আমি তখন ভালোবাসার কোনও ব্যাকরণ মানি না
সনদ মানি না ধর্মের কিংবা জাতিসংঘের,
তাই তো আমি রাতভর সুবাস ছড়িয়ে বসে থাকি
এই ক্যামেলিয়ার বাগানে।
তখন অপার্থিব এক ভালোবাসায় ভরে ওঠে দেহ মন জানালা —
শুনি তার কাছে আসার গান পথে পথে
সারা রাত্রিতে কামিনী কুন্তলের ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য
আমি মাতোয়ারা হয়ে থাকি।
চাই ঘৃণা , চাই অমরতা —
হেমলক পান করতে হলে তাই করব পান,
তা গন্দম হোক, তবুও চাই, অমৃত সুরলহরীতে বাজুক
গোলাপ ফোটানো দিনে আমাদের আনন্দ সঙ্গীত।
১৫. ভালোবাসা নেই ঘৃণা নেই
আমি তাকে বললাম, ভালোবাসা দেবো, তুমি কি দেবে আমাকে ?
উদাসীন সে, কোনও জবাব নেই
যেন বহুকাল ধরে বহুজনের কাছ থেকে সে বহু ভালোবাসা পেয়েছে
এসবের তার দরকার নেই।
তাকে আবার বললাম- তোমাকে আমি ঘৃণা করি
আচমকা মুখ তার বিবর্ণ হয়ে গেল
যেন সে এই প্রথম কারো কাছ থেকে ঘৃণা পেল।
মনে মনে বলি, এখন তুমি কি দেবে আমাকে ?
তোমার কিছুই নেই- ভালোবাসা নেই, ঘৃণাও নেই।
১৬. একটি শায়েরী
আমার ভাঙ্গা ঘরে তুমি ঘোমটা মাথায় এসে দাঁড়াইও। আমার শূন্য ঘর ধন ধান্যে ভরিয়া উঠিবে।
আমার মৃত্যুর পর দূর্বা ঘাসের কবরের পাশে
এলো চুলে তুমি কাঁদিও। মরণকে আমার সুন্দর মনে হবে।
ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের লেখা একটি গজলের কয়েকটি পংক্তি —
‘কভি তো সুবহ্ তেরে কুঞ্জ-লব সে হো আগাজ
কভি তো শব সর-এ-কাকুল-সে মুশ্কবার চলে৷’
কখনও তো ঠোঁটের কোণ্ থেকে তোমার ফুটে উঠুক ভোর, কখনও তো বিণুনী থেকে ঝরে পড়ুক মৃগনাভি সুরভিত রাত।
১৭. প্রেরণাদাত্রী
নিভু নিভু করে নিভে যাচ্ছে দিন। সন্ধ্যার অস্তরাগ নিঃশেষিত করে নক্ষত্রের আকাশকে ঢেকে দিচ্ছে রাত। নিস্তব্ধতার অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কেউ একজন কানের কাছে বলছে —-
ক্লান্ত হইও না তুমি। অমরতার লগ্ন এখনও আসেনি তোমার। সময়কে বরণ কর সৃষ্টিতে।
তোমার অনেক কিছুই আছে। ফেলে আসা কুসুমপুরের মাটি। কুর্চি ফুলের গন্ধ। জোনাকির ঝিল্লি গান। শরতের জ্যোৎস্না, জলাভূমি, নদী, রুপালি বালুচর, বাঁশের বন, স্বপ্ন আর রূপকথা।
তুমি অতিক্রম কর তোমার কাল।
মানুষের কাছে, ইতিহাসে, সভ্যতায় তোমার সৃষ্টির চিহ্ন রেখে যাও।
১৮. হারিয়ে গেছে
এখানে অট্টালিকার আড়ালে চাঁদ লুকিয়ে থাকে
ছাই ভস্ম হয়ে উড়ে যায় যতো মেঘ
সহাস্য মুখখানি তার ভেসে যায় অন্তরালে।
এইসব মেঘের নীচে ছেলেবেলা হারিয়ে গেছে
কবেকার সন্ধ্যার পাখি সব ডানা মেলে চলে গেছে
সেই কবে লুকোচুরিতে কেটে গিয়েছিল বেলা।
ক্লাশে রাফ খাতায় টুকেছিলাম কিছু শব্দাবলী
পংক্তিও কিছু লিখেছিলাম ছন্দহীন
খাতার পাতায় ঝাউ পাতাও রেখে দিতাম
এসবই জীর্ণ হলো, ছিঁড়ে গেল —
কোনও পংক্তিমালাই সম্পূর্ণ কবিতা হলো না আর।
যাকে ভালোবেসেছিলাম অবগুন্ঠন খোলার
সময় হলো না তার —
কোনও ঘাসফুল ফুটে পদ্ম হলো না
কোনও ছবি জলছবি হয়নি জীবনের।
কোথায় আমার হারিয়ে গেছে ছেলেবেলা —
কোথায় যেয়ে লুকাবো আমার মলিন মুখখানি।
১৯. তুমি মণিভূষণ বেষ্টিত
তুমি নিজেই সন্ধ্যাতারা হয়ে জ্বলছ
তোমার আকাশে,
আমার আঁধারে তাই তোমাকে খুঁজে না পাবার ভয় নেই।
তুমি শান্ত স্নিগ্ধ দীঘির জল —
সাঁতার কাটি সেই জলে প্রতিদিন প্রাণ ভরে।
তুমি ‘ মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে
বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে ‘
তুমি ‘ধরণী’পরে ঝরে নির্ঝর, মোহন মধু শোভা
ফুলপল্লব-গীতবন্ধ-সুন্দর-বরনে।’
২০. বুভুক্ষু এক হরিণী
তোমার ঠোঁট থেকে গড়িয়ে পড়ে আশ্লেষ
বুক থেকে ঝরে পড়ে ক্লেদজ ঘাম
আলিঙ্গনে আলিঙ্গনে আমরা তবু ক্লান্ত হই না।
তৃষ্ণার্ত হরিণীরা নদীর শীতল জল পান করে
তুমিও বুভুক্ষু এক হরিণী যেন আমার কাছে।
যে মায়ানাভী তলে শূল বিদ্ধ হয় অস্থির সৈনিকের
তুমি তোমার রক্তাক্ত ভ্রুণের ভিতর আনন্দ খু্ঁজো।
পৃথিবী ঘুরছে তার কক্ষপথে, আমার ছায়াপথে
তুমি মেতে থাকো প্রজন্ম জন্ম দেবার উৎসবে।
২১. সম্পর্ক
কেমন নির্মোহ হয়ে যাচ্ছ তুমি দিনদিন
কেমন বন্ধাত্ব্য সময় করছ পার
আনন্দ নেই, জোয়ার নেই, ঢেউ নেই
কেমন ছিন্ন কাগজের জোড়াতালি সম্পর্ক!
আমার একার সম্পর্ক তো না, তোমারও-
তুমি চাইলেই ছেড়ে যেতে পারো
তুমি চাইলেই থেকে যেতে পারো
তুমি চাইলেই আমাকে ছুঁড়ে ফেলতে পারো
কি অদ্ভুত তাই না?
সম্পর্ক গড়তে দুটো মানুষের দরকার হয়
আর ভাঙ্গতে একজন লাগে।
২২. ইচ্ছেডানা
ইচ্ছে করে ডানা মেলে কোথাও আমি যাই উড়ে
বিরহেরা থাক না পড়ে
তোকেই রাখব প্রাণ জুড়ে
মেঘে মেঘে ভেসে যেতে বড়ই আমার সাধ জাগে
তোর বিরহে দুচোখ আমার জলে ভিজে রাত জাগে
তোর কপালে লেখা ছিল অন্য কারোর নাম যে
মিছেই আমি প্রেমিক হলাম
হয়ে গেলাম নিষ্কাম যে।
২৩. অভিসারিকা
তুমি ধ্রুপদী এক হাওয়ার মতোন,
মনের তন্ত্রীতে কাঁপন ধরাও আজও।
আজও তুমি উষ্ণতা দাও হিম দেহে।
তুমি শেষ রাতের শ্বাস, নাকি চাঁদ!
প্রান্তরে কাশবন আলোয় ভরে ওঠে জ্যোৎস্নার প্লাবনে।
ঘোড়ার পায়ের খটখট আওয়াজ তুলে মধ্যরাতে জেগে থাকি এখনও। এখনও লোভ হয় রাইফেলের গুলি চালাতে। রক্তাত্ত করতে ইচ্ছে করে ডাহুকীর নরম বুক।
আমাকে কার্তুজ দাও।
ট্রিগার চালাতে কাঁপে তর্জনী। বারুদের গন্ধে ভাসুক রাতের আকাশ বাতাস।
২৪. যত দূরেই যাই
তোমার জন্য বিকেল গুলো বিষাদ হয়ে
থাক্
আমি থাকব– সন্ধ্যা তারায় আকাশের
গায়,
তোমার জন্য আঁধারগুলো নিবিড় করে থাক্
আমি নেব আঁধারেতে জোনাক জ্বালার দায়।
তুমি হবে চিত্রিত ভোর সোনালি
আলোর
রোদ্দুর হয়ে আঁকব আমি রূপালি
ঝালর
আমার হোক বেদনভরা অথৈ জলে
ঠাঁই!
তুমি থাকবে হৃদ কোঠরে যতদূরেই
যাই।
২৫. দুপুরের শব্দ
ইচ্ছা করে কোনও বাউল দুপুরে একটি ছন্দহীন কবিতা লিখি। একাকী কোনও পাখি ক্লান্ত চোখে যেমন চেয়ে
থাকে, তেমন করে পৃথিবীর দিকে চেয়ে থেকে ভালোবাসার কোনও গান শুনি।
কেউ কী নেই? নিস্তব্ধ দুপুরের এই নিস্তরঙ্গ শব্দগুলোকে
বিসমিল্লা খাঁর সানাইয়ের সুরের মতো মায়াবী করে কণ্ঠে তুলে দিতে?
২৫. দাঁড়িয়ে আছো
হঠাৎ করে শরীর খারাপ লাগলে মনটাও খারাপ হয়ে যায়। তখন মনে হয় কেউ আমার শিয়রে এসে বসে থাকুক। হাতটি আমার ধরে রাখুক তার হাতে।
কেমন যেন ক্লান্তি লাগে। দূরে কোথাও নিভে যায় দীপ অন্ধকারে। তখন অবসাদ নেমে আসে। ঘুম এসে যায় চোখে।
বিকেল বেলা ঘুমিয়েছিলাম অসময়েই। ঘুম ভাঙার পর দেখি, আমার শিয়রেই সে দাঁড়িয়ে আছে। বিকেলের রৌদ্রে মলিন লাগছিল তার মুখখানি।
কবিগুরুর গানের কথা একটু ঘুরিয়ে বলতে ইচ্ছা হলো —
‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার জীবনেরই পাড়ে’।
২৭. তোমার হলো
তোমাকে ভালোবাসার আগেই আমার মায়াগুলো তোমার হলো
তোমাকে ভালোবাসার আগেই আমার স্বপ্নগুলো তোমার হলো
তোমার জন্য আমার সারা বিকেলের অপেক্ষাগুলো তোমার হলো
তোমাকে পাওয়ার জন্যে আমার আকুলতাগুলো তোমার হলো
তোমাকে না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাসগুলো
তোমার হলো
যে চুম্বনগুলো দেওয়া হয় নাই সেই অতৃপ্তিগুলো তোমার হলো
তোমাকে না পাওয়ার সকল গ্লানি ক্লেদ
তোমার হলো
তোমার জন্যে অন্ধকারে এই যে বসে থাকা তাও তোমার হলো
আমার সকল কান্নার অশ্রুজলগুলো
তোমার হলো
আমার এই সমস্ত সকল দুঃখের ভার আজ থেকে তোমার হলো।
২৮. পরকীয়া
যে রমণীটি আমার নয়
সে যদি আমার কাছে আসে সে কেমন হয়
যে শরীর আমি ছুঁইতে চাই না
তা যদি আমাকে ছুঁইতে হয় তাই কি হয়!
ছুঁইতে চাই না তবু ছুঁইতে দিতে হয়
মন যেন কেমন আমার উদাস উদাস হয়
না ছুঁইলেও আবার কষ্ট হয়!
একি মুহূর্তের কোনও মহত্তম প্রেম তবে
অচ্ছূত রমণীটি যে আমার কাছে বারে বারে দেবী হয়ে ফিরে আসে।
( উৎসর্গ : মন্দাক্রান্তা সেন।)
২৮. আর কত মৃত্যু
মানুষ মরে পড়ে থাকে রাস্তার উপর
পাশ দিয়ে দ্রুত বেগে গাড়ীগুলো চলে যায় ধেয়ে
কর্কশ হর্ণ বাজে ক্রন্দনের শব্দে
শেষ চাহনীতে তার দেখা হলো না প্রিয়জনের অশ্রুবিন্দু
তার চোখ চেয়ে দেখেছে কেবল মৌন নীল আকাশ।
মানুষ মরে পড়ে থাকে রেস্তোরায় নীল নীল আলোর দীপাবলীতে
রক্তে ভেসে যায় সুগন্ধি মাখা জামা,
টি-সার্ট, ট্রাউজার্স
এমন মৃত্যু দেখেনি হিরোসিমার মানুষ
মিলানের মানুষদের কর্মচাঞ্চলতা সেদিন কি থেমে গিয়েছিল আপিসে ?
তর তর করে রক্ত গড়ে গেছে আর্টিজানের মেজে ভেসে লেকের জলে
প্রাণহীন চোখের অশ্রুজল দেখতে পায়নি কোনও কন্যাী জায়া জননী।
মানুষ মরে পড়ে থাকে মশুলে
মানুষ মরে পড়ে থাকে আলেপ্পোতে
মানুষ মরে পড়ে থাকে আরব সাগরে
মানুষ মরে ভাসছে আটলান্টিকে
আর কত মৃত্যু দেখবে মানুষ
আর কত রক্ত ঝরলে শুদ্ধ হবে ধর্ম
আর কত লাশের স্তুপ দেখলে আধিপত্য শান্ত হবে।
কোন্ সভ্যতায় বসবাস করছে মানুষ
কোন্ পাপ পুণ্যের জন্য এত গোলা,এত রাইফেল, গ্রেনেড আর শাণিত তরবারি
আমরা মৃত্যু চাই না,আমরা শান্তি চাই.
করজোড় তোমাদের কাছে, বন্ধ করো সব হত্যা,গণহত্যা, সব রক্তপাত !
৩০. সেলিয়া – ফিডেলের প্রেম
তারা দু’জনই দ্রোহ করেছিল বাতিস্তার বিরুদ্ধে একসাথে
তারা দু’জনই বিপ্লবী, যুদ্ধ করেছিল রনাঙ্গনে একসাথে
তারা কি প্রেম করেছিল দু’জনই হৃদয়িক বিপ্লবে একসাথে?
সেলিয়া ফিডেলকে বলেছিল তুমি আমার প্রেম
ফিডেল বলেছিল আমি তোমার দেশপ্রেম
যুদ্ধমাঠে সেলিয়া বিপ্লবী যোদ্ধাদের সেবা করেছে
সেলিয়া যুদ্ধমাঠে ফিডেলকে শুধুই কি সেবা করেছে ?
সেলিয়া তোমার রূপ কি বারুদের গন্ধে মেশেনি কিউবার আকাশে ?
তোমার অপরূপ রূপ কি একবারও বিমোহিত করেনি ফিডেলকে ?
তা্ঁবুতে তা্ঁবুতে সেদিন কি কেবলই অস্তের ঝনঝনানি বে্ঁজেছে ?
তোমার অন্তরদোলায় একবারও কি দুলে ওঠেনি ফিডেলের অন্তর আকাশ ?
৩১. এখন ভালোবাসার সময়
মন শোনে না মনেরই কথা, তোমার কথা কি শুনব আমি?
আমি যে অবাধ্য এখন তোমার প্রেমে।
তুমি যখন তখন আস নেমে, ধরো হাত —
শরীরের উপর তখন সূর্যের উত্তপ্ত রোদ্দুর পড়ে
অগ্নুোৎসব শুরু হয় দুজনের মর্মরে মর্মরে।
অবাধ্য হই সকল নিয়ম বিধি নিষেধে
পৃথিবীর সকল ধর্মগ্রন্থ দূরে সরিয়ে রাখি
আমার যে তখন ভালোবাসবার সময়।
ডাক্তার চলে যাক হাসপাতালে
উকিল চলে যাক কোর্টে
বিচারপতি বসুক তার এজলাসে
সাংসদেরা চলে যাক সংসদে
আইন তৈরি করুক আমার বিরুদ্ধে, আমার প্রেমে।
আমি এসব আইন মানি না —
আমার যে এখন ভালোবাসার সময়।
৩২. দেবযানী
তোমাকে নিয়ে এই শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে ইচ্ছা করে। তুমি সাদা রঙের মিরপুরের জামদানী শাড়ি পরবে। শাড়ি থেকে কড়কড়ে মাড়ের গন্ধ ভাসবে বাতাসে।
তুমি বলবে — ‘আমি নীরা নই, মাধবীলতাও না, সুনন্দা, কিংবা রূপাও নই।’ আমি বলব — ‘তুমি দেবযানী হয়ে ওঠো আজ।
রাত দুপুরে তোমাকে নিয়ে এই শহরের পথে পথে হাঁটতে বের হবো। ট্রেনে চেপে দূরের কোনও স্টেশনে চলে যাব। যেখানে ধুপছায়ার আমলকী বনে শ্রাবণ মেঘের বৃষ্টিতে ভিজব রাতভর দুজন।
৩৩. স্বপ্নঘুড়ি
আমার হাতটি ধরে বহু পথ হেঁটে চলেছে।
পথ চলতে চলতে পথের ক্লান্তি কখনও গ্রাস করে নাই।
তার ছোট ছোট ভালোবাসার কথা
আমার ভালো লাগত।
আমারই মনের আকাশে উড়াত স্বপ্নঘুড়ি।
বুকে তার সারা জীবনের স্বপ্ন গাঁথা।
সেই স্বপ্নই কি আমার ঘুমের মাঝে স্বপ্ন হয়ে আসে?
৩৪. হেমন্তের জনারণ্যে
অনেকটা হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল আজ দু’জনের
শহরের পিচ পথে লাইট পোস্টের নীচে যেখানে অন্য কেউ ছিল না
আলো আঁধারের নিমগ্নতায় তোমাকে দেখলাম
শুষ্ক খুসকো খুসকো ঠো্ঁট যেখানে চুম্বনের দাগ পড়েনি অনেককাল-
দেখলাম বুকের আঁচল ম্রিয়মান, যেখানে কোনও সুগন্ধি ছিল না
মনে হলো কতোকাল এই বুকে কারোর একটি আলিঙ্গন পড়েনি।
আজ আর তোমার হাতখানি ধরা হলো না
মেহেদিহীন কোমল নোখগুলো হয়ে গেছে পর
হাঁটছিলাম এলমেল দু’জন
এভাবে হাঁটে না কোনও প্রেমিক প্রেমিকা
তোমার সেই কাজল আ্ঁকা চোখ দু’টো দেখছিলাম বার বার
কাজল নেই সেখানে কালচে হয়েছে জল পড়া নুড়ীর মতো
যেখানে কোনও দুঃখ ছু্ঁইতে দেইনি কোনও সময়ে কোনও অনাদরে
সেই তোমাকে দেখছি আজ হয়ে গেছ দীনহীনা অভাগীর মতো।
পথচারীরা আজ কোনও দুঃখ দেখল না তোমার
এরাই সাক্ষী ছিল একসময় কত ভালোবাসার স্পর্শের
কত চুম্বন দেখেছে পার্কের পাখি, কত আলিঙ্গন দেখেছে বনের কাকাতূয়া
আজ এই হেমন্ত সন্ধ্যায় সে সবই দুঃখ জাগানিয়া নস্টালজিক,
কোনও কথা না বলে কোনও চুম্বন আর আলিঙ্গন না রেখেই
বিষাদময় এই সন্ধ্যায় জনারণ্যে তুমি হারিয়ে গেলে।
৩৫. চন্দনে চন্দনে
শাড়ির আঁচল মুখে পড়ে আছে তার
রাত ভোর ছিল বুনো চন্দনের গন্ধ,
তার আগের রাতে ভেসেছিল কোজাগরী চাঁদের জ্যোৎস্নায়।
এমনই তুমি
এমনি মায়াবতীর জন্য কতকাল বসেছিলাম
চন্দনের গন্ধ মেখে বুকে
কত জ্যোৎস্না ভেসে গেছে নিশীথ অন্ধকারে।
সেই তুমি এখন এত কাছে যে,
চন্দনে চন্দনে জ্যোৎস্নায় জ্যোৎস্নায় একাকার হয়ে আছ আমারই কাছে।
৩৬. জলকাব্য
আমি বুঝতে পারি না, কোন্ মেঘ থেকে কখন বৃষ্টি ঝরে। আমি দেখতে পারি না, মেঘ সরিয়ে রবি কিরণের আলোক সম্পাত। সূর্যের বেপথু কিরণে রাতের আকাশের তারাদের ঔজ্জ্বল্য।
হঠাৎই কখনও কখনও মন আমার বৈরাগী হয়ে ওঠে। আমি বুঝাতে পারি না, আমার প্রণয় বিহ্বলতার
কথা। আমার অপ্রকাশিত শিহরণ সুখ কোন্ মেঘময় আকাশ থেকে জল হয়ে নদীতে ঝরে পড়ে।
কখন যে নদী বিহ্বল হয়। আকুল হয়ে মিশতে থাকে সাগরে। মেঘও পরাজিত হয়। রবিকিরণ উত্তাল তরঙ্গে একাকার হয়ে যায়। আর জলবিন্দু সমুহ নদীর আবক্ষ গহ্বরে হয়ে যায় বিলীন।
৩৭. রোদ্র ক্লান্ত দুপুর
একি কোনও মায়াজাল তবে?
আমার সকল ভাবনায়
সকল পাওয়ার আকুলতায়
এই রোদ্র ক্লান্ত দুপুরে তোমাকে কাছে টানতে মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে
আমার অন্তর্মহলের সমস্ত দুয়ার খুলে যায়
আমি নির্মোহে শূন্য করে দিতে চাই সব।
তখন তুমি ছিলে রবীন্দ্র সঙ্গীতে
থামিয়ে দিয়ে সব গান দিলে বাহু পেতে
বললে, ‘এসো এসো আমার ঘরে এসো।’
৩৮. বিদায়ী পংক্তিমালা
যে ছেলেটি একদিন ট্রেনে করে এসেছিল এই ঢাকা শহরে
সে আজ শববাহী যাত্রী হয়ে চলে যাচ্ছে তারই শহরে,
তার জ্বলজ্বলে চোখ ভালোবেসেছিল বাংলাদেশের মানচিত্র
উদ্দাম তারুণ্যে বার বার হেঁটে গেছে রবীন্দ্র সরোবরের কাছে
যেখানে নিহত হয়েছিলেন স্থপতি, জাতির পিতা ইতিহাসের সেই আদর্শিক পিতার ছবিকে করেছে কুর্নিশ।
বহিমিয়ান ছিল না সে, সে লিখত কবিতা
জীবন থেকে শব্দ তুলে এনে লিখত গল্প
কোনই অভিমান ছিল না তার ! ধূসর এই হেমন্ত সন্ধ্যায়
চলে গেল সে শীর্ণ এক নদীর তীরে, শেষ খেয়াটির অপেক্ষা না করে।
৩৯. হাওয়ার রাতে
জীবনের দৃষ্টিপাত একজায়গায় কেন? কত গান আছে জীবনের। আরো কত স্পন্দন আছে হৃদয়ে এবং আত্মায়। সেসবও কিছু শুনতে হয়।
খুব ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে। মনে হয় সারাজীবন ছুঁয়ে থাকি। জীবনের পরেও।
এই পৃথিবীতে অনেক ভালো মানুষ আছে। তাদের চিনে নিতে হয়। তাদের ধরে রাখতে জানতে হয় যত্ন করে।
এই হাওয়ার রাতে কত হাসনাহেনার গন্ধ ভাসে। কত মনখারাপের কথা লুকিয়ে থাকে অন্ধকারে! কেউ কেউ গল্পের বই নিয়ে বিছানায় শোয়, আর কেউ কেউ জীবনের শেষ পাতা লিখতে বসে যত্ন করে….
৪০. না কবিতা না তুমি
কবিতার মধ্যে তুমি লুকিয়ে থাকো, সামনে আসতে পারো না দুরন্ত সাহস নিয়ে। ভাঙ্গতে পারো না অচলায়তন, অবাধ্য হতে পারো না নিষিদ্ধ নিষেধাজ্ঞার।
তোমার এলমেল চুল বাতাসে উড়ে, চোখ দুটো মেলে থাকে,
তপ্ত দুপুরে পথিকহীন উড়োখুরো পথের ধুলোয়। যেখানে কোনও বসন্ত সন্ধ্যা বেলায় ভুল করে আমি কখনই হাঁটিনি।
আমাকে টানে মধ্যরাত্রির উতলা হাওয়া, নক্ষত্রহীন নিঃসঙ্গ আকাশ।
আমি গাঢ় অন্ধকারের ভিতর তোমাকে খুঁজি। স্বপ্নহীন ঘুমে তখন তুমি ঘুমিয়ে থাকো। আমার কবিতার শব্দে তোমার ঘুম ভাঙ্গে না।
কী উষ্ণতা চাও, আমার কবিতার কাছে। আমি সমর্পণের জন্য সারারত্রি জেগে থাকি।
তোমার জন্য আমি কবিতার কাছে দেউলিয়া হয়েছি।
ভুল করে কবিতা নির্মাণ করেছি এক রাখাল বাঁশির উদাসীন দুপুরে।
কবিতার সারা অঙ্গে পরিয়েছি অর্থহীন উপমা উৎপ্রেক্ষা।
ক্ষরণ করেছি রক্ত কবিতার দেহে, তোমার আত্মায়।
আমি যশ চাইনি। আমি কবি হতে চাইনি। আমি কবিতায় তোমাকে চেয়েছি।
এই গাঙে, এই জল ভূমিতে কত বান এল, বিবর্ণ এই গিরি উদ্যানে কত অগ্নুৎপাত হলো। শুধু তোমার জন্য আমি অথৈ জলে ভাসতে চেয়েছি,
দহন দাহে আমাকে পুড়ে ছারখার করতে চেয়েছি।
তবুও কিছু পাওয়া হলো না,
না কবিতাকে, না তোমাকে।
৪১. কোনও যতিচিহ্ন নেই
কিছু সময় আসে ভালোবাসা উন্মাতাল হয়
নম্র বুকের উপত্যাকায় মেলে রাখি চোখ
মদিরার মতো তার শরীর থেকে অচেনা গন্ধ ভেসে আসে
স্বপ্ন ভেঙ্গে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়,
শরীর থেকে শরীরে হয় লেনদেন
বেহিসাবী চাওয়া পাওয়া পূর্ণতা পায়-
দেহ নিবিড়ে তৈরি হয় এক প্রগাঢ় আলোড়ন….
৪২. অজ্ঞাত যাত্রা
আমি আগে কখনও প্রেম বুঝিনি
তাই তো ঠোঁটকে মনে করতাম রক্তকরবী
চোখকে মনে করতাম ময়ুরের পালকের ফোঁটা
শরীরকে শরীর মনে হতো না
মনে হতো মণিরত্নম খচিত এক সর্পিণী, এঁকে বেঁকে চলেছে নদীর মতো।
সবকিছু রহস্যময় মনে হতো, বুঝতাম না গন্তব্য কোথায় ! সালভাদর দালির তুলির মতো হাতের আঙ্গুল
উপত্যকা ছুঁয়ে চলে যেত অরণ্য পথে,
সেই পথ চেনা ছিল না কখনও আগে
গ্রীক দেবী আ়ফ্রোদিতিও এসে শেখায়নি প্রেম শাস্ত্র
ও কোনও কলাকৌশল।
আমার ছিল না কোনো বোধ কিভাবে সন্ততি হয়
জানতাম না কিভাবে সভ্যতার বিস্তার হয়
কিভাবে জল ভেঙে জলধি তল থেকে মুক্তা তুলে আনতে হয়।
তারপরেও সাগরতলে অজ্ঞাত যাত্রার অভিযাত্রী আমাকে হতে হয়েছিল।
৪৩. ফিরিয়ে নেব প্রেম
হঠাৎ একদিন দেখি তুমি বদলে গেছ
বদলে গেছে তোমার চুলের সিঁথি,
বদলে গেছে তোমার টিপের রং
শুনেছি অন্য কারোর সাথে বেঁধেছ ঘর।
আমি তো বহুগামী প্রজাপতি ছিলাম না
নস্ট নর্দমার জলও ছিলাম না
আমি নিজকে কখনো রাজহংসও ভাবিনি
তবে তুমি বদলে গেলে কিসের জন্যে।
আমি চলে যেতে চাই অজ্ঞাতে কোনও নিরুদ্দেশে
তার আগে তুমি ফিরিয়ে দাও আমার যত চুম্বন
ফিরিয়ে দাও বসন্ত দুপুরে দেওয়া যত আলিঙ্গন
ফিরিয়ে দাও আমার প্রজন্মের জল
যে জলে ভিজিয়েছিলে তোমার উর্বর ভূমি।
আমি কোনও অভিজ্ঞান চিহ্ন রেখে যেতে চাই না
ফিরিয়ে নেব প্রেম, যত দুঃখ, যত গ্লানি ।
৪৪. তোমার গ্লানি
আমি তোমার চোখ দেখেই বুঝতে পারি, তুমি কী চাও —
রৌদ্র ক্লান্ত দুপুরে তোমার ঘুম এসে যায়
অযাচিত কোনও স্বপ্নের ঘোরে তুমি যা চাও
আমি তা বুঝতে পারি।
আমি বুঝতে পারি, তোমার বুকের নিচে অনন্ত উত্তাপ
তোমার কপাল ঘেমে যায়, ঘর্মাক্ত পিঠের উষ্ণতা বলে দেয়,
তুমি যা চাও সে আমার ছায়া।
তুমি কখনও হেঁটে হেঁটে তোমার ঘরের সিঁড়ি পর্যন্ত নেমে আসো, দাঁড়িয়ে থাকো নির্লিপ্ত
আমি বিদ্ধ হই তোমার বুকের খাঁজে,
আমি বুঝতে পারি তোমার এই থেমে যাওয়া পথ চলায়
ধরতে চাও কার হাত।
ঐ হাত তোমার বিশ্বস্ত নয়, চোখের পাতার নিচে যে চরাচর
সেখানে আমার বসবাস নেই।
এই আমি দিতে পারতাম, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম প্রেম
অজস্র ফলন যোগ্য ফসলের বীজ —
কিন্তু তুমি ভূমি নারী হয়ে উঠতে পারলে না।
৪৫. সর্বভুক মাংস ও করোটি
অপেক্ষায় থাকি শাড়ির আ্ঁচল তুলে দেখব তোমার পিঠের আঁচিল, দেখব সব কালো তিলক যেখানে আছে।
রমণীর কাছে কবিরা পরপুরুষ, প্রেমভোগী প্রজাপতি
ভালোবাসে ছিন্নভিন্ন ফুলের পাপড়ি
নরম মাংসের শরীর শুয়ে থাকে গ্রীবা বাঁকিয়ে নদীর মতো
ঝরে জ্যোৎস্না কা্ঁপে বসন্তের বাতাস দিগ্বিদিগ ঊর্ধশ্বাসে।
ভালোবাসি কলাবতী নারীর শরীর
করি কুর্নিশ তার দেহপল্লবে
দেখি তার ভোগচিহ্ন, যখন রক্তাক্ত হয় সর্বভুক মাংস ও করোটি ।
৪৬. অহংকার ছিল যৌবনের
তোকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, অহংকার ছিল যৌবনের
অহংকারে হেঁটেছিস তোর বাড়ির উঠোনে
কাঁদা লাগাসনি পায়ে, জলে ভিজাসনি শাড়ি
বলেছিলাম তোকে– বু্নো জ্যোৎস্নায় স্নান করতে এক সাথে
তুই খুলেসনি শাড়ি, খুলেসনি অন্তর্বাস,
কিসের এত অহংকার ছিল তোর ?
যৌবন তো শুকিয়ে ফেলেছিস, অহংকার চূর্ণ করেছিস বলিরেখায়
নদীর জল শুকিয়ে ফেলেছিস
কোথায় সেই ফেনায়িত ঝর্নাধারা ?
অনুর্বর ভুমি, শুকিয়ে চৌচির হয়েছে মৃৃত্তিকা
এমন অনুর্বর ভুমি এমন জলহীন নদী
কীসের এত আহলাদ তোর!
যদি পারিস আবার নদী হ, আবার জলে ভর্ নদী
আবার উর্বর কর্ ভূমি
তবেই আমি লাঙ্গলের ফলা চালাব,
সাঁতরাব নদী।
৪৭. একটি ভুল
ভুলটি কখন করেছিলাম? ঠিক
কখন? ক্লান্ত পাখির তৃষিত
মর্মর দুপুরে?
প্রজাপতি লুকিয়ে পড়েছিল
মহুয়া বনে
জলজ মেঘ শুকিয়ে গিয়েছিল।
তপ্ত রৌদ্রে
ভ্রমর উড়ছিল
তুমি কানের কাছে হাত উঠিয়ে
ডাক দিয়েছিলে ইশারায়
কী দ্বিধা হলো
কী শিহরণে দুলে উঠল
মহুয়া বন
গাঁদা ফুলের ঝাড়!
ঘুম ঘুম শরীর
চোখের কথা
মনের কথা
নিস্তব্ধ দুপুর যেন
সব আলো নিভে দিল
কেমন অন্ধকার!
তুমি শুয়ে আছ ঘাসে
মৌ মৌ মৌনতা মহুয়া বনে
কেঁপে উঠল ধরিত্রী
ভরে উঠল নদী
মহুয়া ফুলের ঘ্রাণ তিন দিগন্ত
জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল
পাখি ডাকল
কবিতার মতো গাঁদা ফুলে
রোদ্দুর মাখা মেঘে
আকাশের ছায়ায়!
কী ভুল আমরা করেছিলাম?
সব কী দুপুরের স্বপ্নের
মতোন ছিল?
তোমার কী মনে আছে সেই
ভুলটির কথা!
৪৭. মনে নেই
সারারাত যে ছিল পাশে সকালবেলা দেখি সে নেই।
কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে ভেসে আসছে ধবল
তুষার কুচি
আমাদের যৌথ শরীর কখন বিচ্ছি্ন্ন হয়েছিল
কখন ছেদ পড়েছিল,
কখন তরঙ্গায়িত নদীর বা্ঁধ ভেঙ্গেছিল
কখন স্রোতধারা গড়িয়ে এসে ভিজে দিয়েছিল সারা বিছানায় —
বিমুগ্ধ সকালবেলায় কোনো কিছুই আর মনে পড়ছে না।
৪৯. পৃথিবী
শুধু ভালোবাসতে চাই
শুধু তুমি আমার সাথে থাকবে
আমি শুধু জানতে চাই
তুমি আমার পাশে আছো কি?
একসঙ্গে আমরা একটি জীবনকাল অতিবাহিত করব
এটা আমাদের জন্য কঠিন হবে না
আমি তোমার সাথে আছি!
আমার আত্মা তোমার আত্মায় একাকার,
যাকে দুজনেই ভালোবাসি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি
আমি চিৎকার করে বলছি, তোমাকে ভালবাসি।
আমার শ্বাস তোমাকে দিচ্ছি, তুমি তার প্রশ্বাস নিচ্ছ,
আমার স্পন্দন তোমার আত্মায় ধ্বনিত হচ্ছে ।
তুমি আমার আত্মা, সূর্য এবং সমুদ্র —
আমাদের পুরো জীবন এর চেয়ে সুন্দর আর কি!
তোমার আমার জন্যই এই পৃথিবী তৈরি!
৫০. চাই দেখার মতো সুন্দর চোখ
কোঁকড়া চুলের কোনো মেয়েকে চুল খুলে
রাখতে দেখলে মনে হয়, ও কেন চুল বেঁধে রাখে না,
কেমন কাকের বাসার মতো ওর মাথার চুল!
ঐ কালো মেয়েটি
কেমন গাঢ় রঙের শাড়ি পরে থাকে
ও কেন হালকা নীল রঙের শাড়ি পরে থাকে না,
কেমন কিম্ভূত ওর কালো শরীর!
আর ঐ মেয়েটি অরক্ষণীয়া,
যত ছেলে দেখতে আসে পছন্দ করে না কেউ
মেয়েটির পায়ে আলতা পরা হয় না
হাতে মেহেদি দেয়া হয় না, কপালে দেয় না টিপ!
আচ্ছা যদি এমন হয়,
ঐ কোঁকড়া চুলের মেয়েটিকে বনলতা সেনের মতো দেখতে অসাধারণ লাগছে!
ওই শ্যামলা মেয়েটাকে গাঢ় শাড়িতে মোহনময়ী লাগছে!
আর ঐ অরক্ষণীয়া মেয়েটিকে কোনো এক ‘রাজপুত্র’ এসে ‘রাজরানী’ করে ঘরে তুলে নিয়ে গেছে।
চাই শুধু দেখার জন্য সুন্দর চোখ!
৫১. মনে রেখ না
জীবনের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে দুঃখ খেদ
হে আমার অনন্ত শৈশব
আমার হেমন্ত বিকেল
ধানক্ষেতের মৃন্ময়ী গন্ধ
তোমরা আমাকে মনে রেখ না।
প্রেম লুকিয়ে থাকে প্রেমিকার হৃদয় গহ্বরে
হে আমার জগৎ বিধ্বংসী বিষাদ রমণী
আমার আকাংখার মৃত্যু
অস্বাদিত কামনার ছন্দ
তোমরা আমাকে মনে রেখ না।
যাতনা লুকিয়ে থাকে চোখের অশ্রু তলে
হে আমার দুঃস্বপ্নের রাত্রি
আমার নির্ঘুম চোখের তারা
অনাদরের সকল চুম্বন স্শর্শ
তোমরা আমাকে মনে রেখ না।
মৃত্যু লুকিয়ে থাকে স্পন্দনহীন আত্মার ভিতরে
হে আমার স্বপ্ন সৌধে গড়া তাজমহল
আমার স্বপ্ন ভঙ্গের দীর্ঘশ্বাস
অপ্রেমের যত গ্লানি, নিঃসৃত বেদনা
তোমরা আমাকে মনে রেখ না।
৫২. তুমি স্বৈরিণী নও
পুরুষকে তুমি কী মনে করো ? পুরুষ মানেই কি মধুকর ?
তুমি স্বৈরিণী নও, ময়ুরাক্ষীও নও, তুমি প্রেমিকা
আমি চাইলেই স্ত্রৈণ হতে পারি না,
তুমি পারো না স্বৈরিণী হতে,
আমরা যা-ই হই, স্ত্রৈণ কিংবা স্বৈরিণী
আমরা প্রেমবুভূক্ষু এক যুগল, ভালোবাসি প্রেম
যে প্রেম উৎসব করে দেহে, স্বর্গে কিংবা নরকে।
৫৩. এসো জল দেই
বাড়িয়ে দাও হাত এসো স্পর্শ করি
যে হাতে আমার ছোঁয়া পড়েনি
সে হাতে কোনই অলংকার কী মানায়?
এসো বুক বাড়িয়ে দাও, আলিঙ্গন করি
যে বুকে জড়াওনি আমার বুক
সে বুক কী কখনও বনমল্লিকা ফুটবে?
ঠোঁটও তো শুকনো হয়ে আছে, এসো চুম্বন আঁকি
যে ঠোঁটে আমার স্বপ্ন ছোঁয়া নেই
সে ঠোঁটে কি কৃষ্ণচূড়ার আগুন জ্বলবে?
উপত্যাকায় লতাগুল্মে ছেয়ে ফেলো না
নদীতে জল ভরো ,খরস্রোত রাখো মোহনা
এসো জল দেই, সাঁতার কাটো সহস্র বছর।
Leave a Reply