আবার মহাভারত – শশী থারুর
অনুবাদ – ঝিমলি মুখার্জি পাণ্ডে
সম্পাদনা – ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়
প্রথম পত্র ভারতী সংস্করণ ৩০ জানুয়ারি ২০১৪
GREAT INDIAN NOVEL – by Shashi Tharoor গ্রন্থের বাংলা সংস্করণ
First Edition 1989
Translated by Jhimli Mukherjee Pandey
Edited by Tridib Kumar Chattopadhyay
প্রচ্ছদ মানস চক্রবর্তী
ABAR MAHABHARAT By Shashi Tharoor
Published by PATRA BHARATI
আমার দুই ছেলে
ইশান ও কনিষ্ক
এবং
আমাদের একান্ত
তিলোত্তমাকে
.
শেষ-কথা
আমার এই নভেল-এর অনেক চরিত্র, ঘটনাপ্রবাহ এবং প্রেক্ষাপট মহাভারতের মূল কাহিনিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। আজও ভারতীয় পাঠকদের কাছে মহাভারত সবচেয়ে জনপ্রিয়। আমি সংস্কৃতের পণ্ডিত নই। তাই আমাকে এই উপন্যাস লেখার জন্য নির্ভর করতে হয়েছে মূলত ইংরেজি অনুবাদগুলির ওপর। আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ সি. রাজাগোপালচারি এবং পি. লাল-এর অনুবাদ দুটির ওপর। এই দুটিকে ধরে নেওয়া হয় দক্ষিণ ভারত এবং উত্তর ভারতের দুই ধারার মহাভারত বিবরণী হিসেবে। এই দুটির বাচনভঙ্গির এবং তাত্বিকতার বেশ ফারাক রয়েছে। দুটিতেই অবশ্য একই গল্প বলা হয়েছে। আমি এই দুটির ওপরেই বিশেষভাবে নির্ভর করেছি।
উপন্যাসটির ঘটনাপ্রবাহ যদিও মহাভারতের গল্পের সঙ্গে মেলে, আমি আমার কাহিনিতে অনেক কাটা-ছেঁড়া করেছি। মূল কাহিনির স্রোত-এর থেকে অনেক জায়গাতেই আমি তাই আলাদা। আমি পি. লাল বা রাজাগোপালচারিকে আমার পাপের ভাগী করতে পারি না। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
পাঠককে বলব তিনি যেন অবশ্য মহাভারতের এই দুটি ভাষান্তর পড়ে ফেলেন। প্রফেসর জে এ বি বুইটেনেনের ভাষান্তরটাও পড়ে দেখা যেতে পারে। আমার বইটা যখন প্রকাশের অপেক্ষায়, তখন আমি জিন-ক্লড-ক্যারিয়েরের মহাভারত নিয়ে লেখা নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়ে ফেলি। আমি পড়েছিলাম পিটার ব্রুকের ভাষান্তরটিও।
আমার এই লেখার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আমার।
শশী থারুর
.
কেন এই ভাষান্তর?
আমি সাংবাদিক। সেই সূত্রেই আমার শশী থারুরের সঙ্গে আলাপ। মৌখিক নয়, ইন্টারনেটে। লেখক এবং ডিপলোম্যাট ছাড়াও শশী কেন্দ্রীয় সরকারের হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রকের মন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বে একটা প্রজেক্ট চালু হয়েছে। যেটা ইউনিভার্সিটি প্রজেক্ট। সে ব্যাপারে খবর লিখতে গিয়েই আলাপ। তারপর কিছু গল্পসল্প।
গল্প করতে করতেই তাঁকে ই-মেলে জিগ্যেস করি তাঁর নিজস্ব গল্প-উপন্যাস লেখালিখির কথা। লেখক শশী থারুর ‘ইন্ডিয়ান-ইংলিশ’ লেখকদের জগতে এক জনপ্রিয় নাম।
বুঝতে পারলাম, তাঁর অত্যন্ত প্রিয় বিষয় নিয়ে জিগ্যেস করেছি।
মন্ত্রকের কাজের বিপুল চাপের মধ্যেও কীভাবে দৈনন্দিন জীবনের অজস্র ঘটনা তিনি মনে গেঁথে রেখে দেন, পরে গল্পের প্লট হিসেবে ব্যবহার করবেন বলে, এ সত্যিই বিস্ময়কর।
তাঁর সবচেয়ে প্রিয় লেখা কোনটি জিগ্যেস করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জবাব এল, ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান নভেল।’
বইটি এতই জনপ্রিয় যে সম্প্রতি এটির আঠাশতম সংস্করণ বেরিয়েছে।
তাঁকেই জিগ্যেস করি, আমি বইটির বাংলা অনুবাদ করলে কেমন হয়? শশী অত্যন্ত উৎসাহিত হয়ে পড়েন। তাঁর ছেলেবেলা কলকাতায় কেটেছে। তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ছাত্র। তাই কলকাতা আর বাংলাকে নিয়ে তাঁর উৎসাহের অন্ত নেই। শশী ছেলেমানুষের মতো আনন্দে ফেটে পড়েন প্রস্তাবটিতে।
‘এ তো দারুণ ব্যাপার। বাংলায় আমার বই বেরোচ্ছে, কলকাতার মানুষ বাংলায় আমার বই পড়ছে, ভাবতেই রোমাঞ্চ হচ্ছে!’
নিজের প্রকাশকের সঙ্গে বাংলা বইটির প্রকাশকের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে নভেলটির এক কপি আমাকে অনুবাদের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া, এ সবটাই শশী নিজের উৎসাহে করে ফেললেন।
বইটি অনুবাদ করতে গিয়ে এক দারুণ উপলব্ধি হল। মনে পড়ে গেল সেই প্রবচন, ‘যা নেই ভারতে, তা আছে মহাভারতে।’ অর্থাৎ মহাভারতে যা নেই, তা ভূভারতে কোথাও নেই।
‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান নভেল’-এ সেই মহাভারতের প্রবর্তন করেছেন শশী। সেই গল্প, সেই চরিত্র তিনি বসিয়েছেন প্রাক-স্বাধীন ভারতের এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী তিন দশকের ইতিহাসের সত্য-কল্পনায় মেশা কাহিনিতে। এ এক অসাধারণ ভাবনা। পড়তে পড়তে মনে হবে, সত্যি ওই তো দেখতে পাচ্ছি আমাদের খুব চেনা রাজনৈতিক চরিত্রগুলিকে। তাদের গভীর কূটনৈতিক চালগুলির মধ্যে ফুটে উঠছে তাদের জীবন-মানসিকতা। আবার তারই মধ্যে কী সুন্দরভাবে মিলে-মিশে যাচ্ছে মহাভারতের সেই চেনা কাহিনিক্রম।
গল্প যেমন এগিয়েছে, লেখকের ভারতীয় দর্শনজ্ঞান তেমনই পাঠকের উপলব্ধিতে রং ধরিয়েছে। শেষে দর্শন, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং আধুনিক মূল্যবোধ সব একাকার হয়ে গেছে।
শশীকে তো বটেই, পত্র ভারতীকেও আমার কৃতজ্ঞতা জানাই, এই কাজটি করবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
ঝিমলি মুখার্জি পাণ্ডে
৯ জানুয়ারি ২০১৪
Leave a Reply