আজাজেল্ – আইজাক আসিমভ
ফ্যান্টাসি কাহিনী
অনুবাদ : অনিশা দত্ত
Azazel by Isaac Asimov
প্রথম প্রকাশ : বইমেলা, ফেব্রুয়ারি ২০০৯
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
অনুবাদকের উৎসর্গ
সন্দেশ প্রকাশনার লুৎফর রহমান চৌধুরী প্রীতিভাজনেষু
সূচনা
১৯৮০তে এরিক প্রর্টার নামে এক ভদ্রলোক আমাকে, তার সম্পাদনায় একটি পত্রিকার জন্য মাসিক রহস্য কাহিনী লিখতে অনুরোধ করেন। আমি সম্মত হই, কারণ আমি সজ্জনদের ‘না’ বলতে পারি না আর আমি এ যাবৎ যত সম্পাদকের সংস্পর্শে এসেছি, তারা যথাযথ সজ্জন।
প্রথম কাহিনী আমি লিখি, এক ধরনের কল্পরহস্য যেখানে দুই সে.মি. লম্বা এক ক্ষুদ্র জিনের কথা বলেছি, নাম দিয়েছিলাম, ‘শঠে শাঠং।’ এরিক প্রর্টারের মনে ধরেছিল ও তিনি তা প্রকাশ করেন। এতে গ্রিসওল্ড নামে এক ভদ্রলোকের কথা বলেছিলাম যিনি ছিলেন মূল বক্তা আর সাথে ছিলেন তিন শ্রোতা। যার মধ্যে আমি নিজেও ছিলাম, যদিও নিজের পরিচয় দিইনি। চারজনে প্রতি সপ্তাহে ইউনিয়ন ক্লাবে মিলিত হতাম, আর আমি ইউনিয়ন ক্লাবেই গ্রিসওল্ডের গল্পের পরিকল্পনা করেছিলাম। যাই হোক, যখন আমি ছোট্ট জিনকে নিয়ে ‘শঠে শাঠং’ নামে দ্বিতীয় কাহিনীর সূচনার চেষ্টা করছিলাম (নতুন কাহিনীর নাম দিলাম, ‘সঙ্গীতের এক রজনী’)।
এরিক বললেন, ‘না!’ হয়তো বা, এক বাক্যে, উদ্ভট কল্পনার আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু সে চায়নি, আমি সেটা অভ্যাসে রপ্ত করে ফেলি।
অতএব, আমি ‘সঙ্গীতের এক রজনী’কে এক পাশে সরিয়ে রেখে রহস্য কাহিনীর ধারাবাহিক শুরু করলাম, যাতে কোনো উদ্ভট কল্পনার মিশেলই দিলাম না। এদের মধ্যে তিনটি গল্প (যা এরিক চেয়েছিলেন দুই হাজার থেকে দুই হাজার দুশো শব্দের মধ্যে ) ঘটনাক্রমে আমার বই ‘দ্য ইউনিয়ন ক্লাব মিস্ট্রি’তে (ডাবল ডে, ১৯৮৩) সংগৃহীত হয়েছিল। এর মধ্যে ‘শঠে শাঠং’কে অন্তর্ভুক্তি করিনি, কারণ ছোট্ট জিনের বিবৃতি, বাকি গল্পগুলোর সঙ্গে খাপ খেত না।
ইতিমধ্যে আমি ‘সঙ্গীতের এক রজনী’ নিয়ে মেতেছিলাম। অপচয়কে আমি ঘৃণা করি। আমার কোনো লেখা অপ্রকাশিত থাকুক, আমার সহ্য হয় না। পরিস্থিতি সামলাতে, যাহোক করতে আমি প্রস্তুত। অতএব এরিকের দ্বারস্থ হয়ে বললাম, ‘সেই গল্পটা, ‘সঙ্গীতের এক রজনী’ যেটা তোমার পছন্দ হয়নি, আমি কি অন্য কোথাও প্রকাশ করতে পারি?’
তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই পারেন। কিন্তু শর্ত থাকবে, চরিত্রগুলোর নাম বদলে ফেলতে হবে। আমি চাই গ্রিসওল্ড ও তার সঙ্গীসাথীরা বিশেষভাবে আমার পত্রিকাতেই বিরাজ করুক।’
তাই-ই করলাম। গ্রিসওল্ডের নাম বদলিয়ে, ‘জর্জ’ দিলাম আর শ্রোতা হিসেবে রাখলাম একজনকেই। প্রথম পুরুষ হিসেবে, আমি নিজে। সেটা তো হল। আমি ফ্যান্টাসি ও সায়েন্স ফিকশন-এর পত্রিকাতে সেটি বিক্রি করে দিলাম। এরপর ঐ ধরনের এক কাহিনী লিখলাম, ভাবধারা হল জর্জ ও আজাজেলের কাহিনী। জিনের নাম দিলাম আজাজে। এই বইটি (যে হাসি হেরে যায়, ঐ পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমার নিজেরও কল্পবিজ্ঞানের এক পত্রিকা ছিল, ‘আইজাক আসিমভের কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা’ আর শাওনা ম্যাককার্থি, তৎকালীন সম্পাদক ‘এফ্ অ্যান্ড এসএফ’ পত্রিকায় দেওয়ার বিরোধিতা করলেন। তিনি প্রস্তাব দিলেন, ‘ছোট্ট জিন আর তার যাদুকে, উন্নত প্রযুক্তির অপার্থি। প্রাণীতে বদলে দিন আর সকল কাহিনী আমার কাছে বিক্রি করে দিন।
তাই-ই করলাম। আর তখন থেকেই আমার জর্জ ও আজাজেলের কাহিনীগুলো নিয়ে খ্যাপামি ছিল। আমি লিখতে শুরু করলাম আর বর্তমানে আমি এই গল্পগুলো থেকে আঠারোটি নিয়ে ‘আজাজেল্’-এ সংকলিত করেছি। মোট আঠারোটি গল্পের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হল। কারণ গল্পগুলো আয়তনে কমাবার তাগিদ ছিল না এরিকের পক্ষে। তাই আমি জর্জ ও আজাজেলের গল্পগুলো দ্বিগুণ দীর্ঘ করতে পেরেছি।
কিন্তু এবারেও আমি শঠে শাঠংকে এর মধ্যে ঢোকাতে পারলাম না। কারণ পরবর্তী গল্পগুলোর সঙ্গে এর সুর তাল মিলত না। দুটি বিভিন্ন ধারাবাহিকের ধারণার মূল অনুপ্রেরণা থাকায়, শঠে শাঠং-এর বিরূপ ভাগ্যে, দুটি পৃথক ধারায়, কোনোটাতেই খাপ খাওয়ানো গেল না (যাক গে, সঞ্চয়ন তো হয়েই রইল, ভবিষ্যতে কোনো না কোনো রূপে আত্মপ্রকাশ করবে। এর জন্য খুব দুঃখ করার প্রয়োজন নেই)।
গল্পগুলো সম্পর্কে আমি কিছু যুক্তির অবতারণা করতে চাই, হয়তো আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন। কিন্তু আমি এক প্রকার বাচাল।
১। যেমন আমি বলেছি, প্রথম গল্পটি বাদ দিই, ছোট্ট জিনের গল্পটি অন্যগুলোর সঙ্গে মিলছিল না। আমার সুন্দরী সম্পাদিকা জেনিফার ব্রেল জোর দিয়েছিলেন কিভাবে আমি ও জর্জ পরস্পরের সাথে পরিচিত হই, এবং জর্জের জীবনে কীভাে ছোট্ট জিনের অনুপ্রবেশ ঘটে। সেই প্রসঙ্গের অবতারণা আবশ্যিক।
যদিও জেনিফার মধুর স্বভাব, তথাপি সে যখন দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ হয়, তখন তার সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন।
আমি দুই সে.মি. জিনের গল্প লিখে ফেললাম এবং তার কথামতো বইটিতে প্রথম গল্প হিসাবে অন্তর্ভুক্তি ঘটল। এর পরেও কথা ছিল, জেনিফার চেয়েছিলেন, আজাজেল্ সংশয়াতীতভাবে জিনই হোক, অপার্থিব কোনো প্রাণী নয়। অতএব আমরা উদ্ভট রূপকথায় ফিরে এলাম। ‘আজাজেল্’ বাইবেলে উল্লিখিত এক নাম, পাঠকরা একে জিন হিসাবেই গ্রহণ করে থাকেন, যদিও বিষয়টি অপেক্ষাকৃত জটিলতর।
২। জর্জকে খানিক বিষাদগ্রস্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও আমি নির্জীব ব্যক্তি পছন্দ করি না। তবু জর্জকে আমি ভালবাসি, আপনারাও বাসবেন। প্রথম পুরুষটি (আদতে আইজাক্ আসিমভ্) প্রায়শই জর্জ দ্বারা অপমানিত হয়েছেন এবং অবধারিত কয়েক ডলার খোয়াতে হয়েছে। কিন্তু আমি কিছু মনে করি নি। প্রথম গল্পের শেষে আমি বিশ্লেষণ করেই দিয়েছি, তার গল্পগুলো উৎকৃষ্ট ছিল এবং সেগুলো থেকে আমি যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেছি। বিশেষত জর্জকে যা দিয়েছি (অবশ্যই কল্পনায় নয়), তার থেকে অনেক বেশি।
৩। অনুগ্রহ করে সতর্ক থাকুন, গল্পগুলো একাধারে হাস্যরস-স্নিগ্ধ ও শ্লেষাত্মক। যদি গল্পের ধরন অতিরঞ্জিত ও ‘আসিমভোচিত’ না হয়, তবে তা উদ্দেশ্যমূলক। একে সতর্কবাণী মনে করবেন। অতিরিক্ত কিছুর প্রত্যাশা করে বইটি কিনবেন না ও গরে পস্তাবেন না। যাক গে, যদি পিজি উডহাউসের সামান্যতম প্রভাবও লক্ষ্য করে থাকেন, তবে বিশ্বাস রাখবেন এটি দৈবক্রমে ঘটেনি।
আজাজেল্ বল খেলা দেখতে যায়
সে রাতে আমি বাস্কেট বল খেলা দেখতে গিয়েছিলাম আর আজাজেল্ ছিল আমার পকেটে। খেলা দেখার জন্য সে পকেট থেকে মাথাটি উঁচিয়ে রাখছিল, আর কেউ তাকে দেখে ফেললে, মস্ত প্রশ্ন উঠত। তার ত্বক উজ্জ্বল লাল আর তার কপালে সিং- এর দুটি ছোট্ট দলা। ভাগ্যিস, সে সবসুদ্ধ বেরিয়ে আসেনি, কারণ তার সবচেয়ে প্রকট আর সবচেয়ে বিরক্তিকর ছিল এক সে.মি. লম্বা মাংসল লেজ। খেলার শেষে সে মন্তব্য করল, ‘বিশালবপু জবরজং যাচ্ছেতাই মানুষগুলোর,
খেলার মাঠে উদ্যম দেখে আমার যতদূর মনে হল, যখনই গর্তের মধ্যে দিয়ে বলটি গলিয়ে ফেলে দেওয়া যাচ্ছে, তখনই ভরপুর উত্তেজনা।
‘ঠিক তাই!’ আমি বলি, ‘তুমি এক বাস্কেট জিতলে।
‘তাহলে, এই বোকা-বোকা খেলায় তোমার এই আশ্রিত এক বীরোচিত খেলোয়াড় হতে পারত, যদি প্রতিবারই সে গর্তের মধ্যে দিয়ে বলটাকে গলিয়ে দিতে পারত।’
‘একদম ঠিক!’
পরবর্তী নির্ধারিত খেলার জন্য অপেক্ষা করতে করতে, আমি খানিক উত্তেজিত হয়ে পড়লাম। ছোট্ট জুনিপারকে আমি একটা কথাও বলিনি, কারণ তখনো পর্যন্ত আমি আজাজেলের দানবিক শক্তি ব্যবহার করিনি এবং তার কথাবার্তার সঙ্গে কার্যকলাপের সঙ্গতি থাকবে, সে সম্পর্কেও সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলাম না।
তাছাড়াও, আমি তাকে চমকে দিতে চেয়েছিলাম। (এবং তার পর যা ঘটেছিল, আমরা দুজনেই যারপরনাই অবাক হয়েছিলাম)
Leave a Reply