অ্যাস্ট্রোফিজিকস : সহজ পাঠ – নীল ডিগ্র্যাস টাইসন ও গ্রেগরি মোন
(অ্যাস্ট্রোফিজিকস ফর ইয়াং পিপল ইন আ হারি)
ভাষান্তর – আবুল বাসার
প্রথম প্রকাশ : অগ্রহায়ণ ১৪২৮, নভেম্বর ২০২১
প্রকাশক : প্রথমা প্রকাশন
প্রচ্ছদ : আরাফাত করিম
Astrophysics Sohoj Path
(Astrophysics for Young People in a Hurry) by Neil DeGrasse Tyson & Gregory Mone Translated in Bangla by Abul Bashar
Published in Bangladesh by Prothoma Prokashan
অনুবাদকের কথা
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই নিঃসীম অন্ধকারে নক্ষত্রখচিত রাতের আকাশ মানুষকে মুগ্ধ করেছে। কৌতূহলী মানুষের মনে ছুড়ে দিয়েছে নানান প্রশ্ন। সে কারণেই ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ মার্টিন রিজ একবার বলেছিলেন, ‘আমাদের চারপাশের পরিবেশের সবচেয়ে মহাজাগতিক অংশটি হলো রাতের আকাশ।’
খালি চোখে রাতের আকাশে মোটামুটি ৩ হাজার তারা দেখা যায়। আকাশভরা ফুটকি-ফুটকি স্থির বা চলমান আলোর ব্যাখ্যা বিভিন্ন দেশ, কাল বা জাতির কাছে ছিল বিভিন্ন রকম। ফলে দেশে দেশে গ্ৰহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ বা অন্য স্বর্গীয় বস্তুগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা উপকথা বা কল্পকাহিনি। আবার প্রাচীন অনেক জাতির কাছে সূর্যসহ অন্য তারাগুলো ছিল আকাশের দেবতা। প্রাচীন অনেক ধর্মের ভিত্তি হিসেবেও কাজ করেছে এসব গ্রহ-নক্ষত্র। আবার কারও কারও কাছে গ্রহ-নক্ষত্রগুলো ছিল তাদের ভাগ্যনিয়ন্তা। এভাবেই একসময় গড়ে উঠেছিল জ্যোতিষশাস্ত্র। সেখান থেকে পরে জন্ম নেয় জ্যোতির্বিজ্ঞান। অবশ্য প্রাচীনকালের প্রেক্ষাপটে জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিদ্যা প্রায় সমার্থক ছিল। মধ্যযুগে এসে গ্রহ-নক্ষত্রের ওপর থেকে দেবত্ব সরিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা বা আলোচনা শুরু হয়।
তবে বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের আগে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বলে কিছু ছিল না। কথিত আছে, একদিন নিজের গ্রামের খামারবাড়িতে হাঁটতে গিয়ে একটা আপেলগাছ থেকে আপেল নিচে পড়তে দেখেন নিউটন। ঠিক সেই মুহূর্তে নিজেকে অসাধারণ একটা প্রশ্ন করলেন তিনি : আপেল নিচে পড়ে কেন? এই প্রশ্ন থেকে বেরিয়ে এল বিখ্যাত মহাকর্ষ সূত্র। ১৬৭৮ সালে তাঁর লেখা বিখ্যাত প্রিন্সিপিয়া প্রকাশের পর গোটা বিজ্ঞানজগৎই ওলট-পালট হয়ে যায়। সেদিন থেকে জন্ম নেয় এক নতুন বিজ্ঞান তথা জ্যোতির্বিজ্ঞানের নতুন এক শাখা—জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বা অ্যাস্ট্রোফিজিকস।
নিউটনের সেদিনের সেই অন্তর্দৃষ্টির কারণে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে গ্রহ-উপগ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথসহ মহাবিশ্বের বেশ কিছু রহস্য। এ বিষয়ে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী স্টিভেন ওয়াইনবার্গের কথাটা স্মরণযোগ্য। নিউটনের জগদ্বিখ্যাত প্রিন্সিপিয়ার গুরুত্ব বোঝাতে বলেছেন, ‘১৬৭৮ সালের পর থেকে যা যা ঘটেছে, তা আসলে প্রিন্সিপিয়ার নিচে লেখা পাদটীকা।’ আসলে নিউটনের হাতে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান জন্ম নেওয়ার পর আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক ঘটনার সহজ-সরল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মিলেছে।
সেই সঙ্গে আমরা হাতে পেয়েছি মহাকাশের অনেক ঘটনারও ব্যাখ্যা। বিশ শতকে এসে আলবার্ট আইনস্টাইনের হাতে জন্ম নেয় বিশেষ ও সাধারণ আপেক্ষিকতা। এতে পূর্ণতা পায় জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান। তার সাধারণ আপেক্ষিকতার সমীকরণ সমাধান করে মহাবিশ্বের অনেক অভিনব ব্যাপার উন্মোচিত হতে থাকে। আধুনিক যুগের ভিত্তি আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম তত্ত্ব। এই দুইয়ের ওপর ভিত্তি করে নিত্যনতুন গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের অনেক জটিল রহস্য সমাধান করে ফেলেছেন।
এখন আমরা জানি, বিগ ব্যাং নামের একটা বিপুল বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে গড়ে উঠেছে আমাদের মহাবিশ্ব। এর বিস্তৃতি বর্তমানে প্রায় ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষজুড়ে। বিশাল, বিপুল এই মহাবিশ্বের তুলনায় অতিক্ষুদ্র এক ছায়াপথে আমাদের আবাস, যার নাম মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। এ রকম আরও কোটি কোটি ছায়াপথ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে গোটা মহাবিশ্বে। তবে ক্ষুদ্র বললেও আমাদের ছায়াপথের বিস্তৃতি প্রায় ১০ হাজার আলোকবর্ষ। এর সহজ মানে হলো, মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ গতিবেগ বা আলোর গতিবেগে চললেও আমাদের ছায়াপথের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে সময় লাগবে ১০ হাজার বছর। আর এই মিল্কিওয়ে ছায়াপথেই নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় ৪০০ বিলিয়ন। অন্যদিকে বিজ্ঞানীদের হিসাবে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে ১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০টি (বা ১০^২১টি) নক্ষত্র আছে।
বিশালত্ব বা বিপুলতার এখানেই শেষ নয়। কারণ, মহাবিশ্বে এর বাইরে আরও এলাকা আছে, যেখান থেকে কোনো আলো এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। ভবিষ্যতেও পৌঁছাবে না বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। কাজেই সেখানে নক্ষত্র বা ছায়াপথের সংখ্যা কত, তা-ও আমরা জানি না। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে মহাবিশ্বের যেমন অসংখ্য অজানা ও রহস্যময় ব্যাপার আমরা উদ্ঘাটন করতে পেরেছি, একই সঙ্গে অনেক রহস্য ও আমাদের অজ্ঞানতা আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ রকমই কিছু বিষয় কৃষ্ণগহ্বর, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি।
মহাবিশ্বের জন্ম, বিকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র, ছায়াপথ, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জিসহ মৌলিক কিছু প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন বিজ্ঞানী- গবেষকেরা। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এসব বিষয়ে কৌতূহল রয়েছে। সেসব প্রশ্নের উত্তর জোগাতে ২০১৭ সালে অ্যাস্ট্রোফিজিকস ফর পিপল ইন আ হারি শিরোনামে একটা বই লেখেন মার্কিন জ্যোতির্বিদ নীল ডিগ্লাস টাইসন। সে বইটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়েছিল। প্রায় এক বছর বইটা স্থান পেয়েছিল দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর নন-ফিকশন ক্যাটাগরিতে সেরা বইগুলোর তালিকায়। বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় সেটা অনূদিতও হয়েছে।
দুই বছর পর সেই বইটা কিশোরদের উপযোগী সংস্করণ করে প্রকাশিত হয় অ্যাস্ট্রোফিজিকস ফর ইয়াং পিপল ইন আ হারি। এর সহলেখক গ্রেগরি মোনে। এ বইয়ের বাংলা অনুবাদ অ্যাস্ট্রোফিজিকস : সহজ পাঠ। মূলত মহাবিশ্বের জানা-অজানা ও রহস্যময় বিষয়গুলো কিশোরদের উপযোগী ভাষায় উপস্থাপন করেছেন নীল টাইসন। সঙ্গে আছে ভাষার সারল্য ও তার স্বভাবসুলভ রসময়তা, যা বইটিকে করে তুলেছে সুখপাঠ্য। তাই মহাবিশ্বকে জানার এই অভিযান এককথায় মজার এক মহাজাগতিক ভ্রমণ। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞান বা জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী নতুন পাঠকদের জন্য বইটা অবশ্যপাঠ্য
হ্যাপি রিডিং। আবুল বাসার
ঢাকা, অক্টোবর, ২০২১
Chand mul sk
Indian west bengal lalgola mursidabad