অর্থতৃষ্ণা – একটি স্টিমপাঙ্ক থ্রিলার – সুমিত বর্ধন
প্রথম প্রকাশ – জুলাই, ২০১৯
প্রচ্ছদ – সুদীপ দেব
.
উৎসর্গ
যিনি লিখতে আমায় সর্বদা উৎসাহ দিয়েছেন
সেই
অদ্রীশ বর্ধনকে
.
কৈফিয়ত
স্টিমপাঙ্ক কাহিনির সঙ্গে আমার বহুকাল আগে পরিচয় হয় চায়না মেভিলের ‘পেরডিডো স্ট্রিট স্টেশন’ পড়ে। সেই অত্যাশ্চর্য গল্পটি পড়ে মনে হয়েছিল যে এমন একটা কাহিনি বাংলায় লিখতে পারলে ভালো হত। কিন্তু সে সময়ে আমি লেখালেখির জগৎ থেকে অনেক দূরে, সুতরাং সে ইচ্ছেটাকে আর কার্যে রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়নি।
বিদেশি কল্পবিজ্ঞানের ব্যাপ্তি আর গভীরতা দুইই বিশাল। সে তুলনায় বাংলা কল্পবিজ্ঞানের পরিসর অত্যন্ত স্বল্প। কল্পবিশ্ব ওয়েব-ম্যাগাজিন শুরু হওয়ার পর বাংলা কল্পবিজ্ঞানের এই দৈন্যতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে বিদেশি ঘরাণার ধরণে বাংলা কল্পবিজ্ঞান লেখার বিরুদ্ধে দুটি আপত্তি উঠে আসে। প্রথম, ভাষাগত ও সমাজগত পার্থক্যের জন্য বিদেশি কল্পবিজ্ঞানের সমপর্যায়ের বাংলা কল্পবিজ্ঞান লেখা সম্ভব নয়, এবং দ্বিতীয়, এ ধরণের লেখা লিখতে পারলেও বাঙালি পাঠকের মানসিক পরিপূর্ণতা বিদেশি পাঠকের তুলনায় এতই কম যে তাঁরা সেই লেখা পড়বেন না। দ্বিতীয় আপত্তি সম্বন্ধে কোনও সুস্পষ্ট অভিমত না থাকলেও, প্রথম আপত্তিটিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে নিয়েই ‘অর্থতৃষ্ণা’ লেখা। এই মৌলিক লেখাটি কল্পবিশ্বের সম্পাদকমণ্ডলী দ্বারা মনোনীত হওয়ার পরও সন্দিহান ছিলাম যে চিরাচরিত প্রথার বাইরে গিয়ে লেখা এই কল্পবিজ্ঞান কেউ আদৌ পড়বেন কিনা। কিন্তু লেখা কল্পবিশ্ব ওয়েব-ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গেল দ্বিতীয় আপত্তিটিও খারিজ হয়ে গেছে, অর্থাৎ বহু মানুষ লেখা পড়েছেন এবং নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতেও দ্বিধা করেননি।
পাঠকদের এই সমর্থনের বলীয়ান হয়ে আমার অন্যান্য কল্পবিজ্ঞান ঘরাণা ও শৈলিকে বাংলায়, বাঙালির সাজে, বাঙালিয়ানায় জারিত করে পেশ করবার ইচ্ছেটা আরও প্রবল হয়ে মনে গেঁথে গেছে। আশা করি ভবিষ্যতে আরও নতুন বিষয়ের নতুন গল্প আপনাদের সামনে উপস্থিত করতে পারব।
সুমিত বর্ধন
জুলাই, ২০১৯
.
প্রকাশকের কথা
কল্পবিশ্ব প্রকাশনীর নবম নিবেদন অর্থতৃষ্ণা। শুরু থেকেই কল্পবিশ্বের উদ্দেশ্য ছিল পুরানো লেখা পুনরুদ্ধার ও গবেষণামূলক লেখার পাশে এই সময়ের লেখকদের বাংলা কল্পবিজ্ঞান, ফ্যান্টাসি ও হরর কাহিনি প্রকাশ। প্রকাশনীর শুরু থেকেই নতুন লেখকদের উৎসাহ প্রদানের ব্যাপারটাকে আমরা বিশেষ প্রাধান্য দিয়েছি। তারই সাম্প্রতিক ফলশ্রুতি লেখক সুমিত বর্ধনের এই উপন্যাসটি।
অদ্রীশ বর্ধনের ভ্রাতুষ্পুত্র সুমিত বর্ধন একসময়ে ফ্যানট্যাসটিক পত্রিকায় প্রচুর লেখালিখি করেছেন। কল্পবিজ্ঞান পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁর লেখালিখিতে কিছুটা ভাঁটা পড়ে। কল্পবিশ্ব ওয়েব-ম্যাগাজিন প্রকাশের সময় থেকেই তিনি কলম তুলে নিয়েছেন বাংলায় কল্পবিজ্ঞান নিয়ে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষানিরীক্ষা করার প্রচেষ্টায়। গত তিন বছর তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন একের পর এক চমক। এই উপন্যাসও তার ব্যাতিক্রম নয়। ওয়েব-ম্যাগাজিনে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই এটি পাঠকের বিপুল সমাদর পেয়েছিল। বিপুল সংখ্যক পাঠকের অনুরোধে সেই উপন্যাস পরিমার্জনা করে বই আকারে প্রকাশ করতে পেরে প্রকাশক হিসেবে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।
কল্পবিজ্ঞানের একটি বিশেষ ধারার নাম স্টিমপাঙ্ক। এই ধারার বিশেষত্ব হল, এখানে ঘটনাবলী গড়ে ওঠে সাধারণত অতীতে বা কাল্পনিক, উনবিংশ শতাব্দীর শিল্পবিপ্লবের সময়ে আটকে থাকা পৃথিবীতে। যেখানে নেই কল্পবিজ্ঞানের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বা মহাকাশযানের সমাহার। সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে এবং এগিয়ে চলেছে বাষ্পচালিত প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। তবে স্পেকুলেটিভ ফিকশানে কি আর পাঁচিল তুলে রাখা যায়? তাই কল্পিত পৃথিবীর স্টিমপাঙ্কের সঙ্গে মিশে যায় ফ্যান্টাসি। কল্পবিজ্ঞানে চলে ফর্মের ভাঙা-গড়া। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে মিশে যায় জ্যাজ। এই শর্তগুলো পূরণ করে কল্পবিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসিধর্মী লেখার উদাহরণ বাংলা সাহিত্যে নেই। সুমিত বর্ধন স্টিমপাঙ্কের উপর ভর করে গড়ে তুলেছেন এক অন্য কলকাতা।
গত চার দশক ধরে যে কল্পবিজ্ঞানকে কঠিন সংজ্ঞা আর কিশোর অ্যাডভেঞ্চারের শিকলে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই বাঁধন খুলতেই নেমেছে কল্পবিশ্ব। সঙ্গে আছেন সুমিত বর্ধনের মতো লেখকরা। ‘অপার্থিব সিরিজ’ নাম দিয়ে সেই আন্দোলনের প্রথম ফসল ‘অর্থতৃষ্ণা’ প্রকাশ করা হল।
আশা করছি কল্পবিজ্ঞানের এই নতুন পরীক্ষা পাঠকের যোগ্য সমাদর পাবে।
প্রকাশক
জুলাই, ২০১৯
.
লেখক পরিচিতি
সুমিত বর্ধন ১৯৮৫ সালে বিজ্ঞান শাখায় স্নাতক হন। ১৯৮৯ সালে কোয়ান্টিটেটিভ অ্যানালাইসিস বিষয়ে এমবিএ করেন। বর্তমানে একটি অ্যানালিটিক্স কোম্পানির উচ্চপদে আসীন। অদ্রীশ বর্ধন সম্পাদিত ফ্যানট্যাসটিক পত্রিকায় লিখেছিলেন বেশ কিছু কল্পবিজ্ঞানের গল্প ও প্রবন্ধ। ইদানীং আবার লেখালিখির জগতে প্রবেশ করেছেন। বেশ কয়েকটি নতুন ধারার মৌলিক কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন। নেশার মধ্যে বই পড়া, বিশেষ করে কল্পবিজ্ঞানের বই। তবে ইমদাদখানী ঘরানায় ছাত্র হবার সুবাদে, মোহনবীণা বাজানোতেও রুচি আছে।
Leave a Reply