অরিগামির গোলকধাঁধায় – মাহরীন ফেরদৌস
প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০২২
উৎসর্গ
আশফিয়া বিনতে হাবিব
যার অবচেতন জাগিয়ে রাখে নতুন দিনের স্বপ্নকে…
It is only with the heart that one can see rightly; what is essential is invisible to the eye.- Antoine de Saint-Exupéry
ভূমিকা
রেইন ডিয়ার ছুটিয়ে আকাশে উড়ে যাওয়া সান্তাক্লজের গল্পটা প্রায় সবারই জানা। আফগান থেকে বাংলায় আগত ফল বিক্রেতা কাবুলিওয়ালা আর ছোট্ট খুকির বন্ধুত্বের কাহিনিও আমাদের আবেগ ও অনুভবে গেঁথে আছে। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের নিদ্রালু সুন্দরী কিংবা হোর্হে লুইস বোর্হেসের সঙ্গে সঙ্গে বুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তায় মধ্যরাতে হেঁটে যাবার যে গল্পগুলো আমরা জেনেছি, সেসব কাহিনির পরম্পরা আমাদের আনন্দ দিয়ে চলেছে দীর্ঘকাল।
শুধু পাঠক হিসেবেই নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবেও আমরা চাই আমাদের প্রত্যেকের জীবনে বলার মতো একটা উল্লেখযোগ্য গল্প থাকুক। ক্ষণস্থায়ী মুহূর্ত থেকে শুরু করে যুদ্ধ, হত্যা, অস্তিত্ব রক্ষার তীব্র সংকটের মাঝেও আমরা চাই, সাইফাই অ্যান্থলজির মতো বদলে যাওয়া সময়ের নিক্তি, নানান মানচিত্র, কফির ঘ্রাণ কিংবা ক্ল্যাসিক সিনেমার চরম মুহূর্তের মতোই গল্প ছুটে আসুক আমাদের কাছে। সেই চাওয়াটুকু থেকেই সৃষ্টি এই বইটি। অরিগামির গোলকধাঁধায় বেশকিছু গল্পের সংকলন। ২০১৮ থেকে ২০২১-এর মধ্যে যেসব গল্প লেখা হয়েছে সেগুলোর মধ্য থেকে বাছাইকৃত কয়েকটি নিয়ে সাজানো হয়েছে এই বই। কিছু গল্প প্রকাশ হয়েছে কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাঁক, ঐহিক, গল্পপাঠসহ নানা পত্রপত্রিকায় এবং ওয়েবজিনে। আর কিছু আছে যা সম্পূর্ণই আনকোরা। এই বইয়ের গল্পগুলোর পটভূমিকে নির্দিষ্ট কোনো ছকে ফেলা সম্ভব হবে না। কারণ, কিছু গল্প সমকালীন, আবার কিছু স্থান, কাল, পাত্র হতে আড়ালে থাকা জগতের। এই বইয়ের গল্পজগতে কেউ মানুষ থেকে মথে পরিণত হয়, কেউ হয়ে যায় অদৃশ্য, কেউ মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকে, কেউ অগোচরে করে যায় ভয়ংকর অপরাধ, কেউ বা আবার খুঁজে বেড়ায় পৃথিবীর শেষ গান। দোদুল্যমান কোনো রহস্যময় স্মৃতিভ্রমণের মতো গল্পগুলো গোলকধাঁধা সৃষ্টি করে বলেই সেখানে আটকা পড়ে মানুষরূপী অরিগামি। গল্পগ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি গোছানোর শুরু থেকেই সহযোগিতা পেয়েছি কথাপ্রকাশ-এর সম্পাদনা পরিষদের। পাঠক হিসেবে সাহিত্যজগতের যে অংশের সাথে আমার প্রথম নিবিড় সম্পর্ক তা হলো গল্প। একজন লেখক হিসেবেও গল্পের সাথেই আমার প্রথম আত্মিক সংযোগ। এমন একটি নান্দনিক প্রকাশনার জন্য কথাপ্রকাশ-এর প্রকাশক, সম্পাদনা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অজস্র ধন্যবাদ।
মাহরীন ফেরদৌস
উইচিতা, ক্যানসাস, যুক্তরাষ্ট্র
ডিসেম্বর, ২০২১
Leave a Reply