অঞ্চলচর্চা ও আঞ্চলিক ইতিহাস প্রসঙ্গ
সুধীরকুমার মিত্র শতবর্ষ শ্রদ্ধার্ঘ্য গ্রন্থ
সংকলন ও সম্পাদনা – পল্লব মিত্র
প্রথম সংস্করণ – ২০১৯
.
এই গ্রন্থের মূল প্রেরণাদাতা
প্রয়াত প্রতাপচন্দ্র চন্দ্রের স্মৃতিতে
.
সম্পাদকের নিবেদন
গ্রাম-গবেষণার নীরব কর্মী সুধীরকুমার মিত্রের জন্মশতবর্ষ পালন উপলক্ষে, শিক্ষাবিদ প্রতাপচন্দ্র চন্দ্রের নেতৃত্বে বিশিষ্টজনদের নিয়ে ২০০৭ সালে গঠিত হয়েছিল ‘সুধীরকুমার মিত্র শতবর্ষ স্মরণ সমিতি’। সুষ্ঠুভাবে এই ইতিহাসবিদের শতবর্ষ উদ্যাপনের লক্ষ্যে সভাপতি প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র বিভিন্ন সভায় কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার মধ্যে প্রধান ছিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার অঞ্চলচর্চা ও আঞ্চলিক ইতিহাসের বিবরণকে লিপিবদ্ধ করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা, যাতে উৎসাহী ইতিহাসপ্রেমী সাধারণ পাঠকেরা বিভিন্ন জেলার ইতিহাসচর্চার একটা ধারণা পেতে পারেন। প্রতাপচন্দ্রের সেই মূল ভাবনার ফলশ্রুতি এই আলোচ্য গ্রন্থ অঞ্চলচর্চা ও আঞ্চলিক ইতিহাস প্রসঙ্গ। একদা, বাঙালির ইতিহাস লেখা নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র খেদ প্রকাশ করলেও, শতাধিক বছর আগে থেকেই স্মরণীয় ইতিহাসবিদ ও গবেষকেরা বহু পরিশ্রমে সৃষ্টি করেছিলেন বাংলা ভাষায় বিভিন্ন জেলার ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ। সেই পথ ধরে বাংলার বিভিন্ন স্থানে বহু ইতিহাসপ্রেমী অগ্রণী হয়ে তাঁদের অঞ্চলের আনুপূর্বিক বিবরণ লিখেছেন ইতিহাসের চোখ দিয়ে। স্বাধীনতার পর থেকেই সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগে বিভিন্ন জেলার পুরাকীর্তি নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একইভাবে ইতিহাসকে ভালোবেসে অনেকেই ইতিহাসের নানা বিষয় নিয়ে প্রকাশ করেছেন কৌশিকী, মধুপর্ণী, ঐতিহাসিক, Bengal Past And Present-সহ আরও বহু পত্রপত্রিকা।
আশির দশকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মিউনিসিপ্যালিটি উদ্যোগী হয়ে পুরসভার এলাকার ইতিহাস ও সামাজিক তথ্য একত্রিত করে গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এসবের পাশাপাশি বহু উৎসাহী মানুষ ইতিহাসকে ভালোবেসে বহু পরিশ্রমে প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থ।
স্মরণীয় জেলার ইতিহাস রচয়িতাদের অনুসরণ করে পরবর্তীকালে হরিহর শেঠ, সুধীরকুমার মিত্র, পঞ্চানন রায়, তারাপদ সাঁতরা, যজ্ঞেশ্বর চৌধুরি, মোহিত রায়, শিবেন্দু মান্না, মণীন্দ্রনাথ আশ, কমল চৌধুরি, কালিদাস দত্ত, নরোত্তম হালদার, প্রণব রায়, বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিকলাল সিংহ, চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত-সহ অনেকেই প্রভূত পরিশ্রমে নীরবে তাঁদের সাধ্যানুযায়ী বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাস ও পুরাকীর্তির বিবরণ লিপিবদ্ধ করার কাজে জীবন ব্যয় করেছেন। এঁদের সকলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আন্তরিক প্রয়াসে আমরা পশ্চিমবঙ্গের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের অঞ্চলচর্চার পরিচয় জানতে পেরেছি। আবার সাম্প্রতিককালেও বহু অধ্যাপক, গবেষক ও ইতিহাসপ্রেমী লেখক অগ্রণী হয়ে নানাভাবে ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা, আলোচনা চক্র ও সভা সমিতির মাধ্যমে ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রকে বাড়িয়ে চলেছেন। সর্বসাধারণের মধ্যে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির ফলে উৎসাহী প্রকাশকেরা গত দু-দশকে একদা দুষ্প্রাপ্য প্রায় সব জেলার ইতিহাস গ্রন্থগুলিকে মুদ্রিত করে পাঠকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। অনেকে আবার উদ্যোগী হয়ে নিজেরাই তাঁদের অঞ্চলচর্চার গ্রন্থটিকে প্রকাশ করেছেন। নিঃসন্দেহে, পশ্চিমবঙ্গে জেলার ও আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অঞ্চলচর্চা ও আঞ্চলিক ইতিহাস প্রসঙ্গ বইটি প্রকাশে লেখকেরা বহু পরিশ্রমে তাঁদের মূল্যবান লেখাটি আমাদের দিয়ে গভীর কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। প্রত্যেক লেখককে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন দেবাশিস বসু, ইন্দ্রজিৎ চৌধুরি, সৌমিত্রশঙ্কর সেনগুপ্ত, শ্যামল বেরা প্রমুখ। ইতিহাসপ্রেমী পাঠকদের স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে বেশ কিছু জেলার ইতিহাসের গ্রন্থ, আঞ্চলিক ইতিহাসের গ্রন্থ এবং অঞ্চলচর্চা বিষয়ক কয়েকটি পত্রিকার প্রচ্ছদের ছবি বর্তমান গ্রন্থে প্রকাশ করা হল। ইতিমধ্যে গ্রন্থের কয়েকজন লেখক মণিদীপ চট্টোপাধ্যায়, প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র, অর্ধেন্দু চক্রবর্তী, তারাপদ সাঁতরা, রমাকান্ত চক্রবর্তী ও মৃত্যুঞ্জয় সেন প্রয়াত হয়েছেন। তাঁদের স্মৃতির প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। ‘পারুল প্রকাশনী’র কর্ণধার ইতিহাসপ্রেমী গৌরদাস সাহা এই গ্রন্থপ্রকাশে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হয়েছেন। নানা কারণে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির অঞ্চলচর্চার বিষয়ে যথাযথ নিবন্ধ সময়মতো না পাওয়ায়, আলোচ্য গ্রন্থটিতে কেবলমাত্র মধ্য ও দক্ষিণবঙ্গের (পুরুলিয়া থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাগুলি পর্যন্ত) বিভিন্ন জেলার ইতিহাস ও অঞ্চলচর্চার কথা এই গ্রন্থে তুলে ধরার চেষ্টা করা হল। পাঠকদের এই গ্রন্থ ভালো লাগলে আমাদের প্রয়াস সার্থক হবে। প্রয়াত প্রতাপচন্দ্র চন্দ্রের মূল পরিকল্পনামতো সুধীরকুমার মিত্র শতবর্ষ স্মারক গ্রন্থ-টি অবশেষে প্রকাশিত হল।
সুধীরকুমার মিত্রের প্রসঙ্গে কয়েকটি নিবন্ধ ছাড়াও তাঁর লেখা দশটি গ্রন্থ আলাদা আলাদাভাবে এই গ্রন্থে আলোচনা করেছেন দশজন বিশিষ্ট আলোচক। এই লেখাগুলি পাঠ করে, অঞ্চলচর্চা ও আঞ্চলিক ইতিহাস বিষয়ে উৎসাহী পাঠকেরা বহু নতুন তথ্য জানতে পারবেন—এই আশা রাখি।
পল্লব মিত্র
২, কালী লেন
কলকাতা ৭০০ ০২৬
Leave a Reply