২৫শে মার্চ – রবিন জামান খান
২৫শে মার্চ – রবিন জামান খান
ইতিহাস আশ্রিত থ্রিলার
সেপ্টেম্বর ২০২১
উৎসর্গ
আমার বাবা’কে
সবসময় যার মতো হতে চাই…
কিন্তু পারি না।
প্রথম মুদ্রণের ভূমিকা
প্রথমেই আমি সকল পাঠক এবং শুভানুধ্যায়ীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার এই প্রচেষ্টায় শামিল হবার জন্য। শুরুতেই পাঠকদের কাছে কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। এই বইটি ইতিহাসের পটভূমিতে লেখা সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি থ্রিলার উপন্যাস। বইটির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, তাই কাহিনির প্রয়োজনে বাস্তব কিছু চরিত্রকে আনতে হয়েছে বইতে। এছাড়া সমস্ত চরিত্র থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ কাহিনি পুরোপুরি কাল্পনিক।
এই বইতে উল্লিখিত সমস্ত মিথ থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সমস্ত স্থান এবং কিছু কিছু ঘটনা সম্পূর্ণ সত্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের নামে ইংরেজ বাহিনী যখন লালবাগ দুর্গে আক্রমণ করে তখন একজন স্থানীয় মহিলা দেশীয় কিছু সৈন্য নিয়ে লালবাগ দুর্গের অভ্যন্তরে অবস্থিত পরী বিবির মাজারে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলে ইংরেজ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছিলেন। পরবর্তীতে ওই মহিলাকে বর্তমান বাহাদুর শাহ পার্কে অন্যান্য বিদ্রোহীদের সাথে ফাঁসি দেওয়া হয়া। ঢাকার ইতিহাস নিয়ে লেখা একাধিক বইতে এই ঘটনার উল্লেখ আছে।
২৫শে মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পশ্চিম পাকিস্তানি মিলিটারির গণহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ সত্য এবং ইতিহাসনির্ভর। মুক্তিযুদ্ধের দলিল থেকে শুরু করে একাত্তরের ইতিহাসের ওপর লেখা বিভিন্ন বইতে এর বিস্তারিত বিবরণ আছে এবং ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাকারের ওপর অসংখ্য তথ্যচিত্র এবং ডকুমেন্টারিও রয়েছে ইউ টিউবে।
এবার আসি বইতে বর্ণিত বিভিন্ন মিথের ব্যাপারে। এই বইতে ব্যবহৃত অন্যতম একটি মিথ হলো ‘পা ভাঙা ঘোড়া’র মিথ। প্রাচীন ঢাকায় সত্যি সত্যিই এই ধরনের একটি অভ্যাস একসময় প্রচলিত ছিল। বিশেষ এই প্রক্রিয়ায় মানুষজন সাধারণত মানত করত। এছাড়াও বইতে বর্ণিত বিভিন্ন কাল্ট এবং গোপন সংঘের যেসব বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার অধিকাংশই সত্য। ভারতবর্ষজুড়ে একসময় বিভিন্ন গুপ্ত সংগঠন এবং কাল্টের রাজত্ব ছিল। এমনকি ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ও গড়ে উঠেছিল অসংখ্য বিদ্রোহী সংগঠন এবং গোপন সংঘ। কথিত আছে, প্রাচীন ভারতের এসব কাল্টের ভেতরে কিছু কিছু কাল্টের অস্তিত্ব নাকি এই একবিংশ শতাব্দীতেও পাওয়া যায়। তবে এই বইতে বর্ণিত মূল কাল্টটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
“২৫শে মার্চ’ বইটি লিখতে গিয়ে আমাকে সাহায্য নিতে হয়েছে অসংখ্য বইয়ের। যার ভেতরে ইতিহাসনির্ভর রেফারেন্স বুক থেকে শুরু করে রয়েছে ডকুমেন্টারি এবং স্বাধীনতার দলিল এবং অনেক পুরোনো পত্রিকা। কিছু বিশেষ ব্যক্তি, যারা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ’ রাতের ধ্বংসযজ্ঞ নিজ চোখে দেখেছেন, তাদের কয়েকজন নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আমাকে বিশেষ সহায়তা করেছেন। তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। পাঠকের কাছে বইটি ভালো লাগলে আমার প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বলে মনে করব।
রবিন জামান খান
ধানমন্ডি, ঢাকা
নালন্দা সংস্করণের ভূমিকা
দেখতে দেখতে লেখালেখির জগতে প্রায় অর্ধযুগের বেশি সময় পার হয়ে গেল। নিজের জীবনের ঘড়িটাকে যদি খানিকটা রিওয়াইন্ড করি, তবে মনে পড়ে সেই সময়ে মাত্র সিলেট থেকে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় এসেছি। লেখালেখি থেকে শুরু করে অ্যাকাডেমিক জগতের প্রায় কাউকেই সেভাবে চিনতাম না। সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে শুরু করে ধীরে ধীরে লেখালেখি থেকে অ্যাকাডেমিক জগতে নিজের ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা করা, পুরোটাই করতে হয়েছে প্রায় শূন্য থেকে। আর সেই পুরো যাত্রায় আমার সম্ভবত সবচেয়ে বড় বন্ধু হয়েছিল লেখালেখি এবং আমার বইগুলো, আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে আমার গল্পগুলো।
“২৫শে মার্চ’ ছিল আমার প্রথম উপন্যাস। যখন ‘২৫শে মার্চ’ লিখি তখন চ্যালেঞ্জের মাত্রা ছিল অনেক বেশি। প্রথমত বাংলাদেশে মৌলিক থ্রিলার লেখার পরিসরটা ছিল একেবারেই সীমিত। তার ওপরে আমি লেখার পরিকল্পনা করছিলাম ইতিহাস আশ্রিত থ্রিলার উপন্যাস। একদিকে সাহিত্যের এই শাখায় এর আগে সেভাবে বাংলায় কেউ তেমন কাজ করেনি। তার ওপরে আমাদের দেশে ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে গেলে সবচেয়ে বড় যে বাধায় পড়তে হয় সেটা হলো রিসোর্সের ঘাটতি। একে তো প্রয়োজনীয় বইয়ের অভাব আবার সেই বইগুলো সংগ্রহের প্রক্রিয়াতেও পোড়াতে হয় অনেক কাঠখড়। এসব চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি যোগ হয়েছিল আশপাশের অনেকের অনুৎসাহ। তবে ভরসা ছিল গল্পের ওপরে। অনুপ্রেরণা ছিল সেই সময়ে যে মানুষগুলোর সাথে কাজ করছিলাম তাদের। ‘২৫শে মার্চ’ প্রকাশ হবার পর পাঠক যখন বইটাকে আপন করে নিল সেই আনন্দও ছিল তুলনাহীন। বইটা প্ৰকাশ হবার পর প্রায় অর্ধযুগ পার হয়েছে, কিন্তু আজও বইটা নিয়ে পাঠকের উৎসাহে এতটুকু ভাটা পড়েনি। ‘২৫শে মার্চ’ ছিল এমন একটা বই, যেটা সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ নতুন একটা ধারাকে পাঠকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। এই বইটার পরেই সম্ভবত এপার এবং ওপার দুই বাংলাতেই সম্পূর্ণ নতুনভাবে অনেককেই উৎসাহিত করে ইতিহাস আশ্রিত থ্রিলার উপন্যাস নিয়ে কাজ করতে।
মজার বিষয় হলো ‘২৫শে মার্চ’-এর নতুন মুদ্রণের ভূমিকা লিখছি আবারও এমন এক সময়ে, যখন পুরোনো জীবন পিছনে ফেলে নতুন জায়গায় নতুনভাবে শুরু করতে হয়েছে সবকিছু। সিলেটের আখালিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা পর্যন্ত এই জার্নিতে একদিকে যেমন পেয়েছি অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা আবার সুন্দর সম্পর্কের মোড়কে জড়ানো কাছের মানুষদের ভেতরে কতটা কুৎসিত কদর্য স্বার্থপরতার ক্ষত থাকতে পারে, সেই অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তবে বেলাশেষে কদর্যতার চেয়ে ভালোবাসার শক্তি সবসময়ই বেশি। ক্ষুদ্র এই জীবনে অনেক গভীর যে কয়েকটা বিষয় বুঝতে পেরেছি তার ভেতরে অন্যতম একটি হলো, মানুষ নিজের জায়গায় যদি সৎ হয় তবে পথ চলতে গেলে ভালোবাসার মতো, সম্মান করার ও পাবার মতো কাউকে-না—কাউকে পাশে পেয়েই যায়। আমি চলার মানুষ, পথ চলতে চলতে গল্প বলে যেতে চাই। সবার কাছে দোয়া চাই ২৫শে মার্চ থেকে যে গল্প যাত্রার শুরু হয়েছিল, পাঠকের ভালোবাসায় সেই যাত্রা যেন আজীবন চালিয়ে যেতে পারি।
পরিশেষে বলতে চাই। ‘২৫শে মার্চ’ বইটা যখন লেখার পরিকল্পনা করি তখন এটিকে একটা ট্রিলজি হিসেবে লেখার পরিকল্পনা ছিল। সেই সময়ে ট্রিলজিটার নামও দিয়েছিলাম ‘ঢাকা ট্রিলজি’। কিন্তু পরবর্তীতে এই ট্রিলজি নিয়ে আর কাজ করা হয়ে ওঠেনি। ‘২৫শে মার্চ’-এর নতুন মুদ্রণের কাজ করার সময়ে নালন্দার প্রকাশক জুয়েল ভাইয়ের উৎসাহে ভাবছি খুব দ্রুতই এই ট্রিলজির দ্বিতীয় বই ‘ঢাকা ১৮৫৭’ নিয়ে কাজ শুরু করব।
রবিন জামান খান
স্টিলওয়াটার
ওকলাহোমা, যুক্তরাষ্ট্র
Asadulislam
Want another book of professor Zakaria Ahmed series written by this writer like the book বিখন্ডিত.