দশটি রহস্য উপন্যাস – প্রণব রায়
সম্পাদনা – প্রদীপ্ত রায়
প্রচ্ছদ : রঞ্জন দত্ত
প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি, বইমেলা ২০১৮
.
উৎসর্গ
প্রিয় পাঠকদের
.
গীতিকার প্রণব রায়ের রহস্য উপন্যাস
প্রথমে কয়েকটি চেনা লাইন দিয়ে শুরু করা যাক। না, শুধু আমার চেনা লাইন নয়—আমাদের সবার চেনা।
‘এমনি বরষা ছিল সেদিন, শিয়রে প্রদীপ ছিল মলিন…।’
‘নিশিরাত বাঁকাচাঁদ আকাশে, চুপি চুপি বাঁশি বাজে…।’
‘আমি চঞ্চল ঝরনাধারা…।’
‘আর ডেকো না সেই মধুনামে…।’
এমন সব মিষ্টি গান যিনি লিখতে পারেন তিনি কেমন করে লিখলেন এক ডজনেরও বেশি রহস্য—গয়েন্দা উপন্যাস, আর বেশ কিছু ছোট গল্প? এ—প্রশ্ন আমার মনে যেমন জেগে ছিল, তেমনই জেগেছে আরও অনেকের মনেই। কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন—অন্তত আমার তো এর উত্তর জানা নেই।
আমি যখন টিন এজার (১৯৬৪ সাল থেকে) তখন থেকেই প্রণব রায়ের রহস্য কাহিনির সঙ্গে আমার পরিচয়ের শুরু। ‘মাসিক রোমাঞ্চ’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় কখনও কখনও প্রকাশিত হতো প্রণব রায়ের লেখা। এবং সে সব লেখার আকর্ষণ ছিল অ—সমান্তরাল।
কবিদের কলমে গদ্যরচনা সবসময়েই একটা অন্য মাত্রা পায়। বুদ্ধদেব বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শঙ্খ ঘোষ এর উজ্জ্বল উদাহরণ। ঠিক এই রকমই ‘অন্যমাত্রা’য় বিশিষ্ট ছিল প্রণব রায়ের গদ্য।
‘মাসিক রোমাঞ্চ’ পত্রিকা শুরু হয়েছিল ‘রোমাঞ্চ’ নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসাবে। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩২ সালের ১ জানুয়ারি। এই সংখ্যায় লেখক ছিলেন প্রণব রায়—লেখাটির নাম ছিল ‘ইয়াংসু হোটেলের কান্ড’। লেখাটি মাপে বড়ো হওয়ায় প্রথম সংখ্যায় এর প্রথম অংশ ছাপা হয়। আর বাকি অংশ ছাপা হয় দ্বিতীয় সংখ্যায় ‘সিঙ্গাপুর কাফে’ নাম দিয়ে। প্রণব রায়ের বয়স তখন ২১।
এরপর ১৯৩৪ সালে ২৩ বছর বয়সে, কাজী নজরুল ইসলামের অনুমোদনে তাঁর লেখা চারটি গান শারদীয়া পূজা উপলক্ষ্যে ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ রেকর্ডে প্রথম প্রকাশিত হয়।
তাহলে ইতিহাসের নিরিখে দেখা যাচ্ছে, প্রণব রায় ‘আগে’ রহস্য ঔপন্যাসিক, ‘পরে’ গীতিকার।
প্রণব রায়ের লেখার অসংখ্য ভক্তের মধ্যে আমি একজন। যখনই তাঁর কোনো গল্প কিংবা উপন্যাস ‘মাসিক রোমাঞ্চ’—র পাতায় প্রকাশিত হত, সেটা আমি মুগ্ধ হয়ে আত্মস্থ করতাম। তাঁর বেশ কয়েকটি লেখার কথা আমার আজও মনে পড়ে। যেমন ‘শঙ্খচুড়’, ‘শেষ মুহূর্তে’, ‘পাশানগর’, ‘আসল—নকল’, ‘চৈতিবাঈয়ের মামলা’ ইত্যাদি। এছাড়া তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত কমেডি রহস্য উপন্যাস হল ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ এবং ‘পিকনিকে ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’। এর মধ্যে প্রথম লেখাটি নিয়ে একটি সাদা—কালো ছবিও তৈরি হয়েছিল। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন—ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জহর রায়।
এত চমৎকার লেখালিখির নমুনা প্রণব রায় বারবার পেশ করলেও তিনি দুর্ভাগ্যবশত বৃহত্তর পাঠকবৃত্তের পৌঁছতে পারেননি। এর একমাত্র কারণ, তিনি শুধুমাত্র ‘মাসিক রোমাঞ্চ’ পত্রিকাতেয় তাঁর লেখা প্রকাশ করতেন। আর ‘মাসিক রোমাঞ্চ’ পত্রিকায় প্রচার সংখ্যা ছিল যথেষ্ট কম। পত্রিকাটির সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় এবং পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে প্রণব রায়ের সৌহার্দ্যের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের দাবিতেই প্রণব রায় ‘মাসিক রোমাঞ্চ’ পত্রিকার এক্সক্লুসিভ লেখক হয়ে থেকে গিয়ে ছিলেন। প্রণব রায়ের গল্প উপন্যাস বই হয়েও প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকাশক ছিল ‘রোমাঞ্চ গন্থালয়’। ‘মাসিক রোমাঞ্চ পত্রিকার’ ভগিনী সংস্থা। ফলে ‘রোমাঞ্চ গ্রন্থালয়’ খুব সুচারু ভাবে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে প্রণব রায়ের বইগুলো প্রকাশ করলেও খুব সৃমিত পাঠকের মধ্যেই লেখক প্রণব রায়কে বন্দি থাকতে হয়েছে। তাঁর লেখা প্রকাশ করে ‘মাসিক রোমাঞ্চ’ ‘রোমাঞ্চ গ্রন্থালয়’ লাভবান হলেও লেখক প্রণব রায় তেমন লাভবান হননি।
এত দিন পর ‘সাহিত্যম’ প্রকাশনা থেকে প্রণব রায়ের দশ—দশটি রহস্য উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার খবর পেয়ে আমি খুশি হয়েছি বললে কম বলা হয়। কারণ, এই বার আমি আমার প্রিয় লেখককে বহু পাঠকের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারব। আমি প্রণব রায়ের নতুন পাঠককে শুধু এইটুকু বলতে পারি, প্রণব রায়ের রহস্যকাহিনি না পড়লে আপনার রহস্য—সাহিত্যের পাঠ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
অনীশ দেব
২৩ জানুয়ারি ২০১৮
Niyana
Super duper triple.
Thanks for posting 3 thrillers in 3 days.