এ কেমন অশ্বারোহী শূন্যতায় স্বপ্ন ফেরি করে। মহাশূন্যে চক্ষুহীন পা-হীন হাঁটে কারা? কেন হাঁটে একা একা গোধূলির রঙ? যে যা-ই বলুক, আমি আছি আমার না-থাকা নিয়ে সবখানে: যমালয়ে সুন্দরের মোম জ্বেলে যে-কিশোর চুমু খায় জীবনের গালে, সে আমার সহোদর অন্ধকার? ধর্মালয়ে জীনের পোশাক পরে ওটা কার মৃত ছায়া পড়ে আছে?…ভূত না আমার? বজ্রপাতে ফলন্ত গাছের মূলে কে জ্বালায় আলোহীন আগরের বাতি—জীবন, না জীবনবিহারী? অনাহারী জীবনের বিছানায় এক কালো বিড়ালের চোখে অনিদ্রার অস্থিরতা নিয়ে কে সে গায় ঘুমের আরতি? যতীন বাবু কি আজও দেখে তার বাঁশের বাগানে চাঁদের বিকল্প এক প্রিয় মেয়েমুখ?
রাত্রি হলো পূর্ণিমার রূপের আড়ত; অন্ধকারে তারাগুলো অনাগত স্বপ্নের দিনার। ক্ষুদে শিকারির তীরে বিদ্ধ হয়ে ফেটে গেছে নীলিমার সাদা সাদা ডিম। কেন যে চাঁদের খুকি চোখ টিপে অবেলায় ডাকে; বুড়ো খোকা! কবে তুই মারা যাবি? যখন ঘোষিত হয় নতুনের জন্ম-চিত্কার কেউ ছোটে মৌচাকের দিকে, আর কেউ যায় বাঁশবনে; বাঁশবন উজাড় করেছে যারা তারা বাঁশি শুনে পাতালে নেমেছে; আরব্যরজনীময় সেই রাতগুলো এখন কোখায়? বলো হে রাত্রির রাজা! বলো, চারিদিকে লুটতরাজ, দস্যুতার ছড়াছড়ি, জরাজীর্ণ ভাঙা ঘরে পূর্ণিমার এত ঢেউ এত রঙ কী করে লুকিয়ে রাখি! কার কাছে রেখে যাব জলের সঞ্চয়।
স্বপ্নের বদলে কারা নিদ্রাহীন শিশুদের চোখে জ্বালিয়েছে দুঃস্বপ্নের রঙ? হলুদ পাখির খোঁজে কেটে গেছে একচক্ষু বালকের দিন। দিনগুলো হারিয়ে গিয়েছে। হারানো দিনের রঙ লেপ্টে থাকে বালিকার ফ্রকে। বালিকা রমণী হয়। রমণের রসে সিক্ত বালিকার গোপন জমিন। রক্তপাতে দানবের মুখ ভেসে যায়। আকাশ কতটা রক্তে লাল হলে সূর্য একা নদীজলে ডুবে থাকে?
রক্তে নাচে জন্মবীজ। কে না-জানে, যতই উর্বর হোক এই মাটি এই জমি কৃষকের বিনা ঘামে কোনোদিন ফসল দেবে না।
মৃত্যু এক দস্যু ঘোড়া, যে এসে দাঁড়ায় প্রতিক্ষণে জীবনের সবুজ উঠোনে। অভিজ্ঞ সহিস তার পিঠে বসে আছে—একা; এক শিশু যিশুরূপে থুথু ফেলে তার মুখে। জয় হোক জীবনের: জীবন ছড়িয়ে আছে প্রাণ ছেড়ে জড়ের জমিনে। এক দিবসের আয়ু তেলে সন্ধ্যাবাতি জ্বলে; এক মানুষের আয়ু দিয়ে একজন প্রেমিকের জীবন চলে না।
আসাদ মান্নান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ৩০, ২০০৯
Leave a Reply