আমি যদি হতাম
আবদুল মান্নান সৈয়দ
আমি যদি হতাম
পুরোনো কাগজ আর শিশিবোতলের ফেরিওয়ালা
আর তুমি যদি হতে কোনো গোপন পরী;
শহরের পথে পথে
অলিগলিতে
ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে উপস্থিত হতাম
তোমার বাড়িতে।
তাহলে এরকম শ্রাবণের বিজন দুপুরে
আধ-খোলা দরোজার ফাঁক দিয়ে তুমি
গেরস্তবধূর বেশে বেরিয়ে আসতে
আধ-ময়লা অপরূপ অপরাজিতা-নীল শাড়ি
ঠিকঠাক করতে করতে।
তোমাকে মনে হতো একটা পরী-
আমার হঠাৎ চোখ পড়ত তোমার
লুকিয়ে-রাখা ডানায়-
আমরা সব ঘরবাড়ি কোলাহল ফেলে শূন্যে
গা ভাসিয়ে দিতাম-
তোমার ডানায় আমার ডানা-
শ্রাবণের মেঘ-ভাঙা রোদ্দুরে-
আকাশে রুপোর ডিমের মতো
শ্রাবণের সূর্য।
আমাদের উড়ে-যাওয়া দেখে
হয়তো নিচে লোকজনের বি্নিত চিৎকার।
হয়তো গুলির শব্দ।
আমাদের ট্যারচা উড়ে যাওয়া-
আমাদের কণ্ঠে নতুন জন্মের উল্লাস-
আমাদের কণ্ঠে মুক্ত হাওয়ার গান।
হয়তো গুলির শব্দ আবার।
আমাদের স্তব্ধতা,
আমাদের শান্তি।
আমাদের দুজনার এই অসম্ভব কষ্ট আর থাকত না,
থাকত না ছোট ছোট সুখের বিমর্ষতা
আর দুঃখের আনন্দ।
আমি যদি হতাম ফেরিওয়ালা,
আর তুমি যদি হতে ডানাওয়ালা পরী,
কোনো-এক শহরের নিঝুম দুপুরবেলা!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৩, ২০০৯
Leave a Reply