মাহমুদুল হকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগেই তাঁর কিছু অগ্রন্থিত গল্প ও উপন্যাসের কথা জানা ছিল আমার। যেমন, তাঁর অতি বিখ্যাত গল্প কালো মাফলার (বা সর্বশেষ রচিত গল্প বনফুল) কোনো কোনো সম্পাদিত গল্প সংকলনে গ্রন্থিত হলেও তাঁর নিজের গল্পের বই প্রতিদিন একটি রুমাল বা নির্বাচিত গল্প গ্রন্থে গ্রন্থিত হয়নি। এসব তো জানা ছিলই; এ-ও জানতাম, কয়েক বছর ধরেই সাহিত্যপ্রকাশের ক্যাটালগে প্রকাশিতব্য গ্রন্থ হিসেবে তাঁর দুটো বইয়ের নাম থাকলেও কোনো বছরই শেষ পর্যন্ত সেগুলো প্রকাশিত হয় না। পরিচয় হওয়ার পর (২০০৪ সালে) এসব ব্যাপারে আমি তাঁকে একাধিকবার জিজ্ঞেস করেছি। উপন্যাস দুটোর ব্যাপারে তিনি ঠিক তৃপ্ত ছিলেন না, আরও খানিকটা সম্পাদনা করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। শেষ পর্যন্ত ওই দুটোর একটি-অশরীরী-তাঁর জীবদ্দশায়ই প্রকাশিত হলেও আরেকটি আর আলোর মুখ দেখেনি। কারণ ওই একই। তৃপ্ত নন তিনি, প্রকাশকের দেওয়া ‘ফাইনাল প্রুফ’ কপি টেবিলে পড়ে আছে, অথচ ‘দেখে দেওয়া’ হচ্ছে না। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে অগ্রন্থিত গল্পগুলোর ক্ষেত্রেও। একদিন কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, তাঁর প্রায় ৮০টি গল্প পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে আছে। তাঁর একমাত্র ছেলে একসময় সেগুলোর বেশ কিছু একত্রও করেছিলেন। ‘আপনার কাছে আছে সেগুলো?’-প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘নাহ, হারিয়ে ফেলেছি!’ একইভাবে হারিয়ে গেছে তাঁর প্রথম উপন্যাস দ্রৌপদীর আকাশে পাখির পাণ্ডুলিপিও! ওই সময় তাঁর কাছ থেকে জানতে পারি, একটা গল্পের বই মানুষ মানুষ খেলা বেরোনোর কথা ছিল সন্দেশ প্রকাশনী থেকে। প্রকাশক লুৎফর রহমান চৌধুরী যথাযথ উদ্যোগও নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠেনি। ‘ফাইনাল প্রুফ’টা নাকি তিনি হারিয়ে ফেলেছেন! ওই সময় তাঁর কিছু অগ্রন্থিত গল্প পাঠ করার সুযোগ হয় আমার। ল্যুগার ও বেলুন সে ধরনেরই একটা গল্প। গল্পটা কবে লেখা হয়েছিল বা কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল-এ নিয়ে মাথা ঘামাইনি! আমি গবেষক নই, আমি ছিলাম তাঁর মুগ্ধ পাঠক, অগ্রন্থিত লেখাগুলো পড়েই আনন্দ পেয়েছি। তাঁর অগ্রন্থিত একটি গল্প পাঠকের সামনে উপস্থাপিত হলো।
আহমাদ মোস্তফা কামাল
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৫, ২০০৮
Leave a Reply