গ্রামজীবনের নানা অনুষঙ্গে সমৃদ্ধ লোককবিদের সাহিত্যভাণ্ডার। শামসুল আরেফীনের বাঙলাদেশের লোককবি ও লোকসাহিত্য বইটি লোকসাহিত্যের বিচিত্র বিষয় ও প্রকরণের সঙ্গে আমাদের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়। লেখক লোককবিদের জীবনদর্শন ও শিল্পভাবনা সম্পর্কেও বেশ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন, যা তাঁদের কবিতা অনুধাবনে সাহায্য করবে। এ গ্রন্থে ১৭ জন লোককবি এবং তাঁদের রচনা সংকলিত হয়েছে। কবিদের নাম শাহ আবদুল জলিল শিকদার, দলিলুর রহমান পণ্ডিত, ক্ষেমেশচন্দ্র রক্ষিত, আতর আলী, মোরশেদ চাঁদ দরবেশ, আস্কর আলী পণ্ডিত, আবদুল গফুর হালী, আতিকউল্লা শাহ, আবদুল আজিজ পণ্ডিত, মুন্সি আমিন শরীফ, আফতাব উদ্দিন, করিম শাহ, আবুল খায়ের নক্সবন্দি, আব্দুর রশিদ, আবদুল্লাহ বাঞ্ছারামপুরী, আবদুল লতিফ শাহ ও মকবুল আহমদ পণ্ডিত। গ্রন্থভুক্ত কবিদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের। এ ছাড়া বরিশাল, পটুয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালী অঞ্চলের কবিরাও অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। সংকলিত রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে জারি গান, বারমাসি, উপদেশ গীত, পুঁথি, পালাগান, আধ্যাত্মিক বিষয় অবলম্বনে সাধকতত্ত্ব ইত্যাদি। জীবন সম্পর্কে গভীরতর উপলব্ধিকেই ছন্দবদ্ধ করেছেন লোককবিরা। সেই সঙ্গে আধ্যাত্মিক চেতনাকে সম্পৃক্ত করেছেন তাঁরা। বিলুপ্ত লোককবি আবদুল্লাহ বাঞ্ছারামপুরীর দুটি চরণঃ ‘মানুষের ভিতরে মানুষ, তার ভিতরে আছে সাঁই/যে চিনিল সে কিনিল, মাইজভাণ্ডার খেলে কানাই’। শামসুল আরেফীন লোককবিদের জন্মবৃত্তান্তই, তাঁদের আধ্যাত্মিক সাধনা এবং বাউল কিংবা কবি হয়ে উঠার নানা ঘটনা সংকলন করেছেন। প্রকাশক বলাকা, চট্টগ্রাম। ২৮০ টাকা।
তারেক রেজা
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ডিসেম্বর ০৫, ২০০৮
Leave a Reply