৩৫. প্রদীপ পূজা জাতক
“সুপ্রসন্ন চিত্তে” এ ধর্ম দেশনা শাস্তা জেতবন বিহারে বাস করবার সময় প্রদীপ দান সম্পর্কে বলেছিলেন।
একদিন বহু ভিক্ষু শ্রাবস্তীর জেতবন বিহারে ভগবানের নিকট গিয়ে তাঁকে বন্দনান্তর একান্তে উপবেশন করে বললেন– ভন্তে ভগবান, মহাজনগণ বুদ্ধাদি ত্রিরত্নকে পূজা উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করলে, অনাগতে উক্ত পূজক কিরূপ। বিপাক লাভ করবে?
তদুত্তরে বুদ্ধ বললেন–“হে ভিক্ষুগণ, শুধু এখন যে ত্রিরত্নের পূজা উপলক্ষে প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করা হচ্ছে, তা নয়; পূর্বেও মহাজনগণ প্রদীপ জ্বালিয়ে ত্রিরত্নকে পূজা করতেন।” পূর্বে পুরাতন দীপঙ্করের প্রদীপ দান পরবর্তী দীপঙ্করের ন্যায়” এ কথাটুকু বলে নীরবতা অবলম্বন করলেন। তখন ভিক্ষুগণের প্রার্থনায় ভগবান উক্ত কাহিনী বলতে লাগলেন–
অতীতে এ ভদ্রকল্প হতে লক্ষাধিক বিশ অসংখ্যকল্প পূর্বে পুরাতন দীপঙ্কর নামক এক সম্যক সমুদ্ধ জগতে উৎপন্ন হয়েছিলেন। সে সময়ে পরবর্তী দীপঙ্কর সম্যক্ সম্বুদ্ধ বোধি সত্ত্ব অমরাবতী নামক নগরে ব্রাহ্মণ মহাশালকুলে উৎপন্ন হয়েছিলেন। তাঁর নাম ছিল “রাম ব্রাহ্মণ।” এক সময় তিনি। চিন্তা করে বুঝতে পারলেন সংসারী হয়ে গৃহবাসে অবস্থান করা বড়ই উৎপাত ও সঙ্কটপূর্ণ। সংসার ছেড়ে প্রব্রজ্যা ধর্ম গ্রহণ করে অনাগারিক জীবন হবে বড়ই সুখ ও আনন্দপ্রদ। ইত্যাদি কামের দোষ এবং প্রব্রজ্যার বিশেষ গুণ জ্ঞাত হয়ে নিজের বিপুল ধন সম্পদ ত্যাগ করে বুদ্ধ শাসনে প্রব্রজিত হলেন। তথায় তিনি বুদ্ধবচন শিক্ষা করে “ত্রিপিটক ধরথের” বলে প্রসিদ্ধ হলেন। তিনি ক্রমে পঞ্চঅভিজ্ঞ ও সমাপত্তি উৎপাদন করে সর্বত্র খ্যাতনামা হলেন। একদিবস তিনি বুদ্ধের নিকট এসে তাঁর অসামান্য রূপশ্রী সৌভাগ্য দেখে অত্যন্ত প্রীত হলেন। প্রীতি চিত্তে তিনি স্বীয় পাত্রটি নিয়ে সমগ্র চাম্পেয়্য নগরে তৈল ভিক্ষা করে বহু তৈল প্রাপ্ত হলেন। সে তৈল বিহারে এনে বহু প্রদীপ সজ্জিত করে তদ্বারা দীপঙ্কর বুদ্ধকে সশ্রদ্ধচিত্তে পূজা করলেন। এ পূজার পুণ্যফলে নিজে ভবিষ্যতে বুদ্ধত্ব লাভ করবার জনা নিন্মোক্ত গাথা যোগে প্রার্থনা করলেন
১। “সুপ্রসন্ন চিত্তে বুদ্ধকে এ প্রদীপ পূজার পুণ্য-ফলে সর্বলোকের হিতার্থ ভবিষ্যতে যেন আমি বুদ্ধ হতে পারি।” এরূপে তিনি প্রদীপ পূজার পুণ্য-ফলে বুদ্ধ হবার জন্য প্রণিধান করে পুরাতন দীপঙ্কর বুদ্ধের সম্মুখে উপবিষ্টাবস্থায় কৃতাঞ্জলি হয়ে নিন্মোক্ত গাথাদ্বয় ভাষণ করলেন–
২-৩। “বর্তমান যেমন আপনি মহাবীর, মহানায়ক অগ্র, জ্যেষ্ঠ, অনুত্তর, লোকনাথ সম্যক সম্বুদ্ধ হয়েছেন, আমিও যেন সেরূপ বুদ্ধত্ব লাভ করি।” স্থবিরের এ প্রার্থনা শুনে পুরাতম দীপঙ্কর বুদ্ধ অনাগতের দিকে দৃকপাত করে দেখলেন–তাঁর বুদ্ধত্ব লাভের প্রার্থনা সিদ্ধ হবে। তখন তিনি ভিক্ষু সংঘের সমবেত সভায় ঐ স্থবির ভিক্ষুর প্রার্থনা বিষয় প্রকাশ প্রসঙ্গে নিন্মোক্ত গাথায় ভাষণ করলেন–
৪-৬। “হে ভিক্ষুগণ, যে ভিক্ষু এখন আমাকে দীপ পূজা করছে এ হতে ষোড়শ সহস্র অসংখ্য কল্পাধিক পরে তাঁর বুদ্ধত্ব প্রার্থনা পূর্ণ হবে।” এ ভিক্ষু যথাকালে জগতে উৎপন্ন হয়ে মহাযশঃশালী লোকনাথ “দীপঙ্কর” নামক বুদ্ধ হবেন।
এরূপে পুরাতন দীপঙ্কর বুদ্ধের নিকট নিজের বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির ব্যাখ্যান শুনে তিনি আরো প্রীতি সংযুক্ত চিত্তে সে বুদ্ধের সম্মুখে আরো বহু প্রদীপ পূজা করলেন। সে হতে প্রত্যহ সে স্থবির ভিক্ষা করে যা তৈল প্রাপ্ত হতেন, তদ্দারা প্রত্যহ প্রত্যহ বুদ্ধের সম্মুখে দীপ জ্বালিয়ে পূজা করতেন। এরূপে তার অতীত বিষয় প্রকাশ করার পর এখন স্বীয় অতীত বিষয় উপস্থিত ভিক্ষুসভায় বিবৃত করতে লাগলেন
হে ভিক্ষুগণ, অতীতে পুরাতন দীপঙ্কর বুদ্ধের উৎপত্তিকালে আমি নিজের পূর্বকৃত “অপরাপরিয় বেদনীয়” নামক অকুশল কর্মের দ্বারা নারী জন্ম লাভ করে পুরাতন দীপঙ্কর বুদ্ধের মাতার কনিষ্ঠা কন্যা হয়ে রাজকুলে বাস করেছিলাম। একদা সে পিটকধারী স্থবির ভিক্ষু নগরে তৈল না পেয়ে রাজাঙ্গনে এসে দাঁড়িয়ে রইলেন। সেক্ষণে প্রাসাদের সপ্তমতলে শ্রীপালঙ্কে উপবিষ্টা রাজ-দুহিতা গবাক্ষ-পথে রাজাঙ্গনে স্থবিরকে দেখে চিন্তা করলেন–“এ শ্ৰমণ কি উদ্দেশ্যে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন?” এ বিষয় জানবার জন্য এক দাসীকে তাঁর নিকট পাঠালেন এবং বলে দিলেন–“তুমি গিয়ে তাঁর আগমনের কারণটি জেনে এসে শীঘ্রই তা আমাকে বল্বে। দাসী তখন। ত্বরিত গমণে গিয়ে স্থবিরকে বন্দনা করে জিজ্ঞাসা করলেন–“আপনি এখানে কি প্রয়োজনে এসেছেন?” স্থবির বললেন–“আমি এখানে তৈল ভিক্ষার জন্য এসেছি।” তখনই দাসী ত্বরিৎ গমণে গিয়ে রাজদুহিতাকে তা জ্ঞাপন করলেন। রাজকন্যা তা শুনে অতি প্রীতি চিত্তে স্থবিরকে সাদরাহ্বান করে প্রাসাদে মহার্ঘ্য আসনে উপবেশন করালেন। তৎপর রাজকন্যা একটা সুবর্ণ পাত্র সিদ্ধার্থ তৈলে পূর্ণ করে তা উভয় হস্তে মস্তকে ধারণ করে এরূপ প্রনিধান করলেন–“আমার ভ্রাতা যেমন সর্বলোকের হিতার্থে জগতে সম্যক সম্বুদ্ধ হয়েছেন, আমিও এ সিদ্ধার্থ তৈল দানের ফলে অনাগতে যেন সম্যক সম্বুদ্ধ হতে পারি।” এ সিদ্ধার্থ তৈলের নামানুসারে যেন তখন আমার নাম হয় “সিদ্ধার্থ বুদ্ধ।”
রাজপুত্রী চিত্তে এরূপ শ্রেষ্ঠ প্রণিধান স্থাপন করে মস্তক হতে পাত্র নামিয়ে স্থবিরের পাত্রে সশ্রদ্ধ অন্তরে তৈল ঢেলে দিলেন। তৎপর তাঁকে কৃতাঞ্জলী হয়ে বন্দনা করে বললেন–“ভন্তে, আপনি এ সিদ্ধার্থ তৈল দ্বারা প্রদীপ জ্বালিয়ে আমার ভ্রাতা বুদ্ধকে পূজা করুন এবং তাঁকে এরূপ বলবেন–“ভন্তে ভগবান, আপনার কনিষ্ঠা ভগ্নি রাজকন্যা আমাকে এ সিদ্ধার্থ তৈল দান দিয়ে অনাগতে বুদ্ধ হবার জন্য প্রগাঢ় ইচ্ছা পোষণ করে বলেছেন–“আমার এ অনুরোধ একান্ত ভাবেই আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকে বলবেন।” এ বলে স্থবিরকে বিদায় দিলেন। তখন তিনি বুদ্ধের নিকট এসে সিদ্ধার্থ তৈল দ্বারা প্রদীপ জ্বালিয়ে বুদ্ধ পূজা করলেন এবং বন্দনা করে রাজকন্যার প্রেরিত সমস্ত খবর ব্যক্ত করলেন। বুদ্ধ তা শুনে স্থবিরকে বললেন–“হে ভিক্ষু, এখন আমি আমার কনিষ্ঠা ভগ্নির ইচ্ছিত বিষয়ের কোনই ব্যাখ্যান দিতে পারছিনা। তার বিশেষ কারণ হল এই–সে এখন “নারী জাতি।” নারী জাতি “অষ্ট ধর্ম” গ্রহণে অপরিপূর্ণা।” স্থবির এ কথা শুনে পুনঃ বুদ্ধকে জিজ্ঞাসাচ্ছলে নিন্মোক্ত গাথাটি বললেন–
৭। “হে মহাবীর, সে অষ্ট ধর্ম কি? অনুগ্রহ করে তা আমাকে দেশনা করুন।” পিটকধর স্থবিরের প্রার্থনা শুনে বুদ্ধ অষ্ট ধর্ম প্রকাশচ্ছলে নিন্মোক্ত চারটি গাথা ভাষণ করলেন–
৮-১১। “মনুষ্যত্ব, পুরুষ, ত্ৰিহেতুক, বুদ্ধদর্শন, প্রব্রজ্যা, গুণসম্পত্তি, প্রার্থনা ও তীব্র ইচ্ছা, এ অষ্টবিধ ধর্মের একত্র সমন্বয়কে অষ্টধর্ম সমোধান বলে। যার নিকট এ অষ্টবিধ ধর্ম সমাধান নেই, সপ্তবিধ ধর্ম পরিপূর্ণ হলেও বুদ্ধের শ্রীমুখে অনাগতে সে বুদ্ধ হওয়ার ব্যাখ্যান লাভ করতে পারে না, ইহা। সুনিশ্চিত কথা। উক্ত অষ্টবিধ ধর্ম যার নিকট পরিপূর্ণ আছে, তার বুদ্ধত্ব প্রার্থনা সিদ্ধ হবে কিনা বুদ্ধের শ্রীমুখে তা প্রকাশ করেন। যিনি বুদ্ধের শ্রীমুখে ভবিষ্যতে বুদ্ধত্ব প্রার্থনার ব্যাখ্যান। লাভ করবেন, তিনি অনাগতে নিশ্চয়ই বুদ্ধত্ব লাভ করবেন।”
এ বলে তিনি পুনঃ বললেন–
১২-১৩। “মনুষ্যত্ব, ত্ৰিহেতুক, বুদ্ধ দর্শন, গুণ সম্পদ; প্রার্থনা, তীব্র ইচ্ছা, এ ছয় গুণ সম্পন্ন রাজধীতা এখন পুরুষ ও প্রব্রজিত না হওয়ায় অনাগতে বুদ্ধত্ব লাভের প্রার্থনার ব্যাখ্যান আমার নিকট লাভ করতে পারবে না।”
ইহা শুনে স্থবির জিজ্ঞাসা করলেন–“তা হলে ভন্তে, আপনার কনিষ্ঠা ভগ্নির প্রার্থনা পূর্ণ হবে কি?” তখন ভগবান। অতীতের দিকে দিব্য দৃষ্টি দিয়ে দেখলেন–“এ রাজ কুমারীর অতীত তিনজন্মেও বুদ্ধত্ব লাভের প্রার্থনা আছে। এ তিনজন্মের অতীতে এ রাজধীতার আরো কি আছে, তদ্বিষয়ে দিব্য দৃষ্টি দিয়ে দেখলেন–“বহু অতীতে তার বুদ্ধ করণ কৃত্য আছে” ইহা জ্ঞাত হয়ে তাঁকে বললেন–“এ রাজধীতা সিদ্ধার্থ তৈল দান পুণ্য ফলে নারীত্ব হতে মুক্ত হয়ে তুষিত দেবলোকে দিব্য প্রাসাদে ‘সুবর্ণ বর্ণ’ দেবপুত্ররূপে উৎপন্ন হবে।” ইহা বলে পুনঃ স্থবিরকে সম্বোধন করে বললেন–“অবিরাম ধ্যানের প্রভাবে তুমি এখান হতে চ্যুত হয়ে ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হবে। তথা হতে পুনঃ চ্যুত হয়ে দেবলোকে ও মনুষ্যলোকে পুনঃ পুনঃ সঞ্চরণ করে লক্ষাধিক মোড়শ অসংখ্য কল্পকাল পর্যন্ত পারমী সম্ভার। পূর্ণ করে পুনঃ তুষিত দেবলোকে উৎপন্ন হবে। যথাকালে সে দেবলোক হতে চ্যুত হয়ে রম্যবতী নামক নগরে ‘সুদেব’ নামক রাজার অগ্রমহিষী ‘সুমেধা দেবীর জঠরে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করবে। দশমাস পরে ভূমিষ্ট হয়ে ক্রমান্বয়ে যৌবনত্ব প্রাপ্ত হয়ে অযুত বর্ষ অনাগারিক জীবিকা নির্বাহ করবে। তৎপর ক্রমান্বয়ে জীর্ণ, ব্যাধিগ্রস্ত, মৃত দেহ, প্রব্রজিত, এ চারজনকে দেখে স্বীয় চিত্তে সংবেগ জাগ্রত হবে। এ বিষয় চতুষ্টকে হেতু করে। মহাভিনিষ্ক্রমণ করে দশমাস যাবৎ মহাধ্যানে রত থেকে অনুক্রমে সম্যক্ সম্বুদ্ধত্ব লাভ করবে।” এরূপে অতীত বিষয় আহরণ করে আমাদের শাস্তা গৌতম সম্যক সম্বুদ্ধ এখন। জেতবনে সম্মিলিত ভিক্ষুদের মধ্যে বিশেষ ভাবে প্রকট করার জন্য প্রদীপ-দান-ফল দেশনা প্রসঙ্গে নিন্মোক্ত গাথাগুলি ভাষণ করলেন–
১৪-২৯। পূর্বে দীপদানের ফলে দীপঙ্কর নামক শাস্তা জগতে সম্যক্ সম্বুদ্ধত্ব লাভ করেছেন। সে দীপঙ্কর মহামুনি অশীতি হস্ত উচ্চ ছিলেন। তিনি সর্বদা দীপবৃক্ষের ন্যায় শোভা পেতেন। ইহা দীপদানের ফল। পূর্বে দীপ দানের ফলে সে বুদ্ধের দেহ প্রভা সর্বদা দশদিক বারযোজন ব্যাপী বিস্তৃত থা । তাঁর আয়ুষ্কাল ছিল অযুত বৎসর। সারাজীবন তাঁর দেহরশ্মি এক সমানই ছিল। সে দীপঙ্কর লোকনাথ পূর্বে দীপ দানের ফলে সম্যক দৃষ্টি মানস সম্পন্ন বহু মানবকে ভবদুঃখ হতে উত্তীর্ণ করে দেন। তিনি অই দীপ পূজার ফলেই লোকাগ্র পুল, তেজবান, যশস্বী, জগতের সুখকামী হিতৈষী দীপঙ্কর বুদ্ধ সর্বদা সদ্ধর্ম প্রকাশ করতেন। জগতে এ অনাসব অগ্রবুদ্ধ জনগণকে মুক্তি দিয়ে নিরাপদে অবস্থান করে দিলেন। সে প্রদীপ পূজক দীপঙ্কর বুদ্ধ পরমায়ুর পরিপূর্ণতা লাভের পর প্রজ্জলিত অগ্নিরাশির ন্যায় নির্বাপিত হয়েছিলেন। তদ্ধেতু স্বীয় সুখকামী পণ্ডিত নর-নারিগণ সশ্রদ্ধান্তরে সাদরে ত্রিরত্বকে প্রদীপ পূজা কর। যে নরগণ নিরলসভাবে সাদরে দিবারাত্রি ত্রিরত্নকে যথাশক্তি প্রদীপ পূজা করে, তারা সর্বদা দেবলোকে ও মনুষ্যলোকে দীর্ঘায়ু ও সুখী হয়। ইহা প্রদীপ পূজারই ফল। পূর্বজন্মে প্রদীপ পূজকগণ ইহলোকে উৎপন্ন হলে সর্বদা প্রজ্ঞাবান চক্ষুষ্মণ ও নির্ভীক হয়। ইহা প্রদীপ দানের ফল। তারা সর্বদা শ্রেষ্ঠ কুলে, মহাতেজশালী ও নিরোগী হয়। জ্ঞাতী মিত্রের মধ্যে সর্বদা বিরোচিত ও ধনবান হয়। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই মার্গফল লাভ করে দুঃখের অন্তসাধক নির্বাণ প্রাপ্ত হয়। এরূপে ত্রিরত্নে সর্বদা তৈল-প্রদীপ পূজা দান করা সুখাবহ হয়। তদ্ধেতু শ্ৰেষ্ঠ অগ্ৰসুখ প্রার্থনাকারী পণ্ডিত ব্যক্তিগণ ত্রিরত্নে তৈল দান ও প্রদীপ পূজা কর।”
তখন পুরাতন দীপঙ্কর সম্যক সম্বুদ্ধ যথায়ুষ্কাল বুদ্ধকৃত্য সমাপণ করে অনুপাধিশেষ নির্বাণ ধাতুতে পরিনির্বাপিত হয়েছিলেন। সিদ্ধার্থ তৈল দায়িকা রাজকুমারী ও আয়ুষ্কাল। পরিপূর্ণে মনুষ্যলোক হতে চ্যুত হয়ে তুষিত দেবলোকে উৎপন্ন হয়েছিলেন। ভগবান এ ধর্মদেশনা করে জাতক সমাপন কল্পে নিন্মোক্ত গাথা চতুষ্টয় ভাষণ করলেন–
৩০-৩৩। তখনকার ত্রিপিটকধর প্রদীপ পূজাকারী স্থবির পরে দীপঙ্কর সম্যক সম্বুদ্ধত্ব লাভ করে পরিনির্বাপিত হয়েছিলেন। তখন আমার সাথে পুণ্যকর্মকারিগণ এখন আমার চারি পরিষদ বৃন্দ শ্রাবক সংঘ।” তখন কার সিদ্ধার্থ তৈল দায়িকা ঐ রাজধীতা এখন লোকনাথ সম্যক্ সম্বুদ্ধ আমি। ত্রিবিধ স্বীয় সুখ প্রার্থনাকারী তোমরা সবাই অতি গৌরব চিত্তে এজাতক ধারণ কর।
(প্রদীপ দান জাতক সমাপ্ত।)
Leave a Reply