১৮. অষ্ট পরিক্খার জাতক
“ত্রিচীবর ও পাত্র” এ ধর্মদেশনা ভগবান জেতবনে অবস্থানকালে অষ্ট পরিখার’ দান সম্পর্কে বলেছিলেন।
এক সময় নন্দকুমার নামক রাজপুত্র স্বীয় মহতী পরিষদ সহ ধর্মশ্রবণ মানসে প্রসন্ন মনে তথাগতের নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন। তখন তিনি রাজপুত্র প্রমুখ সকলকে আনুপূর্বিক ধর্মকথা বলেছিলেন–যথা দান কথা, শীল কথা, ভাবনা কথা, স্বর্গ কথা, নৈম্য ও নির্বাণ সম্বন্ধীয় কথা। এ ষড়বিধ বিষয়ের দেশনা অবসানে সবাই প্রতিসম্ভিদাসহ অরহত্ব ফলপ্রাপ্ত হলেন। ভগবান তাঁদের ঋদ্ধিময় পাত্র-চীবর লাভের পুণ্য আছে দেখে তার দক্ষিণ হস্ত প্রসারণ করে বললেন–“হে ভিক্ষুগণ, তোমরা দুঃখের সম্যক্ অন্তসাধনের জন্য আমার শাসনে এসে ব্রহ্মচর্য আচরণ কর।” তন্মুহুর্তে নন্দকুমার প্রমুখ সেই কুলপুত্রদের গৃহী বেশভূষা অন্তর্হিত হল, তাঁরা পাত্র চীবরে সুশোভিত হল। ঋদ্ধিময় অষ্ট পরিখার দ্বারা ঋদ্ধিময় প্রব্রজ্যা লাভ করলেন। তাঁরা সবাই বুদ্ধকে বন্দনা করে করজোড়ে বসলেন। ধর্মসভায় উপবিষ্ট ভিক্ষুগণ এ অপূর্ব দৃশ্য দেখে চমৎকৃত হয়ে তারা পরস্পর বললেন–“অহো বন্ধুগণ, কোন্ পুণ্যকর্ম প্রভাবে শাস্তা এ সব কুলপুত্রকে ঋদ্ধিময় পাত্র-চীবর দ্বারা প্রব্রজ্যা প্রদান করলেন?” ভগবান তাঁদের আলোচনা শুনে বললেন–“হে ভিক্ষুগণ, তোমরা কি আলোচনা করছ?’ তখন ভিক্ষুগণ তাদের। আলোচ্য বিষয় প্রকাশ করলে, বুদ্ধ বললেন–“হে ভিক্ষুগণ, এদের আমার ঋদ্ধির প্রভাবে প্রব্রজ্যা প্রদান করেছি, তা নয়। এরা পূর্বজন্মে অষ্ট পরিখার দান করেছিল। সে দানের ফলেই এ পুণ্যবানগণ ঋদ্ধিময় পাত্র-চীবর লাভ করছে। সর্বজ্ঞতা জ্ঞান লাভের জন্য আমিও অতীত জন্মে অষ্ট পরিখার দান করেছিলাম” এ বলে ভগবান নীরব হলে, ভিক্ষুগণ তার সে অতীত জন্মের কাহিনী বলতে প্রার্থনা করলেন। তখন তিনি বললেন–
হে ভিক্ষুগণ, অতীতে সুমঙ্গল বুদ্ধের উৎপত্তিকালে ‘উত্তরি’ নামক নগরে ‘সুরচি’ নামক ব্রাহ্মণ গ্রামে মহাবিভব সম্পন্ন ব্রাহ্মণকুলে বোধিসত্ত্ব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তখন তাঁর নাম ছিল ‘সুরচির’ ব্রাহ্মণ সুমঙ্গল বুদ্ধের প্রতি অতি প্রসন্ন ছিলেন। একদা বোধিসত্ত্ব সুমঙ্গল বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হলেন। তথায় শ্রীবুদ্ধের মুখে মধুর ধর্ম কথা শুনে অত্যধিক প্রসন্ন হয়ে আগামীকল্যের জন্য সশিষ্যে বুদ্ধকে নিমন্ত্রণ করলেন। বুদ্ধ বলেন–“তোমার কতজন ভিক্ষুর প্রয়োজন?” মহাসত্ত্ব বললেন–“ভন্তে আপনার ভিক্ষু পরিষদের সংখ্যা কত?” বুদ্ধ বললেন–“বর্তমান এখানে ভিক্ষুর সংখ্যা এক কোটি এক অযুত মাত্র।” ইহা শুনে সুরচির ব্রাহ্মণ বললেন–“ভগবন, সমস্ত ভিক্ষুই চাই।” বুদ্ধ মৌণভাবে সে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। তখন সুরচির সানন্দে বুদ্ধকে বন্দনা করে প্রস্থান করলেন। তিনি গৃহে এসে সকলকে অষ্ট পরিত্যার যোগাড় করবার জন্য আদেশ দিয়ে নিন্মোক্ত গাথায় বললেন–
১। “সংঘাটি, উত্তরাসঙ্গ, অন্তর্বাস, পাত্র, কটিবন্ধনী, ক্ষুর, সূচী-সূত্র ও জল পরিশ্রুত গামছা, এ আট প্রকার দ্রব্যকেই অষ্ট পরিখার (ভিক্ষুদের ব্যবহার উপযোগী অষ্ট উপকরণ) বলে।”
মহাসত্ত্বের বাক্য শুনে গৃহবাসী সকলেই বললেন–“ভবৎ, আমরা আপনার কথিত অষ্ট পরিখার অতি শীঘ্র যোগাড় করব। বোধিসত্ত্ব চিন্তা করলেন–“আমি একাকী বুদ্ধ প্রমুখ এত গুলি ভিক্ষুর অন্ন, ব্যঞ্জন, পায়সান্ন অষ্ট পরিখারাদি দানীয় সম্ভার পরিপূর্ণ এ মহানুষ্ঠান সুসম্পাদন করা সম্ভব নয়। তাঁদের উপবেশনের স্থান ও তৈরী করতে হবে।” এ চিন্তার সাথে সাথেই দেবরাজ ইন্দ্রের বাসভবন উত্তপ্ত হয়ে উঠল। দেবরাজ ইন্দ্র স্বীয় বাসভবনের এ অবস্থা অনুভব করতঃ চিন্তিত হয়ে নিন্মোক্ত গাথাটি বলেন–
২। “কোন দেব-মনুষ্য মনে হয় দান ও ব্রহ্মচর্যাদি পুণ্য কর্মে বিপুলভাবে সম্পাদন করছেন। সে এ পুণ্যের প্রভাবে আমাকে এ আসন হতে চ্যুত করবেন।”
দেবরাজ দিব্যজ্ঞানে অবগত হলেন–“সুরচির ব্রাহ্মণ বুদ্ধাঙ্কুর অনাগতে নিশ্চয়ই বুদ্ধ হবেন। তিনি এখন সম্যক সম্বুদ্ধ প্রমুখ এক কোটি এক অযুত পরিমাণ ভিক্ষু সংঘ নিমন্ত্রণ করছেন। তাঁদের উপবেশনের স্থান সম্বন্ধেই তিনি এখন চিন্তান্বিত। আমি তথায় গিয়ে সে পুণ্যকর্মের অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।” এ চিন্তা করে দেবেন্দ্র বাইশ, কুড়াল, কোদাল করাত, ইত্যাদি অস্ত্র সঙ্গে লয়ে সূত্রধরের বেশে মহাসত্ত্বের নিকট এসে বললেন–“ভবৎ ব্রাহ্মণ, মহোদয়, আপনার যদি সূত্রধরের প্রয়োজন হয়, তা আমাকে দয়া করে বলবেন, আমি সূত্রধর।” মহাসত্ত্ব বললেন–“আপনি কি কাজ জানেন?” দেবরাজ বললেন–“আমার অজানা কাজ কিছুই নেই।” মহাসত্ত্ব বলেন–“আমার একটা কাজ আছে। তা হল, একটা মনোরম মণ্ডপ তেরী করা। তা পারবেন ত?” দেবরাজ বললেন–“তা নিশ্চয়ই পারব।” তখন মহাসত্ত্ব বললেন–“আমি আগামী কল্যের জন্য বুদ্ধ প্রমুখ এক কোটি এক অযুত ভিক্ষু নিমন্ত্রণ করছি। তাদের বসবার স্থানে একখানা মনোরম মণ্ডপ নির্মাণ করতে হবে।” দোজ বললেন–“ব্রাহ্মণ মহাশয়, আপনি যদি বেতন দিতে পারেন, তাহলে এখনিই আমি আপনার মননামত মণ্ডপ তৈরী করে দেব।” মহাসত্ব বলেন–“হে সুজন মিস্ত্রী, আমি আপনার যথাযোগ্য বেতন দেব। তবে বাবা, অদ্যই সে মনোরম মণ্ডপ তৈরী করে দিতে হবে।” দেবরাজ মহাসত্ত্বের কথায় সম্মত হয়ে মণ্ডপ নির্মাণের নির্দিষ্ট স্থানের পাশে দাঁড়িয়ে সেদিকে দৃক্পাত করলেন। তৎক্ষণাৎ দেবরাজের প্রভাবে-তেজে দ্বাদশ যোজন পরিমাণ একটা স্থান ভেরী মুখের ন্যায় সমতল হয়ে প্রাদুর্ভূত হল। তখন দেবরাজ “সে সমগ্র সমতল স্থান ব্যাপী সপ্তরত্নে প্রতিমণ্ডিত এক মণ্ডপ হউক” এরূপ চিন্তা করা মাত্রই সপ্তরত্ন সমলস্কৃত মনোরম এক মণ্ডপ পৃথিবী ভেদ করে উত্থিত হল। সে মণ্ডপের সুবর্ণময় স্তম্ভের গোড়ালী-ঘট ছিল রৌপ্যময়, রৌপ্যময় স্তম্ভের গোড়ালী-ঘট ছিল সুবর্ণময়। মনিময় স্তম্ভের গোড়ালী-ঘট ছিল প্রবালময়। প্রবালময় স্তম্ভের গোড়ালী-ঘট ছিল মণিময়। সপ্তরত্ন বিচিত্রময় স্তম্ভের গোড়ালী-ঘট ছিল সপ্তরত্নে বিচিত্রময়। তারপর দেবরাজ মনে করলেন–“প্রত্যেক স্তম্ভের ফাঁকে ফাঁকে উপরার্ধে কিঙ্কিনীসহ ঝালরে পরিশোভিত হউক।” তনুহুর্তে সমগ্র মণ্ডপের যথাস্থানে তা প্রাদুর্ভূত হল। মৃদু বায়ুতে সে সুবর্ণ ঝালর চালিত হয়ে মধুর শব্দ নিঃসৃত হতে লাগল। সে শব্দ যেন পঞ্চাঙ্গিক তুর্য ধ্বনি ও দিব্য সঙ্গীতের ন্যায় বোধ হল। ঝালরের মধ্যে মধ্যে সুগন্ধিময় দিব্য পুষ্পমালা ঝুলতে লাগল। দেবরাজ পুনঃ চিন্তা করলেন–এক কোটি এক অযুত ভিক্ষুর বসবাস মনোহর দিব্য আসন পৃথিবী ভেদ করে যতাস্থানে প্রাদুর্ভূত হউক। তন্মুহূর্তে তা প্রাদুর্ভূত হল। তারপর পুনঃ চিন্তা করলেন–মণ্ডপের যথাযোগ্য স্থানে বৃহৎ জলপাত্র সমূহের প্রাদুর্ভাব হউক। তন্মুহুর্তে তা হল। দেবরাজ সূত্রধরের বেশে এসব কাজ সম্পাদন করে সুরচি ব্রাহ্মণের নিকট গিয়ে বললেন–
“ভবৎ মহাব্রাহ্মণ, আসুন আপনার মণ্ডপ দর্শন করে বেতন দিয়ে আমায় বিদায় করুন।” তখন মহাসত্ত্ব মণ্ডপে গিয়ে সে অপূর্ব দৃশ্য দেখে তাঁর সর্ব দেহ অফুরন্ত প্রীতিরসে ভরপূর হল। তখন তিনি পরিজনবর্গকে আহ্বান করে বললেন–
৩-৪। “ওহে, তোমরা দেখ, এরূপ আশ্চর্য দর্শনীয় মণ্ডপ আমার মনোরথ পূর্ণ করবার ইচ্ছায় নিশ্চয়ই দেবরাজ ইন্দ্রের দিব্য ঋদ্ধির প্রভাবে প্রাদুর্ভূত হয়েছে। এ মনোহর দিব্য মণ্ডপে আমার একদিন মাত্র দান দেওয়া উচিত হবে না। এখানে আমি সপ্তাহকাল যাবৎ আমার আশানুরূপ দান দেব।” এ সিদ্ধান্ত করে পরদিবস হতে মণ্ডপে সুমঙ্গল বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষু সংঘকে সপ্তাহকাল ব্যাপী মহাদান দিলেন এবং নিজেও সে মণ্ডপে সপ্তাহকাল বাস করলেন। বলা বাহুল্য, এ দান যজ্ঞে পরিবেশনাদি বিবিধ বিষয়ে সাহায্য করেছিলেন, মানব বেশে বহু দেবতাবৃন্দ। মহাসত্ব সপ্তম দিবসে ঘৃত, মাখন, তৈল ও গুড়াদি দ্বারা পাত্র পূর্ণ করে চীবরাদি পরিক্খার সহ প্রত্যেক ভিক্ষুকে মহাদান প্রদান করলেন। তখন সুরুচি ব্রাহ্মণের মহাদান অনুমোদন করার ইচ্ছায় ভগবান নিন্মোক্ত গাথাগুলি ভাষণ করলেন—
৫-২৮। সংঘাটি, উত্তরাসঙ্গ, অন্তরবাস, পাত্র, ক্ষুর, সূচসুতা, কটি বন্ধনী ও জল ছাকুনী গামছা, এ অষ্ট পরিক্খার যে কোন দায়ক প্রসন্ন চিত্তে বুদ্ধ শাসনে শীলবান ভিক্ষুকে সর্বদা দান দেওয়া উচিত। যে শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি প্রসন্ন চিত্তে বুদ্ধ শাসনে অষ্ট পরিখার দান করেন, তিনি জন্মে জন্মে ভোগশালী, ধনশালী এবং সুন্দর হন। বুদ্ধ শাসনে ঋদ্ধিময় পাত্র চীবরধারী বিশুদ্ধ উপসম্পদা লাভ করেন। ভবিষ্যতে তাঁর দান মহিমা প্রকটিত হয়। যে শ্রদ্ধাবতী নারী বুদ্ধ শাসনে প্রসন্ন চিত্তে অষ্ট পরিখার দান করেন, সে নারী জন্মান্তরে ভোগশালীনী এবং মনোরমা রূপবতী হন। সে নারী অষ্ট পরিখার দানের ফলেই সর্বদা মনোজ্ঞ “মহালতা প্রসাধন” নামক অলংকার লাভ করেন। যে ব্যক্তি পবিত্র চিত্তে বুদ্ধশাসনেও ত্রিচীবর দান করেন, সে ব্যক্তিও জন্মান্তরে বর্ণশালী হন। তিনি সর্বদা বিচিত্র মনোজ্ঞ কার্পাসাদি নির্মিত মূল্যবান বস্ত্র লাভ করেন। এসব অষ্ট পরিখার দানেরই ফল। যিনি শুদ্ধাচিত্তে বুদ্ধশাসনে ভিক্ষাপাত্র দান করেন, তিনি জন্মে জন্মে ভোগশালী হন, নানা বর্ণযুক্ত মনোজ্ঞ সুবর্ণাদি নির্মিত ভাজন লাভ করেন। ইহা পাত্র দানের ফল। যিনি প্রীতচিত্তে বুদ্ধশাসনে ক্ষুর বা চাকু দান করেন, তিনি জন্মে জন্মে প্রজ্ঞাবান হন, শাস্ত্র বিশারদ হন, সর্বদা নরনারীদের সন্দেহ ভঞ্জনকারী হন এবং জ্ঞানবান বলে সর্বত্র প্রকাশিত হন। ইহা ক্ষুর বা চাকু দানেরই ফল। যিনি জিনশাসনে ভিক্ষুকে সূচ দান করেন, তিনি জন্মে জন্মে বিচক্ষণ বুদ্ধিমান, তীক্ষ্ণ প্রজ্ঞাবান। ও প্রত্যুৎপন্নমতি সম্পন্ন হন, নানা শাস্ত্রে পারদর্শীতা লাভ করেন এবং নানা শিল্প বিদ্যায় দক্ষ বলে চারিদিকে প্রকাশিত হন। ইহা সূচ দানেরই ফল। যিনি বুদ্ধ শাসনে প্রব্রজিতকে কটিবন্ধনী দান করেন, তিনি দেবমনুষ্যলোকে সর্বদা দীর্ঘায়ু লাভ করেন। তাঁকে জন্মে জন্মে দেবমনুষ্যগণ আপদ বিপদ হতে সর্বদা রক্ষা করেন এবং তিনি সবারই পূজিত হন। ইহা কটি বন্ধনী দানেরই ফল। যিনি প্রসন্ন চিত্তে জল ছাঁকুনী গামছা দান করেন, তিনি জন্মে জন্মে পরিশুদ্ধ দেহ প্রাপ্ত হন। তিনি জগতে উৎপন্ন হয়ে রোগ-ভয় বিহীন হন। ইহা ছাঁকুনী গামছা দানেরই ফল। তদ্ধেতু পণ্ডিত ব্যক্তি ভবিষ্যতের সুখশান্তির কামনা করে শীলবান ভিক্ষুকে সর্বদা অষ্ট পরিখার দান করবেন। অন্ন ও পানীয় দানে শক্তিশালী, ধন দানে ধনবান, ভোগ দানে ভোগশালী ও বস্ত্র দানে বর্ণশালী হয়। যান, বিছানা, আসন অথবা জুতা দানে সুখ লাভ হয়। যশঃ দানে যশঃবান, দীপ দানে চক্ষুম্মান ও অগ্নি বা দীপক শলাকা দানে তেজশালী হয়। পানীয় বস্তু দানে প্রীতিভাজন, প্রিয়বাক্য ভাষণে প্রিয়পাত্র, ধর্মবাক্য ভাষণে প্রজ্ঞাবান ও শীল পালনে অতিশয় রূপবান হয়। তদ্ধেতু স্বীয় সুখকামী জ্ঞানবান সর্বদা শ্রদ্ধাচিত্তে দান-শীল ইত্যাদি কুশল কর্ম সম্পাদন করবেন।” এরূপে সুমঙ্গল ভগবান বোধিসত্ত্বের নানাবিধ দান-পুণ্যের ফল দেশনা করে পরে তার ভাবিফল প্রকাশ মানসে নিন্মোক্ত গাথাটি ভাষণ করলেন–
২৯। “এ দান তেজে তুমি অনাগতে গৌতম নামক দেবনরের নায়ক লোকনাথ বুদ্ধ হবে।”
বোধিসত্ত্ব বুদ্ধের শ্রীমুখ নিসৃতঃ এরূপ বর্ণনা শুনে আমার গৃহবাসের আর প্রয়োজন নেই। এখন আমি বুদ্ধের নিকট প্রব্রজিত হব।” এরূপ চিন্তা করে নিজের ভোগ সম্পত্তি সমূহ থুথুবৎ ত্যাগ করে সুমঙ্গল বুদ্ধের নিকট প্রব্রজিত হলেন এবং সমগ্র ত্রিপিটক বুদ্ধবচন শিক্ষা করলেন। তৎপর তিনি কর্মস্থানাদি ভাবনা করে পঞ্চাভিজ্ঞ ও অষ্ট সমাপত্তি লাভ করলেন। যথায়ুষ্কাল তিনি কুশল কর্ম সম্পাদন করে মৃত্যুর পর ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হলেন। সুমঙ্গল ভগবান নব্বই সহস্র বৎসর পরমায়ু লাভ করেছিলেন। এ সুদীর্ঘদিন অসংখ্য নরনারীকে অমৃতময় মুক্তিপদ প্রদান করার পর অনুপাদিশেষ নির্বাণ ধাতুতে পরিনির্বাপিত হয়েছিলেন। ভগবান এ ধর্মদেশনা সমাপন করে নিন্মোক্ত জাতক সমাপ্তি গাথাগুলি ভাষণ করলেন–
৩০-৩৩। তখনকার দেবরাজ এখন অনুরুদ্ধ। সুরচি ব্রাহ্মণের পিতা মাতা এখন আমার পিতা মাতা। সে নগরবাসী মহাজন-সংঘ এখন আমার শাসন পূরক শ্রাবক সংঘ। তখনকারের সুরচি নামক সে ব্রাহ্মণ এখন আমি লোকনাথ, লোকজ্যেষ্ঠ, অনুত্তর তথাগত সম্বুদ্ধ। তোমরা সবাই স্বর্গ সুখ প্রার্থনা করে অতি গৌবর চিত্তে এ জাতক ধারণ কর।
(অষ্ট পরিখার জাতক সমাপ্ত।)
Leave a Reply