১২. নরজীব জাতক
“যারা সুখ ইচ্ছা করেন” এ বিষয় শাস্তা জেতবনে অবস্থান করবার সময় প্রসেনজিৎ কোশল রাজার কঠিন চীবর দান সম্পর্কে বলেছিলেন।
এক সময় প্রসেনজিৎ কোশল রাজা স্বীয় বিহারে কাচ্চায়ন মহাস্থবিরকে বর্ষাবাসের জন্য নিমন্ত্রণ করে দেশে ভেরী শব্দে এরূপ ঘঘাষণা করালেন, “হে জনগণ, তোমরা আগামী বর্ষাবাসের সময় যথাসাধ্য প্রত্যয়ের দ্বারা ভিক্ষুগণের সেবা করবে।” বর্ষাবাস সমাপণ হওয়ার পর রাজা উস্কৃষ্ট মূল্যবান বস্ত্র ক্রয় করে চীবর তৈরী করার পর রঞ্জনাদি সব চীবর কৃত্য সমাপণ করালেন। অতঃপর যাগ, অন্ন, ব্যঞ্জন ও পায়সাদি যাবতীয় উৎকৃষ্ট ভোজ্য বস্তু, দীপ, ধূপ, মাল্য ও সুগন্ধ দ্রব্যাদি সহ চীবর সমূহ বিহারে এনে মহাকাচ্চায়ন প্রমুখ ভিক্ষু সংঘের সম্মুখে রেখে “ইমং কঠিন চীবরং ভিক্ষু সংঘস্স দেমা” বলে। কঠিন চীবর দান করলেন। তখন ভিক্ষু সংঘ ভিক্ষু-সীমায় গিয়ে কর্মবাক্য পাঠ করে কঠিন চীবর কাচ্চায়ন মহাস্থবিরকে প্রদান করলেন। তখন তিনি বিনয় বিধান মতে কর্তব্য কার্য সম্পাদন করার পর কঠিন চীবর গায়ে দিয়ে সভাতে এসে উপবেশন করলেন। সপরিষদ রাজা তা দেখে অত্যন্ত প্রীত হলেন। তখন মহাস্থবির কঠিন চীবরের ফল বর্ণনা করে এক হৃদয়গ্রাহী ধর্মদেশনা করলেন। এ চমক্কার দেশনায় রাজা ব্যতীত, রাজ। পরিষদ সবাই স্রোতাপত্তি ফল প্রাপ্ত হলেন। রাজা প্রসেনজিৎ “সর্বজ্ঞ বোধি” প্রার্থনা করেছেন বলে এ সভায় তার কোন মার্গফল লাভ হলনা। তবে তাঁর এ মহাকুশল কর্ম সর্বজ্ঞ বোধিজ্ঞান লাভের হেতুসম্পদ হয়ে দাঁড়াল। তখন ভিক্ষু সংঘ উক্ত ধর্ম সভায় এরূপ কথা উত্থাপন করলেন–“বন্ধুগণ, কোশল রাজা কাচ্চায়ন মহাস্থবিরকে কঠিন চীবর দান করে তাঁর মুখে কঠিন চীবরের ফল সম্বন্ধে ধর্মদেশনা শুনেও কোন ফল লাভ করতে পারলেন না। অপিচ তাঁর পরিষদ বর্গ স্রোতাপত্তি ফল লাভ করলেন।” ভগবান বুদ্ধ গন্ধ কুটি হতে দিব্য কর্ণে ভিক্ষুগণের এ কথা শুনে তখনই সভায় উপস্থিত হয়ে প্রজ্ঞাপ্ত শ্রেষ্ঠ ধর্মাসনে উপবেশন করে বললেন–“হে ভিক্ষুগণ, এখন। তোমরা কোন্ বিষয়ের আলোচনা নিয়ে এখানে উপবিষ্ট আছ?” তখন ভিক্ষুগণ প্রত্যুত্তরে তাঁদের আলোচ্যমান বিষয় বললে, তা উপলক্ষ করে বুদ্ধ বললেন–“হে ভিক্ষুগণ, এরূপ কঠিন চীবর দান শুধু এখন নয়, পূর্বেও আমি বোধিসত্ববস্থায় এক ধনাঢ্য কুলে জন্মগ্রহণ করে পদুমুত্তর ভগবানকে কঠিন চীবর দান করেছিলাম। সেই পুণ্যের প্রভাবেই এখন সর্বজ্ঞতা জ্ঞান লাভ করেছি। অতীতের সে মহাপুণ্যের প্রবল প্রভাবের যোগাযোগও এতে বিদ্যমান রয়েছে।” তখন ভিক্ষুগণের প্রার্থনায় ভগবান সেই অতীত কাহিনী বলতে আরম্ভ করলেন–
পুরাকালে হংসবতী নামক নগরে এক রাজা রাজত্ব করতেন। তাঁর নাম ছিল ‘আনন্দ’। তখন বোধিসত্ব এক দরিদ্ৰকুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ‘নরজীব’ নামে সর্বত্র পরিচিত ছিলেন। তখন তিনি স্বীয় পিতা-মাতাকে সযত্নে পোষণ করতেন। সে সময় হংসবতী নগরের অনতিদূরে একখানা গ্রাম ছিল। সে গ্রামে পাঁচ ঘরের পাঁচজন লোক পরস্পর বন্ধুত্ব সূত্রে আবদ্ধ ছিল। সে পাঁচজনের মধ্যে একজন রথকারক, একজন মৃগ শিকারী, একজন পাখী শিকারী, একজন ক্ষৌরকার এবং আর একজন কুটুম্বিক ছিলেন। তাদের মধ্যে কুটুম্বিকই ধর্মের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাবান ও প্রসন্ন ছিলেন। তিনি এক সময় পদুমুত্তর ভগবানের ধর্মদেশনা শুনে সর্বদা দানাদি পুণ্যকর্ম সম্পাদন করতেন। তখন বোধিসত্ব পরের চাকুরী করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। একসময় তিনি উক্ত কুটুম্বিকের গৃহে চাকুরীতে নিযুক্ত হলেন। তাঁর ক্ষেত্র রক্ষা করার জন্য ক্ষেত্রের পাশে একখানা ঘর তৈরী করে তিনি তথায় বাস করতে লাগলেন। একদিন তিনি কর্তাকে বললেন–“প্রভু, আপনার ন্যায় মহাধনীর পক্ষে প্রতি বৎসর মহাফলপ্রদ দান দেয়া একান্ত কর্তব্য। কুটুম্বিক বলেন–বাবা, মহাফলপ্রদ সে দানটা কি, আমাকে বল।” তখন বোধিসত্ব বললেন–“প্রভু, সকল দানের চেয়ে মহাফলপ্রদ দান হল কঠিন চীবর দান।” ইহা শুনে তিনি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে কঠিন চীবর দান দেবার জন্য অত্যন্ত আগ্রহান্বিত হলেন। কঠিন চীবরের সঙ্গে ভিক্ষু সংঘের ব্যবহার যোগ্য অন্যান্য উপকরণও দান দেবার ইচ্ছা করলেন। যথাখাটিয়া, লেপ, তোষক, কম্বল, বালিশ, পাটি, মশারি ইত্যাদি। এ চিন্তা করে নিজের বন্ধু চতুষ্টয়কে আহ্বান করে বললেন–“বন্ধুগণ, আমরা সবাই পূর্বজন্মে নিশ্চয়ই একসাথে কুশল কর্ম সম্পাদন করেছিলাম। সে পুণ্য প্রভাবেই এখন আমরা পরস্পর অচ্ছেদ্য বন্ধুত্ব সূত্রে আবদ্ধ হয়েছি। এখন আমি কঠিন চীবর দান দেবার ইচ্ছা করেছি। তোমরা এ পুণ্য কর্মে সাহায্য করবে।” একথা শুনে তাদের মধ্যে ক্ষৌরকার এ দানের বিশেষভাবে গুরুত্ব উপলব্ধি করে সর্বান্তঃকরণে অনুমোদন করলেন। অপর বন্ধুত্রয়কে কুটুম্বিক বারবার অনুরোধ করলেও তারা সে বিষয়ে মনোেযোগী ও সন্তুষ্ট না হয়ে বলল–“বন্ধু, এখন আমাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের অনেক কাজ।” তখন কুটুম্বিক বোধিসত্ব নরজীবের সাথে চীবরাদি যাবতীয় দানীয় বস্তু নিয়ে পদুমুত্তর ভগবানের নিকট উপস্থিত হলেন। তথায় ভগবানকে সভক্তি বন্দনা করে সমস্ত সংগৃহীত বস্তুসহ কঠিন চীবর বুদ্ধকে দান করলেন। তখন ভগবান শ্রাবক সুজাত স্থবিরকে সে কঠিন চীবর গ্রহণ করতে আদেশ করলেন। স্থবির যথাবিধি মতে কঠিন চীবর গ্রহণ করলেন। কুটুম্বিক এতে অতিশয় প্রীত হয়ে ভগবানকে বন্দনা করে বললেন–“ভন্তে ভগাবন, এ কঠিন চীবর দানের ফল। সম্বন্ধে অনুগ্রহ করে বর্ণনা করুন।” তখন ভগবান কঠিন চীবর দান অনুমোদন করে এ দানফল প্রকাশ মানসে মধুর স্বরে নিন্মোক্ত গাথাটি ভাষণ করলেন–
১। “যারা সুখ ইচ্ছা করেন, তাঁরা কঠিন চীবর দান দিয়ে সংঘকে সকল সময় সুখ লাভ করেন। ইহা কঠিন চীবর দানের ফল।” এরূপে পদুমুত্তর ভগবান কঠিন চীবর দানের সুখময় ফল প্রকাশ করে এখন মধুর সুরে কুটুম্বিকের কঠিন চীবর দানের আনিশংস বর্ণনা মানসে নিন্মোক্ত ছয়টি গাথায় বললেন–
২-৭। “যারা সংঘকে দানোত্তম কঠিন চীবর দান করে, তারা দেবমনুষ্য লোকে সর্বদা সুখী হয়। দেব-মনুষ্য প্রভৃতি জন্মে শ্রেষ্ট হয় এবং উচ্চকুলে জন্ম ধারণ করে। সর্ব দুঃখদুর্গতি হতে মুক্ত হয়। কখনো অপায়ে উৎপন্ন হয় না। দেবমনুষ্য ও ক্ষত্রিয় কুলে উৎপন্ন হয়ে সুখী হয়। তারা দেবলোকে দীর্ঘকাল যাবৎ অগ্রসম্পত্তি ভোগ করে। সেখান হতে চ্যুত হয়ে মনুষ্য লোকে অমৃত সুখ ভোগ করে। কঠিন চীবর দানকারীরা কখনো হীনকুলে উৎপন্ন হয় না। তারা ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণ এ। দুকুলেই উৎপন্ন হয়। ভোগ সম্পদশালী, ধনবান ও যশঃস্বী হয়। তাদের সর্বদা অগ্রসুখই লাভ হয়। ইহা একমাত্র কঠিন চীবর দানেরই ফল।”
অতঃপর কুটুম্বিক পদুমুত্তর ভগবানের শ্রীমুখে কঠিন চীবর দানের ফল বর্ণনা শুনে আনন্দিত হলেন এবং ভগবানের শাসনের প্রতি অত্যধিক প্রসন্ন হলেন। নরজীবও পদুমুত্তর ভগবানের পাদমূলে পতিত হয়ে বললেন–“ভন্তে ভগবন, কুটুম্বিক আমাদ্বারা উৎসাহিত ও নিয়োজিত হয়ে এ পুণ্যকর্ম সম্পাদন করেছেন। এ পুণ্য অনাগতে আমার বুদ্ধত্ব লাভের হেতু হোক্।” এ বলে প্রণিধান করার পর নিন্মোক্ত গাথাটি বলেন–
৮। “এ পুণ্য কর্মের দ্বারা আমি অনাগতে বুদ্ধ হব। এ যাবৎ যে কোন ভবে উৎপন্ন হই না কেন, যেন দরিদ্র না হই।” ইহা শুনে পদুমুত্তর বুদ্ধ বোধিসত্বের বিষয় নিন্মোক্ত গাথায় প্রকাশ করলেন–
৯। “এ হতে শত সহস্র কল্পাবসানে অনাগতে আপনি গৌতম নামক বুদ্ধ হয়ে আবির্ভূত হবেন।”
বুদ্ধের মুখ-নিঃসৃত এ রূপ বাক্য শুনে মহাসত্ব পরম পুলকিত হলেন। তখন এক কুল কন্যা নানাবিধ পদ্ম পুষ্প সহযোগে একখানা পরিশুদ্ধ বস্ত্র দ্বারা ভগবানের পাদমূলে পূজা করে বলেন–“ভন্তে ভগবন, এ সৎ পুরুষ ভবিষ্যতে যখন বুদ্ধ হবেন, তখন আমিও সেই বুদ্ধের নিকট যেন অরহত্ব ফল লাভ করতে পারি এবং অনির্বাণ সংসারে সংসরণকালে প্রত্যেক জন্মে যেন তাঁর ভার্যা হতে পারি।” এ রূপ প্রার্থনা স্থাপন করলেন। সে সময় এক কুমার রত্ন খচিত এ সুচারু সুবর্ণউষ্ণীষ পদুমুত্তর ভগবানের পাদমূলে রেখে বললেন–“ভন্তে ইনি যেজন্মে বুদ্ধ হবেন, সে জন্মে আমি যেন তার পুত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারি।” এরূপ প্রার্থনা করলেন। তখন একজন শ্ৰেষ্ঠী সহস্র টাকা মূল্যের এক অঙ্গুরীয় দ্বারা বুদ্ধের পাদপূজা করে প্রার্থনা করলেন–“ভন্তে, আমি যেন ঐ বুদ্ধের পিতা হয়ে জন্মগ্রহণ করি।” সে হতে বোধিসত্ব মহাধনী ও মহাভোগ সম্পদশালী হয়ে সমর্যাদায় জীবনের অবশিষ্টকাল অতিবাহিত করলেন। অতঃপর যথায়ুষ্কালে মৃত্যুর পর তিনি তুষিত স্বর্গে উৎপন্ন হলেন। কঠিন চীবর দায়ক কুটুম্বিক মৃত্যুর পর হিমালয়ে গন্ধমাদন পর্বতে নানা রত্ন সমলস্কৃত বিচিত্র দিব্যবিমানে ভূমিবাসী দেবতা হয়ে উৎপন্ন হলেন। ক্ষৌরকারও কালক্রিয়া করে বারাণসীতে ব্যবসায়ীকুলে উৎপন্ন হল। রথকারক মৃত্যুরপর তক্কর নামক জনপদে মহামার্গ সমীপে ‘উদপান নামক পুষ্করিণী তীরে ‘ব্যাঘ্র’ হয়ে জন্মগ্রহণ করে তথায় বাস। করতে লাগল। কেহ পিপাসায় কাতর হয়ে উক্ত পুষ্করিণীতে জল পানের জন্য অবতরণ করলে তাকে সেই ব্যাঘ্ৰ ভক্ষণ করত। ব্যাধ মৃত্যুর পর মহারাস্তার সমীপে এক বটবৃক্ষে যক্ষ হয়ে উৎপন্ন হল। পথ শ্রান্ত জনগণ। সে বৃক্ষের মূলে এসে উপবেশন করলে, ঐ যক্ষ তাদের বধ করে ভক্ষণ করত। শকুণ হত্যাকারী ব্যাধ কালক্রিয়া করে হিমালয় প্রদেশে ত্রিমুখ রাস্তার মধ্যবর্তী এক বৃক্ষে শতপত্র পক্ষী হয়ে উৎপন্ন হল। উক্ত ত্রিপথের মধ্যে একটি বারাণসী গামী, একটি পথ সুবর্ণ ভূমিগামী এবং অন্যটি গন্ধমাদন পর্বতগামী। সে বিষয় প্রকাশ মানসে শাস্তা নিন্মোক্ত গাথায় বললেন–
১০-১২। নরজীব মৃত্যুর পর তুষিত দেবলোকে, দায়ক কুটুম্বিক ভূমিবাসী দেবতা হয়ে উৎপন্ন হয়েছে। ক্ষৌরকার এখান হতে মৃত্যুর পর ব্যবসায়ী কুলে, রথকার মৃত্যুর পর তক্কর নামক স্থানে ব্যাঘ্র হয়ে জন্ম নিয়েছে। মৃগ হত্যাকারী ব্যাধ যক্ষকুলে, পাখী হত্যাকারী ব্যাধ বৃক্ষাগ্রে বাসকারী শতপত্র পাখী হয়ে উৎপন্ন হয়েছে।”
ক্ষৌরকার বণিককুলে জন্ম নিয়ে ব্যবসায়ে নিযুক্ত হয়েছে। পূর্বজন্মের নামানুসারে তার নাম হয়েছে ‘কল্পক’ বণিক। একদা কল্পক বণিক সুবর্ণ ভূমিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সংগৃহীত বস্তু সমূহ বিক্রয় করে পরদিন সপরিবার স্বগ্রাম হতে সুবর্ণভূমি। অভিমুখে যাত্রা করল। বহুদিন পথ চলার পর অনুক্রমে উক্ত ‘উদকপান পুষ্করিণী তীরে উপস্থিত হল। তথায় বণিককে দেখে ব্যাঘ্রের নিকট পূর্বজন্মের স্মৃতি জাগ্রত হল। তাই কল্পকের প্রতি ব্যাঘ্রের অন্তরে হে ও মৈত্রীভাব উৎপন্ন হল। তদ্ধেতু তাকে সানন্দে জিজ্ঞেস করল–“বন্ধু, তুমি এখন কোথায় যাচ্ছ?” বণিক বল্ল–“এখন আমি সুবর্ণভূমিতে যাচ্ছি।” ইহা শুনে ব্যাঘ্র তাকে তথায় একরাত্রি অবস্থানের জন্য অনুরোধ করল। সেও ব্যাঘ্রের কথা রক্ষা করল। ব্যাধ তাদের জন্য মৃগ মাংস আহার্য বস্তু যোগাড় করে দিল। পরদিন যাওয়ার সময় ব্যাঘ্র বলল–“বন্ধু, আপনার যাওয়ার পথে বট বৃক্ষে এক যক্ষ বাস করে। সে তথায় আগত লোককে ভক্ষণ করে। সাবধানে যাবেন। সেখানে শয়ন-উপবেশন করবেন না।” এরূপ উপদেশ দিয়ে বিদায় দিল। বণিকও অনুক্রমে উক্ত বট বৃক্ষের নিতে গিয়ে পৌছল। তখন যক্ষ আহার অন্বেষণের জন্য বৃক্ষ হতে নেমে দেখল, সপারিষদ বণিককে। তাকে দেখে সে যে তার পূর্বজন্মে বন্ধু ছিল, সে স্মৃতি জাগ্রত হল। তখন তার প্রতি হে ও প্রীতিভাব সঞ্জাত হল। যক্ষ বণিককে বলল–“বন্ধু, তুমি কোথায় যাচ্ছ?” বণিক বলল–“বন্ধু, আমি সুবর্ণ ভূমিতে যাচ্ছি।” ইহা শুনে যক্ষ তাকে তথায় অনুরোধ করে এক রাত্রির জন্য রাখল। তাঁদের আহারের জন্য এনে দিল নিগ্রো ফল ও কাঁঠাল ফলাদি নানা জাতীয় ফল। পর দিবস বিদায় কালীন যক্ষ তাকে বলল–“বন্ধু, কিছুদূর যাওয়ার পর দেখবেন। ত্রিপথের সঙ্গমস্থলে একটি বট বৃক্ষ। তদুপরি বাস করে শতপত্র নামক এক পাখী সে যে রাস্তা নির্দেশ করে, সে রাস্তা দিয়েই যাবেন।” এ বলে বিদায় দিল। তখন বণিক অনুক্রমে গিয়ে শতপত্র পক্ষীর বাসস্থান নিগ্রোধ মূলে এসে উপস্থিত হল। তথায় ত্রিপথের সঙ্গমস্থল দেখে চিন্তা করল–“এখানে তিনটি পথের সঙ্গমস্থল। এখন আমাদের কোন্ পথে যেতে হবে?” এমন সময় শতপত্র পাখী আহার করে এসে ঐ বট বৃক্ষাগ্রে বসল। তখন পথের দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখল সপরিষদ বণিক। তাঁদের দেখে জিজ্ঞেস করল–“আপনারা যাবেন কোথায়?” বণিক বলল “আমি সুবর্ণ ভূমিতে যাব।” তখন পাখী বণিককে একরাত্রি তথায় বাস করার জন্য অনুরোধ করে রাখল। রাত্রি-আহারের জন্য সে পাখী সিংহ ব্যাঘের উচ্ছিষ্ট মাংসাদি আহরণ করে এনে দিল। পরদিন প্রাতে গন্ধমাদন পর্বতের পথ দেখায়ে দিয়ে বলল–“বন্ধু, এ পথে গমন করুন।” এ বলে বিদায় দিল। বণিকও সে পথে অনুক্রমে গন্ধমাদন পর্বতে গিয়ে পৌছলেন। সেক্ষণে ভূমিবাসী দেবতা সিংহ দ্বার বিবৃত করে সপরিবার বণিককে দেখল। তাকে দেখে অতি প্রীতি ফুল্ল চিত্তে আহ্বান করে বলল–“আপনি অনুগ্রহ করে আমাদের প্রাসাদে আসুন।” তখন বণিকও তার অনুরোধে দেবতার সুবর্ণ প্রাসাদে উপস্থিত হলেন। তথায় তাকে শ্রেষ্ঠ আসনে উপবেশন করালেন। তখন দেবতা নিজের পূর্বজন্মের বিষয় দিব্য দৃষ্টিতে অবলোকন করে জানতে পারলেন যেপূর্বজন্মে তিনি কুটুম্বিক হয়ে কঠিন চীবর দান করেছিলেন। সে পুণ্যের প্রভাবে তিনি এখন ভূমিবাসী দেবতা হয়েছেন, ইহা জ্ঞাত হয়ে পুনঃ চিন্তা করলেন–“তখন যে আমরা পাঁচজন বন্ধু ছিলাম, অপর চারজন এখন কোথায় জন্ম নিয়াছে?” চিন্তা করে দিব্য জ্ঞানে দেখলেন–রথকার মৃগ হত্যাকারী ব্যাধ ও পাখী হত্যাকারী ব্যাধ, এজনত্রয় অপুণ্যবান বিধায় এরা ব্যাঘ্র, যক্ষ ও শতপত্র পাখী হয়ে একজন হতে অপরজন সপ্তযোজন হিসাবে দূরবর্তী স্থানে উৎপন্ন হয়েছে। আর এ বণিক পূর্বে আমার প্রদত্ত কঠিন চীবর অনুমোদন করেছিল। এ পুণ্যের ফলে সে এখন মনুষ্য লোকে বণিককূলে জন্ম নিয়েছে।” ইহা জ্ঞাত হয়ে দেবতা সাধুজনগণের উৎসাহ বর্ধনের জন্য নিজের পূর্বকৃত পুণ্য কর্ম প্রকাশ করার মানসে নিন্মোক্ত চারটি গাথা ভাষণ করলেন–
১৩-১৬। “আমি যখন পূর্বে মনুষ্য লোকে কুটুম্বিক ছিলাম, তখন পদুমুত্তর বুদ্ধকে কঠিনচীবর দান করেছিলাম। সে পুণ্য কর্মের দ্বারাই আমি ভূমিবাসী দেবতা হয়ে উৎপন্ন হয়েছি।। এখানে সর্বদা দিব্য সুখ অনুভব করছি। যারা সংঘকে দানোত্তম কঠিনচীবর দান করেন, তাঁরা মনুষ্য লোকে জন্মগ্রহণ করলে নিত্যই সুখ ভোগ করেন। তদ্ধেতু পণ্ডিতগণ সুখী হবার ইচ্ছায় সংঘকে সুখফল দায়ক কঠিন চীবর দান করে থাকেন।
বণিককে তথায় দিব্যখাদ্য ভোজন বা দিব্য শয্যায় শয়নের ব্যবস্থা করলেন। দেবতা বণিককে তাঁর দিব্য প্রাসাদে কিছুদিন রাখলেন। তৎপর সপরিবার বণিকের সমস্ত ভাণ্ডগুলি সপ্তরত্নে পরিপূর্ণ করে দিয়ে বিধায় দিলেন। বণিক দেবতার দিব্য প্রভাবে বারাণসী নগরে স্বীয় গৃহে এসে উপস্থিত হলেন। তদ্বধি বণিক দেব-প্রভাবে মহাভোগ সম্পদে সমৃদ্ধশালী হলেন। তখন বারাণসীতে ধন সম্পদ তাঁর সমকক্ষ আর একজন শ্রেষ্ঠী ছিলেন। তাঁর বিবাহযোগ্যা অতিরূপ লাবণ্যবতী ও দর্শনীয়া এক কন্যা ছিল। মহাশ্রেষ্ঠী নিজের কন্যাকে তাই বণিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবার মানসে তাঁকে স্বীয় গৃহে আনিয়ে খাদ্য ভোজ্য ও ধন-ধান্যে ক্রমে প্রলোভিত করে স্বীয় মনস্কাম সিদ্ধ করলেন। বণিক মহাসম্পদে সম্পদশালী বটে, কিন্তু চেহারা ছিল তাঁর অতি বিরূপ। এ বিষয় প্রকাশ করবার মানসে শাস্তা নিন্মোক্ত গাথাটি ভাষণ করলেন–
১৭। “পূর্বজন্মে এ ব্যক্তি দুঃশীল ও দরিদ্র ছিল। তাই সে অতি দুঃখে ও লোভে জীবিকা নির্বাহ করত। এ জন্মে বিরূপ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে বটে, কিন্তু মহাধনী হয়েছে। ইহারই কারণ হল–পূর্বজন্মে সেকুটুম্বিকের কঠিন চীবর দান অনুমোদন করে সাগ্রহে সে পুণ্য কাজের সাহায্য করেছিল। এ কারণে সে এখন মহাধনী হয়েছে।”
মহাশ্রেষ্ঠী এ বিরূপ ধনী বণিককে কন্যা দান করায় তদেশবাসী কুমারগণ শ্ৰেষ্ঠীকে বল্ল–“মহাশ্রেষ্ঠী, পূর্বে এ বণিক অতি দরিদ্র ছিল। কিন্তু এখন সে মহাধনী হয়েছে। সে যে এখন চৌর্যবৃত্তি করেই মহাধনী হয়েছে। ইহাই নিঃসন্দেহে বলা যায়। সুতরাং আমরা সবাই তাকে এখানে কোন বিরক্তি বা শাস্তি না দিয়ে একেবারে মহারণ্যে নিয়ে যাব এবং সেখানেই তাকে জিজ্ঞেস করে তার এ ধনী হওয়ার গুপ্ত রহস্য উদ্ঘাটন। করব। ইহাতে আপনার মত কি জানতে চাই। আপনাকে ইহাও জানাচ্ছি যে–সে আপনার পুত্রের মত ভাণ করে আপনার সমস্ত ধন-সম্পদ অচিরেই অসাৎ করবে বলে মনে হয়।” মহাশ্রেষ্ঠী এ সব কথাশুনে অতিশয় ভীত হয়ে তাদের প্রস্তাব অনুমোদন করলেন। তখন কুমারগণ বণিককে নানা প্রলোভন দিয়ে মহারণ্যে নিয়ে গিয়ে তাঁকে তথায় রেখে সবাই দেশে ফিরে আসল। বণিকও হিংস্র জন্তু সমাকীর্ণ মহারণ্যে একাকী বিচরণ করে অনুক্রমে গন্ধমাদন পর্বতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সে ক্ষণে পূর্বোক্ত ভূমিবাসী দেবতা তাঁকে দেখে বললেন–“বন্ধু, আমার প্রদত্ত সমস্ত ধনরত্ন কি শেষ করেছেন? এখানে আবার। কেন এসেছেন।” এ বলে তার আগমন কারণ নিন্মোক্ত গাথাযোগে জিজ্ঞেস করলেন–
১৮। “আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি যে–আপনি কেন কোন কারণে এ মহারণ্যে এসেছেন? তা আমাকে বলুন।” ইহা শুনে বণিক নিজের আগমন-কারণ ভূমিবাসী দেবতাকে জ্ঞাপনোদ্দেশ্যে নিন্মোক্ত গাথাটি বললেন–
১৯। দেখ, আমি ‘বিরূপ এমনে কেন জনগণ আমাকে দেশ হতে বের করে দিয়েছে। সুতরাং আমি নিরাশ্রয় হয়ে পুনঃ আপনার নিকট এসেছি।”
ইহা শুনে ভূমিবাসী দেবতা বলেন–“বন্ধু, আপনি কোনই চিন্তা করবেন না। এ সম্বন্ধে আমি আপনাকে সাহায্য করব।” সেবনে একটি ঔষধের কল্প বৃক্ষ আছে। সে বৃক্ষের সাত নামে সাতটি শাখা আছে। যথা–বক শাখা, মর্কট শাখা, অভিরূপ শাখা, দীর্ঘায়ু শাখা, মহাবল শাখা, মহাপুণ্য শাখা ও আরোগীন শাখা। এ বৃক্ষ হতে যে ব্যক্তি বক শাখা খায়, সে বকে পরিণত হয়। যে মর্কট শাখা খায়, সে মর্কট হয়। যে অভিরূপ শাখা খায়, সে অভিরূপ হয়। যে দীর্ঘায়ু শাখা খায়, সে দীর্ঘায়ু লাভ করে। যে মহাবল শাখা খায়, যে মহাশক্তিশালী হয়। যে মহাপুণ্য শাখা খায়, সে মহাপুণ্যবান হয়। আর যে আরোগীন শাখা খায়, সে নিরোগ হয়। তখন দেবতা সে কল্প বৃক্ষ হতে অভিরূপ ও মর্কট শাখা এ দুটি শাখা ভেঙ্গে এনে বণিকের হাতে দিয়ে বললেন–“বন্ধু,আপনি এ অভিরূপ শাখা ভক্ষণ করুন। ইহাতে আপনি রূপলাবণ্যময় ও দর্শনীয় হবেন। তখন বণিক তা খেয়ে অতিশয় রূপবান হলেন। তারপর বিদস্তি মাত্র মর্কট শাখাটি দিয়ে বললেন–যে আপনার অনিষ্ট কামনা করে, তাকে এ শাখা হতে কিঞ্চিৎ খেয়ে দেবেন। এতে সে বানর হয়ে যাবে। তখন তার সমস্ত ধন-সম্পদ আপনারই হবে। এ বলে নিজের অনুভাব বলে বণিককে রাত্রিভাগে এনে মহাশ্রেষ্ঠীর কন্যার শয্যায় শয়ন করিয়ে অন্তর্হিত হলেন। শ্ৰেষ্ঠী কন্যা জাগ্রত হয়ে পার্শ্ব পরিবর্তন করবার কালে বণিকের দেহের সাথে তার কায় সংস্পর্শ হল। ইহাতে শ্ৰেষ্ঠী-কন্যা বিস্মিতা ও ভীতা হয়ে নিন্মোক্ত গাথায় জিজ্ঞেস করল
২০। “আপনি যে রাত্রিভাগে এসে আমার সাথে শয়ন করেছেন, আপনি কি দেবতা না মানুষ, আমাকে বলুন।” ইহা শুনে বণিক নিন্মোক্ত গাথায় বললেন–
২১। “ভদ্রে, আমি সত্যই তোমার স্বামী। অদ্যই তোমার নিকট এসেছি।” শ্ৰেষ্ঠী কন্যা তাঁকে নিজের স্বামী বলে জানতে পেরে নিন্মোক্ত গাথাটি বল্ল
২২। “আপনাকে ত মহারণ্যে দিয়ে এসেছিল। এখন আপনি কি প্রকারে কোন রাস্তায় এ ঘরে আসলেন? তা আমাকে বলুন।”
তখন বণিক তাকে কিছুই না বলে নিদ্রিত হলেন। রাত্রি শেষ হওয়ার পর শ্রেষ্ঠীকন্যা স্বীয় পিতার নিকট গিয়ে এ বিষয় ব্যক্ত করল। ইহাতে মহাশ্রেষ্ঠী ভীত ও ব্রাসিত হয়ে কুমারগণকে ডেকে বললেন–“কুমারগণ, তোমরা সকলেই এসে আমার গৃহে ঐ বণিককে দেখ। একথা শুনে কুমারগণও ভীত ত্রাসিত হয়ে শ্রেষ্ঠী কন্যার বাস-গৃহে গিয়ে দেখল, সে বণিক অপূর্বারূপলাবণ্যে ভরপুর হয়েছে। তারা বণিক কে জিজ্ঞেস করল, “প্রভূ, আপনি কি সেবন করে এরূপ রূপ সম্পদ পেয়েছেন?” বণিক নিজের সৌন্দর্য লাভের কারণ এরূপ মিথ্যা বর্ণনা করলেন–।
২৩। “আমি মহারণ্যে বিচরণ কালীন এক মহৌষধ সেবন করেছি। আর অল্প এখানে এনেছি। তোমরাও আর কিছু সেবন করতে পার।”
ইহা শুনে কুমারগণও রূপবান হওয়ার ইচ্ছায় বণিক হতে কিছু কিছু ঔষধ যাঞ্চা করল। বণিকও শত্রুরূপী কুমারগণকে মর্কট শাখা হতে কিছু কিছু অংশ প্রদান করল। তা সেবন করার পর সকলেই বানর হয়ে গেল। তখন বণিক সবাইকে বন্ধন করে অরণ্যের বহুদুর প্রদেশে ছেড়ে দিয়ে আসল। তখন বণিক সে কুমারদের ও মহাশ্রেষ্ঠীর সমস্ত ধন-সম্পদ নিজে লাভ করে মহাশ্রেষ্ঠীর পদ অধিকার করলেন। ভূমিবাসী দেবতা যথায়ুষ্কাল তথায় দিব্য সুখ উপভোগ করার পর চ্যুত হয়ে তাবতিংশ স্বর্গে দেবরাজ হয়ে উৎপন্ন হলেন। তখন ধর্ম সভায় উপবিষ্ট উক্ত ভিক্ষুদিগকে কঠিন চীবর দানের ফল বর্ণনা করার মানসে ভগবান গৌতম বুদ্ধ নিন্মোক্ত তেরটি গাথা ভাষণ করলেন–
২৪-৩৬। “আমি শ্রাবস্তীতে ভোগ সম্পদে সমৃদ্ধিশালী কুটুম্বিক হয়ে অবস্থানকালীন কঠিনচীবর দান দিয়েছিলাম। সে জন্মের পর আমি গন্ধমাদন পর্বতে মহাঋদ্ধি সম্পন্ন দেবজন্ম লাভ করে দিব্য সুখে সুখী হয়েছিলাম। ভূমিবাসী দেবজন্ম হতে চ্যুত হয়ে মহাযশস্বী দেবরাজ ইন্দ্র হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলাম।। দ্বিবিধ দেবলোকে দিব্য ঐশ্বর্য লাভ করে রাজত্ব করেছি।
যথাকালে ইন্দ্রত্ব হতে চ্যুত হয়ে চার মহাদ্বীপের একচ্ছত্র মহাশক্তিশালী চক্রবর্তী রাজা হয়ে সুখ ভোগ করেছিলাম। দেবলোকে উৎপন্ন হয়ে সর্বদা দিব্য সুখ এবং মনুষ্যলোকে উৎপন্ন হয়ে সর্বদা মনুষ্য সুখ পরিভোগ করেছি। কঠিনচীবর দানের ফলে অযুত কল্পাবধি দেব-মনুষ্য লোকে সর্বদা সুখ ভোগ করেছি। কঠিন চীবর দানের ফলে অন্ন পানীয় ও বিবিধ রত্ন ভোগ করেছি। কঠিন চীবর দানের ফলে দাস, দাসী ও অন্যান্য অনুচরেরা সর্বদা আমার সাথে সদাচারে জীবিকা নির্বাহ করত। এ দানের ফলে যা যা কামনা করা হত, তা তখনিই পেয়ে সুখী হতাম। এ মহাদানের ফলে আকাশে, জলে, স্থলে, সমুদ্রে, অরণ্যে সর্বস্থানেই আমার কোন অভাব ছিল না। তষ্কেতু পণ্ডিত ব্যক্তিরা স্বীয় হিতসুখ কামনা করে কঠিন চীবর মাসে সংঘকে কঠিন চীবর দান দিবে। এ পুণ্য সম্পদ অত্যন্ত মহের্ধিসম্পন্ন। তদ্ধেতু পণ্ডিতগণ তথা পুণ্যবানগণ সে মহাদানকে প্রশংসা করে। পুণ্যের বিপাক ও স্বভাব সুখাবহ। এরূপ পুণ্যবান ব্যক্তি জন্মের কারণ ধ্বংস করে নির্বাণ সম্প্রাপ্ত হন।”
শাস্তা পুনরায় বললেন–“কঠিন চীবর দান শুধু এখন নয়, পূর্বেও কঠিন চীবর দানের প্রথা ছিল।” এ বলে ধর্মদেশনা শেষ করে নিন্মোক্ত জাতক সমাপ্তি গাথা ভাষণ করলেন–
৩৭-৪০। তখনকার ‘কল্পক’ বণিক এখনকার অমাত্য ছন্ন। মহাঋদ্ধিবান নাগস্থবির ছিলেন দায়ক ‘কুটুম্বিক’। অঙ্গুরীয়ক দায়ক এখন আমার পিতা ‘শুদ্ধোদন। উষ্ণীষ দায়ক কুমার এখন ‘রাহুল। কুলকুমারী বস্ত্র দায়িকা এখন ‘যশোধরা’। অবশিষ্ট জনগণ বর্তমানে আমার শ্রাবক সংঘ। নরজীব’ নামক ব্যক্তি এখন তোমাদের শ্রেষ্ঠ সুখকামী লোকনাথ সম্যক্ সম্বুদ্ধ তথাগত আমি। অতি গৌবর চিত্তে এজাতক ধারণ কর।
(নরজীব জাতক সমাপ্ত।)
Leave a Reply