০৯. শ্রীধর মহাশ্রেষ্ঠী জাতক
“শ্রদ্ধা ….. দেখ” এ গাথা ভগবান বুদ্ধ জেতবনে অবস্থানকালে এক শ্রদ্ধা সম্পন্ন উপাসককে উপলক্ষ করে বলেছিলেন–।
শ্রাবস্তীবাসী এক দরিদ্র ব্যক্তি পত্নী সহ অরণ্যে গিয়ে তৃণকাষ্ঠ আহরণ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ দরিদ্র ব্যক্তি অতিশয় শ্রদ্ধাবান ছিলেন। তিনি যা উপার্জন করতেন, তা তিন ভাগ করে এক ভাগ দানাদি পুণ্য কর্মে নিয়োগ করতেন, এক ভাগ দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং অপর এক ভাগ জমা রাখতেন। একদা তিনি সংবেগ প্রাপ্ত হয়ে চিন্তা করলেন–‘অহো এজগতে প্রবর্তিত সমস্ত সংস্কার একান্তই অনিত্য, উদয় ও ব্যয় ধর্মী। এরূপ চিন্তা করে নিজের পত্নীকে বললেন–“অহো! এজগতে প্রবর্তিত সমস্ত সংস্কার একান্ত অনিত্য ও উদয়-ব্যয় শীল।” আমরা যখন মৃত্যুর সম্মুখীন হব অথবা মৃত্যুর কবলে পতিত হব, তখন কোন ধনই আমাদের সাথে গমন করবেনা। সুতরাং মৃত্যুর পূর্বেই আমাদের অর্জিত অর্থ দানাদি পুণ্য কর্মে ব্যয় করব। এ পুণ্যই ছায়ার ন্যায় আমাদের অনুগমন করবে। আমাদের অর্জিত ধনের এক ভাগ ধন নিজস্ব মনে করে জমা না রেখে দান দেব। তার পত্নী একথা অতি উত্তম বলে অনুমোদন করল। তদ্বধি তিনি একভাগ জীবিকার্জনের জন্য রেখে অপর দু’ভাগ দান-কর্মে নিয়োজিত করলেন। অতঃপর এক সময় স্বামী-স্ত্রী উভয়ে অরণ্য হতে কাষ্ঠ তৃণাদি আহরণ ও বিক্রি করে পুণ্যপ্রভাবে ক্রমে সমৃদ্ধশালী হলেন। একদা তাঁরা উভয়ে “ইতি পি সো ভগবা ইত্যাদি বুদ্ধগুণ স্মরণ করে ভগবানের নিকট উপস্থিত হয়ে বন্দনা করার পর একান্তে উপবেশন করে বললেন–‘ভন্তে আমরা উভয়ে দান দেওয়ার যোগ্য বস্তু যা কিছু পাই, তা দান দিয়ে থাকি। ধর্মতঃ যা বস্ত্রাদি সংগ্রহ করতে পারি, তা এবং অর্থ দান করি। এরূপে আমরা এযাবৎ পুনঃ পুনঃ দান করে আসছি”। তাঁদের একথা শুনে বুদ্ধ বললেন–“তোমাদের দান সদৃষ্টিক ফলপ্রদ হওয়াতে তোমরা সমৃদ্ধ প্রাপ্ত হয়েছিলেন, সেরূপ তোমাদের ও এ দান সমৃদ্ধি প্রসু হয়েছি” এবলে বুদ্ধ নীরবতা অবলম্বন করলেন। তখন ভিক্ষুদের প্রার্থনায় বুদ্ধ সে পুরাতন কাহিনী বলতে আরম্ভ করলেন–
“অতীতে বারাণসী নগরে ব্রহ্মদত্ত নামক এক রাজা রাজত্ব করতেন। তখন বোধিসত্ত্ব তথায় এক মহা শ্ৰেষ্ঠীকুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা মাতার মৃত্যুর পর তিনি শ্রীধর নামক মহাশ্রেষ্ঠী পদে অধিষ্ঠিত হলেন। তিনি শ্রদ্ধাবান, কল্যাণ ধর্মপরায়ণ ও শীলবান ছিলেন। তখন গন্ধমাদন পর্বতে অবস্থানকারী এক পচেক বুদ্ধ নিরোধ সমাপত্তিতে নিবিষ্ট হয়ে সপ্তাহকাল পরে সমাধি হতে উঠে চিন্তা করলেন–আমি বারাণসী নগরে শ্রীধর মহাশ্রেষ্ঠীর গৃহদ্বারে উপস্থিত হব।” এরূপ চিন্তা করে প্রাতেই দন্তকাষ্ঠে দন্ত ধাবন করে মুখ প্রক্ষালণ করলেন এবং যথাবিধিমতে চীবর পরিধাণ করে ঋদ্ধিময় মৃত্তিকা পাত্র লয়ে আকাশ পথে শ্রীধর শ্ৰেষ্ঠীর গৃহের দিকে যাত্রা করলেন। তৎকালে সে শ্ৰেষ্ঠীর প্রাতরাশের জন্য উৎকৃষ্ট অন্নব্যঞ্জন ও নানাবিধ খাদ্য ভোজ্যাদি প্রস্তুত হয়েছিল। এমন সময় পচ্চেক বুদ্ধ শ্ৰেষ্ঠীর গৃহ-দ্বারে এসে স্থিত হলেন। তখন মহাশ্রেষ্ঠী তাঁকে দেখে অতিশয় প্রসন্ন হয়ে মনে করলেন“অহো, আমার চক্ষুদ্বয় অদ্য সার্থক হয়েছে, পচেক বুদ্ধের দর্শন লাভ করলাম। এখন আমি এরূপ পুণ্য পুরুষকে দান দিয়ে দান রূপ শ্রেষ্ঠ বীজ বপন করব। ইনি আমার প্রতি অনুকম্পা করে বহু দূর হতে এসেছেন।” এরূপ চিন্তা করে প্রসন্ন মনে নিজের জন্য প্রস্তুত উপাদেয় খাদ্য বস্তু উভয় হস্তে মস্তকোপরি ধারণ করে পচেক বুদ্ধের পাত্রে ঢেলে দিলেন। বোধিসত্ত্ব পচ্চেক বুদ্ধকে অন্নদান করে তার পদমূলে নিপতিত হয়ে এরূপ প্রার্থনা করলেন–“ভন্তে, আমার দান-পুণ্যের অনুভাব বলে সমস্ত দেব-মনুষ্য জীবিকা নির্বাহ করুক। উপরন্তু ভন্তে এদান বলে আমি যেন অনাগতে নিশ্চয়ই সর্বজ্ঞ বুদ্ধত্ব লাভ করি।” পচ্চেক বুদ্ধ শ্রীধর শ্ৰেষ্ঠীর প্রার্থনা শুনে বললেন–“সাধু মহা শ্ৰেষ্ঠী, আপনি যা প্রার্থনা করলেন, তা পূর্ণ হোক।” এবলে আকাশ পথে গন্ধমাদন পর্বতে গিয়ে তা ভোজন করলেন। পচেক বুদ্ধ পরমায়ুর অবসানে সেখানেই নির্বাপিত হলেন। পচেক বুদ্ধকে ভোজন দান করে মহাশ্রেষ্ঠী গৃহ-দ্বারে এসে সে দান বিষয় স্মরণ করে সংকল্প করলেন–“যদি দানের ফল থাকে, তবে আমার এদানের শীঘ্রই সদৃষ্টিক ফল প্রাদুর্ভাব হোক।” এ বলে অধিষ্ঠান করলেন।
মহাসক্তের দান তেজানুভাবেই পুরাতন গৃহ অন্তর্হিত হয়ে সুবর্ণময় প্রাসাদ উৎপন্ন হল। তখন মহাসত্ত্ব নিজের সমস্ত গৃহ সুবর্ণময় প্রাসাদে পরিণত হয়েছে দেখে মনে করলেন–“অহো, আমার এ দানের দ্বারা সুবর্ণময় প্রাসাদ লাভ হল। উত্তম দানের পুণ্য প্রভাবে সদৃষ্টিক ফল লাভ হল। এ দানের ফলে পরলোকে আমার নানাবিধ সম্পত্তি লাভ হবে।” এচিন্তা করে সুবর্ণময় গৃহে প্রবেশ করে তথায় নানাবিধ রত্ন সমুজ্জ্বল সুবর্ণ পালঙ্কে উপবেশন করলেন। তখন মহাশ্রেষ্ঠীর পাচক খাদ্য ভোজ্য সজ্জিত করে তার সম্মুখে এনে রাখলেন। এ সময় অন্ন ব্যঞ্জন প্রভৃতি বিবিধ খাদ্য ভোজ্য দিব্য রসাস্বাদ ও দিব্য গন্ধ সমন্বিত হয়ে একশত সুবর্ণ পাত্র পরিপূর্ণ হয়ে প্রাদুর্ভাব হল। বোধিসত্ত্ব নিজের সম্মুখে এসব দিব্য খাদ্য-ভোজ্য দর্শনে” অহো! আমার দান তেজে দিব্য ভোজ্যে পরিপূর্ণ শত সুবর্ণ পাত্র প্রাদুর্ভূত হয়েছে এরূপ চিন্তা করবার পর তিনি সে খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে পরিভোগ করলেন; কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়। উক্ত খাদ্যভোজ্যের কোনও ঊনতা পরিলক্ষিত হলনা সমস্ত পাত্র খাদ্যভোজ্যে পরিপূর্ণ। তৎপর পরিষদ বর্গকে পরিবেশন করলেন। তবুও পাত্র পরিপূর্ণ। শত সহস্র ক্ষুধাতুরাকে দান করলেন, তবুও পাত্র পরিপূর্ণ রইল। উক্ত দিব্য খাদ্যের দিব্য গন্ধ সমগ্র বারাণসী নগরে পরিব্যাপ্ত হল। এতে নগর বাসী অত্যন্ত প্রফুল্ল হল এবং সমগ্র নগরে এক আনন্দ কোলাহলের সৃষ্টি হল। তখন নগর বাসী প্রফুল্ল অন্তরে শ্রীধর মহাশ্রেষ্ঠীর গৃহে উপস্থিত হল। তথায় সুবর্ণময় দিব্য প্রাসাদ দর্শন করে বিস্ময়ে অভিভূত হল। সবাই আনন্দাতিশর্যে অঞ্জলিবদ্ধ হয়ে অভিবাদন করে বলল–
“সাধু সাধু মহা শ্ৰেষ্ঠিন আপনার দান-পুণ্যের অচিন্তনীয় প্রভাব দর্শনে আমরা আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছি।” এবলে উপস্থিত জনগণ বোধিসত্ত্বের পুণ্য অনুমোদন করে প্রীতিফুল্লমনে বহু বস্ত্রালঙ্কার উপহার প্রদান করলেন। তখন বোধিসত্ত্ব তথায় উপস্থিত জনগণকে এ সুবর্ণ গৃহের উৎপত্তি সম্বন্ধে বর্ণনা প্রসঙ্গে নিন্মোক্ত গাথাটি বললেন—
১। “শ্রদ্ধা ও প্রসন্ন চিত্তে দান দেওয়ার ফল দেখ আমার এ বিরোচমান সুবর্ণ গৃহ। বিপুল ধন-ধান্য ও ভোগ-সম্পদ ইত্যাদি দিব্য ঐশ্বর্য মহা জনগণ দর্শন করুন।”
এবলে মহাসত্ত্ব স্বীয় দান-ফল বর্ণনা প্রসঙ্গে নিন্মোক্ত গাথায় বললেন–
২-৪। জগতে দানই পরম শ্রেষ্ঠ, কীৰ্ত্তি ও যশাবহ এবং সর্বদা সম্পদ ও সুখ উৎপাদক। দানের দ্বারা সর্বদা মনোজ্ঞ স্ত্রী পুত্র কন্যা পৌত্র পৌত্রী দাস, দাসী জ্ঞাতী, মিত্র ও সহায় লাভ হয়। দান পুণ্যের প্রভাবে দেব মনুষ্য লোকে সুখাবহ শ্রেষ্ঠ যান, বাহন ও সম্পত্তি লাভ হয়। তদ্ধেতু আপনারা সকলেই দান দেবেন।” জনগণ এদান ফল শুনে প্রীতিফুল্ল চিত্তে মহা শ্ৰেষ্ঠীকে নিন্মোক্ত গাথাদ্বয়ে বললেন–
৫-৬। “মহা শ্রেষ্ঠিন আপনার কথিত বাক্যগুলি বড়ই সাধু, উত্তম সুকথিত, কর্ণ সুখকর ও মানবদের অতিশয় প্রিয়। আপনাকে দর্শন করা ও আপনার সাথে সাক্ষাৎ করা বড়ই উত্তম। ইহা আমাদের পক্ষে সর্বদা সুখাবহ হবে আপনিই এখন মহাদায়ক।”
এবলে সমগ্র নগরবাসী স্বকীয় দাস-দাসী এমন কি নিজকেও ধর্ম পূজার উদ্দেশ্যে বোধিসত্ত্বকে নিবেদন করলেন। তখন ভূমি বাসী দেবতা ও ছকামাবচর দেবতা আকাশ হতে দিব্য পুষ্প বিকীর্ণ করে ধর্ম পূজা মানসে বোধি সত্ত্বকে পূজা করলেন। সে বিষয় প্রকাশ করার ইচ্ছায় বুদ্ধ নিন্মোক্ত গাথাটি বললেন–।”
৭। তখন সমস্ত দেবতা ধর্ম পূজার্থ চারিদিকে দিব্য পূষ্প বিকীর্ণ করে শ্ৰেষ্ঠীকে পূজা করলেন। তখন নাগরাজ নিজের নাগভবন হতে সপ্তবিধ বহু রত্ন এনে বোধিসত্ত্বের সম্মুখে রাশিকৃত করে রেখে ধর্ম পূজা করার পর স্বীয় স্থানে চলে। গেলেন। সে বিষয় প্রকাশের ইচ্ছায় নিন্মোক্ত গাথাটি বললেন–
৮। নাগরাজ স্বীয় ভবন হতে বোধিসত্ত্বকে দিব্য দৃষ্টিতে দেখে তথা হতে বহু রত্ন বোধিসত্তের সম্মুখে এনে তূপাকার করে শ্রেষ্ঠীকে পূজা করার পর পুনঃ স্বীয় নগরে চলে গেলেন।
তখন দেবরাজ ইন্দ্র দেবনোক হতে অবতরণ করে বোধিসত্ত্বের নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁর পুরোভাগে দাঁড়িয়ে সাধুবাদ প্রদান করলেন এবং পূজা করার মানসে বহু দিব্য বস্ত্র ও রত্ন পাকার করে তাঁকে প্রদান করলেন। তৎপর দেবরাজ বোধিসত্ত্বের কোষাগার স্বর্ণ, রৌপ্য; নানাবিধ রত্ন, নানা বর্ণ বস্ত্র ও ধন-ধান্য পরিপূর্ণ করার পর সুবর্ণ গৃহের উপরিভাগে। চতুর্দিকে বহু অযুত সুবর্ণ রৌপ্যময় নানাবিধ ধ্বজা বোধিসত্ত্বকে পূজা করার মানসে উড্ডীন করলেন। তৎপর তাঁকে সপ্তবিধ বস্তু প্রদান করে স্বীয় দেবলোকে চলে গেলেন। শাস্তা নিন্মোক্ত গাথায়ে সে বিষয় প্রকাশ করলেন–।
৯-১১। তখন দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্গ হতে অবতরণ করে শ্ৰেষ্ঠীর নিকট স্থিত হয়ে দিব্য বস্ত্র, বস্তু ও রত্ন ধ্বজা দ্বারা শ্ৰেষ্ঠীকে ধর্ম পূজার উদ্দেশ্যে প্রদান করে উপদেশ দিলেনএবং পুণ্যানুমোদন করে শ্রীধর হতে বিদায় নিয়ে সুখময় স্বর্গে চলে গেলেন।
তখন ব্ৰহ্মদত্ত রাজা বোধিসত্ত্বের বিপুল বিভব ও যশ কীর্তির কথা শুনে প্রীতিফুল্ল মনে তখনি বোধিসত্নের নিকট উপস্থিত হয়ে তার সাথে নিতাক্ত গাথায় আলাপ করলেন
১২। হে মহা শ্রেষ্ঠিন, আপনি কি প্রকারে কীর্তিমান, ধনবান ও যশোভাগ্যে সমৃদ্ধ হলেন, তা আমাকে বলুন।” ইহা শুনে মহাসত্ত্ব রাজাকে নিন্মোক্ত গাথায়ে দানের ফল বর্ণনা করলেন–
১৩-১৫। রাজন, জগতে দানই উত্তম। দানে নিজকে রক্ষা করে। দানই সৎ ও শ্রেষ্ঠ। দানই ধনাবহ হয়। দানই প্রিয় বস্তু লাভের সহায়ক। দানই সর্বদা প্রিয় নারী, পুত্র, কন্যা ও প্রিয় মিত্র লাভের কারণ হয়। দান সুক্ষেত্রে প্রদত্ত হলে শকটের ন্যায় সুখাবহ ও শ্রেষ্ঠ ধন প্রাপ্ত হয়। দায়ক দেবমনুষ্য লোকে অতিশয় সুখ লাভ করে।”
ব্ৰহ্মদত্ত রাজা বোধিসত্ত্বের নিকট এরূপ ধর্ম শুনে অতিশয় প্রীতিফুল্ল চিত্তে সুসজ্জিত হস্তী, অশ্ব, রথ, নারী ও দাসী প্রত্যেক বিষয় শত পরিমাণ এবং বহু ধন দ্বারা বোধিসত্ত্বকে ধর্ম পূজা মানসে পূজা সৎকার করলেন। তখন বোধিসত্ত্ব রাজাকে স্বীয় সমৃদ্ধ ভাব প্রকাশ করে নিন্মোক্ত গাথায় বললেন–
১৬। মহারাজ, সমুজ্জ্বল ও ধনে পরিপূর্ণ আমার এ সুবর্ণময় গৃহ দেখুন। অন্ন দানাদি করুন।” এ গাথা বলে মহাসত্ত্ব নিজের প্রাসাদে প্রবেশ করলেন। সে বিষয় প্রকাশ কল্পে বুদ্ধ নিন্মোক্ত গাথাটি বললেন–
১৭। “তখন ব্রহ্মদত্ত রাজা তার নিকট এসে প্রত্যেক ধন। এক একশত করে দিয়ে সশ্রদ্ধ অন্তরে ধর্মপূজা করলেন। তৎপর মহাশ্রেষ্ঠীকে বলে স্বীয় প্রাসাদে চলে গেলেন।
সে হতে শ্রীধর মহাশ্রেষ্ঠী স্বীয় গৃহদ্বারের পুরোভাগে একদান শালা নির্মাণ করে প্রত্যহ বস্ত্রাদি নানাবস্তু ক্রয়ের জন্য অযুত স্বর্ণ মুদ্রা ব্যয় করে দানীয় বস্তু অর্থীদের প্রদান করতেন। এরূপে দান দিয়ে মহাসত্ত্ব পুনঃ তাদের নিন্মোক্ত গাথায় উপদেশ প্রদান করলেন–
১৮। “ভবৎগণ, আমি যেমন পূর্বে দান দিয়ে এখন সম্পদশালী হয়েছি, সেরূপ আপনারাও অপ্রমত্তভাবে যথাশক্তি দান করুন।”
তদবধি জনগণ বোধিসত্ত্বের উপদেশ শুনে দানাদি পুণ্য কর্ম করতে লাগলেন। এরূপে তাঁরা পরমায়ুর অবসানে মৃত্যুর পর দেবলোকেই উৎপন্ন হলেন। বোধিসত্ত্ব ও মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত মহাসুখে অবস্থান করে দানাদি পুণ্য কর্ম সম্পাদন করছিলেন। তৎপর পরমায়ুর অবসানে মৃত্যুর পর তুষিত দেবলোকে এক অযুত দেবকন্যা পরিবেষ্টিত হয়ে পঞ্চশত যোজন দিব্য প্রাসাদে উৎপন্ন হলেন। এরূপে বুদ্ধ সে দম্পতিকে এ জাতক দেশনা করে পরিশেষে সত্য চতুষ্টয় ধর্মদেশনা প্রসঙ্গে নিন্মোক্ত গাথাদ্বয় বললেন–
১৯-২০। দুঃখ সত্য, সমুদয় সত্য, নিরোধ সত্য ও মার্গ সত্য এ চতুর্বিধ সত্য সর্বদা আমি দেশনা করি। দুঃখ সত্য ত্রৈভূমিক, তৃষ্ণা সমুদয় সত্য, নির্বাণই নিরোধ সত্য, এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গেই সত্য।
এ চতুরার্য সত্য দেশনার পর স্বামী স্ত্রী উভয়েই স্রোতাপত্তি ফল প্রাপ্ত হলেন। ভগবান তাঁদের চতুরার্য সত্য দেশনা করে এখন জাতক পরিসমাপ্তির জন্য নিতাক্ত পাঁচটি সমাপ্তি গাথা বললেন–
২১-২৫। তখনকার শ্ৰেষ্ঠী মাতা এখন মহামায়া। শ্ৰেষ্ঠী পিতা এখন শুদ্ধোদন। মহাতেজশালী নাগরাজ এখন ছন্ন অমাত্য। দেবরাজ ইন্দ্র এখন অনুরুদ্ধ। রাজা ব্রহ্মদত্ত এখন সারিপুত্র। অমাত্যাদি নগরবাসী এখন আমার পরিষদ। শ্ৰেষ্ঠীর ভার্যা এ যশোধরা। শ্ৰেষ্ঠীর পরিষদবৃন্দ এখন আমার শ্রাবক বৃন্দ। সেই শ্রীধর মহা শ্ৰেষ্ঠীই এখন আমি শ্রেষ্ঠী তথাগত সম্বুদ্ধ। তোমরা সবাই অতি গৌরব চিত্তে এ জাতক ধারণ কর।
(শ্রীধর মহাশ্রেষ্ঠী জাতক সমাপ্ত।)
Leave a Reply