মহাশীল
২১। “কোনো কোনো ভদন্ত শ্রমণ বা ব্ৰাহ্মণ অপরের শ্রদ্ধাদত্ত অন্নাদি উপভোগ করিয়া এইরূপ স্বৰ্গমোক্ষ মার্গের তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা। জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করেন, যথা : অঙ্গশাস্ত্র (অঙ্গ দেখিয়া শুভাশুভ নিরূপন), নিমিত্তশাস্ত্ৰ (নিমিত্ত অবলম্বনে প্রশ্নের উত্তরদান বা গণনা), উৎপাত (বজাদি পতনে ফলাফল নির্দেশ), স্বপ্নতত্ত্ব, লক্ষণতত্ত্ব। (লক্ষণ দৃষ্টি সৌভাগ্যাদি নিরূপণ), মুষিকছিন্ন (মুষিক দ্বারা বস্ত্ৰাদি ছেদনে দোষাদোষ নিরূপণ), অগ্নি হোম, দর্বি হোম, তুষ হোম, কৰ্ণ হোম, তণ্ডুল হোম, সর্পি হোম, তৈল হোম, মুখ হোম (সরিষাদি মুখে লইয়া মন্ত্র আবৃত্তি করিয়া উহা অগ্নিতে নিক্ষেপ), লোহিত হোম (ইহাদ্বারা এইরূপে হোম করিলে এইরূপ ফল লাভ হয় বলিয়া প্রচার করিয়া হোম করা), অঙ্গবিদ্যা (অঙ্গুলি পর্বদি বা অস্থি দেখিয়া শুভাশুভ নিরূপণ), বাস্তুবিদ্যা (গৃহ বা আরাম ভিটার দোষাদোষ গণনা, মৃত্তিকা দেখিয়া ইহার অভ্যন্তরে কত হস্তের মধ্যে কি আছে, ইহার উপরিভাগে [আকাশে] কি আছে তাহা জ্ঞাত হওয়া, যাহা আছে তাহার গুণাগুণ বিচার বিষয়ক বিদ্যা), ক্ষেত্রবিদ্যা, শিববিদ্যা (শ্মশানে বসিয়া শান্তিকরণ বিদ্যা, শৃগাল রবের শুভাশুভ জােনন বিদ্যাও বটে), ভূতবিদ্যা (ভূতবৈদ্যের মন্ত্র), ভূরিবিদ্যা (মাটীর নিচে প্রস্তুত গৃহে শিখিবার মন্ত্র), অহিবিদ্যা (সৰ্পমন্ত্রাদি), বিষবিদ্যা (বিষমন্ত্রাদি), বৃশ্চিকবিদ্যা, মুষিকবিদ্যা (ইন্দুর দংশনের চিকিৎসা), শকুনবিদ্যা (পক্ষীশব্দের অর্থ নির্ণয়), কাকবিদ্যা, পকৃধ্যান (পরমায়ু গণনা), শর পরিত্রাণ (নিজ শরীরে বা পর শরীরে শর পতন নিবারণ), মৃগচক্র বিদ্যা (সমস্ত পশু-পক্ষীর শব্দ জ্ঞান) ইত্যাদি বা এতাদৃশ অন্যান্য। শ্রমণ গৌতম। কিন্তু এবম্বিধ তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ হইতে সম্পূর্ণ বিরত। হে ভিক্ষুগণ, পৃথগজন প্রশংসা করিলে এই বলিয়াও তথাগতের প্রশংসা করিবে।”
২২। “কোনো কোনো ভদন্ত শ্ৰমণ বা ব্ৰাহ্মণ অপরের শ্রদ্ধাদত্ত অন্নাদি উপভোগ করিয়া এইরূপ স্বৰ্গমোক্ষ মার্গের তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা। জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করেন, যথা : মণি-লক্ষণ (এই লক্ষণের মণি প্রশস্ত, অধিকারীর আরোগ্য ঐশ্বৰ্য্যাদির হেতু হয়) তথা বস্ত্ৰ-লক্ষণ, দণ্ডলক্ষণ, শস্ত্ৰ-লক্ষণ, অসি-লক্ষণ, শর-লক্ষণ, ধনু-লক্ষণ, আয়ুধ (অপরাপর অস্ত্ৰ) লক্ষণ; স্ত্রী-পুরুষ, কুমার-কুমারী, দাস-দাসী লক্ষণ, হস্তী, অশ্ব, বৃষ, মহিষ, গো-লক্ষণ; অজ, মেণ্ডক, কুকুট, বর্তক, গোধা লক্ষণ; কর্ণিকা-লক্ষণ (এইরূপ কৰ্ণাভরণ এইরূপ স্ত্রীর ধারণ করা কর্তব্য অন্যথা অমঙ্গলাদি বর্ণনা, গৃহকুট সম্বন্ধেও ঈদৃশ বৰ্ণনা), কচ্ছপ-লক্ষণ, মৃগ-লক্ষণ (সমস্ত চতুষ্পদ জন্তুর লক্ষণ বিদ্যা) ইত্যাদি অথবা এতাদৃশ অন্য লক্ষণ বিদ্যা। শ্রমণ গৌতম। কিন্তু এইরূপ স্বৰ্গমোক্ষ মার্গের তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা। জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ হইতে সম্পূর্ণ বিরত। হে ভিক্ষুগণ, পৃথগজন প্রশংসা করিলে এই বলিয়াও তথাগতের প্রশংসা করিবে।”
২৩। “কোনো কোনো ভদন্ত শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ অপরের শ্রদ্ধাদত্ত অনড়বাদি পরিভোগ করিয়া এইরূপ তিরশ্চান বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করেন, যথা : রাজাদের নির্গমন হইবে, রাজাদের অনির্গমন হইবে, অভ্যন্তরস্থ (আমাদের) রাজাগণ আক্রমণ করিবেন (অমুক দিন শত্রু রাজার নিকট উপস্থিত হইবেন), বাহিরের রাজাগণ পলায়ন করিবেন, (অমুক সময়ে) বাহিরের রাজাদের আক্রমণ হইবে, অভ্যন্তর রাজাদের পলায়ন এইরূপে এ পক্ষের জয় হইবে, অপর পক্ষের পরাজয় হইবে ইত্যাদি বা এইরূপ অন্যবিধ। শ্রমণ গৌতম। কিন্তু এবম্বিধ স্বৰ্গমোক্ষ মার্গের তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ হইতে সম্পূর্ণ বিরত। হে ভিক্ষুগণ, পৃথগজন প্রশংসা করিলে এই বলিয়াও তথাগতের প্রশংসা করিবে।”
২৪। “কোনো কোনো ভদন্ত শ্রমণ বা ব্ৰাহ্মণ শ্ৰদ্ধাদত্ত অন্নাদি পরিভোগ করিয়া এই প্রকার তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করেন, যথা : (অমুক সময়ে) চন্দ্রগ্রহণ হইবে, সূর্যগ্রহণ হইবে, নক্ষত্ৰগ্ৰহণ হইবে, চন্দ্র-সূর্যের যথানির্দিষ্ট পথে গমন হইবে, অপথে গমন হইবে, নক্ষত্রদিগের যথানির্দিষ্ট পথে গমন হইবে, উহাদের অপথে গমন হইবে, (অমুক সময়ে) উল্কাপাত হইবে, দিগদাহ হইবে, ভূমিকম্প হইবে, দেবদুন্দুভি (শুষ্ক মেঘগর্জন) হইবে। চন্দ্ৰ-সূৰ্য ও নক্ষত্ৰগণের উদয়-অস্ত মলিনতা অথবা বিশুদ্ধি হইবে। এইরূপ ফলদায়ক চন্দ্ৰ-সূৰ্য গ্রহণ হইবে, এইরূপ ফলদায়ক নক্ষত্ৰযোগ হইবে। চন্দ্ৰ-সূৰ্য ও নক্ষত্ৰগণের পথ গমনে বা অপথ গমনে এইরূপ শুভাশুভ হইবে। এই উল্কাপাতে এইফল হইবে, এই দিগদাহে এইফল হইবে, এই প্রকার ফলদায়ক ভূমিকম্প হইবে, এইরূপ ফলদায়ক দেবদুন্দুভি হইবে। চন্দ্ৰ-সূৰ্য ও নক্ষত্ৰগণের উদয়ে, অস্তগমনে, মলিনতায়, বিশদ্ধতায় এই ফল হইবে ইত্যাদি বা এইরূপ অন্যবিধ। শ্রমণ গৌতম। কিন্তু এবম্বিধ স্বৰ্গমোক্ষ মার্গের তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ হইতে সম্পূর্ণ বিরত। হে ভিক্ষুগণ, পৃথগজন প্রশংসা করিলে এই বলিয়াও তথাগতের প্রশংসা করিবে।”
২৫। “কোনো কোনো ভদন্ত শ্রমণ বা ব্ৰাহ্মণ শ্ৰদ্ধাদত্ত অন্নাদি উপভোগ করিয়া এই প্রকার তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করেন, যথা : (এবার) সুবৃষ্টি হইবে, অনাবৃষ্টি হইবে, সুভিক্ষ হইবে, দুর্ভিক্ষ হইবে, শান্তি হইবে, ভয় হইবে, রোগ হইবে, আরোগ্য হইবে,হস্তমুদ্রা গণনা, সংখ্যান, কবিতারচনা, লোকায়ত ইত্যাদি বা এই রূপ অন্যবিধ। শ্রমণ গৌতম। কিন্তু এইরূপ স্বৰ্গমোক্ষ মার্গের তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ হইতে সম্পূর্ণ বিরত। হে ভিক্ষুগণ, পৃথগজন প্রশংসা করিলে এই বলিয়াও তথাগতের প্রশংসা করিবে।”
২৬। “কোনো কোনো ভদন্ত শ্রমণ বা ব্ৰাহ্মণ শ্রদ্ধাদত্ত অন্নাদি পরিভোগ করিয়া এইরূপ তিরশ্চান বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করেন, যথা : আবহন (এই কুমারের জন্য অমুক কুল হইতে অমুক নক্ষত্রে কুমারী আনয়ন কর বলিয়া আবাহন করােন), বিবাহন (এই কুমারীকে অমুক কুলের অমুক কুমারকে অমুক নক্ষত্রে সম্প্রদান কর, ইহাতে উভয়ের মঙ্গল হইবে বলিয়া বিবাহ কাৰ্য নিম্পাদন করােন), সংবরণ (অমুক সময় অমুক নক্ষত্রে তোমরা মিলিত হও, তাহা হইলে তোমাদের বিচ্ছেদ ঘটিবে না। বলিয়া মিলিত করােন), বিবরণ (পৃথক হইতে চাহিলে অমুক সময়ে পৃথক হইবে, তাহা হইলে আর মিলন হইবে না, এইরূপে বিয়োগ করান বা বিচ্ছেদের সময় নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া), সংকিরণ (ঋণ উসলের সময় নির্ধারণ করিয়া ঋণের টাকা সংগ্ৰহ করােন), বিকিরণ (ঋণ দানের সময় ঠিক করিয়া দিয়া ঋণ দান দেওয়ান), সুভগকরণ, দুর্ভগকরণ, বিরুদ্ধ গর্ভকরণ (গর্ভপাত না হওয়ার জন্য ওষধ প্রয়োগ করা), জিহবা নিবন্ধন (জিহ্বা আচল করা), হনুসংহনন (হনু আচল করা), হস্তাভিজপ্লন (হস্ত কম্পনের জন্য মন্ত্র জপ করা), হনুজল্পনা (হনু চালন), কর্ণজল্পনা (বধিরতা সাধন), আদর্শ প্রশ্ন (আয়নায় দেবতা অবতরণ করাইয়া প্রশ্ন জিজ্ঞাসা), কুমারিক প্রশ্ন (কুমারী শরীরে দেবতাশ্রয় করাইয়া প্রশ্ন জিজ্ঞাসা), দেব। প্রশ্ন (দেবদাসী শরীরে দেবতাশ্রয় করাইয়া প্রশ্ন জিজ্ঞাসা), জীবিকাৰ্থ আদিত্য পরিচর্যা, মহাব্ৰহ্মা পরিচর্যা, মুখ হইতে মন্ত্র বলে অগ্নি প্ৰজ্বালন, শ্ৰী (লক্ষ্মী) আনয়ন ইত্যাদি বা এইরূপ অন্যবিধা। শ্রমণ গৌতম কিন্তু এইরূপ স্বৰ্গমোক্ষ মার্গের তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ হইতে সম্পূর্ণ বিরত। ভিক্ষুগণ, পৃথগজন প্রশংসা করিলে এই বলিয়াও তথাগতের প্রশংসা করিবে।”
২৭। “কোনো কোনো ভদন্ত শ্রমণ বা ব্ৰাহ্মণ শ্রদ্ধাদত্ত অন্নাদি পরিভোগ করিয়া এইরূপ স্বৰ্গমোক্ষ মার্গের তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায়। দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করেন, যথা : শান্তি-স্বস্ত্যয়ন কর্ম, প্রণিধি (মানত) কৰ্ম্ম ভূত কর্ম, ভুরি কর্ম (মৃত্তিকা অভ্যন্তরে নির্মিত গৃহে বসিয়া গৃহীত মন্ত্র প্রয়োগ করা), নপুংসককে পুরুষ করা, পুরুষকে নপুংসক করা, বাস্তুকর্ম (অকৃতভিটায় গৃহ প্রতিষ্ঠা), বাস্তু পরিকর্ম (ভিটায় পূজা করান), আচমন (জল দ্বারা মুখ শুদ্ধি করান), স্নান করান, অগ্নিহোম (যজ্ঞ) করান, বমন, বিরেচন, উর্ধর্ব বিরেচন, অধোবিরেচন, শির বিরেচন, কৰ্ণ তৈল পাক, নেত্র তর্পণ, নস্যকর্ম, ক্ষার অঞ্জন, শীতল অঞ্জন করুন, শালাক্য, শল্য-চিকিৎসা, শিশু চিকিৎসা, মূল ভৈষজ্য সমূহের প্রয়োগ (শরীর চিকিৎসা), ওষধের প্রতিমোক্ষণ (ওষধ বাহির করিয়া লওয়া) ইত্যাদি অথবা এইরূপ অন্যবিধ। শ্রমণ গৌতম। কিন্তু এইরূপ স্বৰ্গমোক্ষ মার্গের তিরশ্চন বিদ্যাবলম্বনে মিথ্যা জীবনোপায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ হইতে সম্পূর্ণ বিরত। হে ভিক্ষুগণ, পৃথগজন প্রশংসা করিলে এই বলিয়াও তথাগতের প্রশংসা করিবে।”
[মহাশীল সমাপ্ত]
Leave a Reply