ক্ষুদ্রশীল
৭। “হে ভিক্ষুগণ, পৃথগজন(১) (সাধারণ ব্যক্তি) অনন্ত গুণশালী তথ্যগতের প্রশংসা করিলেও অল্পমাত্র, যৎসামান্য শীলাচার(২) গুণেরই প্ৰশংসা করবে। ভিক্ষুগণ, পৃথগজন তথাগতের যে অল্পমাত্র, যৎসামান্য শীলগুণের প্ৰশংসা করে তাহা কিরূপ?”
৮। “প্ৰাণীহত্যা পরিহার করিয়া শ্রমণ(৩) গৌতম(৪) প্ৰাণীহত্যা হইতে সম্পূর্ণ বিরত। সমস্ত প্রাণীজগতের প্রতি তিনি দণ্ডহীন ও শস্ত্ৰহীন, লজ্জাশীল, দয়াদ্রচিত্ত এবং অনুকম্পা পরায়ণ হইয়া অবস্থান করেন। হে ভিক্ষুগণ, প্রশংসা করিলে পৃথগজন এই বলিয়াই, তথাগতের প্রশংসা করিবে।”
“অদত্ত গ্ৰহণ পরিহার করিয়া শ্রমণ গৌতম অদত্ত গ্রহণ হইতে সম্পূর্ণ বিরত। তিনি প্রদত্ত গ্রাহক, দত্ত প্ৰত্যাশী, অচৌর্য, শুচি, শুভ্ৰচিত্তে অবস্থান করেন। পৃথগজন তথাগতের প্রশংসা করিলে হে ভিক্ষুগণ, এই বলিয়াও প্ৰশংসা করিবে।”
“আব্ৰহ্মচর্য(৫) পরিহারপূর্বক ব্ৰহ্মচারী শ্রমণ গৌতম গ্ৰাম্য (হীন) মৈথুনধর্ম হইতে সম্পূর্ণ বিরত, অসংশ্লিষ্ট। হে ভিক্ষুগণ, প্রশংসা করিলে পৃথগজন এই বলিয়াও তথ্যাগতের প্রশংসা করিবে।”
৯। “মিথ্যাবাক্য পরিহারপূর্বক মিথ্যা ভাষণ হইতে সম্পূর্ণ বিরত শ্রমণ গৌতম। তিনি সত্যবাদী, সত্যসন্ধী, স্থিরপ্রতিজ্ঞ, বিশ্বস্ত ও জগতে অবিসংবাদী। ভিক্ষুগণ, প্রশংসা করিলে পৃথগজন এই বলিয়াও তথাগতের প্ৰশংসা করিবে।”
১. আর্যশ্ৰাবক ব্যতীত অন্যজন। পৃথগজন দ্বিবিধ—অন্ধ ও কল্যাণ পৃথগজন। স্কন্ধ, ধাতু, অন্ধ পৃথগজন ও যাঁহাদের আছে তাহারা কল্যাণ পৃথগজন। (সু, বি.)
২. শীল যোগীর অগ্র বিভূষণ। কিন্তু প্রভাবাদি গুণ বিষয়ে শীল সমাধির ষোড়শাংশের সমানও নহে। তথা সমাধি ও প্রজ্ঞার তুলনায় সামান্যই বটে। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)
৩. যাহারা পাপ শমিত হইয়াছে তিনি শ্রমণ। এ স্থলে ভগবান। (সু, বি.)
৪. গৌতমগোত্রে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া তিনি শ্রেষ্টার্থে গৌতম। (সু. বি.)
৫. হীনচর্য, ব্ৰহ্মশ্রেষ্ঠ আচার আচরণ করেন এই অর্থে ব্ৰহ্মচারী মৈথুন বিরতিই শ্রেষ্ট আচরণ। স্ত্রী-পুরুষ কামাসক্ত হইয়া যেই আচরণ করে তাঁহাই মৈথুন। মৈথুন হইতে বিরতিই ব্ৰহ্মচর্য। স্ত্রীজাতির সেবা শুশ্ৰষা প্রভৃতি সপ্তবিধ মৈথুন সংযোগ হইতে বিরতিই শুদ্ধ ব্ৰহ্মচর্য। (সু. বি.)
————-
“পিশুন বাক্য পরিহারপূর্বক শ্রমণ গৌতম, পিশুন বাচন হইতে সম্পূর্ণ বিরত। তিনি এখানে শুনিয়া ওখানে বলেন না ইহাদের ভেদের জন্য অথবা অন্যত্ৰ শুনিয়া ইহাদেরকে বলেন না। উহাদের মধ্যে ভেদের জন্য; কলহকারীদের মধ্যে তিনি মিলনদাতা, মৈত্রীপরায়ণ ব্যক্তিগণের মধ্যে উৎসাহদাতা। তিনি সমগ্রীরাম বা মিলিত অবস্থানে আরাম দায়ক সমগ্ররত, সমগ্রনন্দী ও সম্মিলনী বাক্যই সদা বলেন। ভিক্ষুগণ, প্রশংসা করিলে এই বলিয়াও পৃথগজন তথাগতের প্রশংসা করিবে।”
করেন। হে ভিক্ষুগণ, এই বলিয়াও পৃথগজন তথাগতের প্রশংসা করিবে।”
“সম্প্রলাপ পরিহারপূর্বক শ্রমণ গৌতম সম্প্রলাপ হইতে সম্পূর্ণ বিরত। তিনি কালবাদী, ভূতাবাদী, অর্থবাদী, ধর্মবাদী ও বিনয়বাদী(১)। যথাসময় উপমা পরিচ্ছেদ ও অর্থসহ সারগর্ভ বাক্যই বলিয়া থাকেন। ভিক্ষুগণ, পৃথগজন প্ৰশংসা করিলে এই বলিয়াও তথ্যাগতের প্রশংসা করিবে।”
১০। “শ্রমণ গৌতম বীজ এবং উদ্ভিদ সমূহের ছেদন-ভেদন বিনষ্ট মূলক কার্যাদি হইতে সম্পূর্ণ বিরত। ভিক্ষুগণ, প্রশংসা করিলে পৃথগজন এই বলিয়াও তথ্যাগতের প্রশংসা করিবে।”
“একবেলা মাত্ৰ আহার করেন শ্রমণ গৌতম, বিকাল ভোজন হইতে সম্পূর্ণ বিরত। রাত্রিতে উপবাস পালন করেন।”
“শ্রমণ গৌতম নৃত্য-গীত-বাদ্য-বিসুক (প্ৰব্ৰজিতদের বিরুদ্ধ উৎসব, যাহা দর্শনে মন বিদ্ধ ও ক্ষুন্ন হয়) দর্শনাদি হইতে সম্পূর্ণ বিরত।”
“শ্রমণ গৌতম পুস্পমাল্য সুগন্ধি দ্রব্য, বিলোপনাদি ব্যবহার মণ্ডণ ও বিভূষণ হইতে সম্পূর্ণ বিরত।”
“শ্রমণ গৌতম উচ্চশয্যা মহাশয্যা শয়নোপবেশন হইতে সম্পূর্ণ বিরত।”
“শ্রমণ গৌতম স্বর্ণ-রৌপ্য মুদ্রাদি গ্রহণ হইতে সম্পূর্ণ বিরত।”
“শ্রমণ গৌতম অপকৃ বা অপাচিত ধান্য ও যাবতীয় শস্য গ্রহণে সম্পূর্ণ বিরত।”
১. সংবর বিনয় (পাতিমোকখ—সতি-এপ্লাণ-খন্তি-বিরিয়া সংবর) ও পহাণ (তদঙ্গবিক্খভন-সমুচ্ছেদ-পটিল্পস্সদ্ধি-নিস্সরণ) বিনয় সংযুক্ত বাক্য বলেন বলিয়া বিনয়বাদী।
—————
“শ্রমণ গৌতম অপকৃ মৎস্য-মাংস গ্রহণে সম্পূর্ণ বিরত।”
“শ্রমণ গৌতম স্ত্রী-কুমারী গ্রহণে সম্পূর্ণ বিরত।”
“দাস-দাসী গ্রহণে সম্পূর্ণ বিরত শ্রমণ গৌতম।”
“অজ-মেষাদি গ্রহণে সম্পূর্ণ বিরত শ্রমণ গৌতম।”
“কুকুট-শূকরাদি গ্রহণে সম্পূর্ণ বিরত শ্রমণ গৌতম।”
“হস্তী, অশ্ব, গরু ও সিন্ধুঘোটকাদি গ্রহণে বিরত শ্রমণ গৌতম।”
“ক্ষেত্র এবং বাস্তুভিটাদি গ্রহণে সম্পূর্ণ বিরত শ্রমণ গৌতম।”
“সংবাদপত্ৰাদি আনা-নেওয়া ইত্যাদি নানাপ্রকার দূতের(১) কাজ হইতে সম্পূর্ণ বিরত শ্রমণ গৌতম।”
“ক্রয় বিক্রয় হইতে সম্পূর্ণ বিরত শ্রমণ গৌতম।”
“তুলাকুট কাংস্যকুট(২) কার্যে সম্পূর্ণ বিরত শ্রমণ গৌতম।”
“ঘুষগ্রহণ, প্রবঞ্চনা, মায়া এবং কুটিলতা হইতে সম্পূর্ণ বিরত শ্ৰমণ গৌতম।”
“ছেদন, বধ (প্রহার), বন্ধন, গ্ৰামলুণ্ঠনাদি দুঃসাহসিক কাজ হইতে সম্পূর্ণ বিরত শ্রমণ গৌতম।”
“হে ভিক্ষুগণ, পৃথগজন তথাগতের প্রশংসা করিলে এই বলিয়াও প্ৰশংসা করিবে।”
[ক্ষুদ্রশীল সমাপ্ত]
১. পহীন গমন—মুদ্র গমন (প্ৰেষ্য)। অনুযোগ্য—দৌত্য এবং প্ৰেষ্য উভয় কাৰ্য হইতে।
২. তুলাকুট—ওজন করিবার সময় বঞ্চনা। তাহা রূপকূট, অঙ্গকূট, গ্রহণকূট ও প্রতিচ্ছন্নকূট বশে চারি প্রকারে ঘটাইতে পারা যায়। কাংস্যকুট—আসল পাত্র সম্মুখে পরীক্ষা করাইয়া তদনুরূপ নকল পাত্ৰ দিয়া বঞ্চনা। মানকুট—তাহা ত্ৰিবিধ, যথা : হৃদয় ভেদ, রজ্জ্ব ভেদ ও শিখা ভেদ।
Leave a Reply