প্রথম অংশ । প্রথম অধ্যায়
মঙ্গলাচরণ
সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয়কর্ত্তা জগতের ঈশ্বর বিষ্ণুকে শ্রদ্ধা ভক্তি পূর্ব্বক প্রণাম করিয়া ব্রহ্মা, দক্ষ, আদি সৃষ্টির প্রধান জীবগণ ও গুরু কপিলকে নমস্কার করিয়া বেদ তুল্য পুরাণ বলিতেছি।
সংক্ষেপে বিষ্ণুপুরাণের প্রশ্ন
নানাশাস্ত্রে সুপণ্ডিত বশিষ্ঠের পুত্র মহামুনি পরাশর পূজাদি সম্পন্ন করিয়া বসিয়া আছেন এমত সময়ে মৈত্রেয় প্রণাম করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, গুরো! আপনার নিকট বেদ বেদাঙ্গ ও ধর্ম শাস্ত্র পড়িয়াছি, এক্ষণে যে রূপে জগতের সৃষ্টি ও লয় হয় তাহা আমি আপনার নিকট শুনিতে ইচ্ছা করি। হে ব্রহ্মণ্! এই চরাচর জগৎ কেমনে কোথা হইতে উৎপন্ন হইল? আগে কোথায় লীন ছিল? কোথায় বা পুনরায় লয় প্রাপ্ত হইল? ভূতের পরিমাণ কত? কেমনে দেবাদির উৎপত্তি হইয়াছে? সমুদ্র, পর্ব্বত ও পৃথিবীর আধার কিরূপ? সূর্যাদির পরিমান কত? দেবাদির বংশে কে কি রূপে জন্মিয়াছে? মনু ও মন্বন্তর কত ও কিরূপ? ব্রহ্মার পরমায়ু ও যুগ ধর্ম্মের বিবরণ কি? দেবর্ষি ও রাজগণের চরিত কি রূপ? কিরূপে বেসব্যাস বেদবিভাগ করিয়াছেন? ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র ও আশ্রমবাসীদের ধর্ম কি? হে বশিষ্ঠ নন্দন! আপনার নিকট এই সমুদায় শ্রবণ করিতে বাসনা করি।
পরাশর কহিলেন, মৈত্রেয়! পূর্ব্বে আমার পিতা যাহা বলিয়াছেন সেই বহুকালের কথা তুমি অদ্য আমাকে স্মরণ করিয়া ছিলে।
রাক্ষস সত্রের বিবরণ
হে মৈত্রেয়! যখন আমি শুনিলাম বিশ্বামিত্র কর্ত্তৃক প্রেরিক রাক্ষস আমার পিতাকে ভক্ষণ করিয়াছে তখন আমি ক্রোধে অন্ধ হইয়া রাক্ষসগণের বিনাশ জন্য যাগ আরম্ভ করিলাম। রাক্ষসগণ সেই যজ্ঞে ভস্ম হইতে আরম্ভ হইলে আমার পিতামহ মহাত্মা বশিষ্ঠ আমাকে বলিলেন, বৎস্য! ক্রোধ ত্যাগ কর, রাক্ষসেরা তোমার পিতার প্রতি নির্দ্দয় ব্যবহার কইয়াছে বটে কিন্তু তাহারা অপরাধী নহে। পূর্ব্বজন্মের ফল ভোগ ব্যতীত কে কাহারে বধ করিতে পারে? মানবেরা অনেক ক্লেশে যশঃ ও তপস্যা সঞ্চয় করে, ক্রোধে অল্প সময়ের মধ্যেই তাহা নষ্ট করিয়া ফেলে, ক্রোধই স্বর্গ ও মোক্ষের বাধা স্বরূপ, সেই জন্য মহর্ষিরা সতত ক্রোধ ত্যাগ করিয়া থাকেন, নিরপরাধী নিশাচরগণকে দগ্ধ করিবার আবশ্যক নাই। তুমি সেই যজ্ঞ হইতে বিরত হও; ক্ষমাই সাধুদিগের প্রধান গুণ। পিতামহের বাক্যে যজ্ঞে খান্র দিলে পিতামত সন্তুষ্ট হইলে। সেই সময়ে সেই খানে পুলস্ত্য উপস্থিত হইয়াছিলেন বলিয়া পিতা তাঁহাকে অর্ঘ প্রদান করিলে তিনি আমারে সমস্ত শাস্ত্রজ্ঞ হইবে বলেন এবং আমার পিতামহ তাহাই ঘটিবে বলিয়াছিলেন।
বৎস্য মৈত্রেয়! পূর্ব্বে মহাত্মা বশিষ্ঠ, পুলস্ত্য যাহা বলিয়াছিলেন, এক্ষণে তোমার প্রশ্নে তৎসমুদায় আমার স্মরণ হইল, সমুদায় পুরাণ সংহিতা তোমাকে উত্তম রূপে বলিতেছি শ্রবণ কর।
বিষ্ণু এই জগৎ সৃষ্টি করিয়াছেন। প্রলয়কালে তাঁহাতেই লয় প্রাপ্ত ছিল, তিনি পালন ও সঙ্ঘার কর্ত্তা এবং তিনিই জগতের উৎপত্তির কারণ।
ইতি শ্রীভুবনচন্দ্র বসাকের বিষ্ণুপুরাণ অনুবাদে প্রথম অংশের প্রথম অধ্যায়।।১।।
Amritendu Mukhopadhyay
ভুবনচন্দ্র বসাকের বিষ্ণুপুরাণের অনুবাদ প্রতিটি শ্লোক ধরে ধরে করা হয় নি। উনি অনেক ক্ষেত্রেই সংক্ষেপ করে নিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ পঞ্চানন তর্করত্ন করে গেছেন—প্রতি শ্লোক ধরে ধরে, শ্লোক সংখ্যা উল্লেখ করে। এত খেটে যখন লিখছেন, তখন সংক্ষিপ্ত অনুবাদের বদলে পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ লেখাই তো ভালো। পঞ্চাননের অনুবাদের লিংক—https://archive.org/details/dli.ministry.27915
বাংলা লাইব্রেরি
পুরাণগুলোর ভাল প্রিন্ট পাওয়া যাচ্ছে না। বা সংগ্রহ করতে পারিনি, তাই এসব নিয়ে কাজ বেশি দূর আগায়নি।