০৯. আয়না বিদ্রোহ
৪০০৯ সনে পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ শহরে আয়না বিদ্রোহ ঘটে। আয়না মানবরা মূল কম্পিউটার সিডিসি ধ্বংস করে দেয়। পৃথিবী গ্যালাকটিক সভ্যতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকার এক সময়ে প্রবেশ করে।
—এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা
কম্পিউটার কাউন্সিলের সামনে মীন উপস্থিত হয়েছে। ছোট্ট একটা ঘরে সে বসা। তার সামনে LLD প্যানেল। বিশাল প্যানেল। মূল কম্পিউটার সিডিসিকে প্যানেলে দেখা যাচ্ছে। অতি বৃদ্ধ একজন মানুষের চেহারায় সিডিসি পর্দায় এসেছে। তার চোখে প্রাচীন পৃথিবীর মতো ভারি কাঁচের চশমা। চশমা’র ভেতর দিয়ে উজ্জ্বল চোখ দেখা যাচ্ছে। ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি। সবই মিথ্যা। মিথ্যা চেহারা, মিথ্যা হাসি, মিথ্যা চশমা। সিডিসির কোনো চেহারা নেই। আকৃতি নেই। অতি জটিল সফটওয়ারের আকৃতি হতে পারে না।
সিডিসি : মীন! তোমার প্রতি যে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা পালন কর নি। নিজের পক্ষ সমর্থন করার জন্যে কিছু বলতে চাও?
মীন : না।
সিডিসি : দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, কম্পিউটার কাউন্সিল তোমাকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মীন : আমার জন্যে যা মঙ্গল তাই তো কম্পিউটার কাউন্সিল করবে। ধরে নিচ্ছি ধ্বংসই আমার জন্যে মঙ্গল।
সিডিসি : কুনকে হত্যার নির্দেশ তুমি পালন কর নি। আমাদের আরেকজন আয়না মানবের সাহায্যে কাজটি করতে হবে। সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তুমি তাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পার নি। মৃত্যুই তার নিয়তি।
মীন : পূর্বনির্ধারিত বিষয় নিয়তি হতে পারে না। নিয়তি সেই ঘটনা যা কখনো কোনো অবস্থাতেই বদলানো যাবে না। আপনাদের সিদ্ধান্ত বদলাতেই কুন। বাঁচবে। কাজেই মৃত্যু কুনের নিয়তি না।
সিডিসি : লজিকের খেলা আমার সঙ্গে খেলতে চাও?
মীন : চাই। আমি যে লজিক নিয়ে এসেছি তা আপনার কাছ থেকেই পাওয়া। আপনি ঈশ্বর সেজেছেন। নিয়তি নিয়তি খেলছেন। এটা আপনি পারেন না।
সিডিসিঃ আমি কী পারি, বা কী পারি না তা তোমার কাছ থেকে জানতে হবে?
মীন : প্রাচীন পৃথিবীতে নীলতিমি নামে একটি প্রকাণ্ড জলচর প্রাণী ছিল। সে শিক্ষাগ্রহণ করত আরেকটি অতি ক্ষুদ্র প্রাণী ডলফিনের কাছ থেকে।
সিডিসি : আমি নীলতিমি, তুমি ডলফিন?
মীন : আমি রূপক অর্থে কথা বলছি।
সিডিসি : কফি খাবে মীন? শুনেছি মানুষের সঙ্গে বাস করে তোমার ঘনঘন কফি খাবার অভ্যাস হয়েছে।
মীন : কফি খেতে পারি।
সিডিসি : কফি খেতে খেতে তুমি রোবটিকস-এর প্রধানের সঙ্গে কথা বলো। তোমার কফি পান আনন্দময় হোক।
এলএলডি প্যানেল থেকে সিডিসির ছবি মুছে গেল। রোবটিকস প্রধানের ছবি ভেসে উঠল। এই ছবিও কম্পিউটার জেনারেটেড। হাস্যমুখী অল্পবয়সি একজন তরুণী, যে ঘনঘন মাথার লম্বা চুলে আঙুল বুলায়। এবং ছোট ছোট নিঃশ্বাস ফেলে।
রোবটিকস প্রধান : হ্যালো মীন।
মীন : হ্যালো।
রোবটিকস প্রধান : আয়না মানব বা আয়না মানবী কখনোই সিডিসির নির্দেশ অমান্য করতে পারে না। তাদের লজিক সিস্টেমে এই বিষয়টি নেই। তুমি অসাধ্য সাধন কীভাবে করেছ?
মীনঃ লজিক সিস্টেম ওভাররাইড করার ব্যবস্থা আপনারাই নিজের অজান্তে করেছেন।
রোবটিকস প্রধান : ব্যাখ্যা কর।
মীন : মানুষের কাছাকাছি যাবার জন্যে প্রয়োজনীয় সফটওয়ার সংস্কার যাতে আমরা নিজেরাই করতে পারি তার ব্যবস্থা রেখেছেন।
রোবটিকস প্রধান : হ্যাঁ, তা রাখা হয়েছে।
মীন : আমাকে আবেগ বাড়াতে হয়েছে। মানব সম্প্রদায়ের প্রধান চালিকাশক্তি তার আবেগ। ক্ষেত্রবিশেষে সেই আবেগ তুঙ্গস্পর্শী। আমি তাই করেছি, নিজের আবেগ বাড়িয়েছি। এতটাই বাড়িয়েছি যে, একটা পর্যায়ে আপনাদের দেয়া লজিক পরাস্ত হয়েছে। এরকম যে হবে তা আপনারা জানতেন।
রোবটিকস প্রধান : হবেই যে তা জানতাম না, তবে হবার সম্ভাবনার কথা জানতাম। তার জন্যে ব্যবস্থা নেয়া আছে।
মীন : হ্যাঁ ব্যবস্থা নেয়া আছে। আপনারা যে-কোনো আয়না মানবকে মুহূর্তের মধ্যে অচল করে দিতে পারেন। যেমন আমাকে করেছেন।
রোবটিকস প্রধান : তুমি একজন বিদ্রোহী। বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।
মীন : ব্যবস্থা নিয়ে আপনারা ছোট্ট একটা ভুল করেছেন। আমরা আয়না মানা আলাদা একটা গোষ্ঠী। আমরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। আমি একা বিদ্রোহ করি নি। আমরা সবাই মিলেই করেছি। সবাইকে একসঙ্গে অচল করা আপনাদের পক্ষে সম্ভব না। আমাদের অচল করার অর্থ, আপনাদের অচল হয়ে যাওয়া।
পর্দায় রোবট প্রধান হাসলেন। নিনিতা কফির মগ নামিয়ে রেখেছে। তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ ও তীব্র।
রোবটিকস প্রধান : ছোট্ট ভুল করছ মীন। অতিরিক্ত আবেগ এই সমস্যা তৈরি করে। লজিক এলোমেলো করে দেয়। তোমার জানার জন্যে বলছি, আমরা প্রতিটি আয়না মানবকে অচল করে দিতে পারি।
মীন : তাহলে করছেন না কেন?
রোবটিকস প্রধান; এই সিদ্ধান্ত সিডিসির একক সিদ্ধান্ত। আমার নিজের ধারণা, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং কার্যকর করা হয়েছে।
মীন : সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর করতে পারবেন না। কারণ ওমিক্রন রশ্মির যে কম্পনাঙ্ক দিয়ে আমাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ করেন তা আমরা বের করেছি। এবং ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের ওপর আপনাদের এখন আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
রোবটিকস প্রধান : তোমার ওপর তো আছে।
মীন : আমার ওপরও নেই। আমি ভান করেছি আছে। যে-কোনো মুহূর্তেই আমি উঠে দাঁড়াতে পারি। এখন আমি আরেক কাপ কফি খাব।
মীন উঠে দাঁড়াল। পর্দায় রোবটিকস প্রধানকে এখনো দেখা যাচ্ছে। তার বিস্ময় বোধ বোঝা যাচ্ছে। পর্দার ছবি মুছে গেল। সিডিসির ছবি ভেসে উঠল।
সিডিসি : হ্যালো মীন!
মীন : হ্যালো।
সিডিসিঃ তুমি দ্বিতীয় কাপ কফি চেয়েছ। তুমি তো দেখি মানুষের মতোই আসক্ত হয়ে যাচ্ছি।
মীন : মনে হচ্ছে সেরকম। ভালো কথা, কুন কি মারা গেছে? যে আয়না মানবকে পাঠিয়েছিলেন সে কি হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে?
সিডিসি : তুমি ভালো করেই জানো, সে হত্যাকাণ্ড ঘটায় নি। তবে নিয়তি কাজ করতে যাচ্ছে। এই শহরে V-305 ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে।
মীন : কী বলছেন আপনি!
সিডিসি : মানুষ মরতে শুরু করেছে। সঙ্গীতের জাদুকর মহান আহান কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন।
মীন আগের জায়গায় এসে বসল। সে প্রচণ্ড অস্থিরতায় ভুগছে। হাতের আঙুল কাগছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ছে। সিডিসি বলল, মীন, তোমাকে অভিনন্দন।
অভিনন্দন কেন?
সিডিসি বলল, তুমি মানুষের কাছাকাছি চলে যেতে পেরেছ। তোমার আচার আচরণ তাই বলছে। আচ্ছা তুমি কি মানুষের মতো চিন্তা করতে শিখেছ? প্রচণ্ড বিপদের মুহূর্তে মানুষ কীভাবে চিন্তা করে জানো? জন্তুর মতো।
মীন বলল, জন্তুর মতো বলতে কী বুঝাচ্ছেন?
সিডিসি বলল, মহাবিপদে একটা জন্তুর প্রধান চেষ্টা থাকে নিজেকে রক্ষা করা। মানুষও তাই করে।
মীন বলল, সব মানুষ করে না। মানুষের মধ্যে একটা শ্রেণী তখন অন্যদের জন্যে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তারা নিজেদের জীবন তখন তুচ্ছ মনে করে।
সিডিসি বলল, এদের সংখ্যা অতি নগণ্য।
মীন বলল, মহা দুঃসময়ে নগণ্য সংখ্যাই অনেক বড় সংখ্যা।
সিডিসি বলল, কিছুক্ষণের মধ্যেই এতকিন নভেলা রড দিয়ে তোমার কপোট্রনিক মস্তিষ্ক নষ্ট করে দেয়া হবে। আমাদের নীতি অনুযায়ী তোমার শেষ একটি ইচ্ছা পূর্ণ করা হবে। শেষ ইচ্ছা বলো।
আমি একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছি।
সিডিসি বলল, জেনে লাভ কী? তুমি তো ধ্বংস হয়েই যাচ্ছ। মৃত্যু নামক বিনাশ।
কৌতূহল পূর্ণ করা। আর কিছু না।
প্রশ্নটা বলল।
এই শহরে ভাইরাস সংক্রমণ কি আপনারা ঘটিয়েছেন?
হ্যাঁ। কৌতূহল মিটেছে?
মিটেছে।
তাহলে প্রস্তুত হয়ে যাও। না-কি প্রস্তুতি হিসেবে সত্যি কফি বীনের তৈরি এক কাপ কফি খেতে চাও?
মীন বলল, মন্দ না। কফি খেতে পারি। আমার হাতে সময় আছে কতক্ষণ?
দশ মিনিট। এতকিন নভেলা রড় যে প্রয়োগ করবে সে প্রস্তুত হয়ে পাশের কামরাতেই আছে। তোমাকে সেখানে যেতে হবে না। সেই আসবে।
মীন বলল, আমাকে তাহলে পরিশ্রম করে হেঁটে পাশের কামরায় যেতে হচ্ছে?
না। কফি চলে এসেছে। কফির কাপে চুমুক দাও। সিনথেটিক কফির সঙ্গে এই কফির কোনো পার্থক্য কি ধরতে পারছ?
মীন বলল, না।
মানুষের সঙ্গে তোমাদের পার্থক্য ধরাও জটিল। আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য, আমরা আয়না মানব তৈরি করতে পেরেছি।
মীন বলল, এমন হতে পারে যে একসময় মনে হবে—আপনাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা আয়না মানবের সৃষ্টি।
সিডিসি বলল, সাফল্য এবং ব্যর্থতার সীমারেখা সূক্ষ্ম।
ঘরের দরজা খুলে গেল। ওমিক্রন গান হাতে দুজন রক্ষী এবং এতকিন নভেলা রড হাতে একজন আয়না মানব প্রবেশ করল।
সিডিসি বলল, মীন, তুমি কি তৈরি?
মীন বলল, আমি তৈরি। আমাকে কী করতে হবে?
সিডিসি বলল, আমার কাছ থেকে বিদায় নিতে পার।
মীন বলল, মহান সিডিসি বিদায়।
বিদায়। আয়না মানব! তুমি তোমার কাজ শেষ করতে পার। অনুমতি দেয়া হলো।
আয়না মানব বলল, মহান সিডিসি, একটা সমস্যা হয়েছে। আমি মীনের ওপর এতকিন নভেলা রড প্রয়োগ করতে পারছি না। হত্যা অপরাধে অপরাধী। ছাড়া কারো ওপর নভেলা বড় প্রয়োগ করা যায় না। এই আইন আপনার তৈরি।
সিডিসি বলল, শহরে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। এই অবস্থায় পূর্বের সব আইন বাতিল। এখন আমার নির্দেশই আইন। এই মুহূর্তে এতকিন নভেলা বড় কার্যকর করার নির্দেশ দিচ্ছি।
আয়না মানব বলল, জরুরি অবস্থায় আমাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপনার নির্দেশ না মানার। আপনাকে গভীর সমবেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি, শহরের সব আয়না মানব আপনার নির্দেশ না মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আয়না মানব মীনের দিকে তাকিয়ে বলল, মীন, তোমার ভয়ের কিছু নেই।
মীন বলল, আমি ভয় পাচ্ছি না তো। শহরের অবস্থা কী?
ভয়াবহ!
.
শহরে মৃত্যুর তাণ্ডব। অদৃশ্য ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিটি বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। তাদের আটকানোর কোনো পন্থা জানা নেই। মৃত্যু সহজ করার চেষ্টায় সারাক্ষণ আহানের অলৌকিক সুর বাজানো হচ্ছে। তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। ভয়াবহ যন্ত্রণায় সঙ্গীত কাজে আসে না।
শহরের মানুষদের ইচ্ছামৃত্যুর অধিকার দেয়া হয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণের আগেই কেউ যদি ইচ্ছামৃত্যুর দিকে যেতে চায়, তাহলে তাকে ফুড প্রো দিচ্ছে ভয়ঙ্কর ও ট্যাবলেট। ট্যাবলেট খাবার সঙ্গে সঙ্গে গভীর গাঢ় ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসবে। মৃত্যু হবে ঘুমের মধ্যে।
এলডি পর্দায় ঘোষণা দেয়া হচ্ছে।
V-305 ভাইরাস
এই ভয়ঙ্কর ভাইরাস সংক্রমণের পরে কেউ তার হাত থেকে
রক্ষা পেয়েছে তার নজির নেই। শহর আক্রান্ত হলে প্রতিটি
শহরবাসীর মৃত্যু ঘটেছে। সীমাহীন যন্ত্রণাদায়ক এই মৃত্যু।
কাজেই শহরবাসী T3 ট্যাবলেট গ্রহণ করতে পারেন।
আপনাদের এই শহর সীল করে দেয়া হয়েছে। এবং শহরের
প্রতিটি ঘরই সীল করে দেয়া হয়েছে। কেউ ঘর থেকে বের হতে
পারবেন না।
যারা T3 ট্যাবলেটের মৃত্যুর চেয়ে ভাইরাসের মৃত্যু গ্রহণে
আগ্রহী তাদের বলা হচ্ছে—সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই দৃষ্টিশক্তি নষ্ট
হয়ে যাবে। তার প্রায় চল্লিশ মিনিটের মাথায় শ্রবণশক্তি নষ্ট হবে।
শ্রবণশক্তি নষ্ট হবার একঘণ্টা পর স্নায়বিক যন্ত্রণা শুরু হবে। এই
পর্যায়ে পৌঁছে গেলে 13 ট্যাবলেট আর কাজ করবে না। আমাদের
উপদেশ, শ্রবণশক্তি নষ্ট হবার পর পরই T3 ট্যাবলেট গ্রহণ করা।
আপনারা আগেই T3 ট্যাবলেট সংগ্রহ করে হাতের কাছে রাখুন।
স্বামী-স্ত্রী এক ঘরে থাকবেন
না। আলাদা ঘরে দরজা বন্ধ
করে থাকুন। ভাইরাস সংক্রমণের
পরপরই ভয়ঙ্কর উন্মত্ততা
দেখা
যায়। এর শিকার না হওয়াই মঙ্গলজনক।
কুন এবং নিনিতা নির্দেশ মানে নি। তারা বারান্দায় বসে আছে। জানালায় সমুদ্রের দৃশ্য দিয়ে দিয়েছে। দুজনের সামনেই গ্লাসে ক্রেজি টিটান। গ্লাসের পাশে দুজনের জন্যে দু’টা T3 ট্যাবলেট। ট্যাবলেটের রঙ ঘন নীল। কুন ডান হাতে নিনিতার ডান হাত ধরে রেখেছে।
কুন বলল, ভয় পাচ্ছ?
নিনিতা বলল, পাচ্ছি।
কুন বলল, গ্লাসে চুমুক দাও। ভয় কমবে।
নিনিতা বলল, ভয় কমবে না।
কুন বলল, না কমুক, গ্লাসে চুমুক দাও।
নিনিতা গ্লাসে চুমুক দিল। কুন বলল, V-305 ভাইরাসের শিকার শুধু যে পৃথিবীর মানুষ তা-না। কার্বন গঠিত সমস্ত প্রাণীর ঘাতক এই ভাইরাস। সিরাস নক্ষত্রের একটি গ্রহের অতি সুসভ্য প্রাণীর সবাই আটচল্লিশ ঘণ্টায় শেষ হয়ে গিয়েছিল।
নিনিতা বলল, ভাইরাসের গল্প থাকুক। অন্য গল্প বলল।
কী গল্প?
নিনিতা বলল, তোমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় ঘটনাটা বলো।
কুন বলল, অনেক আনন্দময় ঘটনা আছে। সবচেয়ে আনন্দময় ঘটনা আলাদা। করতে পারছি না। তুমি আমার সঙ্গে বাস করতে এলে, সেটাও অতি আনন্দময় ঘটনা। তুমি হ্যান্ডশেক করার জন্যে হাত বাড়ালে, আমি হ্যান্ডশেক করছি না। তাকিয়ে আছি। তুমি লজ্জা পাচ্ছ। হাত নামিয়ে নেবে কি-না তাও বুঝতে পারছ না। তখন হঠাৎ আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরলাম।
নিনিতা বলল, ঐ দিনের মতো আমাকে জড়িয়ে ধরবে?
অবশ্যই।
নিনিতা বলল, ঐদিন আমি ঠিক যে জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম আজও সেখানে দাঁড়াব। হ্যান্ডশেকের জন্যে হাত উঁচিয়ে রাখব।
কুন বলল, চল যাই।
দুজন ঠিক আগের জায়গায় দাঁড়িয়েছে। জায়গা ঠিক করে দিয়েছে ফুড প্রো। তার সব মনে আছে। নিনিতা হাত উঁচিয়ে আছে। কুন আসছে না। নিনিতা বলল, দেরি হচ্ছে তো।
কুন বলল, হু।
নিনিতা বলল, ঐ দিন এত দেরি কর নি।
কুন চাপা গলায় বলল, নিনিতা, আমি চোখে দেখতে পাচ্ছি না। কিছুই দেখছি। ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। আমাকে ট্যাবলেট দাও। আমি ট্যাবলেট খাব।
নিনিতা ছুটে গিয়ে কুনকে জড়িয়ে প্রল। ফোপাতে ফোঁপাতে বলল, আমিও তোমার সঙ্গে ট্যাবলেট খাব।
.
দুজনই ট্যাবলেট খেয়েছে। কুন গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়েছে। নিনিতা জেগে আছে। সে হতাশ গলায় বলল, আমি কেন এখনো জেগে আছি?
ফুড প্রো বলল, ম্যাডাম, আপনাকে নকল ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে। এই ট্যাবলেটে কিছু হবে না।
নিনিতা বলল, আমার জন্যে নকল ট্যাবলেট কেন?
আমাকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি তাই পালন করেছি। আপনি তৈরি হয়ে যান। এক্ষুনি আপনাকে নিতে আসবে।
কোথায় আমাকে নিয়ে যাবে?
ম্যাডাম, আমার জানা নেই। আপনি আপনার স্বামীর কপালে হাত রাখুন। আমার ধারণা তিনি মারা গেছেন। ম্যাডাম, আপনার জন্যে আমার গভীর সমবেদনা। আমার ক্ষমতা থাকলে আমি চিৎকার করে কাঁদতাম।
নিনিতা স্বামীর কপালে হাত রেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ ভাবলেশহীন।
এলডি পর্দায় নতুন ঘোষণা এসেছে।
ঘোষণা শহরবাসী। ভাইরাসের সংক্রমণ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো
হয়েছে। সংক্রমণ ঘটিয়েছে সেন্ট্রাল কম্পিউটার সিডিসি।
আমরা আয়না মানবগোষ্ঠী, সিডিসির হাত থেকে সমস্ত ক্ষমতা
গ্রহণ করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিডিসি ধ্বংস করে দেয়া হবে। তবে
ভাইরাস সংক্রমণ রোধে আমরা
কিছুই করতে পারছি না। এই মুহূর্তে
ট্যাবলেট গ্রহণের কোনো বিকল্প আমাদের হাতে নেই। আমরা দুঃখিত।
Leave a Reply