১৯৭১ সালে নাজনীন সুলতানা নীনা ঢাকার বকশীবাজার গভর্নমেন্ট কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী। তাঁর পরিবারের মধ্যেই ছিল একটি রাজনৈতিক আবহ। মতিঝিল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলে পড়ার সময়ই তিনি বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। একাত্তরের মার্চে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে প্রশিক্ষণ নেন অস্ত্র চালনার। প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকার রাজপথে সমাপনী মার্চপাস্ট করেছেন। রাইফেল কাঁধে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তিনি ঢাকায় অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দান, সংবাদ সংগ্রহ, যোগাযোগ রক্ষা, আর্থিক ও অন্য সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। গেরিলা অপারেশনের জন্য খবরাখবর দেওয়া ছিল তাঁর প্রধান কাজ।
যুদ্ধকালের অনিশ্চিত দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা ২৫ মার্চ থেকে ডায়েরির পাতায় লিখতে থাকেন নীনা। লেখেন ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ডায়েরির সেই পাতাগুলো নিয়ে ঢাকা বইমেলায় (২০০৭) বেরোল একাত্তরের ডায়েরি। তাতে ধরা পড়েছে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ্নৃতিই সেখানে প্রধান। একটি বৃহত্তর গণজাগরণকে খুব কাছ থেকে দেখা, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর পরিবারের অংশগ্রহণ-এই ্নৃতিটুকুই তিনি ডায়েরিতে মর্মস্পর্শী ভাষায় বর্ণনা করেছেন। একটি উদাহরণ-‘ঘরে বসে থাকতে আর ভালো লাগে না। পরীক্ষা নেই, কলেজ নেই, পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে না।
কত দিন এইভাবে চলবে কে জানে। এসব কথা চিন্তা করি কিন্তু কোনো কূলকিনারাই খুঁজে পাই না। ভাইয়ার চেহারাটা মাঝে মাঝে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ভাইয়ার সাথে আবার কবে দেখা হবে কে জানে? মন প্রায়ই কেঁদে ওঠে। সবাইকে দেখতে ইচ্ছে হয়।’ বইটিতে টীকাভাষ্য নেই। সংক্ষেপে নাম ও বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ থাকলে চমৎকার হতো। একাত্তরের ডায়েরির প্রকাশক মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা। ৯৬ পৃষ্ঠার এই বইটির দাম ১২০ টাকা।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো।
Leave a Reply