টোমাস ট্রান্সট্রয়মারের কবিতা
অনুবাদ: আজীজ রহমান
জনমানববিহীন সুইডিশ বাড়িগুলো
কুয়াশার ঘোমটা পরা জ্যোৎস্নার নিচে
জঙ্গলের আঙুলের ফাঁকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে
দু-চারটা ছিমছাম বাড়ি
আশপাশে কোথাও জনমানবের চিহ্ন নেই
রৌদ্রাঘাতে শিশির ভাঙতে থাকে, সেই শব্দে
ঘুম থেকে জেগে কোনো অশীতিপর
যতক্ষণ না কাঁপা-কাঁপা হাতে একটা জানালা
একটু খুলে দেবে আর সেই ফাঁকে
বেরিয়ে যাবে এক নিশাচর পেঁচা
অল্প দূরে একটা সদ্য নির্মিত বাড়ি
ফিটফাট সেজেগুজে বেড়াতে বেরিয়েছে
সারা রাত নাক দিয়ে
সে কেবল ছাড়ছিল ধোঁয়া
পথের দুই ধারে বুড়ো গাছ ঝিম ধরে
অপেক্ষা করছে কখন আসবে কলের করাত
তখন গ্রীষ্ম আসবে সঙ্গে নিয়ে এলোমেলো ঝড়
এলোকেশী বৃষ্টি আসবে শ্যামল ধারায়
বিদ্যুৎ চমকালে চঞ্চল হবে পালিত কুকুর
ভেজা মাটি চিরে উঁকি দেবে নতুন অঙ্কুর
উচ্চকিত কণ্ঠস্বর, হাসি কলরব
রুদ্ধদ্বার খুলে উড়ে যাবে দেশান্তরে
টেলিফোনে তারে ও ইথারে
নদীতীরে, দ্বীপের ওপরে পরিত্যক্ত বাড়ি
ভিত ভেঙে দাঁড়াবে উঠে
অরণ্যের গোপন দলিল পুড়ে ধোঁয়া হয়ে মিশে যাবে মেঘে
পাহাড়ের গা বেয়ে বৃষ্টির ধারা
বাড়ির শরীরে দেবে প্রচণ্ড নাড়া
হেমলাইটার পা ফাগেন (গোপন কথাটি, ১৯৫৮) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
প্রবাসী বন্ধুকে
১
তোমাকে আমি লিখি কদাচিৎ। কিন্তু যা লিখতে পারি না
সে সব কথা আমার ভেতরে ফুলতে থাকে, বেলুনের মতো,
ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে শেষে আমাকে নিয়ে যায় নৈশ আকাশে।
২
আমার চিঠিটা সেন্সরের হাতে। এখন সে জ্বালিয়েছে বাতি
যার তীব্র আলোয় আমার শব্দগুলো শুধু লাফাচ্ছে ঝাঁপাচ্ছে
লোহার খাঁচায় বন্দী শাখামৃগদের মতো একই প্রক্রিয়ায়
কিচিরমিচির শব্দ করছে, থামছে, আবার দাঁত মুখ খিঁচছে।
৩
লাইনের ভেতরে পড়ো। আমাদের দেখা হবে ২০০০ বছর পরে
যখন অবশেষে হোটেলের দেয়ালে লুকানো মাইক্রোফোনগুলো
চুপ হয়ে যাবে, ঘুমিয়ে পড়বে কিংবা পরিণত হবে কোনো
প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর ফসিলে।
স্টিগার (পথ চলা, ১৯৭৩) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
Leave a Reply