সুরা তাৎফিফ
শুরু করি লয়ে পূত নাম বিধাতার
করুণা ও দয়া যার অনাদি অপার।
সর্বনাশ তাহাদের, হ্রাসকারী যারা,
যখন লোকের কাছে মেপে লয় তারা,
তখন পূর্ণ করে চায় মেপে নিতে,
তাদেরে ওজন করে হয় যবে দিতে,
তখন কম সে করে মাপে ও ওজনে।
উঠিতে হইবে পুন, করে না তা মনে।
উঠিবে মানব পুন মহান সেদিন,
বিশ্বপালকের কাছে দাঁড়াবে যেদিন।
পাপিষ্ঠ লোকের সে কার্য সমুদয়
নিশ্চয় ‘সিজ্জিনে’ থাকে, কভু মিথ্যা নয়।
জান কি, সে ‘সিজ্জিন’ কী? লিখিত কেতাব
(লেখা রবে যাতে তার পাপের হিসাব)।
– সর্বনাশ হবে
তাদের – সত্যেরে বলে মিথ্যা যারা সবে।
কর্মফল প্রাপ্তির এদিন হাশরের –
বলে মিথ্যা – সর্বনাশ হবে তাহাদের।
আদেশ-লঙ্ঘনকারী পাতকী ব্যতীত
আর কেহ বলে না – এ সত্যের অতীত।
তার কাছে পাঠ হলে আমার এ বাণী,
সে বলে এ ‘পূর্বতন লোকের কাহিনি!’
– কখনই নহে, তাহা নহে
অভ্যস্ত তাদের নিজ কাজগুলি রহে,
জমেছে মরিচারূপে তাহাদের মনে।
সেদিন তাহারা নিজ খোদার সদনে,
পারিবে না যেতে নিশ্চয়! তারপর
প্রবেশ করিবে তারা দোজখ ভিতর।
সেই কর্মের ফল জেনো ইহা সেই,
তোমরা মিথ্যা সদা বলিতে এরেই।
কখনই মিথ্যা নহে, রহিবে নিশ্চয়,
লেখা ‘ইল্লিয়নে’ সব কার্য সমুদয়
যত সৎলোকের সে। জান ‘ইল্লিয়ন’
কারে কয়? লিখিত সে কেতাব রতন।
প্রত্যক্ষ কেবল তারা করিবে দর্শন
আল্লার নিকটে যাবে যে মানবগণ।
সুপ্রচুর সুখে রবে পুণ্য-আত্মাগণ,
সুউচ্চ তখ্তে রহি করিবে দর্শন।
– সে সুখ-পুলকে
দেখিতে পাইবে তারা নিজ মুখে চোখে
–শিলমোহর করা
তাহারা করিবে পান সুপবিত্র সুরা।
কস্তুরীর সে মোহর। কামনা কারুর
থাকে যদি – করুক কামনা এ দারুর।
‘তস্নীম’ সুধা মেশা হয় সে সুরায়,
‘তস্নীম’ সে প্রস্রবণ-উৎস যাহায়
আল্লার নিকট যারা, করে তারা পান।
অবিশ্বাসী সবার প্রতি বিদ্রুপ-বাণ
হানিত যে অপরাধিগণ নিশ্চয়,
আঁখি-ঠারে ইঙ্গিত তারা যে সময়
করিত পরস্পরে বিশ্বাসীরে দেখে
তাহাদের পাশ দিয়া যাইলে তাহাকে।
স্বজনের কাছে সব ফিরে গিয়ে পুন
করিত বিদ্রুপ ব্যঙ্গ ইহারা তখনও।
দেখায়ে (বিশ্বাসিগণ) বলিত, ‘ইহারা
নিশ্চয়, নিশ্চয়ই, সবে পথহারা!’
বিশ্বাসীদের পরে অথচ বেশক
প্রেরিত হয়নি এরা হইয়া রক্ষক।
ইমান এনেছে যারা, তারা আজিকে
উপহাস করিবে বিধর্মী দেখে।
উঁচু সে তখ্তে বসি করিবে দর্শন,
কর্মফল পেল আজ বিধর্মিগণ॥
————
সুরা তাৎফিফ
এই সুরা মক্কায় কি মদিনায় নাজেল হয় এ-সম্বন্ধে মতভেদ দৃষ্ট হয়। ইহাতে ৩৬টি আয়াত, ১৭২টি শব্দ ও ৭৫৮টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – হজরত মদিনায় পদার্পণ করিয়া দেখিলেন যে, উক্ত স্থানের অধিবাসীগণ পরিমাণ ও ওজনে কম-বেশি করিয়া থাকে, তখন এই সুরা নাজেল হয়।
মক্কায় এই সুরা প্রথম নাজেল হইয়াছিল। হজরত মদিনায় যাওয়ার পর সেখানে ইহা পাঠ করিয়া শুনাইয়াদিলেন।
Leave a Reply