সুরা ফজর
শুরু করি লয়ে পাক নাম আল্লার,
করুণা-নিধান যিনি কৃপা-পারাবার।
উষার শপথ। দশ সে রাতের শপথ করি, জোড়-বিজোড় সে দিনের শপথ! সে বিভাবরী, যবে অবসান হতে থাকে করি তার শপথ জ্ঞানীদের তরে যথেষ্ট শপথ – এই তো। ভীমবাহু ওই ইরামীয়, ‘আদ’দের পরে, করেছেন কীবা প্রভু তব, দেখনি কি ওরে? হয়নি সৃজিত নগরসমূহে তাদের প্রায় আর সে ‘সামুদ’ জাতি সে পাথর কাটিয়া সে উপত্যকায় – বসাইয়াছিল নগর বসতি, আর বহু কীলকধারী; ফেরাউন সাথে বিনাশ সাধিলাম কেন আমি তাহারই? নগরে নগরে করেছিল ঔদ্ধত্য – আর বহু অনাচার এনেছিল তথায় আবার। শাস্তি দণ্ড তোমাদের প্রভু তাদের উপরে দিলেন তাই, নিশ্চয় তব প্রভু দেখে সব, থাকেন সময় প্রতীক্ষায়। মানবে যখন দিয়ে সম্পদ সম্মান, করে পরীক্ষা প্রভু, ‘আমার প্রভুই দিলেন এ সব সম্মান’ – বলে অবোধ তবু। আবার তাহারে পরীক্ষা যবে করেন জীবিকা হ্রাস করে, সে বলে, ‘আমার প্রভুই এ হেন অপমানিত গো করিল মোরে!’ নহে, নহে, তাহা কখনই নহে, এ সবের তরে তোমরা দায়ী, এতিমে তোমরা গ্রাহ্য কর না কাঙালে খাদ্য দিতে উৎসাহ নাহি। অন্নমুষ্টি তারে নাহি দাও, অত বেশি কর অর্থের মায়া, পিতৃ-সম্পদ বিনা বিচারে সে যাও যে তোমরা ভোগ করিয়া। জান না কি, যবে ভীষণ রবে এ-ধরিত্রী বিচূর্ণিত হবে, দলে দলে ফেরেশ্তাগণ তখন হাজির হবে সবে। আর আসিবেন সেদিন তব মহান প্রভু সেথায়, দোজখ সেদিন হইবে আনীত, সেদিন মানুষ স্মরিবে হায়! কিন্তু সেদিন স্মরণে কি হবে? ‘হায় হায়’ করি কাঁদিবে সব, ‘পূর্বে যদি এ জীবনের তরে প্রেরিতাম পুণ্যের বিভব!’ অন্য কেহ সে পারিবে না দিতে তেমন শাস্তি সেদিন, অন্য কেহই তখন বাধা দিতে পারিবে না সেই যে দিন। শাস্তি-প্রাপ্ত মানব-আত্মা! ফিরে এসো নিজ প্রভু পানে। তুমি তার প্রতি প্রীত যেমন তিনি তব প্রতি প্রীত তেমন। অনুগত মোর দাস যারা এসো সেই দলে, বেহেশ্তে মোর করিবে প্রবেশ অবহেলে।
————–
সুরা ফজর
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হয়। ইহাতে ৩০টি আয়াত, ১৩৭টি শব্দ ও ৫৮৫টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – এক সময় কাফেররা বলিতে লাগিল যে, মানুষের ভালোমন্দ কার্যের প্রতিফল প্রদান করা আল্লার অভিপ্রেত নহে। যদি তিনি পাপীর প্রতি অসন্তুষ্ট ও পুণ্যবানের প্রতি সন্তুষ্ট হইতেন তবে কেয়ামতের প্রতীক্ষা না করিয়া ইহজগতেই কেন সৎ লোকদিগকে সম্পদশালী ও অসৎ লোকদিগকে বিপদগ্রস্ত করেন না? পরলোক মিথ্যা ইত্যাদি। তখন এই সুরা নাজেল হয়।
Leave a Reply