শিল্পী: আদ দিজিন, আরব স্প্রিং ১০ জুন ২০১১ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বয়ে যাচ্ছে বিপ্লবের ঝড়, যাকে উল্লেখ করা হচ্ছে আরব বসন্ত হিসেবে। সেসব দেশের সাহিত্যিকদের নিয়েই এ বিশেষ আয়োজন।
আদোনিস
আতঙ্ক
একটা স্বপ্ন
ওরা এল নগ্ন
তছনছ করে ঢুকল বাড়িতে
খুঁড়ল গর্ত
পুঁতে ফেলল শিশুদের আর চলে গেল…
নিউ ইয়র্কের জন্য একটি কবর
বিদায়প্রহরের আগে
আমি আর্তনাদ করে জেগে উঠেছি ভোরে, নিউ ইয়র্ক!
তুমি তুষারের সঙ্গে মেশাও শিশুদের আর বানাও এ যুগের মিষ্টান্ন। তোমার কণ্ঠস্বর মরিচার—রসায়নশাস্ত্রের বোধের অগম্য সে বিষ; তোমার নাম অনিদ্রা আর শ্বাসকষ্ট। সেন্ট্রাল পার্ক তার শিকারদের ছুড়ে দেয় ভূরিভোজ; তার গাছপালার তলায় তুমি দেখতে পাও মৃতদের প্রেতাত্মা আর রক্তাক্ত ভোজালি। হাওয়ার জন্য আর কিছু নেই রিক্ত ডালপালা ছাড়া, পথিকের জন্য আর কিছু নেই রুদ্ধ পথ ছাড়া।
ভোরে আমি কেঁদে জেগে উঠি, আজ কয়টি শিশু খুন করেছ তুমি?
‘এ তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়!’
‘এটা যে একটা সমস্যা, সেটা সত্য। কিন্তু এও কি সত্য নয় যে এর ফলে শত্রুর সংখ্যা কমে যায়?’
নিউ ইয়র্কের হূৎপিণ্ডকে কীভাবে আমি ভিন্ন আকার দিই?
হূৎপিণ্ডও কি তার সীমানা বাড়ায়?
নিউ ইয়র্ক, জেনারেল মোটরস আর মৃত্যু যেখানে এক ও অভিন্ন ‘মানুষের বদলে আমরা দেব আগুন!’—বিপ্লবীরা যেখানে সাঁতরায় সেই সমুদ্র তারা শুকিয়ে ফেলেছে। ‘মাটিকে তারা বানিয়েছে মরুভূমি, আর তার নাম দিয়েছে শান্তি!’
আমি সূর্যোদয়ের আগে জেগে উঠেছি আর জাগিয়ে তুলেছি হুইটম্যানকে।
মাহমুদ দারবিশের পাশাপাশি সাম্প্রতিক আরব কবিতার জনপ্রিয় নাম আদোনিস। জন্ম সিরিয়ায়, ১৯২৯ সালে। প্রকৃত নাম আলী আহমাদ সাঈদ। তাঁর সাহিত্যপত্র মাওয়াকিফ আরবি সাহিত্যে নতুন যুগ প্রবর্তন করেছে। থাকেন প্যারিসে। বছর কয়েক ধরে নোবেলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ফিরে ফিরে আসছে।
আমাল দুনকুল
নগরী এক ধ্বস্ত জাহাজ
আজ রাতে, মনে হচ্ছে, আমি একা;
আর নগরী, এর প্রেতাত্মা আর উঁচু
দরদালান নিয়ে, ধ্বস্ত এক জাহাজ
জলদস্যুরা যা লোপাট করেছে বহু আগে
আর ডুবিয়ে দিয়েছে মহাসাগরের অতলে।
রেলিংয়ের ওপর তখন মাথা হেলিয়ে
দিয়েছে কাপ্তান। তার পায়ের তলায়
লুটাচ্ছে সুরার ভাঙা বোতল, দামি ধাতুর
চূর্ণ। আর নাবিকেরা লেপ্টে আছে
নিঃশব্দ মাস্তুলের গায়ে,
তাদের ছেঁড়া কাপড়ের ভেতর দিয়ে
সাঁতরে গেছে স্মৃতির বিষণ্ন মাছ।
নিঃশব্দ ছুরি, উদ্ভিন্ন শ্যাওলা, ঝুড়িভর্তি
মরা বেড়াল…এই মৌন পৃথিবীতে
কোথাও স্পন্দন নেই কোনো।
মিশরের কবি আমাল দুনকুলের জন্ম ১৯৪০ সালে। মিশরের নবযুগের কবিতায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন এই কবির আসন বিশিষ্ট। আনোয়ার সাদাতে শাসনামলে তার সরকারের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন।
তাহার বেকরি
তিউনিশিয়া, আমি তোমাকে ডাকি
মানুষগুলোর দিকে তারা ছুড়েছিল তাজা গুলি
যারা গোর দিচ্ছিল মৃতদের
কাফনজড়ানো শরীরের তলায় আরও শরীর
জীবিতদের নিচে শোয়ানো লাশ
মায়েদের অশ্রুপাতে ধুয়ে যাওয়া
লাশগুলোকে কি ভয় পেয়েছিল তারা
যে তারা জেগে উঠতে পারে আবার
যে চেঁচিয়ে উঠতে পারে তাদের মুখ
বোনদের তারা লাঞ্ছিত করেছে
গুলি করেছে বেগুনি নেকাবে
গর্জে উঠে বলেছে, চলে যাও, চোরের দল
পৃথিবী, তুমি কি ক্ষমা করবে
এই বিধুর শকুনদের
টাপিররা খুবলে তুলেছে সমাধির মাটি
শহীদদের মুখে দিচ্ছে কালিমালাঞ্ছনা
তাহার বেকরির জন্ম ১৯৫১ সালে, তিউনিশিয়ার গাবেসে। কবিতার পাশাপাশি লিখে থাকেন প্রবন্ধ ও শিল্পকলা বিষয়ক প্রবন্ধ। ১৯৭৬ সাল থেকে প্যারিসে আছেন। বর্তমানে প্যারিসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন।
অনুবাদ: সাজ্জাদ শরিফ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১১
Leave a Reply