দুর্ভিক্ষের সময় কলকাতার রাস্তায় একটি পরিবার ছেলেবেলায় মায়ের কাছে পঞ্চাশের মন্বন্তরের গল্প শুনেছি: কীভাবে ‘মা এট্টু ফ্যান দাও’ বলে কাতরাতে কাতরাতে কলকাতার রাস্তায় মরে পড়ে থাকত অভুক্ত, কঙ্কালসার, শীর্ণ মানুষেরা। পরিণত বয়সে দেখেছি জয়নুল আবেদিনের মৃতদেহ, কাক ও ডাস্টবিনের মর্মস্পর্শী সব স্কেচ। তখন থেকেই মনে মনে প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল জানার, ঠিক কী ঘটেছিল ১৯৪৩ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই বিশেষ সময়কালে, যখন কোনো যুদ্ধ, এমনকি একটি বুলেট ছাড়াই এ দেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের এ রকম অসহায় মৃত্যু ঘটেছিল। সম্প্রতি তেমনই এই বইয়ের খোঁজ পেলাম, যেখানে অত্যন্ত মননশীল ও সমৃদ্ধ গবেষণার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে কারা ছিল এ দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী; কারা নিয়েছিল নির্মম ও দায়িত্বজ্ঞানহীন সেসব সিদ্ধান্ত, যার ফলে এ দেশের লাখ লাখ অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশুকে চিরকালের জন্য হারিয়ে যেতে হয়েছিল। ইংরেজি ভাষার এ বইটির নাম চার্চিলস সিক্রেট ওয়ার: দি ব্রিটিশ এম্পায়ার অ্যান্ড দ্য র্যাভেজিং অব ইন্ডিয়া ডিউরিং ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু। লেখিকা জার্মানপ্রবাসী বাঙালি গবেষক মধুশ্রী মুখার্জি।
চল্লিশের দশক—সে এক ঘটনাবহুল সময়। বাঙালিরা নতুন সব শব্দ শিখল—পোড়ামাটি নীতি, ব্ল্যাকআউট, কালোবাজার, টমি, মা-ফ্যান-দ্যাও, দেশভাগ। লেখিকা খুব স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন কীভাবে মনুষ্যসৃষ্ট পঞ্চাশের মন্বন্তরের পেছনে কাজ করেছে ব্রিটেনের তৎকালীন রক্ষণশীল দলের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ও চার্চিল-প্রভাবিত ওয়ার ক্যাবিনেটের অমানবিক কিছু সিদ্ধান্ত। ভালো গদ্যলেখক ও উদ্দীপক এক বক্তা, হিটলার ও নাৎসি-জার্মানির দৃঢ় এক শত্রু, এসব ছাপিয়ে এ বইটির পরতে পরতে চার্চিলের চরিত্র হিসেবে যা ফুটে ওঠে, তা এক অহংসর্বস্ব ইংরেজ দৃষ্টিভঙ্গি, যা ভারতবিদ্বেষী, জাতিবিদ্বেষীও বটে; যিনি সাম্রাজ্যের গরিমার অহংকার ও উচ্চমন্য মানসিকতাসম্পন্ন এক সীমিত মনের মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে বিশাল এক বই লিখতে চার্চিল এক দঙ্গল গবেষক ও বেনামী লেখককে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ছয় খণ্ডের বিশাল সে বইয়ে বাংলার দুর্ভিক্ষের উল্লেখ আছে একটা মাত্র সারণির এক দলিলে! জাপানিরা তখন চট্টগ্রামে ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। ১৯৪১ সালের ১৪ নভেম্বর চার্চিল ঘোষণা করলেন ‘পোড়ামাটি নীতি’ অর্থাৎ যেসব অঞ্চল ইংরেজরা ছেড়ে চলে যাবে, তা নির্মমভাবে ধ্বংস করতে হবে। অবশ্য এই নীতির একটা ভদ্রস্থ নাম দেওয়া হয়েছিল—‘ডিনায়াল পলিসি’। জাপানিরা সাগরপথে উপকূলে এসে নামতে পারে—এই আশঙ্কায় কলকাতার ২০ মাইল দক্ষিণ থেকে টানা লাইন টেনে উপকূলীয় এলাকার সব নৌকা ধ্বংস করা হলো। ফলে যখন দুর্ভিক্ষ শুরু হলো, পাশের উদ্বৃত্ত জেলা থেকে ধান-চাল আনার কোনো উপায়ই আর রইল না। নৌকা কেড়ে নেওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলো জেলে সম্প্রদায়। দুর্ভিক্ষের পর ফরিদপুরের এক বৃদ্ধ জেলে জানান, তাঁদের জেলেপল্লির ৫০টি পরিবারই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে চাল কেনার জন্য সরকার ২০ লাখ রুপি অগ্রিম দিল মির্জা আহমেদ ইস্পাহানিকে। যেহেতু সরকারের পক্ষে কাজ করছে, ফলে ইস্পাহানির ক্ষমতা ছিল কেউ তার দেওয়া দামে চাল বেচতে রাজি না হলে সে চাল জোর করে নেওয়ার। ইতিহাস যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন যে জিন্নাহর বশংবদ ইস্পাহানি ছিল মুসলিম লীগের অন্যতম বড় চাঁদাপ্রদানকারী ও ব্রিটিশদের বিশেষ খয়ের খাঁ।
ফজলুল হক ১৯৪২ সালে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন যে, ‘বাংলায় চালের দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে।’ কিন্তু চার্চিল বা ইংরেজ সরকারের সেসবে কর্ণপাতের সময় ছিল না। অস্ট্রেলীয়রা চাইছিল ক্ষুধার্ত ভারতের জন্য যতটা প্রয়োজন গম পাঠাতে। কানাডাও চাইছিল যে অন্তত একটা জাহাজভরা গম ভারতে পাঠাতে। কিন্তু চার্চিল এ কাজে কোনো জাহাজ ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। তাতে ব্রিটেনের ‘মর্যাদা’ (!) থাকে না। বাংলার আসন্ন দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে জাহাজ দিতে কমান্ডার-ইন-চিফ ওয়াভেল ও ভাইসরয় লিনলিথগো বারবার বলা সত্ত্বেও চার্চিল গোঁ ধরে রইলেন যে, কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না! যেন খোদ কমান্ডার-ইন-চিফ ওয়াভেলের চেয়ে সিভিলিয়ান চার্চিল বেশি বোঝেন যুদ্ধ-প্রচেষ্টার জন্য কোনটা বেশি জরুরি! অস্ট্রেলিয়া থেকে খাদ্যভরা জাহাজ তাই শ্রীলঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হলো, কিন্তু দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলার কোনো বন্দরে সে জাহাজ ভিড়ল না! সময়মতো অস্ট্রেলীয় বা কানাডার গম এলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেত।
আসলে ভারতবর্ষবাসীর দুর্ভাগ্য যে, সে সময়টা চার্চিলের মতো এমন একজন লোক ছিলেন ব্রিটেনের নেতা। চার্চিলের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই মূলত গড়ে উঠেছিল ডারউইনের প্রতিযোগিতাবাদ ও ম্যালথাসের জীবন-মৃত্যুর অনিবার্যতার তত্ত্ব দ্বারা। ফলে দুর্ভিক্ষে ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু চার্চিলের বিবেককে নাড়া দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। দরিদ্র, অযোগ্য ভারতবাসী তো মরবেই! ভাষার শক্তি দিয়ে যুক্তিকে আচ্ছন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা চার্চিলের ছিল। ভারতসচিব আমেরি, যিনি চার্চিলকে ভালোই চিনেছিলেন, লেখেন যে চার্চিল ছিলেন মূলত একজন মধ্য-ভিক্টোরীয় যুগের মানুষ, অনেকটা তাঁর বাবা লর্ড র্যানডলফের সময়কালের চিন্তাভাবনার একজন মানুষ, যা ঢাকা পড়ে যেত চার্চিলের প্রচণ্ড প্রাণশক্তি এবং কথা ও ভাষার কারুকার্যে।
ভারত সম্পর্কে চার্চিলের যেটুকু ধারণা, তা যৌবনে ভারত-আফগান সীমান্তে কিছুদিন যুদ্ধ সাংবাদিকতার রোমান্টিকতা, বড় লাট ও ব্রিটিশ অফিসারদের পাঠানো একঘেয়ে সরকারি নথিপত্র ও বেভারলি নিকোলসের ভার্ডিক্ট অব ইন্ডিয়ার মতো বই, যেখানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পক্ষে হাজারটা যুক্তি এবং ভারতীয়রা খুবই হীন ও নিকৃষ্ট এক জনগোষ্ঠী—এসব কথা আছে, যার কিছু বক্তব্য আজ রীতিমতো হাস্যাস্পদ মনে হয়! ভারতবর্ষ সম্পর্কে চার্চিল মূলত সেসবই পড়তেন, যেসব তাঁর মনে ইতিমধ্যেই গঠিত বিশ্বাসকে আরও পোক্ত করত। আর সে বিশ্বাস ছিল, ভারতীয়রা ‘পশুসুলভ এক জাতি, যাদের ধর্মটাও পশুসুলভ!’
আর ভারতবর্ষের ব্যাপারে চার্চিলের এক উপদেষ্টা লর্ড শেরওয়েল করেছেন বিরাট ক্ষতি। অর্ধশিক্ষিত এই ‘বৈজ্ঞানিক’ মানুষটিকে চার্চিল ভারতবর্ষ বিষয়ে একজন ‘বিশেষজ্ঞ’ ঠাউরাতেন, অথচ ভারতবর্ষ সম্পর্কে শেরওয়েলের ধারণা ছিল খুবই ওপরভাসা ও কেতাবি। তা ছাড়া ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ অনুযায়ী শেরওয়েল তাই-ই বলতেন, চার্চিল যা শুনতে পছন্দ করতেন। মোসাহেবি রোগটা তো বাঙালির একচেটিয়া নয়!
দুর্ভিক্ষের সে দিনগুলোতে মানুষ কচুঘেঁচু, পাতা-লতা এমনকি দূর্বাঘাস খেয়েও বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছে। মেদিনীপুরের এক বৃদ্ধ জানাচ্ছেন, সে সময়ে মাঠে কোনো কচি ঘাস আর ছিল না। ক্ষুধার্ত মানুষেরা খেয়ে সব শেষ করে ফেলেছিল! যে সময় রিলিফ কেন্দ্র থেকে খিচুড়ি দেওয়া হচ্ছিল, তার পরিমাণও ক্রমেই কমে আসছিল। প্রথমে তিনজন মানুষের জন্য ছিল আধা সের চাল, পরে তা কমতে কমতে এসে দাঁড়াল চার আউন্সে, যা আসলে মাত্র ৪০০ ক্যালরির সমান এবং বরাদ্দের যে পরিমাণটা ছিল বুখেনভাল্ড ক্যাম্পের সেই সব বন্দীর বরাদ্দের সমান, নাৎসিদের কাছে যাদের মৃত্যু ছিল সুনিশ্চিত। ক্ষুধার্ত মানুষেরা অমানবিক সব আচরণ শুরু করে। ক্ষুধায় উন্মাদ হয়ে একজন দরিদ্র কৃষক নিজের বাবা, মা, বউ ও সন্তানদের হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেন। এক ক্ষুধার্ত অসহায় বাবা তার কোলের বাচ্চাটিকে অনেকের কাছে বিক্রি করতে চাইলেন। কেউ কিনতে রাজি না হলে শিশুটিকে একটা কুয়ার মধ্যে ছুড়ে ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে যান! মৃত মায়ের স্তন থেকে দুধ খাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে শীর্ণকায় শিশু—এ দৃশ্য কলকাতার রাজপথে প্রায়ই দেখা গেছে। কলকাতার ফুটপাতে যাদের মৃত্যু ঘটেছে, তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কিছু প্রচার পেলেও গ্রামের মৃত্যুগুলো নীরবে ঘটেছে এবং অন্ধকারেই রয়ে গেছে। গ্রামের শিয়াল ও কুকুরেরা এসব মৃতদেহ টেনে নিয়ে খেয়েছে। চট্টগ্রামের এক ব্রিটিশ সেনা জানাচ্ছেন, একবার তাঁদের ক্যাম্পে গার্ড খুব বিমর্ষ হয়েছিলেন এই দৃশ্য দেখে যে, একটা মেয়ে, তখনো বেঁচে, তার হাত একটা শিয়াল ছিঁড়ে ফেলে খাচ্ছে।
হঠাৎ করে বাংলার খাদ্যশস্য উধাও হয়ে সব গেল কোথায়? বাংলা সরকার পাঁচ হাজার লাইসেন্স দিয়েছিল খাদ্য সংগ্রহের। ইস্পাহানি ছাড়াও লাইসেন্সগুলো পেয়েছিল কিছু ইংরেজ ব্যবসায়ী এবং মুসলিম লীগ সরকারের কাছের সব লোকজন। তারা খাদ্য মজুদ করেছিল, ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে চলছিল এবং অঢেল অর্থ পকেটে ভরছিল। সরকারি অফিসাররাও কম দায়ী ছিলেন না। যেমন যশোর জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট তিন লাখ ৭০ হাজার টন চাল কিনে রেলওয়ে প্লাটফর্মে রেখে দিয়েছিলেন। চরম দুর্ভিক্ষের দিনেও সে চাল বাইরে যেতে দেননি। তেমনি ৯০ হাজার টন চাল কলকাতার কাছে বোটানিক্যাল গার্ডেনে মজুদ করে রাখা ছিল। সেসব চাল পরে পচে যায় এবং খালের পানিতে ফেলে দিতে হয়!
ওয়ার ক্যাবিনেটের যেকোনো সভায় বাংলার দুর্ভিক্ষ বা ভারত প্রসঙ্গ এলেই চার্চিল ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন। এ ক্ষিপ্ততার একাধিক কারণ ছিল। ইতিহাসের দেয়াললিখন তত দিনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে যুদ্ধের পরে ভারতবর্ষ ব্রিটিশ সিংহের থাবা থেকে বেরিয়ে যাবে। তা ছাড়া বাঙালিদের প্রতি চার্চিলের বিদ্বেষ ছিল। বাঙালিরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে। উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশগুলোর লম্বা-চওড়া মানুষগুলোর মতো ব্রিটেনের অনুগত নয়। আর তা ছাড়া যুদ্ধের কারণে ভারতের কাছে সৃষ্ট ব্রিটেনের বিশাল অঙ্কের ‘স্টার্লিং ঋণ’ শোধ করার দায়টা চার্চিল সহ্যই করতে পারতেন না। আর সে ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছিল! ১৯৪৪ সালে দুর্ভিক্ষের যখন প্রায় শেষ পর্যায়, তখনো খাদ্য চেয়ে ওয়াভেলের টেলিগ্রামের কোনো জবাব দিলেন না চার্চিল; বরং এক টেলিগ্রামে জানতে চাইলেন, ‘গান্ধী এখনো মরছে না কেন!’
কংগ্রেসের মেধাবীদের অপছন্দ করতেন চার্চিল। বিশ্বাস করতেন হিন্দু-মুসলিম অনৈক্যে। তাহলেই ভারত শাসনে সুবিধা। ফলে পাকিস্তান সৃষ্টির জোর সমর্থক হয়ে উঠেছিলেন এই আশায় যে, ব্রিটিশ ধাত্রীত্বে পাকিস্তানের জন্ম হলে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব কিছুটা হলেও পাকিস্তানে বজায় রাখা যাবে; যেটা ভারতে তেমন সুবিধা হবে না। চার্চিলের ইঙ্গিতেই জিন্নাহ একটার পর একটা অযৌক্তিক গোঁ ধরে চলেছিলেন, যার এক ফল রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা ও দেশভাগের ট্র্যাজেডি।
বইটির একটা অংশজুড়ে রয়েছে মেদিনীপুর জেলার কংগ্রেসকর্মীদের স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার চেষ্টা ও আত্মত্যাগ, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে এ দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের সাহসী সংগ্রামের দিকটাকে তুলে ধরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই বিশাল বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলার তৃণমূল মানুষের সংগ্রাম ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটকে মেলানোর এক অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন লেখিকা। এই বইয়ের কল্যাণে কংগ্রেসকর্মী সুশীল ধারা, মাতঙ্গিনী হাজরা, সতীশ সামন্ত—এঁরা আর কেবল স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্মী নন, হয়ে ওঠেন আমাদের একান্ত আপনজন।
ডিসেম্বরে বাংলার ধানখেতগুলো আবার সোনালি হয়ে উঠল। মাঠভরা ধান। কিন্তু অনেক জায়গায় তা কাটার মানুষ আর নেই! গ্রামের মানুষেরা মৃত অথবা শহরে হারানো আত্মীয়স্বজনদের খুঁজে ফিরছে। মৃত্যুর আগে অসুস্থ অবস্থায় চার্চিল অবশ্য তাঁর ডাক্তারকে বলেছিলেন, ‘ভারতের ব্যাপারে আমি ভুল করেছি!’ খুবই দেরিতে আত্মোপলব্ধি!!
চার্চিল বিশ্বাস করতেন এবং বক্তৃতাতেও বলতেন যে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের যুগটাই ইতিহাসে ‘স্বর্ণযুগ’ হয়ে থাকবে। কার স্বর্ণযুগ? অবশ্যই ভারতবর্ষবাসীর জন্য নয়, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এটা এক কলঙ্কতিলক হয়েই রইল যে, ভারতে তাদের সাম্রাজ্য শুরু হয়েছে এক মন্বন্তর দিয়ে—ছিয়াত্তরের ভয়াবহ মন্বন্তর; আর শেষও হলো আরেক মর্মান্তিক মন্বন্তরে, যেখানে পূর্ব ভারতের এক-পঞ্চমাংশ মানুষের হয় মৃত্যু ঘটেছিল অথবা তাদের জীবন চিরকালের জন্য ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল। স্বর্ণযুগই বটে!!
অজানা সব তথ্য ও পরিশ্রমী নিষ্ঠায় অত্যন্ত সুলিখিত এক বই লিখেছেন গবেষক মধুশ্রী মুখার্জি, যা আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাসচর্চাকে একটা অত্যন্ত উচ্চমানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। বাঙালি তথা ভারতবর্ষবাসী মাত্রেরই এই পরিশ্রমী লেখিকার প্রতি রইবে আন্তরিক শুভাশীষ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০৫, ২০১১
Leave a Reply