সন্তোষ ব্যানার্জী – অগ্নিবিপ্লবী। জন্ম : ১৯১৩ – মৃত্যু: ১লা মে, ২০০৩। পালং তুলাসার, শরিয়তপুর। পিতা প্রতাপ ব্যানার্জী এবং মাতা সৌদামণি দেবী। বাবা ছিলেন জমিদার। নয় ভাইবোনের মধ্যে আট বোনের পরে তিনি ছিলেন সবার ছোট, একমাত্র ভাই।
স্কুলে পড়াশুনাকালীন সময়ে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে। এর ধারাবাহিকতায় যুক্ত হন সশস্ত্র বিপ্লববাদী দলে। পড়াশুনা আর খেলাধুলায় বেশ পারদর্শী ছিলেন তিনি। ফুটবল খেলোয়াড হিসেবে তাঁর বেশ নাম ছিল। মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি ঘর ছেড়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র বিপ্লববাদী দলের সার্বক্ষণিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেন। সন্তোষ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে ও সাংগঠনিক দক্ষতায় বৃহত্তর ফরিদপুরের সর্বত্রই সশস্ত্র বিপ্লববাদী সংগঠন গড়ে উঠে। যে কারণে সন্তোষ ব্যানার্জীর বিপ্লববাদী কর্মকাণ্ডের কারণে ব্রিটিশ সরকার তাঁর পিতার জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে।
বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গাসহ সমগ্র ফরিদপুরের অসংখ্য তরুণকে সশস্ত্র বিপ্লবের প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেন সন্তোষ ব্যানার্জী। শুধু তাই নয়, জনসাধারণকে ব্যাপকভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত করতে সক্ষম হন তিনি। এ সময় সারাদেশেই তিনি ‘বিপ্লবী সন্তোষ ব্যানার্জী’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রামে যুক্ত থাকার কারণে তাঁকে বারবার ব্রিটিশের কারাগারে যেতে হয়েছে। জেলখানার মধ্যে অন্যান্য বিপ্লবী ও কমিউনিস্টদের সাথে অনশন-ধর্মঘটেও সবসময় শামিল ছিলেন। এখানেই তিনি তাঁর বিপ্লববাদী চিন্তা ও দর্শনের সাথে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের দর্শনকে একীভূত করেন। আন্দামান সেলুলার জেল থেকে ফিরে এসে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি ও মেহনতি মানুষের আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হন। চল্লিশের দশকের শুরুর দিকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পান। শুধু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনই নয়, গোটা পাকিস্তান আমল (’৫৪ সালে কিছুদিন বাদে) জেলে কাটিয়েছেন তিন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ২৩ বছর জেলে থাকতে হয়েছে তাঁকে এবং প্রায় ৪০ বছর আত্মগোপনে কাটিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর মুক্ত জীবনে ফিরে এসে তিনি তাঁর পিতা-মাতা ও ৯ বোনের কাউকেই ফিরে পাননি। সেই সময়ে কলকাতায় অবস্থানরত একমাত্র জীবিত বোনের অনুরোধেও তিনি ভারতে না গিয়ে বাংলাদেশে থেকে যান। ১৯৭৩ সালে তিনি সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়া ভ্রমণ করেন। মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রত্যয়ী সর্বস্ব ত্যাগী এই অকৃতদার বিপ্লবী আমৃত্যু বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম নেতা ছিলেন। (ইন্টারনেট)
Leave a Reply