গোরা কি আইন আনিল নদীয়ায়,
এত জীবের সদ্ভাব নয়।
সে যে আনখা(১) আচার, আনখা বিচার,
শুনে জীবের লাগে ভয়।
ধর্মাধর্ম বলিতে,
কিছুমাত্র নাই তাতে।
প্রেমের গুণ গায়।
সে যে জেতের বোল রাখলো না
সে তো করলো একাকারময়।
শুদ্ধ অশুদ্ধ নাই জ্ঞান
সাত বার খেয়ে একবার চান
করেন সদাই।
সে যে অসাধ্যকে সাধ্য করে
জীবে যা না ছোঁয় ঘৃণায়।
যবন(২) ছিল দবীর খাস
তারে গোসাই পদ প্রকাশ।
কল্লেন গৌর রায়।
লালন বলে, মমীন বংশে জামাল(৩)
সেও বৈরাগ্য গায়।।
————
সরলাদেবী, ‘লালন ফকির ও গগন’, ভারতী, ভাদ্র ১৩০২; বাংলার বাউল ও বাউল গান, পৃ. ৬৪-৬৫
‘লালন-গীতিকা’য় ধুয়ায় ও ভনিতায় নিম্নরূপ পাঠভেদ আছে :
ভণিতা– গোরা কি আইন আনিল নদীয়ায়
এতো জীবেরো সম্ভবো নয়।
আলগা বিচার, আলগা আচার
দেখে শুনে লাগে ভয়।
ভনিতা– আবার লালন বলে, মমিন বংশে
জামালকে বৈরাগ্য দেয়।।– পৃ. ২১৪-১৫
১. আনখা < আনকা (অনপেক্ষিত)-- অনর্থক, অকারণ, অপরিচিত;
২. যবন-- অহিন্দু বা বিধর্মী হিসাবে মুসলমানদের যবন বলা হত। মূলে প্রাচীন গ্রিকজাতি যবন নামে পরিচিত ছিল। চৈতন্য পার্ষদ যবন হরিদাস মুসলমান ছিলেন। বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা নিলে পর তাঁর ঐরূপ নামকরণ হয়। চৈতন্যদেব তাঁকে গোস্বামীর পদমর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেন।
৩. জামাল-- জামাল খাঁ নামে একজন মুসলমান বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষাগ্রহণ করেন। চৈতন্যদেবের কীর্তি প্রসঙ্গে হরিদাস ও জামালের নাম করায় লালনের ইতিহাস-চেতনারই পরিচয় পাওয়া যায়। বাউল কবি লালন শাহ গ্রন্থে আনোয়ারুল করিম এই জামালকে লালনের একজন শিষ্য বলেছেন (পৃ. ২৪-২৫)। এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।
Leave a Reply