কালা বলে দিন ফুরাইল ডুবে এলো বেলা,
সদায় বল কালা॥
কালা কালা বলে কেন হইয়াছ উতালা,
গোপনে সে গাঁথে মালা, প্রকাশিলে জ্বালা।
ঐ কালা, কালা নয়।
ঐ কালাতে কিবা হয়
কৃষ্ণ কালা বলে কেন ভুলে রইছ, ও ভোলা,
সে কালা।
সে কালা তো জন্ম নেয় নাই দৈবকিনীর ঘরে,
ষোল শত গোপিনীর সঙ্গে খেলা নারে করে।
থাকে বৈসে একেলা
চার যুগে তাহার খেলা
কালা যেন গুণমণি, হাতে চৌদ্দ তালা,
সে কালা।
মথুরাতে কৃষ্ণ কালা, অর্জুনের হয় শালা,
সুভদ্রা ভগ্নী তাহার, অভিমন্যু তাহার পোলা।
দেখ রে কেমন জ্বালা
মিছে কেন বল কালা
কালার ঘরে বাতি জ্বলে অন্ধকারে উজালা,
সে কালা।
ফকির লালন বলে, মায়ার জালে বুঝি আমার প্রাণ যায়,
আমি চার যুগ ভরে বেড়াই ঘুরে, দেখি সেই কালা দয়াময়।
সে তোরে নিঠুর কালা
নাইকো তার বিচ্ছেদ-জ্বালা
আবার চক্ষু বুজে জপমালা, নাম ‘লা-শরিকালা’,
সে কালা।৷
————
হারামণি, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১১৮
গানটির স্তবক-বিন্যাস, সুর-কাঠামো ও ছন্দ-রীতি অভিনব। এরূপ আঙ্গিকের গান কমই আছে। এর ছন্দ-রীতিটি এরূপ : খখ গগক। এখানে একটি অতিরিক্ত স্তবকও আছে। এখানে মহাভারতের অনেক চরিত্র এসেছে। লালন হিন্দু-ঐতিহ্যের ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। কাব্যে হিন্দু ও মুসলিম ঐতিহ্যের দক্ষতার সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে একমাত্র কাজী নজরুল ইসলামের সাথেই তার তুলনা করা চলে।
Leave a Reply