হায় চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখী।
ভেদ পরিচয় দেয় না আমায়,
ঐ দেখে ঝরে আঁখি।
পাখি বুলি বলে শুনতে পাই
রূপ কেমন দেখি না ভাই
এতো বিষম ঘোর দেখি।
চিনাল পেলে চিনে নিতাম
যেত মনের ঢুকঢুকি৷।
পুষে পাখি চিনলাম না
এ লজ্জা তো যাবে না
আজ উপায় করি কি।
পাখি কখন যাবে উড়ে
ধূলি দিয়ে দুই চোখি৷
আছে নয় দুয়ার এই খাঁচাতে
যায় আসে পাখি কোন পথে
চোখে দিয়ে রে ভেল্কি।
সিরাজ সাঁই কয়, বয়ে লালন রয়
ফাঁদ পেতে ঐ পথমুখী।।
————
লালন ফকির : কবি ও কাব্য, পৃ. ২৫০-৫১; লালন-গীতিকা, পৃ. ৪৭-৪৮
করুণাময় গোস্বামী প্রবাসী, ভাদ্র ১৩২২ সংখ্যায় ‘হারামণি’ বিভাগে গানটি প্রকাশ করেন। তিনি নদীয়া জেলার জনৈক মুসলমান ঘরামীর নিকট থেকে সংগ্রহ করেন। এতে বেশ পাঠভেদ আছে। গানটি এরূপ:
হায় চিরদিন পুষলাম আমি কি এক অচিন পাখী।
বেদ-পরিচয় দেয় না রে পাখী, সদায় ঝরে আঁখি
আট-কুঠুরীর আঁচাতে
কোন সন্ধানে যায়-আসে
(দিয়ে ঝাঁকি)।
কোনদিন যেন যাবে ছেড়ে পাখী
দুই চোখি।
পাখী বুলি বলে শুনতে পাই
রূপ কেমন তা দেখি নাই
করি কি উপায়।
চেনালে পেলে চেনাইতাম
যেতো রে ধুকধুকি।।– পৃ. ৬৪১
এতে আভোগ স্তবকটি অনুপস্থিত।
‘হারামণি’ ৮ম খণ্ডে গানটি সংকলিত হয়েছে। এতে সঞ্চারী স্তবকটি অনুপস্থিত। আভোগ স্তবক এভাবে লেখা হয়েছে :
আমি লালন লোল পড়া
পাখী আদর সেই সড়া
আমি কি করি উপায়।
লালন বলে, পেট ভরলে
হয় কি আর।।– পৃ. ২৯
বস্তুত এটি প্রক্ষিপ্ত, স্মৃতি-বিভ্রমের কারণে অন্য গানের অংশ এতে যুক্ত হয়েছে।
Leave a Reply