মানুষ-তত্ত্ব যার সত্য হয় মনে,
সে কি অন্য তত্ত্ব মানে৷
মাটির ঢিপি, কাঠের ছবি
ভূত ভাবি সব দেবদেবী
ভোলে না সে এসব রূপী
ও সে মানুষ-রতন চেনে৷
জোরই ফোরই জিন ফেরেস্তার খেলা
পেঁচাপেঁচি আলা ভোলা
তাতে নয়ন হয় না ভোলা
মানুষ ভজে দিব্যজ্ঞানে।
ফেও-ফেঁপি ফেকসা যারা
ভাকা-ভুকো ভোলে তারা
লালন তেমনি চটা-মারা
ও ঠিক দাঁড়ায় না একখানে।।
————
মতিলাল দাশ, ‘লালন ফকিরের গান’, লালন স্মারকগ্রন্থ, পৃ. ৪২; লালন-গীতিকা, পৃ. ৭৩-৭৪ (এখানে সঞ্চারীর ১ম চরণ “জিন ফেরেস্তার খেলা” কথান্তর আছে।) বাংলার বাউল ও বাউল গান, পৃ. ৪৫
হারামণি ৮ম খণ্ডে সঞ্চারী স্তবক এভাবে আছে :
জোরই সোরই লোলাপোলা
প্যাচাপেঁচি এলোভোলা
তাতে নয়ন খেলনেওয়ালা
যেজন মানুষ-রতন চেনে।।– পৃ. ৩২
এই গানটির মধ্যে কুষ্টয়া অঞ্চলের নিতান্ত সাধারণ লোকের কথ্যভাষা ব্যবহৃত কতকগুলি শব্দের প্রয়োগ আছে।
পেঁচোপেঁচি– অপদেবতা (পুরুষ ও স্ত্রী); আলাভোলা– আলেয়ার আলো; ফেও-ফেসি– ক্ষুদ্র ও নিম্ন স্তরের লোক; ফেকসা– সারহীন; ভাকা-ভুকো– মিথ্যা কথা বলিয়া প্রতারণা; চটামারা– চঞ্চল, ছিটকে-পড়া স্বভাবের;
লালন গানটিতে বলিতেছেন যে, যে মানুষ-তত্ত্ব সত্য বলিয়া গ্রহণ করে, সে হিন্দুমতের মাটি বা কাষ্ঠনির্মিত দেবদেবীকে ভূত মনে করে, আর মুসলমান-মতের জিন ফেরেস্তা প্রভৃতির বিবরণ তাহার চোখে ধূলা দিতে পারে না।– ঐ, পৃ. ৪৭০
Leave a Reply